Muslim Spain and Portugal – Hugh Kennedy | Book Review In Bangla
Muslim Spain and Portugal – Hugh Kennedy | Book Review In Bangla
এক পোলিশ ডিপ্লোম্যাট ও নিকাবি মারিয়াম
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত তিনটি দেশের মানুষ আমার কাছে অধিক হমোজেনিয়াস মনে হয়েছে । চেক রিপাবলিক, স্লোভাকিয়া আর পোল্যান্ড । এই দেশগুলুতে ‘মাল্টি কালচারাল’ ফেস খুব কমই দেখবেন, তাই ভিন্ন জাতীর প্রতি তাদের সহনশীলতা অপেক্ষাকৃত ভাবে কম ।
উইকেন্ড, রবিবার, পোল্যান্ডের ‘স্টেচীন’ (Szczecin) থেকে সকাল বেলায় ৭ ঘণ্টার জার্নিতে ক্রাকো’র উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠে বসেছি । উঠার সময় কিভাবে যেন হাতের মধ্যমায় চোট পেয়ে একটু রক্ত বের হচ্ছিল খেয়াল করিনি ।
সোমবার দিন স্পেনের মুরসিয়া’য় একটা জ্রুরি মিটিং এটেন্ড করতে হবে, এবং একটি মাত্র ইভনিং ফ্লাইট ক্রাকো থেকে স্পেনের আলমেরিয়ায় শিডিউল আছে । আল্মেরিয়া থেকে ট্রেইনে মুরসিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনায় ইভনিং ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই লম্বা ট্রেইন জার্নি ‘কবুল’ করে নিলাম ।
সিট নাম্বার দেখে নিজের জায়গায় বসে একটা বই পড়ছিলাম, পশ্চিমা বিশ্বের জাঁদরেল ঐতিহাসিক হিউ কেনেডি’র (Muslim Spain and Portugal – Hugh Kennedy) মুসলিম স্পেইন ও পর্তুগাল ।
পরের স্টেশনে এক মহিলা উঠলেন বয়স ত্রিশের কোটায় হতে পারে, আমার ঠিক সামনের চেয়ারে বসার আগেই বল্লেন ‘হাই’, আমিও প্রতিউত্তরে বল্লাম হ্যালো ।
পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই--
– হাই, আর ইউ ওকে ?
- আমি থতমত খেয়ে বল্লাম, ইয়েস আই এম পারফেক্টলি ওকে ! হোয়াই আর ইউ আস্কিং সো ?
- হেভ ইউ নটিসড দেয়ার ইজ ব্লাড অন ইউর ফিঙ্গার ?
- ওহ ! ইজ ইট ? আই সি ! আই ডিড নট নটিস, নিদার আই রিয়েলাইজড ! হাউ ডিড ইট হ্যাপেন
- এনিওয়ে, আই উইল কল দা এটেন্ডেন্ট ফর ফার্স্ট এইড !
- থ্যাংক ইউ সো মাচ, আই এপ্রিসিয়েট ইয়র হেল্প !
- নট টু ওয়রি বলেই মেয়েটি, ট্রেন যে দিকে যাচ্ছে সে দিকের আরেকটি বগির দিকে চলে গেলেন ।
- ফার্স্ট এইড বক্স সহ ট্রেন এটেন্ড এসে হাজির হওয় মাত্র বল্লাম, আই ডোন্ট নো ইউর নেম ইয়েট, আই এম মনোয়ার !
- এনি ওয়ে, মাই নেম ইজ হানা (Hanna), লেট হিম ডু দা ব্যান্ডেজ ফার্স্ট !
ফাস্ট এইডার আমার আঙ্গুলটি ব্যান্ডেজ করে আরেক সেট ব্যান্ডেজ/গজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, তুমার গন্তব্যে পৌঁছে আঙ্গুলটা ভালো করে ওয়াশ করে নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিও, বলেই চলে গেলো ।
কথোপকথনে জানতে পারলাম, ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইয়নিয়নের হেড অফিসে পোলিশ ডিপ্লম্যাট । আমার মতই, স্পেনের আল্মেরিয়া থেকে ব্রাসেলসের কানেক্টিং ফ্লাইট ধরবে আর আমি যাবো আলিকান্তে হয়ে মুরসিয়ায় ।
মনে মনে ভাবছিলাম, পোলিশরা হমজেনিয়াস বিধায় অন্যান্য দেশের মানুষ কম দ্যাখে নিজ দেশে, মুসলমানদের ব্যাপারে ইদানিং পশ্চিমা মিডিয়ায় যে নেগেটিভ প্রচার প্রপাগান্ড্যা হচ্ছে, আমার কালো চামড়া, দাড়ি, তার উপর যে বইটা হাতে তা দ্যাখে খুব একটা ভালো চোখে দেখবে বলে মনে হচ্ছে না ।
পরমুহূর্তেই ভাবলাম, যেহেতু ব্রাসেলসে কাজ করুয়া ডিপ্লম্যাট, সিরিয়াসলি রেসিস্ট হবে না ।
যাক, নিজ থেকেই বলতে লাগলো, হিউ কেনেডি পশ্চিমা বিশ্বের ভালো একজন ইতিহাসবিদ তাঁর বই আমি পড়েছি । স্পেনের মুসলমানদের উপর তাঁর বইগুলু খুব অথেনটিক, খ্রিষ্টানদের পক্ষপাতিত্বমুলক না, যদিও লেখক একজন খৃস্টান । আম হানা'র কথায় সায় দিলাম ।
গত মাসে অফিসের কাজে এক সপ্তাহ লন্ডনে ছিলাম, হানা বলতে লাগলো, লন্ডনের মোস্ট মাল্টি কালচারাল এরিয়া ইষ্ট এন্ডে গিয়েছিলাম ।
জিজ্ঞাস করলাম কোথায় ?
আপ্টন পার্কের গ্রিন স্ট্রিটে, খুব ভাইভ্র্যান্ট একটা স্ট্রিট । খুব চমকপ্রদ এক ঘটনা ঘটেছিল !
কি সেই চমকপ্রদ ঘটনা, শুনতে পারি ?
এ টি এম মেশিন থেকে ২৫০ পাউন্ড তুলতে গিয়ে, টাকা রিলিজ করার সময় এরর মেসেজ দেখালো, আমি ভাবলাম মেশিনে যথেষ্ট টাকা নেই,তাই,আমার কার্ড নিয়ে অন্য একটা মেশিনের দিকে হাঁটছি ভাবলাম অনলাইনে দেখিতো আমার একাউন্টে অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা । হাতের ফোনেই একাউন্ট এ সাইন ইন করে দেখি, ২৫০ পাউন্ড ইউথড্র করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রায় মাইল খানেক দূরে চিলে এসেছি ।
- ওহ নো !
- হানা আবার বলতে লাগলো, আমি ফেরত ঐ ক্যাশ মেশিনের দিকে দ্রুত হাঁটতে লাগলাম, টাকা ফেরত পাওয়ার আশা করিনা কিন্তু মনের শান্তির জন্য, প্লাস, ঐ মেশিনটার একটা ছবি নিয়ে রাখলে পরে কমপ্লেইন্ট করতে সুবিধা হবে, তাই ঐদিকে দ্রুত হেঁটে মেশিনের পাশে পৌঁছে দেখি, অনেক লম্বা কিউ । এত লম্বা কিউ দেখে টাকা পাওয়ার আশা বাদ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোককে বল্লাম, এই মেশিন কি টকা রিলিজ করছে ? এই কতক্ষন আগে আমি কিছু টাকা তুলেছি কিন্তু টাকা রিলিজ হয় নাই ভেবে আমি চলে গিয়েছিলাম কিন্তু আমার ব্যাঙ্কিং এপ বলছে আমি টাকা অল্রেডি তুলেছি ।
- কিউ এ দাঁড়ানো আরেক মহিলা বলে উঠলো, হ্যাঁ তুমি টাকা নিতে ভুলে গেছ টাকা ঠিকই রিলিজ করেছে মেশিন, কোন ট্যাকনিক্যাল কারনে সম্ভবত টাকা রিলিজ হতে দেরি হচ্ছিল । ঐ যে এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে টাকা নিয়ে, অনেক ক্ষন যাবত লোক খুঁজছে, যদি টাকার মালিক এখানে ফিরে আসেন ।
Pic For Imagination |
- হানা জিজ্ঞাস করলো, কোন মহিলা
- ঐ যে নিকাব পড়া মহিলা দাঁড়িয়ে আছে ।
- আমি এক জাম্পে ঐ নিকাবি মহিলার কাছে চলে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, তুমি নাকি ঐ মেশিনে টাকা পেয়েছ ? মহিলার চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা । মহিলা বলল হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কতটাকা তুলেছিলে, হানা বললো দুই শত পঞ্চাশ পাউন্ড । নিকাবি মহিলা বললো তুমার এমাউন্ট ঠিক আছে, তুমি যদি মাইন্ড করোনা আর কোন পথ আছেকি প্রমান করার যে এই টাকা গুলা তুমার ?
- হানা বলল, আমার অনলাইন ব্যাঙ্কিং এর স্ট্যাটমেন্ট দেখো, এই নাও ,বলে মোবাইল ফোনটা নিকাবি মহিলার দিকে এগিয়ে দিলাম । টাইমিং আর ইউথড্রয়লের পরিমাণ দেখে, নিকাবি মহিলা আমার টাকা আমাকে দিয়ে বললো, সরি ফারদার এভিডেন্স দেখতে চাওয়ার জন্য
- মুসলমান হিসাবে আমার দায়িত্ব ছিল এই টাকাটা যাতে সঠিক মালিকের কাছে পৌঁছে ।
নিকাবি মহিলা বলতে লাগলেন, এই টাকায় আমি হাতি দিতাম না, কিন্তু তুমার টাকা না সরালে যে আমি আমার টাকা বের করতে পারছিলাম না, আশে পাশে অন্য কোন ক্যাশ মেশিনও ছিলনা যে অন্য মেশিনে ট্রাই করবো ।
- হানা বলতে লাগলো, আমি সেই মুসলিম নিকাবি মহিলার কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে মেনে নিয়েছি । এখন আমি ইউ কে বা লন্ডনে গেলেই ‘মারিয়াম’ (নিকাবি) এর সাথে দেখা না করে আসিনা , আমরা অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড এখন । গতবার সে আমাকে একটা পোলিশ ল্যাঙ্গুয়েজের কোরআন দিয়েছে, দ্বিতীয়বার পড়ে শেষ করলাম মাত্র ।
- জিজ্ঞাসা করলাম, মারিয়াম কি করে?
- হানা বললো, ইউ সি এল (ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন) এ বায়োম্যাডিক্যাল সাইন্স এর উপর পি এইচ ডি করছে ।
-