বাংলা ইসলামিক বই - বাইতুল্লাহর মুসাফির লেখকঃ আবু তাহের মিছবাহ্
বাংলা ইসলামিক বই - বাইতুল্লাহর মুসাফির লেখকঃ আবু তাহের মিছবাহ্
"বাইতুল্লাহর মুসাফির"লেখকঃ আবু তাহের মিছবাহ্ ।
Click To Download Free Pdf - বাইতুল্লাহর মুসাফির PDF
বইটি মূলত হজ্বের সফরনামা বিষয়ক । বইটি নিছক কোনো সফরনামা ছিলো না,, ছিলো আল্লাহর ঘরে আল্লাহর এক প্রেমিক বান্দার জীবন্ত সফর,,জীবন্ত হজ্ব এবং যিয়ারত । যা ভাবিয়েছে,, কাঁদিয়েছে আর অবাক করে দিয়েছে । লেখকের কলম কালি ঝড়িয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায় আর আলো ছড়িয়েছে আমার মতো পাঠকদের অন্তরের অলিতে-গলিতে । আমি কোনো সাহিত্যিক নই তবুও বলছি,, এই বইয়ের সাহিত্যমান উঁচু লেভেলের । সফরনামা বিষয়ে বাংলা সাহিত্যের একটি শূন্যতা পূরন করেছে বইটি ।
---
প্রথমত মাসিক আল কাউসারে এই সফরনামাটি ২৪ টি কিস্তিতে প্রকাশিত হয়
এবং পরে পাঠকদের জনপ্রিয়তার স্রোতে দুই মলাটের মাঝে একত্র হয়ে গ্রন্থরূপ ধারন করে । মক্কা,,মদিনা ছাড়াও বইটিতে পাকিস্তান,,আবুধাবি,, ইরাক সফরের কথাও এসেছে । লেখা হয়েছে রক্তভেজা ও অশ্রুঝরা কারবালার কাহিনীও ।
-
বাংলা ইসলামিক বই বাইতুল্লাহর মুসাফির পাঠ্যানুভূতি
দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন যখন আল্লাহ্ পূরন করে দেন,তখন সেই অনুভূতি কেমন হয় তা দেখেছি বইটির পাতায় পাতায় । অবশেষে লেখকের বায়তুল্লাহ্-য় যাওয়ার স্বপ্ন পূরন হতে চলেছে । সেই অনুভূতি গুলো কি আবেগ আর
ভালোবাসার মিশ্রনে লেখা -- যা দেখে
আমার মনেও বায়তুল্লাহ্-য় যাওয়ার স্বপ্নের ডানা মেলতে শুরু করেছে । কালো গিলাফে ঢাকা আল্লাহর ঘর আর সবুজ গম্বুজের নিচে নবিজীর রওজার সান্নিধ্যে যেতে মানুষের এতো এতো আবেগ আর ভালোবাসা থাকতে পারে ,তা আমার ধারনায়ও ছিল না ।
-
সফরের আগের রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে লেখকের পথ আটকে ধরে পুলিশ । দেশে তখন চলছে সামরিক পরিস্থিতি । রাত পোহালেই সফর আর রাতে এই বিপদ । বিপদ থেকে বেঁচে
আসার ঘটনাটা পড়ার পর লেখকের সাথে সাথে আমিও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে গিয়েছিলাম । পরদিন সকালে সফরের উদ্দেশ্যে বের হবার পর সেই পুলিশগুলোর সাথে লেখকের আবার দেখা হয় । তারপর কি ঘটেছিল তাদের মধ্যে,, সেটা না হয় বইতেই পড়ে নেয়া যাবে । চমৎকার ছিল ঘটনাটা ।
-
সকাল ৮ টা । বিমান ছুটছে । বিমান থরথর করে কাঁপছে । লেখক এই অংশে যে আবেগ দিয়ে লিখেছেন তাতে আমার ভাবনার জগতেও কাঁপুনি উঠেছিল । ইচ্ছে করছিল লেখকের সাথে
আমিও উড়াল দেই ।
-
বিমান পৌছায় পাকিস্তানের মাটিতে । ১০
দিনের জন্য মাদ্রাসার কাজে লেখককে
পাকিস্তানে কাটাতে হয় । এরপর ১০ দিন আবুধাবিতে । সেই সফর গুলোতে ছিল মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের অপূর্ব সব কাহিনী । এরপর জিদ্দার উদ্দেশ্যে যে বিমানে উঠলেন সেখানে কথা হয় ফিলিস্তীনি এক বৃদ্ধের সাথে । তার পরিবারের সাথে ইহুদী সন্ত্রাসীরা যে বর্বরতা চালিয়েছিল সে ঘটনাটা পড়ে চোখ ছলছল করে উঠেছিলো ।
-
রিয়াদ বিমানবন্দরে বিমান অবতরনের সময় ঘটলো এক ভয়াবহ ঘটনা । ঘটনাটা পড়েছি আর হৃদকম্পন বেড়েই চলছিল । বিমান বারবার আকাশে চক্কর দিচ্ছে কিন্তু অবতরন করছে না । বিমানের সামনের চাকা নামছে না । জরুরী অবতরনের ঘোষনা আসলো । যাত্রীদের মধ্যে কান্নার রোল পরে গেল,, কেউ কেউ সিটবেল্ট খুলে পাগলের মতো আচরন করতে লাগলো । যেন কিয়ামতের এক ক্ষুদ্র নমুনা । আমি
লেখকের মতো সাজিয়ে লিখতে পারছি না,,তাই পরের ঘটনাটা বই থেকেই পড়ে নিবেন ।
-
অবশেষে হিযাজের ভূমিতে পা রাখলেন লেখক । পাহাড়ের কোল ঘেঁষে,, কখনো মরুভূমির বুক চিড়ে বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে বাস ছুটছে । পুরো বাসে ছিল লাব্বাইক ধ্বনি । কল্পনা করতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছিল আমার । লেখা গুলো পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই আমারো মুখ থেকে কতবার বেরিয়ে গেছিলো সেই মর্মস্পর্শী ধ্বনি ।
-
আলোর শহর মক্কা এসে গেছে । দূর থেকে দেখা গেল হারামের আলোকিত মিনার । লেখক এখানে যেভাবে লিখেছেন ইচ্ছে করছে সেই পৃষ্ঠা গুলোর ছবি তুলে পোস্ট করি । কিন্তু তাতো সম্ভব না কেননা এটা রিভিউ লেখার প্রতিযোগিতা ছবি তোলার না । লেখকের সাথে সাথে আমারো সমগ্র সত্ত্বায় যেন এক অদ্ভুত শিহরন অনুভূত হচ্ছিল ।
-
দৃষ্টি অবনত রেখে হারামে প্রবেশ করলেন লেখক । শৈশব থেকে লালিত স্বপ্ন আজ পরিপূর্ন হলো । লেখা গুলো যখন পড়েছি মনে হয়েছিল লেখকের সঙ্গে আমিও প্রবেশ করছি মসজিদুল হারামে । কল্পনার অপূর্ব জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম পাতায় পাতায় । পরবর্তী পৃষ্ঠা গুলোর লেখা পড়তে--পড়তে আপনিও হয়তো কল্পনায় চলে যেতে পারেন কাবার প্রান্তরে ।
-
স্বপ্ন শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল ।
মাদ্রাসার কাজে দেশে ফিরতে হবে তাদের । তাই এখন গন্তব্য নবীজির শহর মদীনাতে । সবুজ গম্বুজের সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য লেখকের
লেখনীতে যে ব্যাকুলতা ছিল তা ছিল দেখার মতো । যা দেখে সবুজ গম্বুজের ভালোবাসায় আমিও সিক্ত হয়ে গিয়েছিলাম ।
-
মদীনার দিন-রাত্রি শেষ । ২৮ শে রামাযান । জিদ্দার উদ্দেশ্যে গাড়িতে চড়লেন তারা । পথিমধ্যে গাড়ির ইঞ্জিন গেল বিগড়ে । একবার না বেশ কয়েকবার । বিমান ছাড়বে রাত ৮ টায় । গাড়ি বিমানবন্দরে পৌছলো রাত ৯ টা বাজার কয়েক মিনিট আগে । এতক্ষনে বিমান হয়তো ডানা মেলেছে আকাশে । কিন্তু সত্যি কি তাই?? কি হয়েছিলো সেদিন?? জানতে হলে বইটা পড়তে হবে । ঘটনাটা ছিল বিষ্ময়কর !!
-
১১২ পৃষ্ঠায় লেখক "মা" সম্পর্কে পাঠকদের একটা চমৎকার মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছেন । যেটা সত্যিই পাঠকদের মনে দাগ কাটার মতো ।
-
এরপর মাঝখানে ঘটে গেল বেদনাবিধুর অনেক ঘটনা । এরই মধ্যে হাফেজ্জি হুজুরের হজ্ব যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে । আফসোস আর অনুতাপের আগুনে লেখক যখন পুড়ে ছাড়-খার হয়ে যাচ্ছিলেন,, ঠিক তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে তার ঘরে আবার মেহমান হয়ে যাওয়ার ডাক । এবার দাওয়াত এসেছে লিবিয়া দূতাবাস থেকে । হজ্বের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত পর-পর যেসব ঘটনা গুলো ঘটলো তা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে,,কাঁদাবে । প্রতিটা কঠিন মুহূর্ত আল্লাহ্ কিভাবে সহজ করে দিয়েছেন-- তা ছিল দেখার মতো । এখান থেকে যেটা শিখেছি সেটা হলো,,"আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য দরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের আন্তরিকতা আর ভালোবাসা" । আর সেটা থাকলে আল্লাহ্ পৌছে দিবেনই তার ঘরের ছায়ায় ।
-
অবশেষে লেখকের সৌভাগ্য হয় হাফেজ্জী হুজুরের সাথে হজ্ব করার । তাদের হজ্বের কাফেলার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন "হাফেজ্জী হুজুর" । তিনি ছিলেন সবার অনুকরনীয় । তাদের কাফেলার হজ্জ্ব যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল তারই জন্য । মুযদালিফায় রাত্রি যাপনের রাতটির কথা লেখক নিজের সেরাটা দিয়ে লিখেছেন । লেখকের লেখায় যেন নূর ঝড়ছিলো । উপরে তারা ভরা আকাশ এবং একটি প্রায় পূর্ন চাঁদ ; নীচে মুযদালিফার মরুভূমির বালু । লক্ষ লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে সেই বালুর শয্যায় । আমিও যেন কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম । কল্পনার জগতে নিজেকে আবিষ্কার করি সেই লক্ষ-লক্ষ মানুষের ভীড়ে ।
-
প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ হজ্ব করতে যায় ঠিকই কিন্তূ নিছক আহকাম ও মাসায়েলের দিক থেকে খুব কম মানুষের হজ্ব সহীহ-শুদ্ধ হয় । লেখক এ কারনে একটি গুরুত্বপূর্ন মেসেজ
দিয়েছেন যে,,"এত কষ্টের হজ্ব যারা করবেন, হোক ফরয বা নফল,তারা যেন নির্ভরযোগ্য কোনো আলিমের তত্ত্বাবধানে পূর্ন প্রস্তুতি গ্রহন করে তারপর যায় । তাহলে হজ্বের ন্যূনতম শুদ্ধতা নিশ্চিত হয় । আরো ভাল হয় প্রতিটি কাফেলায় একজন বিজ্ঞ আলিমের উপস্থিতি যদি নিশ্চিত করা যায়" । এই মেসেজটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ন সেটা বুঝতে পারবেন বৃদ্ধ বয়সে এসেও হাফেজ্জী হুজুরের জীবন্ত হজ্ব দেখে । অনেক কিছু শেখার আছে । তিনি ছিলেন অনুকরনের কেন্দ্রবিন্দু । যখনই লেখকের কোনো ভুল বা বিচ্যুতি ঘটতে যাচ্ছিল তখন তিনিই পথ দেখিয়েছেন । তাই হজ্বের ক্ষেত্রে আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দার
সোহবত খুবই জরুরী । এতে হজ্বের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও অর্জিত হয় ।
-
পরিশেষে বলতে চাই,, এই সফরনামাটি দুই শ্রেনীর লোকের জন্য । এক--- যারা শীঘ্রই বাইতুল্লাহর মুসাফির হতে যাচ্ছেন এবং দুই--- যারা আমার মতো হজ্বের গুরুত্বের প্রতি উদাসীন । যারা মনে করে টাকা আছে হজ্বে না গেলে মানুষ কি মনে করবে!! কিংবা এলাকার লোকের
বাংলা ইসলামিক বই - বাইতুল্লাহর মুসাফির
কাছে "হাজী সাব" উপাধী পাওয়ার মানসিকতা নিয়ে থাকে তাদের চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আনার জন্য বইটি এক কথায় অনবদ্য । যারা হজ্ব সম্পর্কে উদাসীন,, আশা করি তারা এই বইটা পড়লে সফর থেকে লেখকের কুড়িয়ে আনা মুক্তো গুলো তাদের অন্তরে বাইতুল্লাহ্ এবং নবীজির রওজা নিয়ে স্বপ্নের এক নতুন ডানা মেলতে সাহায্য করবে । হৃদয়ে ভালোবাসার নতুন প্রদীপ প্রজ্বলিত হবে আর নতুন নতুন সব অনুভব-অনুভূতির তরঙ্গ দোলায় হৃদয় আন্দোলিত হবে ।
বইটি "দারুল কলম" প্রকাশনী প্রথম প্রকাশিত হয়ঃ---- ২০০৯ সালে ।
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ--- ৪৩১ টি ।
নির্ধারিত মূল্যঃ---- ১৮০ টাকা ।
Review Writter : Sifat M Hasan