"মানুষকে বানানো হয়েছে তাড়াহুড়ো প্রবণতা দিয়ে।" [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৩৭]

সবর - কোরান হাদিস অনুযায়ী সবর করার কল্যাণ


"মানুষকে বানানো হয়েছে তাড়াহুড়ো প্রবণতা দিয়ে।" [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৩৭]


বিপদ-মুসিবত যে কত বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার, তা যদি আমরা জানতাম!
.
হাদিসে এসেছে, "যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এমন কোনো মর্যাদা নির্ধারণ করা থাকে, যা সে তার আমল দ্বারা অর্জন করার যোগ্যদা রাখে না, তখন আল্লাহ্ তার শরীর অথবা তার সম্পদ কিংবা তার সন্তানাদির প্রতি বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন এবং তাকে ঐ বিপদের উপর সবর করার সক্ষমতা দান করেন। অতপর তাকে নির্ধারিত ঐ মর্যাদায় পৌঁছে দেন।" [আবু দাউদ, আস সুনান: ৩০৯০, আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২৫৯৯]
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! এবার আপনারাই বলুন- বিপদ-মুসিবত আমাদের জন্য কল্যাণকর নয় কি? হ্যাঁ, তখনই কল্যাণকর, যখন আমরা তাতে সবর করতে পারব। আমরা তাই বলে আল্লাহর কাছে বিপদ-মুসিবত প্রার্থনা করব না। তবে, হাশরের মাঠে কী হবে জানেন?
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "সুস্থ-নিরাপদ ব্যক্তিরা কিয়ামত দিবসে যখন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের বিনিময় দেখতে পাবে, তখন তারা কামনা করবে- 'যদি (দুনিয়াতে) আমাদের চামড়াগুলো কাঁচি দিয়ে কাটা হতো!'" [তিরমিযি, আস সুনান: ২৪০৪, আলবানি, সহিহ আল জামে': ৫৪৮৪]
.
অর্থাৎ, তারা দুনিয়াতে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের আখিরাতে প্রতিদান দেখে বলবে, "যদি আমরা দুনিয়াতে এমন কষ্টকর বিপদেও পতিত হতাম, তবে কতই না ভালো হতো!"
.
বলা হয়ে থাকে, "সবরে মেওয়া ফলে"। এর প্রকৃত উদাহরণ উপরের হাদিস দুটো। কিন্তু আমরা সবর করতে পারি না, তাড়াহুড়ো করি। এটি আমাদের স্বভাব। আল্লাহ্ নিজেই বলেছেন, "মানুষকে বানানো হয়েছে তাড়াহুড়ো প্রবণতা দিয়ে।" [সূরা আম্বিয়া: আয়াত ৩৭]
.
তবে না, তাড়াহুড়া করা চলবে না। নবীদের সর্বাধিক কষ্টকর জীবন কাটাতে হয়েছে। তবুও তারা এসব বিপদ-মুসিবত হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। তারা বিপদ-আপদের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে অভিযোগ জানাতে লজ্জা পেতেন। যেমন: আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ দিন, বছরের পর বছর কঠিন রোগ-ব্যাধিসহ অসংখ্য অগণিত পরীক্ষার সন্মুখীন হন। তবুও তিনি অভিযোগ জানাতে লজ্জা পাচ্ছিলেন। শেষে তিনি কেবল এতটুকু বলে আল্লাহর কাছে দু'আ করেছেন যে-
.
ﺃَﻧِّﻲ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﺍﻟﻀُّﺮُّ ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺃَﺭْﺣَﻢُ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
অর্থ: (হে আমার রব!) আমাকে দুঃখ-ক্লেশ (ব্যাধি) স্পর্শ করেছে, আর তুমি তো (দয়ালুদের মধ্যে) শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ [সূরা আম্বিয়া: ৮৩]
.
খেয়াল করে দেখুন, তিনি কত বিনয়ের সাথে, লাজুকতার সাথে দু'আ করছেন। আমাদের মত তাড়াহুড়া, হৈ চৈ করেননি।
.
এই দু'আ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘অতপর আমি তার (সেই) আহবানে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিলাম এবং তার পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে, কৃপাবশত; আর এটা ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশস্বরূপ।’ [সূরা আম্বিয়া: ৮৪]
.
মোটকথা সবর করতে হবে। সবর করে কেউ কখনো ঠকেনি। সবরের প্রতিদান আপনি পাবেনই, সেটা যদিও একটু লেইট করে হোক।
.
#সবর_মানেই_প্রশান্তি (চতুর্থ পর্ব)
(সবর সিরিজ চলবে ইনশাআল্লাহ্। পূর্বের তিন পর্বের লিংক কমেন্টে পাবেন।)
.
#Tasbeeh
Previous Post Next Post