বই সানজাক ই ওসমান | Sanjak-E Usman By Prince Muhammad Sajal

বই সানজাক ই ওসমান | লেখক প্রিন্স মুহাম্মদ সজল | Bangla Islamic Book | Bangla Historical Book | Sanjak e Usman 


এই পোস্ট টি পড়ে কেমন লাগবে জানিনা , তবে পোস্টে উসমানী খিলাফতের বেশ কিছু ছবি এড করছি, এগুলো অবশ্যই ভাল লাগবে (ইনশাআল্লাহ্‌) কয়েকটি ছবি অবাক করে দিবে।

বিশেষ করে শেষের দিকে উসমানী সময়ের ফিলিস্তিনের ছবি গুলো।

দেখার অনুরোধ রইলো, আর ভাল লাগলে শেয়ার করবেন। 


Bangla Story বুক রিভিউ বইঃ সানজাক-ই-ওসমান
লেখকঃ প্রিন্স মুহাম্মদ সজল

মুদ্রিত মূল্যঃ হার্ডকভার ৫০০, পেপারব্যাক ৪৫০।
গার্ডিয়ান প্রকাশনী। 

10274258_758611214171202_7734342880169792590_n

10264617_758611544171169_5872516168075263211_n


10342485_758612984171025_5652950062291549829_n

"কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না লাল মুখওয়ালা, ছোট ছোট তির্যক চোখ ও চ্যাপ্টা নাক বিশিষ্ট তাতারেরা তোমাদের উপর চড়াও হবে।তারা পূর্বদিক থেকে আসবে এবং পশম লাগানো চামড়ার জুতা পরবে, তাদের মুখ হবে ঢালের মতো প্রশস্ত। তারা তোমাদের এমন ভাবে আছন্ন করে ফেলবে যেমন করে পঙ্গপালের ঝাক আকাশকে ঢেকে দেয়"
সহীহ বুখারীঃ ২৭৭০
রাসূলের এই হাদীসটি সত্য হয় ওনার মৃত্যুর আরো সাড়ে পাঁচশ বছর পরে।
পৃথীবিতে কেয়ামতের আগে যেন নেমে আসে যেন আরেক কেয়ামত।

ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে মোঙ্গলিয়ান স্তেপ থেকে উঠে আসে এক ঝড়, এই ঝড়ের নাম মোঙ্গল ঝড়, আর এটার নেতৃত্বে ছিলেন নিজেকে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে আযাব দাবী করা চেঙ্গিস খান।
মাত্র ২০ বছরের মধ্যে নরকে পরিনত হলো পৃথীবি, বদলে গেল পৃথীবির মানচিত্র।

চীনের জি জিয়া,জিন থেকে শুরু করে তুর্কিস্তান, মার্ভ, তুস,খোরাসান, ককেশাস, রাশিয়া, হিন্দুস্তান কেউ ই রক্ষা পায় নি এই ঝড়ের কবল থেকে। এমন ই এক ঝড় যা যতদূর আগায় পিছনে ফেলে যায় ধ্বংস আর লাশের স্তুপ, কোন রাজ্য জয় করলে সেখানের ঘর-বাড়ি দোকান-লুট করা হয় তারপর সেখানের বাসিন্দদের নিরাপত্তার কথা বলো নিরস্ত্র করে খোলা জায়গায় দাড় করায় তার পর শুরু করে হত্যা কান্ড, কখনো কখনো সৈন্যপ্রতি হত্যার সংখ্যা দাড়ায় ৩০০-৪০০ জন।

photo4

photo10

এর মধ্যে আবার তাদের নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে একটা গুজব, যা তাদের যুদ্ধ জয়ে ভূমিকা রাখে, তা হলো ইয়াজুজ-মাজুজ ভীতি।
ইসলামে যেহেতু বলা আছে কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে ইয়াজুজ মাজুজ এর আগমন ঘটবে।
তাদের নৃশংসতা দেখে লোকে তাদের ইয়াজুজ মাজুজ ভাবতে শুরু করে

চেঙ্গিস খান মারা গেলে ও ঝড় থামার কোন লক্ষন ই ছিলো না, তার দেখানো পথ ধরেই সমান তালে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায় তার বংশধরেরা,

তার ই এক বংশধর হালাকু খানের হাতে ধ্বংস হয় আরব্য রজনীর বাগদাদ
তৎকালীন মুসলিম জাহানের কেন্দ্রবিন্দু, জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানী বাগদাদ।


বলা হয়ে থাকে তখনকার পৃথিবীর দশ বইয়ের নয়টির ই কপি ছিলো বাগদাদের লাইব্রেরিতে।


বাগদাদ পতনের পর শুধু মুসলিম জাহান না সমগ্র বিশ্ব ই বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।


আবার ওদিকে চেঙ্গিস খানের বংশধরদের অনেকেই চলে আসে ইসলামের ছায়াতলে,
তাদের একজনের নাম বারকি খান।


photo17
বাগদাদ পতনের কথা তার কাছে পৌছায় ছয় মাস পর, শুনে সে ক্ষোভে ফেটে পড়ে।


এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়।শুরু হয় মোঙ্গলদের মাঝে গৃহযুদ্ধ।


ওদিকে বাগদাদ এর পর তারা হাত বাড়ায় মিসরের দিকে।
মিসরে তখন মামলুকদের রাজত্ব, মামলুকরা সাধারণত দাসের জাত।তাদের সুলতান ও উঠে আসে দাস থেকেই।


এই মামলুকরা ই আইন-জালুতের যুদ্ধে মোঙ্গলদের ট্যাকটিক্স ব্যবহার করে তাদের ই হারিয়ে দেয়।


যে দুর্দান্ত দাপট নিয়ে মোঙ্গলরা শুরু করেছিল। শক্তি সামর্থ আর দানবীয় নিষ্ঠুরতা নিয়ে যে কিংবদন্তীর জন্ম হয়েছিল তা বড় সড় ধাক্কা খায় আইন-জালুতের যুদ্ধে সাইফউদ্দিন কুতুজের হাতে কিতবুকার পরাজয়ে।এই যুদ্ধে আরো একজনের কথা না বললেই নয় তিনি হলেন সুলতান বাইবার্স যাকে দ্য প্যান্থার বলে ও ডাকা হয়।
বাগদাদ পতনের দুবছরের মাথায় মামলুকরাি আবার বাগদাদকে গড়ে তুলতে এগিয়ে আসে।

photo17

Bangla Boi সানজাক ই ওসমান

মোঙ্গলদের হাত থেকে কোন মতে প্রান বাচিয়ে ইরান-তুর্কিস্তান থেকে আনাতেলিয়র দিকে রওয়ানা হয় কিছু মানুষ, তাদের মধ্যে একজনের নাম গাজী আরতুরুল বে ।

আনাতেলিয়ায় পাহাড়ের উপর থেকে দেখেন নিচে যুদ্ধ হচ্ছে, কার কার মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে তিনি তার কিছুই জানেন না।তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন।দুর্বল দলের পক্ষ থেকে, তিনি যখন দেখলেন একটা দল অপর দলকে ঘিরে আসছে তখন তিনি তার লোকদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন সবল দলের উপর।
তার অপ্রত্যাশিত আক্রমনে যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল এবং দুর্বল দলটি জয় লাভ করলো।


photo21
যুদ্ধটি ছিলো সেলজুক আর মোঙ্গলদের পক্ষে এবং তার সাহায্যর কারনে সেলজুকরা যুদ্ধে জয় লাভ করে। 
এবং তারা খুশি হয়ে আরতুরুল
 বে কে আনাতেলিয়ার সবচেয়ে ছোট বেইলিক দান করেন।

বাগদাদের দেয়াল ভেঙ্গে যেবার হালাকু খানের সৈন্যরা ঢুকে পড়ছিলো সেই বছরের শীতেই আনাতেলিয়ার উত্তর-পশ্চিমে সেগুত নামের ছোট একটা শহরে কায়ি গোত্রের বে আরতুরুল গাজীর ঘরে একটা ফুটফুটে শিশুর জন্ম হয়।

বাচ্চাটার নাম ওসমান, ওসমান মানে হাড় গুড়িয়ে দেওয়া পলোয়ান।সেই ওসমান যার নামেই এই বইয়ের নামকরন।

ধীরে ধীরে ওসমান বড় হতে লাগলো সাথে আরতুরুল বে এর ছোট বেইলিক টাও।

একদিন ওসমান তার বাবার সাথে তার বাবার আলেম-দরবেশ বন্ধু এদেব আলীর বাড়ি বেড়াতে যান।

তিনি সেখানে রাতে থেকে গেলেন।
ভোরের কাছাকাছি সময়ে তিনি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন।


তিনি দেখলেন শায়খ এদেব আলীর বুক থেকে একটা চাঁদ উঠলো, সেই চাঁদ এসে ঠাই নিলো ওসমানের বুকে।তারপর তার নাভি ঢেকে গজিয়ে উঠলো এক বিশাল গাছ।

গাছটি সুন্দর সবুজ ডালপালায় ভরে উঠলো, সময়ের সাথে গাছটি বড় হতে হতে পেরিয়ে যেতে লাগলো চারটি পর্বতমাল; বলকান, আলবুর্জ,ককেশাস আর এটলাস।

গাছের শেকড় থেকে বইতে লাগলো চার চারটি নদী, দানিয়ুব, ইউফ্রেতিস, তাইগ্রীস আর নীল।গাছের পাতাগুলো রূপ নিলো তরবারির ফলায়।


সে বাতাসে একেকটি পাতা একেকটি তরবারি হয়ে উড়ে যেতে লাগলো কনস্ট্যান্টিনোপল এ।
দুই মহাদেশ আর দুই সমুদ্রের দেশ।


photo26
তারপর কনস্টান্টিনোপল পরিনত হলো আংটির কেন্দ্রে সেই আংটি ওসমান যখন হাতে পরলেন তখন তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

কি ছিলো সেই স্বপ্নের ব্যাখা? কিভাবে ওসমান ও তার উত্তরসূরি ওরহান, মুরাদ, বায়েজিদ, মুহাম্মদ, দ্বিতীয় মুরাদ আর তার বেয়াড়া ছেলে দ্বিতীয় মোহাম্মদ তার দেখা স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিলেন?

কিভাবে গড়ে তুললেন বিশাল এক সালতানাত, আবার ভেঙ্গে যাওয়া সালতানাত নিয়ে নিয়ে কিভাবে ঘুরে দাড়ালেন।


কিভাবে রাসূল (সঃ) এর ভবিষ্যতবাণী সত্য হলো, "নিশ্চয় কনস্টান্টিনোপল মুসমানরা জয় করবে, কত সৌভাগ্যবান সেই যুদ্ধের সৈন্যরা কত সৌভাগ্যবান তাদের নেতা"

অবশ্য কনস্টান্টিনোপল জয়ের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে সেই ইয়াজিদ থেকে শুরু করে আব্বাসিয়া খলিফা সুলেমান ব্যর্থ হওয়ার পরে কিভাবে অটোমানরা জয় করলো?


জানতে হলো পড়ে ফেলুন সানজাক-ই-ওসমান।

এটা কোন নিয়মিত ইতিহাসের বই নয়।এটা একই সাথে ইতিহাস ফিকশন আর থ্রিলার।আজকের পৃথীবি কিভাবে নির্মান হলো তা জানতে এই বই আপনাকে সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ।


"This is the time travel
Start your journey!!


photo29


সানজাক ই ওসমান নিয়ে ব্যাক্তিগত কিছু কথা

বইটি লেখার জন্য লেখককে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তা বইটি হাতে নেওয়ার পরে বুঝতে পেরেছি,

বইয়ের তথ্যগুলো তিনি নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে নিয়েছেন এবং বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠার নিছে লেখক জুড়ে দিয়েছেন তথ্যসূত্র।


একটা মজার ব্যাপার হলো বইয়ের পান্ডুলিপি তিনি পুরোটাই টাইপ করেছেন ফোনের মাধ্যমে।


লেখককে একবার প্রশ্নকরা হয়েছে কেন তিনি বইটি লিখছেন, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন ইতিহাসের দায় মিটাতে।


অনান্য বই বা টিভি সিরিয়ালে যেভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয় তা দেখে, পাঠকদের সত্য ইতিহাস জানানোর জন্য ই বইটি লিখা।


আর বইয়ের কাগজের মান, বাইন্ডিং, কাভার খুবই উন্নত মানের যা বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় না।এজন্য গার্ডিয়ান প্রকাশনী সত্যই প্রশংসার দাবিদার।

                                 sanjak e usman bangla book


সানজাক ই ওসমান | লেখক প্রিন্স মুহাম্মদ সজল    2nd Review From Books Yard.


Sanjak-E Usman By Prince Muhammad Sajal - Bangla Islamic Book Pdf 


একটা মানুষ কতোটা রক্ত পিপাসু হতে পারে? কতো অযুত-নিযুত বনী আদমের নিষ্পাপ রক্তে তার হাত ভিজতে পারে?! 


70 Photos of Ottoman Palestine

56

52

সর্বোচ্চ কতো মানুষের হত্যাকারী হতে পারে সে? তার নিরেট সংখ্যা হয়তো কেউ গণনা করে রাখে নেই। তবে আধুনিক যুগের সর্বোচ্চ মানুষ হত্যাকারী কুখ্যাত হিটলার,স্ট্যালিন,মাওসেতুং বা বুশ, এরা সবাই মিলে যতো মানুষ হত্যা করেছে তা হয়ত মধ্যযুগের সেই নর পিশাচের অর্ধেকের সমানও হবে না!! তাহলে একটু বুঝেনিন সে একাই কতো লক্ষ কোটি বনি আদমকে হত্যা করেছে!!সেই ব্যক্তিটির নাম তেমুজিন। 

54
ইতিহাসে যিনি চেঙ্গিস খান নামে পরিচিত। কিন্তু তার এই পাষান হয়ে ওঠার পিছনেও আছে কিছু নিষ্ঠুর ও লোমহর্ষক গল্প। 
তেমুজিন তার ছোটবেলায় দেখেছে সৎভাইয়ের দ্বারা রাতের পর রাত নিজের মাকে ধর্ষিতা হতে! 

দেখেছে কিশোর বয়সে নিজের প্রিয়তমাকেও ধর্ষিতা হতে! তখন থেকেই বালক তেমুজিনের নিষ্ঠুর চেঙ্গিস খান হয়ে ওঠার গল্প শুরু!

একুশ বছরের সদ্য এক যুবক মাত্র। জন্ম সূত্রে শাহজাদা হলেও রাজনৈতিক কারনে নিজের প্রাসাদেই ছিলেন উপক্ষিত।


 দেখতে দেখতে বাবার গোটা সাম্রাজ্যটা চলে গেছে মঙ্গল সাম্রাজ্যের উদরে! তিনি চলেন গেলেন সিমান্তের দিকে যদি সেখান থেকে কিছু সৈন্য বাহিনি গঠন করা যায় এই আশায়। 

অন্তত লড়াই করে সাহসি মৃত্যু বরন করা যাবে! খবর পেয়ে চেঙ্গিস খান নিজেই ছুটে গেলো দুই লাখ সৈন্য নিয়ে! মাত্র বিশ হাজার সেনা নিয়ে যুবকটি পরে গেলেন চেঙ্গিস খানের দুই লাখ সেনার বেষ্টনির মধ্যে! মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও লড়াই শুরু করলেন!

 যখন তিনি শত্রুর বুহো ভেদ করে বেড়িয়ে এলেন তখন তার সাথে জীবিত ফিরে এসেছে মাত্র সাতাশ জন সেনা!!! সেইদিন চেঙ্গিস খান দেখেছিলেন মাত্র একুশ বছরের প্রকৃত সাহসি এক যুবকের বীরত্ব!

 চেঙ্গিস খান তার বীরত্ব দেখে যে কথাটি বলেছিলো তা ইতিহাসের পাতায় আজো সংরক্ষিত আছে! সে বলেছিলো “ ধন্য সেই মা, যে এমন ছেলে পেটে ধরেছে। বাবার তো চাই এমনই এক ছেলে। ইশ, আমারও যদি এরকম একটা ছেলে থাকতো!!! " সেই যুবকটি ছিলেন খাওয়ারিজম শাহজাদা বিখ্যাত বীর জালাল উদ্দিন মিংবার্নু!!! 

57
মসুল! এটা সেই সময়ের একটি সমৃদ্ব শহর। এর আমিরের কাছে একই সাথে দুইটা চিঠি এসেছে। 

একটা বাগদাদ থেকে আব্বাসিয় খলিফা পাঠিয়েছেন। তাতে লেখা ছিলো “উন্নত মানের কিছু সেতারা এবং ভালো কিছু বেহালা পাঠিয়ে দেওয়ার আদেশ "!! 

অন্য চিঠিটা এসেছিলো মঙ্গলদের পক্ষ থেকে। তাতে লেখা ছিলো “ শহর থেকে আমরা উন্নত মানের কিছু অস্ত্র ক্রয় করতে চাই "!!

দুইটা মাত্র চিঠি। কিন্তু এর দ্বারা দুইটা জাতির ভাগ্য গণনা করা সম্ভব। যা হবার তাই এ হয়েছিলো। মঙ্গলরা বাগদাদকে এমন ধ্বংস স্তুপ ও মৃত্যুপুরিতে পরিণত করেছিলো যে ইতিহাস তা কখনোই ভুলতে পারবে না! 



মঙ্গল ঝড়ে যখন চীন,বাগদাদ,খাওয়ারিজম খোরাসান সহ সম্পূর্ণ মধ্য এশিয়া একদম লন্ডভন্ড হয়ে গেলো, তখন তাদের নজর গিয়ে পরলো মিশর ও আনাতোলিয়ার উপর।

তখনি এই অপরাজেয় মঙ্গলিয়ান বর্বর বাহিনিকে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করাইলেন মিশরের মামলুক সুলতানরা! মিশরের সিংহ খ্যাত সাইফুদ্দিন কুতুজ, দ্যা পান্থার খ্যাত রুকুনুদ্দিন বাইবার্স এবং সুলতান কালাউন এরা একে একে মঙ্গল বাহিনিকে মিশর ও সিরিয়া থেকে কীটপতঙ্গের মতো তাড়িয়ে দিলেন। চূরমার করে দিলেন মঙ্গলদের অপরাজেয় দম্ভ ও অহংকার। 

58


Bangla Book PDFBangla Islamic Book Free Pdf Download

58

বর্বর অসভ্য জাতি সাময়িক ভাবে জয়ী হলেও সভ্যতার জয় হয় স্থায়ী। কারন আদর্শ তার উজ্বল দীপ্তি দিয়ে জয় করে নেয় বর্বর জাতির হৃদয়কে। সেরকম ই হয়েছিলো মঙ্গলদের সাথেও।

 যে মঙ্গলিয়ান জাতি মুসলিম বিশ্বে নামিয়ে এনেছিলো কেয়ামতের বিভীষিকা! সেই তাদের মাঝেই পৌছে গেলো ইসলামের আলো! দেখতে দেখতে মঙ্গল সাম্রাজ্যের তিন চতুর্থাংশ অঞ্চলই হয়ে উঠলো মুসলিম অধ্যুষিত।কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো এটা?! তাদের মাঝে সর্বপ্রথম কিভাবে পৌছাইলো ইসলামের আলো?!

পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে দুই দলের যুদ্ধ দেখছে একটি জাযাবর কাফেলা। এক পক্ষের সৈন্য অনেক কম। 

অপর পক্ষের সৈন্য অনেক বেশি। ছোট দলটি ক্রমশই দুর্বল হয়ে পরছে। পরাজয় তাদের নিশ্চিত। জাযাবর কাফেলা প্রধান টগবগে এক বীর যুবক। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তার সাথিদেরকে নিয়ে ছোটদলটাকে সাহায্য করবেন। 

কেননা এই মুহুর্তে তারা মজলুম! হঠাৎ পাহাড়ের দিক থেকে হুঙ্কার ভেসে এলো ‘হাইদির আল্লাহ'! বীর বিক্রমে লড়াই করে ছোট দলকে জয়ী করলেন! যুদ্ধ শেষে জানা গেলো এই দলটা ছিলো সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিনের ফৌজ!! আর এই বীর যুবকটি ছিলেন বিখ্যা গাজি আর্তুরুল বে। 

59

তার হাত ধরেই শুরু হয় নতুন এক সাম্রাজ্যের উথান! তার ছেলে উসমানের হাতে যার পূর্ণতা আসে। নাম তার উসমানি(অটোমান)খিলাফাত! কিন্তু পথটা এত সহজ ছিলো না। 

কদমে কদমে ছিলো বাঁধা বিপত্তি। একদিকে মঙ্গল বাহিনি অন্যদিকে আছে হাজার বছরের পুরনো শক্তি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য! সেই সাথে সেলজুকি সাম্রাজ্যের আমীর ওমারাদের মাঝে ছিলো গাদ্দারী আর বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিযোগিতা! তবুও কিভাবে সেই দূর্গম পথ মাড়িয়ে একটা মুসলিম সাম্রাজ্য গড়ে উঠলো?! কিভাবে সেটা প্রায় ছয়শত বছর স্থায়ী হয়েছিলো?!

60
থান্ডারবোল্ট! তুর্কি ভাষায় বলে ‘ইয়ালদ্রিম'! বাংলায় যাকে বলে বজ্র!! এটা ছিলো উসমানি সুলতান বায়জিদের উপাধি! 
এই নাম তার শুধু শুধু হয়নি। 

তিনি শত্রু পক্ষের জন্য সাক্ষাত বজ্রের মতোই আপতিত হতেন। তিনি এত ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে বেড়াতেন যে তার গতিবিধি লক্ষ করা ছিলো অসম্ভব! কিন্তু এইবার তার মুখোমুখি দাড়িয়েছে ইতিহাসের অন্যতম সাহসি বর্বর সেনাপতি তৈমুর লং! একপাশে সাহসি তুর্কি জাতি অন্যদিকে মঙ্গল রক্তের তৈমুর! এ যেন বাঘে-মহিষে লড়াই!ইতিহাসের যে সকল যুদ্ধ ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এটাও ছিলো তার মধ্যে একটা। 

64

কি হয়েছিলো সেই যুদ্ধের ফলাফল?! কে হয়েছিলো বিজয়ী?! শক্তিশালি তৈমুর নাকি বাইজিদ ইয়ালদ্রিম?!খন্দক যুদ্ধের সময় নবী(স:) বলেছিলেন "আমার উম্মত রোম,পারস্য ও কস্তুন্তুনিয়া(কন্সট্যান্টিনোপল) তিনটি সাম্রাজ্যই জয় করবে "!! তার ভবিষ্যদ্বানীর প্রথম দুই সাম্রাজ্য তো ওমর(রা:) এর আমলেই জয় করা হয়েছিলো।

 কিন্তু বাইজান্টাইন এর রাজধানি কন্সট্যান্টিনোপল জয় করার জন্য মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ্য আটশতো বছর!! যে সেনাপতি এবং যে ফৌজ এই এটা জয় করার কৃতিত্ব অর্জন করবে তাদের জন্য নবী(স:) আটশত বছর পূর্বেই দিয়েছেন জান্নাতের অগ্রীম সুসংবাদ!! এর প্রতিরক্ষা ছিলো তখনকার দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিরক্ষা দেয়াল। যা বিগত একহাজার বছরে কেউ ই জয় করতে পারে নেই।

65 
সব আক্রমন,অবরোধ এর দেয়ালের সামনে এসেই ব্যার্থ হয়ে যেত। কিন্তু যিনি এই অপরাজেয় দেয়ালকে ভেঙ্গে নবীর ভবিষ্যদ্বানীকে বাস্তবায়ন করলেন তিনি ছিলেন মাত্র একুশ বছরের সাহসি বীর যোদ্ধা সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ!! 

তিনি এই যুদ্ধে এমন কিছু কৌশল অবলম্বন করেন যা বাইজান্টাইন সম্রাট কল্পনাও করতে পারে নেই! কিন্তু কী ছিলো সেই কৌশল?! কিভাবে সম্বব হয়েছিলো শস্রাধিক বছর ধরে অপরাজেয় দম্ভের সাথে দাড়িয়ে থাকা শহরের পতন ঘটানো?! 

সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ট উসমানি সুলতান। একে একে তিনি জয় করে নিলেন গ্রিস,পোল্যান্ড,হাঙ্গেরি সহ ইউরোপের বিখ্যাত সব শহর! মুহাম্মদ আল ফাতিহ ইউরোপের কাছে হয়ে উঠলেন মূর্তমান এক আতঙ্ক!! ইউরোপকে ইসলামের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোপ ঘোষনা করলেন নতুন এক ক্রুসেডের! 
15
কিন্তু এবারও ফাতিহ ক্রুসেডের সম্মিলিত বাহিনিকে একদম পর্যদূস্থ করে ক্রুসেডের কোমরই ভেঙ্গে দিলেন!! স্বমূলে উপরে ফেল্লেন ক্রুসেডের ভিত! 

তিনি এবার ঘোষনা দিলেন তার পরবর্তি টার্গেট হচ্ছে রোম এবং পোপের প্রাণকেন্দ্র ভ্যাটিক্যান! ইউরোপে এই খবর পৌছা মাত্রই সাধারন লোকেরা পালাত শুরু করলো! 

স্বয়ং পোপ নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন ভ্যাটিকান ছেরে দুরে কোথাও পালিয়ে যাবেন!! কেননা আল ফাতিহকে ঠেকানোর সাধ্য কার কাছে নেই! কী ঘটেছিলো তারপর? তিনি কী পেরেছিলেন ভ্যাটিকান অভিযানে জয়ী হতে? 

নাকি অপরাজিত সুলতান ফিরে এলেন পরাজয়ের স্বাদ নিয়ে?! নাকি ঘটেছিলো অন্য কিছু?!
35
হেরেম!! হেরেম শব্দটি শুনলেই আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে সুলতানদের যৌনপল্লী বা এই টাইপ এর ঘৃণীত কিছু একটা। 

যেখানে সুলতান বা শাহজাদারা চাইলেই অবাধ মেলামেশা করতে পারে। এ যেন মনোরঞ্জনের এক আজব দুনিয়া!! কারন হেরেম বলতে শুরু থেকেই এরকম কিছু ধারণা আমরা লালন করে আসছি! কিন্তু উসমানি সুলতানদের হেরেম ছিলো সম্পূর্ণ অন্যরকম! 

এর উদ্দেশ্য ছিলো বিশেষ কিছু! কেননা এই হেরেম প্রধানের দায়িত্বে থাকতো স্বয়ং সুলতানের মা! তিনি ই এর সার্বিক দেখা শুনা করতেন। তাহলে কেন গঠন করা হয়েছিলো এই হেরেম?! 

কি ছিলো এর উদ্দেশ্য?!এই হেরেমের লোকগুলোর কাজ ছিলো কী? এখানে কারা বাস করতো?! কেন তাদেরকে এখানে আনা হতো?! এরকম অজস্র প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে। বইটির একেবারে শেষ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে ইউরোপের অপর প্রান্ত নিয়ে। 

এক প্রান্ত দিয়ে যখন উসমানীদের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল মুসলিম শাসনের ছায়াতলে আসছিলো ঠিক সেই সময়ই ইউরোপের অপর প্রান্তে স্পেন-পর্তুগাল জুড়ে বিস্তৃত ইসলামি সাম্রাজ্য 'আন্দালুস' মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো! 

আটশতো বছর ধরে মুসলিম শাসিত এই বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত বীর 'তারিক বিন যিয়াদ'!

 মাত্র বিশহাজার সেনা নিয়ে জয় করেছিলেন এই সাম্রাজ্য! অথচ তখন এই বীর তারিকের বয়স ছিলো মাত্র চব্বিশ বছর!!! লেখক খুব সংক্ষেপে আন্দালুসের প্রেক্ষাপট এবং সেই সব কারনগুলো বর্ণনা করেছেন যার জন্য এত বিশাল বড় সাম্রাজ্যটি মুসলিমদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিলো। 

#পাঠ প্রতিক্রিয়া:সানজাক ই উসমান। আমার কাছে এটাকে শুধু মাত্র দুইটা মলাটের মাঝে আটকে পরা কিছ পৃষ্ঠা মনে হয় নেই। বরং বলা যায় এটা একটা টাইম মেশিন! একটা অতিত ট্রাভেলার! যার দুই মলাটের ডানায় ভর করে আপনি পৌছে যাবেন সাত-আটশতো বছর পূর্বের দূর অতীতে! ভ্রমণ করবেন দ্বাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দির অদ্ভুত এক পৃথিবীতে! নিজেকে মনে হবে সেই যুগেরই এমন একজন অশ্বারোহী যার অশ্ব বুর্খান খালদুন থেকে দৌড় শুরু করেছে আর আর একদম জাবালে তারিক(জিব্রাল্টার) এ গিয়ে হাঁফ ছেড়েছে! মাঝপথে আপনাকে ভ্রমন করিয়েছে মঙ্গোলিয়ান স্তেপ থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক আমু দরিয়া, প্রাচীন দজলা, ফোরাত, সির দরিয়া, সিন্ধু নদ, বিখ্যাত নীল নদ, ইউরুপের দানিয়ুব, ভল্গা সহ নাম না জানা অসাধারন সব নদীর তীরে! শুধু নদী কেন? পাহাড়ে ভ্রমন করতে ইচ্ছা করেনা? হুম তাইতো এই ট্রাভেলার আপনাকে নিয়ে যাবে বিখ্যাত তিয়েনশান, হিন্দুকুশ, আলবুর্জ, কারাকোরাম, অ্যাটলাস, ককেশাস পর্বতমালা সহ এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন নয়নাভিরাম পর্বতমালার পাদদেশে! মনে হবে যেন সত্যিই আপনি ছুটে বেড়াচ্ছেন এসব পাহাড়ী গিরিপথে!! আচ্ছা দুই তিনটা মহাদেশ চষে বেড়াবেন অথচ কয়েকটা সাগর-মহা সাগর পাড়ি দিবেন না তা হয় কি করে?! তাইতো আপনার এই পাগলা ঘোড়া আপনাকে নিয়ে পাড়ি দিবে কৃষ্ণ সাগর, মারমারা সাগর, ভূমধ্যসাগর সহ অসাধারন এজিয়ান সাগর!! মালাক্কা প্রনালী, দার্দানেলিস প্রনালী, বিখ্যাত বসফরাস প্রনালী এ সবই হবে আপনার পর্যটন কেন্দ্র!! একপাশে সমুদ্রের নীল জলরাশি, অন্য পাশে দানবের মতো দাড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন পর্বতমালা, সেই সাথে আছে যুদ্ধের উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা! এ যে কেমন এক অনুভূতি তা বর্ণনা করার মতো শব্দ আমার ঝুলিতে খুজে পাচ্ছি না! এটি যে আপনাকে শুধু বন-বাদাড়, সমুদ্র আর পহাড়ের পাথুরে এলাকায় ঘোড়াবে তা নয়। এটি সর্বপ্রথম আপনাকে নিয়ে যাবে দ্বাদশ শতাব্দির পৃথিবীর ত্রাস চেঙ্গিস খানের রাজকীয় তাবুতে! সেখান থেকে যাবেন বিখ্যাত খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের রাজদরবারে! দেখবেন তাদের পতনের করুন দৃশ্য! এর একটু পরেই চলে যাবেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় সর্বোচ্চ শিখরে পৌছানো শহর এবং তখনকার দুনিয়ার সর্বাধুনিক নগরী বাগদাদে। দেখবেন সেখানের সেই কেয়ামতের বিভিষীকা! দেখবেন ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতা! পরবর্তি স্পট হিসেবে আপনি উপস্থিত হবেন মিশরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সালতানাত মামলুকদের রাজপ্রাসাদে! একদম কাছ থেকেই উপভোগ করবেন আইন জালুতের সেই মহা সমর! দেখবেন শতাব্দির সেরা অপরাজেয় বাহিনিকে কিভাবে মামলুক সাম্রাজ্যের সিমান্তছাড়া করা হয়! সেখানে দেখবেন সাইফুদ্দিন কুতুজের বীরত্ব, রুকুনউদ্দিন বাইবার্সের ক্ষিপ্রতা, সুলতান কালাউনের অসীম সাহসিকতা! এখান থেকেও বিদায় নিয়ে যেতে হবে। হাজির হবেন দিনে দিনে ক্রমান্বয়ে ধ্বসে পরা সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজভবনে! সেখান থেকেই প্রবেশ করবেন আপনার চূড়ান্ত গন্তব্য 'সানজাক ই উসমান' তথা উসমানীদের দুনিয়ায়!!!!
এক কথায় অসাধারণ একটি বই। শুধুমাত্র এরকম একটি রিভিউ দিয়ে এর আবেদন প্রকাশ করা কোনো ভাবেই সম্ভব বলে মনে হয় না। তবুও বইটির সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যই সামান্য একটু চেষ্টা মাত্র। 
#বই পরিচিতি:বই: সানজাক ই উসমান।লেখক: প্রিন্স মুহাম্মাদ সজল।প্রকাশনী: গার্ডিয়ান পাবলিকেশান।ধরণ: ইতিহাস। প্রচ্ছদ: অর্ণব হাসান।প্রকাশ: এপ্রিল ২০১৮।পৃষ্ঠা: ৪৩০।মূল্য: ৫০০ টাকা।


Muhibbullah Bin Atik

39




Tags


Bangla Boi
Bangla Book PDF
Bangla Story 
Bangla Islamic Book Pdf


Next Post Previous Post