পশু প্রেমী সংগঠন গুলোর ভণ্ডামি আর মুসলিমদের কুরবানি নিয়ে চুলকানির ডোজ!

 একটা হরর স্টোরি বলি। সত্যিকারের হরর স্টোরি।

এ লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে কিংবা পোস্টে দেয়া লিঙ্ক ঘাঁটাঘাঁটি করলে নিজ দায়িত্ব করবেন। মজা করছি না, সিরিয়াসলি বললাম।

  1. ডিমের জন্য কোন মুরগি ভাল
  2. লেয়ার মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
  3. লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি pdf
  4. লেয়ার মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে দুই ধরণের মুরগীর প্রজনন করা হয়। ডিমের জন্য লেয়ার মুরগী, আর মাংসের জন্য ব্রয়লার। ব্রয়লার মুরগী ছয়-সাত সপ্তাহের মধ্যে বিশাল বড় হয়ে যায়। মাংশ হয় প্রচুর। আর লেয়ার মুরগীর স্পেশালিটি হল সাইযে বড় না হলেও এ জাতের মুরগী অনেক বেশি ডিম দেয়। তবে ডিম তো দেয় শুধু নারী মুরগী। পুরুষদের কী হয়?
.
মেরে ফেলা হয়।
জন্মের প্রথম দিনই ওদের মেরে ফেলা হয়। কারণ এ মুরগীগুলোর জীবন প্রফিটেবল না। পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রির কাছে এরা ‘সারপ্লাস’। পুরুষ হবার কারণে এদের কাছ থেকে ডিম পাওয়া যায় না। আর লেয়ার জাতের হবার কারণে পাওয়া যায় না ব্রয়লার মুরগীর মতো মাংসও তাই সবচেয়ে লাভজনক, সবচেয়ে ‘একোনমিক’ সমাধান হল এই বাচ্চাগুলোকে যতো দ্রুত সম্ভব মেরে ফেলা।
.
আর তাই প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে এক দিন বয়েসী ৭০০ কোটি পুরুষ শিশু মুরগী হত্যা করা হয়। হ্যাঁ, ৭০০ কোটি। ৭ বিলিয়ন।
.
এই মেরে ফেলার কাজটা কীভাবে করা হয় জানেন?
বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।
.
১। শ্বাসরোধ করা: বাচ্চাগুলোকে বিশাল বিশাল প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে আটকে দেয়া হয়। বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করতে করতে দমবন্ধ হয়ে মারা যায় ওরা।
.
২। ইলেক্ট্রোকিউশান: ডিম ফুটে বের হওয়া বাচ্চাদের ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়।
.
৩। সারভিকাল ডিসলোকেশান: সোজা বাংলায়, হাত দিয়ে টেনে মাথা ছিড়ে ফেলা হয় শরীর থেকে।
.
৪। গ্যাসিং: গ্যাস চেইম্বারে চালু করে দেয়া হয় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস। সদ্যজাত মুরগীগুলো একসময় জ্ঞান হারায় এবং মারা যায়।
.
৫। ম্যাসেরেইশান: পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে পছন্দের পদ্ধতি। বাচ্চাগুলোকে প্রথমে একটা কনভেয়ার বেল্টে ছুড়ে দেয়া হয়। কনভেয়ার বেল্ট জীবন্ত বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ফেলে প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে থাকা ধারালো ধাতব পাতের মধ্যে। মূহুর্তের মধ্যে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওরা।
ব্লেন্ডার আছে না? একটা ঢাউস সাইযের ব্লেন্ডারের ভেতর একদিন বয়েসী মুরগীর বাচ্চাকে ছেড়ে দিলে কী হবে চিন্তা করুন। সেইম প্রসেস। তবে একটা না, শত শত কোটি মুরগীর বাচ্চাকে এভাবে হত্যা করা হয়। পুরো ব্যাপারটা পুঁজিবাদের ইউটিলিটারিয়ান সমীকরণ আর মডার্নিটির মনস্তত্ত্বের অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত। আগাগোড়া পিওর মেশিন লজিক।
.
দুটা ভিডিও দিচ্ছি, ভিডিগুলো দেখেন। না দেখলে ভাব আসবে না –
.
এই ভয়ঙ্কর কাজটার একটা সুন্দর নাম আছে। Chick Culling বা Male Chick Culling। বাংলাদেশে কী হয় জানি না, কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় এটা পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস। এবং আমরা সবাই এই প্রক্রিয়ার অংশীদার।
.
হ্যাঁ, এই নৃশংসতা বন্ধ করতে গেলে নিশ্চিতভাবেই পোল্ট্রি প্রডাকশন কমবে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, ফ্রাইড চিকেন হয়তো পাওয়া যাবে না। চালানো যাবে না কেএফসির মতো মাল্টিবিলিয়ন ডলার ফ্র্যাঞ্চচাইয। ফাস্ট ফুডের নেশা উপভোগ করা যাবে না যখন তখন। কিন্তু অবিশ্বাস্য মাত্রার এ নিষ্ঠুরতাকে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার বানিয়ে ফেলার চেয়ে কি তা খুব একটা খারাপ হবে?
.
আলহামুদলিল্লাহ, মহান আল্লাহ আমাদের অনেক নিয়ামত দিয়েছেন। প্রানীজগত থেকে আমরা উপকৃত হতে পারি, এটাও একটা নিয়ামাহ। খাদ্যের জন্য হালালভাবে পশু হত্যা জায়েজ, এবং এটা মানবজাতির জন্য প্রয়োজন। কিন্তু এমন একটা প্রসেসকে কীভাবে সমর্থন করা যায়, যেটার অবশ্যাম্ভাবী সাইড ইফেক্ট হিসেবে বছরে ৭০০ কোটি সদ্যজাত মুরগীকে এতো বীভৎসভাবে হত্যা করা হয়? কীভাবে এখানে হুকুকুল ইবাদ (বান্দার হক) রক্ষিত হয়? কীভাবে রাহমাতুললি আলামীনের (ﷺ) এর শিক্ষার সাথে এমন আচরণকে মেলানো যায়?
.
মনে রাখবেন পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এই ৭০০ কোটি শিশু মুরগীকে কোন কাজে লাগাচ্ছে না। এরা স্রেফ সারপ্লাস। বিক্রিয়ার অপদ্রব্য। এর সাথে কুরবানীর অবস্থা মিলিয়ে দেখুন। কুরবানীর পশুর প্রায় প্রতিটি অংশ কাজে লাগে। শুধু একজন ব্যক্তি কিংবা পরিবার না, বরং পুরো সমাজ উপকৃত হয়। কুরবানীর পশুর মাংসের দুই-তৃতীয়াংশ বিলিয়ে দেয়া হয়। কুরবানীর সময় এমন অনেক মানুষ মাংস খেতে পায় বছরের অন্য সময় মাংস খাবার সুযোগ যাদের হয়তো হয় না। কুরবানী কেন্দ্রিক বেচাকেনাতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ এবং খামারীরা সুযোগ পায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবার। এবং পুরো ব্যাপারটা করা হয় সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য।


.
ফাস্টফুডের নির্জীব আত্মকেন্দ্রিকতা, মাল্টিবিলিয়ন ডলার কর্পোরেইশানের নির্জলা প্রফিটমুখীর চিন্তা, আর সারপ্লাস হত্যার সাথে কতো আকাশপাতাল তফাৎ। তবু বছর বছর ইসলামের বিধান কুরবানীর বিরোধিতা করে হাজার হাজার শব্দ লেখা হয়। কিন্তু পুঁজিবাদী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ আমরা বিনা প্রশ্নে সয়ে যাই। এক বিচিত্র মনস্তত্ত্ব আধুনিকতা আর আধুনিক মানুষের।
- Asif Adnan
Next Post Previous Post