সত্য প্রতিষ্ঠাঃ তাবলীগ ও তরবারি | বাংলা ইসলামিক পোস্ট
সত্য প্রতিষ্ঠাঃ তাবলীগ ও তরবারি | বাংলা ইসলামিক পোস্ট | তাবলীগ খবর
সত্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাবলীগের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি প্রয়োজন আছে তরবারির। ‘আমর বিল মারূফ’ এর জন্য দরকার তাবলীগ, আর ‘নাহি আনিল মুনকার’ এর জন্য দরকার তরবারি।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতা’আলা পবিত্র কুর’আনে যাকে ‘মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ’ অর্থাৎ শান্তির দূত বলেছেন, তিনি নিজে স্বশরীরে উনিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, নিজে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন কমপক্ষে আটটি যুদ্ধে। সেই শান্তির দূত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময় ত্রিশটি বাহিনী পাঠিয়েছেন। (সংখ্যার মতপার্থক্য আছে)
হেজিমনীতে ভুগতে ভুগতে আমরা ধরেই নিয়েছি, শান্তির সাথে মনে হয় তরবারির সম্পর্ক নেই। আমরা ধরেই নিয়েছি, যারা শান্তির বাণী প্রচার করে তারা হয়তো তসবিহ হাতে নিয়ে ঘুরে।
অথচ তাকিয়ে দেখুন একটা রাষ্ট্রের শান্তি রক্ষায় যারা নিয়োজিত, সেইসব পুলিশ, আর্মি, বিজিবির হাতে কিন্তু তসবিহ নয়; বরং অস্ত্র। কারণ, আপনি কাউকে বাধা দিতে গেলে আপনার হাতে অস্ত্র লাগবে, তসবিহ দিয়ে বাধা দিতে পারবেন না। এই কমন-সেন্সটা সবার আছে।
অথচ তাকিয়ে দেখুন একটা রাষ্ট্রের শান্তি রক্ষায় যারা নিয়োজিত, সেইসব পুলিশ, আর্মি, বিজিবির হাতে কিন্তু তসবিহ নয়; বরং অস্ত্র। কারণ, আপনি কাউকে বাধা দিতে গেলে আপনার হাতে অস্ত্র লাগবে, তসবিহ দিয়ে বাধা দিতে পারবেন না। এই কমন-সেন্সটা সবার আছে।
ইসলামে দাওয়াতের দুটো দিক। একটি হলো- ‘আমর বিল মারূফ’ বা সৎ কাজের আদেশ দেওয়া, আরেকটি হলো- ‘নাহি আনিল মুনকার’ বা মন্দ কাজের বারণ করা।
আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে বলেনঃ“তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজে আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে বারণ করবে।”
[সূরা আলে ইমরানঃ ৩:১১০]
আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে বলেনঃ“তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজে আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে বারণ করবে।”
[সূরা আলে ইমরানঃ ৩:১১০]
আপনি যদি কাউকে গিয়ে বলেন- ‘ভাই নামাজ পড়ুন, রোজা রাখুন, তাহাজ্জুদ পড়ুন, সত্য কথা বলুন, মা-বাবার সেবা করুন’ তাহলে কোনো বাধা আসার সম্ভাবনা কম। আপনার এই দাওয়াত হয় সে গ্রহণ করবে, অথবা প্রত্যাখ্যান করবে।
কিন্তু একটা অন্যায় হতে দেখে যদি আপনি প্রতিবাদ করতে যান, রাস্তায় আপনার বোনকে যদি ইভটিজাররা ধর্ষণ করতে আসে, আপনি তখন তাদেরকে ‘দাওয়াত’ দিবেন না।
আপনি মিষ্টি মুখে বলবেন না, “ভাই, এমনটা করবেন না, এটা পাপ, আল্লাহ গুনাহ দিবেন।” আপনি বরং তখন শরীরের যতো শক্তি আছে, সকল শক্তি দিয়ে আপনার বোনকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাবেন। প্রয়োজনে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিবেন, তবুও চোখের সামনে বোনের ইজ্জত নষ্ট হতে দিবেন না।
আপনি মিষ্টি মুখে বলবেন না, “ভাই, এমনটা করবেন না, এটা পাপ, আল্লাহ গুনাহ দিবেন।” আপনি বরং তখন শরীরের যতো শক্তি আছে, সকল শক্তি দিয়ে আপনার বোনকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাবেন। প্রয়োজনে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিবেন, তবুও চোখের সামনে বোনের ইজ্জত নষ্ট হতে দিবেন না।
নিজের বোনের ইজ্জত রক্ষা করার সময় যখন আপনি অস্ত্র হাতে নিলেন, তখন যদি কেউ এসে আপনাকে বলে, “কী ব্যাপার? তোমাকে তো শান্তশিষ্ট, ভদ্র, দয়ালু জানতাম। তোমার হাতে অস্ত্র কেন?” তখন হয়তোবা আপনি প্রশ্নকারীকে শেক্সপিয়রের সেই বিখ্যাত প্রবাদটি শুনাবেন- ‘You have to be cruel to be kind’ অর্থাৎ, দয়ালু হবার জন্য মাঝেমধ্যে নির্দয় হতে হয়।
...
পৃথিবীর সকল সভ্যতা, সকল মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ‘নির্দয়’ হওয়া লেগেছে। এমন কোনো মতবাদ নাই যেটা শুধুমাত্র তাবলীগ বা পোস্টার বিলি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব বলুন কিংবা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথাই বলুন, সবগুলো বিপ্লবের জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে, অস্ত্র ঝরাতে হয়েছে। আপনাআপনি কোনোকিছু প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একটা মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন ঘাম ঝরাতে হয়েছে, তেমনি দিতে হয়েছে রক্ত।
রক্ত ঝরানোকে কেউ কখনো আক্ষেপের চোখে দেখেনি, বরং এটাই ছিলো বীরত্ব। যারা যতো রক্ত ঝরিয়েছে, বিপ্লবের পরবর্তীতে তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে। ঘাম ঝরানো জীবিত মানুষগুলোকে ছাপিয়ে রক্ত ঝরানো মৃতদেহগুলো পেয়ে যায় অমরত্বের স্বীকৃতি।
...
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কী জীবনে দীর্ঘ তেরো বছর দাওয়াত দিয়েছেন। তেরো বছরের দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কয়েকশো সাহাবী। যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারা শিকার হয়েছিলেন নির্যাতনের। এমনকি খোদ রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যা করার জন্য মক্কাবাসী ছিলো বদ্ধ পরিকর।
সেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদর, ওহুদ, খন্দকের যুদ্ধের পর হুদাইবিয়ার সন্ধি শেষে অষ্টম হিজরীতে (অর্থাৎ, হিজরতের আট বছর পর) যখন মক্কায় ফিরেন, তখন তিনি ফিরেছিলেন বিজয়ীর বেশে। অথচ আট বছর আগে তিনি রাতের আঁধারে চুপিচুপি মক্কা থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তেরো বছরের দাওয়াতের সাথে যখন আট বছরের সংগ্রাম যুক্ত হয়, তখন ইসলাম মক্কায় বিজয়লাভ করে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যিনি শান্তির দূত, তিনিও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তরবারি হাতে নিয়েছিলেন।
...
“ইসলাম তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি” এমন অর্ধ-সত্য এবং কিউট কথার প্রচার আমাদের ইতিহাস পাঠের দৈন্যতা এবং অজ্ঞতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। পাশ্চাত্যকে খুশি করার জন্য তাদের সাথে সুর মিলিয়ে আমরা যখন বলি- ‘ইসলাম তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি’ তখন আমরা ভুলে যাই আমাদের অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের কথা। এই কথাটির মাধ্যমে আমরা কতোটা আইডেন্টি-ক্রাইসিসের মধ্যে ভুগছি, সেটা ফুটে উঠে।
আমরা ভুলে যাই আমাদের বদর, ওহুদ, খন্দক, মূতা, ইয়ারমুক, সিফফিন, আইনে জালুত, হিত্তিনের কথা। ইসলাম যদি তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে থাকে, তাহলে এসব যুদ্ধকে আমরা কিভাবে ‘ব্যাখ্যা’ করবো? নাকি একটা সত্যকে ঢাকতে হাজারটা মিথ্যা ‘ব্যাখ্যা’ দাঁড় করাবো।
পাশ্চাত্যের হাতে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে। সেই রক্তে মজলুমের রক্ত। মজলুলের রক্তমাখা হাতে সে আমাকে প্রশ্ন করে- ‘ইসলাম কি তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?’ আমিও তখন তাকে খুশি করার জন্য বলি, “না ভাই, এসব কী বলেন... ইসলাম শুধু তাবলীগের তথা দাওয়াতের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
একজন টেরোরিস্ট আমাকে টেরোরিজমের সংজ্ঞা শেখাচ্ছে। তার কাছ থেকে টেরোরিজম তথা জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা শিখে আমিও বলছি- “আই’ম এ মুসলিম, আই’ম নট এ টেরোরিস্ট।”
অথচ মুখের উপর সেই টেরোরিস্টকে ‘টেরোরিস্ট’ বলার সৎ-সাহস আমার নেই! তাহলে আমি কিভাবে তার কাছে খালিদ বিন ওয়ালিদ, মুহাম্মদ বিন কাশিম, তারিক বিন যিয়াদ, ইউসুফ বিন তাশফিন, সালাহুদ্দীন আইয়ূবী, মুহাম্মদ আল-ফাতিহকে ‘ব্যাখ্যা’ করবো?
অথচ শান্তি তথা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তরবারি হাতে নেবার ইতিহাস সবার আছে। কেউ তাদের তরবারি হাতে নেবার ইতিহাস নিয়ে এতোটা লজ্জিত না। সবাই এটাকে বীরত্ব বলে। আমরা কেন সেটাকে লজ্জাজনক মনে করছি?
...
রমজান মাস হলো রহমতের মাস। ঠিক তেমনি ইসলামের ইতিহাসে এই মাসটি হলো যুদ্ধের মাস, বিজয়ের মাস। ইসলামের ইতিহাসে বড় বড় যুদ্ধ এবং বিজয় অর্জিত হয় এই মাসে।
বদরের যুদ্ধ (দ্বিতীয় হিজরী), মক্কা বিজয় (অষ্টম হিজরী), আন্দালুস বিজয় (৯৩ হিজরী), সিন্ধু বিজয় (৯৪ হিজরী), হিত্তিনের যুদ্ধ (৫৮৩ হিজরী), আইনে জালুতের যুদ্ধ (৬৫৮ হিজরী), ক্রিমিয়া জয় (৮৮৯ হিজরী) সংগঠিত হয় রামাদ্বান মাসে এবং মুসলিমরা জয় লাভ করে।
যেই নবী রহমতের নবী, সেই নবী রহমত তথা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছেন। যেই মাস রহমতের মাস, সেই মাসে মুসলিম বীরেরা লড়েছেন, বিজয় এনেছেন।
তাহলে আপনি কোন শান্তির দূত, যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তরবারির ভূমিকাকে অস্বীকার করছেন? যারা শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত, তাদের হাতেও তো অস্ত্র। আপনি কোন হেজিমোনীতে ভুগে মনে করছেন শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র মাধ্যম তসবিহ!?
...
পুরো লেখাটির সামারি হলো কাজী নজরুল ইসলামের একটি লাইন।
“সুর আমার সুন্দরের জন্য, তরবারি সুন্দরকে অস্বীকারকারী অসুরের জন্য।”
----
সত্য প্রতিষ্ঠাঃ তাবলীগ ও তরবারি
- আরিফুল ইসলাম
- আরিফুল ইসলাম
আপনি যখন তাদের দিফায়ী জিহাদ করতে বলবেন, তারা এমন কথা বলবে যেন ইসলামে ইকদামী জিহাদ ছাড়া আর কোন জিহাদ নেই, যে জিহাদ করতে সুলতান লাগে। তারা বলে বেড়ায়, সুলতান ছাড়া জিহাদ নেই।
.
কিন্তু আবার যখন ইকদামি জিহাদের কথা আসে, তখন তারাই বলে বেড়ায়, ইসলাম কেবল আক্রান্ত হলে শেষ চয়েস হিসেবে যুদ্ধ করতে বলে। কেবল মাত্র ইসলাম গ্রহণ না করার কারণে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না।
.
স্পষ্টতই এরা সাহাবাদের 'আমল অস্বীকার করে। এরা যদি দলীলও দেয়, তবে দেখা যাবে যে সেটা অর্ধেক। এবং তারা তাদের মতের সাথে মিলে এমন জায়িজ কাজগুলোকে এমনভাবে ওয়াজিব হিসেবে তুলে ধরে যেন তাদের মতের সাথে মিলে না এমন জায়িজ কাজগুলো মানুষের কাছে হারাম মনে হয়।
.
কাদিয়ানীদের চাচাতো ভাইয়েরা মহামারীর মত তাদের এসব মনগড়া কথাবার্তা লিখে অনলাইনে ছড়িয়ে রেখেছে। অথচ এর বিরুদ্ধে বলতে গেলেই, তাদের নির্বোধ সমর্থকরা অরাজকতা শুরু করে। সালাফী নাম ধারণ করে রাখলেও এক্ষেত্রে সালাফ বাদ, এমনকি খালাফদেরও গণায় ধরা হয় না। বরং গত ৫০-৭০ বছরের তথাকথিত ইসলামী চিন্তবিদদের মনগড়া কথাবার্তা যা তারা পশ্চিমা কুফফারদের ফ্রেইমওয়ার্কে খাপ খাওয়ানোর জন্য করেছে, এদের ছাড়া তাদের আর কোন সম্বল নেই।
.
হ্যাঁ তারা লেখার নীচে সালাফ-খালাফদের কিছু রেফারেন্স লেখে। তবে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। কারণ তারা জানে যে মানুষ ক্রস চেক করবে না। মানুষ আসলে জানে না সালাফ-খালাফরা কি লিখেছেন, তাদের বুঝ-মেজাজ কেমন ছিল। যদি জানত, তাদের বুঝ-মেজাজ অনুভব করার চেষ্টা করত, তবে এদের প্রতারণা সহজেই বুঝতে পারত।
-Ibn Mazhar