Bangla Islamic Book | বই : কেয়ামত | সংকলক : মুহাম্মাদ ইসহাক মুলতানী

Bangla Islamic Book |  বই : কেয়ামত  | সংকলক : মুহাম্মাদ ইসহাক মুলতানী

বই : কেয়ামত।সংকলক : মুহাম্মাদ ইসহাক মুলতানী

প্রারম্ভিকতা :-
-------------
পৃথিবীবাসীর অবস্থা তখন হবে ভয়াবহ। মানবজাতি হবে দিশেহারা। চারদিকে শুধু মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি থাকবে। সুফয়ানী নামক এক ব্যক্তি শাসকদের হত্যা করবে। মানুষের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা তো দূরের কথা, পরিবারগুলোও অভিশপ্ত অন্ধকারে ডুবে থাকবে। সন্তান মায়ের অবাধ্যতা করবে, বন্ধুকে নিকটবর্তী বানিয়ে বাবাকে দূরে সরিয়ে দিবে। মানুষ মদপান করবে। গায়িকা, নর্তকী ও গান-বাদ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। মূর্খ, অসভ্য ও ধনী ব্যক্তিরা ক্ষমতা লাভ করবে।

এ সময় ফিতনা থেকে বাঁচতে চল্লিশ বছর বয়সী সুদর্শন এক ব্যক্তি কাবা শরীফের কাছে আশ্রয় নেবেন। কিন্তু লোকেরা তাঁকে ঘিরে ধরবে। রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মাঝামাঝি স্থানে লোকেরা জোর করে তার হাতে বাইআত হবে। এ সময় অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ শোনা যাবে- 'ইনি আল্লাহর খলীফা মাহদী। সুতরাং তোমরা তাঁর কথা শ্রবণ করো এবং তাঁর আনুগত্য করো।'

Bangla Islamic Book

এরপরের কাহিনী অনেক লম্বা। যুদ্ধ হবে। ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। খলীফা মাহদীর সাথীদের একদল পালিয়ে যাবে, তাদের তাওবা কোনোদিন কবুল হবে না। একদল শহীদ হবে, আর একদল জয়ী হবে। অতঃপর একদিন শোনা যাবে চুল কোঁকড়া, চোখে পট্টি বাঁধা, বিকটদর্শন এক লোক তার সাথে জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে ঘুরছে। তার আদেশে জমিনে বৃষ্টি বর্ষণ হবে। সে নারাজ হলে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় সূর্যকে আকাশে আটকে দেবে সে। আর নিজেকে খোদা দাবি করবে। অবশেষে ফেরেশতাদের ডানায় হেলান দিয়ে আকাশ থেকে নেমে আসবেন হাজার বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একজন জলজ্যান্ত মানুষ! ভীষণ তার অলৌকিক ক্ষমতা হবে! তাঁর নিঃশ্বাস শয়তানের পূজারিদের গায়ে লাগতেই তারা পানির নাগাল পাওয়া লবনের মতো গলে যাবে। আর তাঁকে দেখতে পেয়েই চোখে পট্টি বাঁধা 'নকল খোদা' ময়দান থেকে পালাতে শুরু করবে। তিনি তার পিছু ধাওয়া করবেন।
...তারপর?
তারপর সব বলে ফেলা তো ঠিক হবে না। তবে এটা বলতে পারি তারপর আরো আশ্চর্য সব কাহিনী আছে!
দাজ্জালকে দাওয়া করবেন যে বীর তিনিই কিন্তু একদল মানুষের আক্রমণ থেকে বাঁচতে তুর পাহাড়ে আশ্রয় নেবেন। আবার সেই প্রভাবশালী মানুষ নামের অ-মানুষগুলো যখন জমিনের চারদিকে পড়ে থাকবে তখন তাদের লাশ খুবলে খাবে লম্বা ঘাড় ও শরীরবিশিষ্ঠ এক ধরনের আজিব প্রাণী।
তারপরও আরো অনেক কিছু ঘটবে। সুদীর্ঘ রাত হবে, শিশুরা ভয়ে কাঁদবে। তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর একদিন শিঙ্গার তীক্ষ্ণ শব্দে উড়তে থাকবে পাহাড়, লুটিয়ে পড়বে নক্ষত্র, লাল-নীল রঙ্গের অপরূপ গ্রহগুলো জ্বলে পুড়ে কালো ছাই হয়ে যাবে। ভেঙে পড়বে আসমান!
আর তারপরে সংঘটিত হবে 'কেয়ামত'। কিন্তু এখানেই শেষ নয় সবকিছু। আরো অনেককিছু ঘটবে। কী ঘটবে; 'কেয়ামত' বইটিতে আছে এর বিস্তারিত বর্ণনা।
বইটিতে আরো আছে- আল্লাহর নূরের তাজাল্লী প্রকাশিত হওয়ার পর মুমিনদের আল্লাহকে চিনতে না পারার কথা। আছে তুবা বৃক্ষের সুমধুর সুরের কথা। 'কাফুর' 'যানজাবীল-সালসাবীলের' কথা। আছে 'জুব্বুল হুযন' 'তীনাতুল খাবাল' এবং 'আবে হামীম' এর কথা।

পাঠসংক্ষেপ:-
'কেয়ামত' বইটি 'কেয়ামত সে পেহলে কেয়া হোগা?' বইটির বাংলা অনুবাদ। বইটি নয়টি পুস্তিকার সংকলন। ধারাবাহিকভাবে বইটি যেভাবে সাজানো আছে-

এক. কেয়ামতের আলামত ও ঘটনাপ্রবাহ। মূল উর্দু লিখেছেন- মাওলানা শাহ রফীউদ্দীন রহ.। এই পর্বে কেয়ামতের ছোট ছোট আলামত থেকে নিয়ে কেয়ামত সংঘটিত হওয়া, শেষ বিচার, পুলসিরাত, শাফাআত, জান্নাত, জাহান্নামসহ একদম শেষ পর্যন্ত একের পর এক সবকিছু খুবই সুন্দরভাবে সাজিয়ে লেখা হয়েছে।

দুই. হাদীসের আলোকে কেয়ামতের পূর্বে কী হবে? মূল উর্দু- মাওলানা মুহাম্মদ ওয়ালী রাযী রহ.। এই পর্বে কেয়ামতের পূর্বে কী হবে হাদীসের আলোকে শুধু সেটাই আলোচনা করা হয়নি, বরং বর্তমান যুগে কী কী সংঘটিত হয়ে গেছে/ হচ্ছে তারও দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।

তিন. সহীহ হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদী।
এই পুস্তিকার মূল আরবি রচয়িতা মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.। ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে সাধারণ তো বটে কিছু আলেমেরও সন্দেহের কারণে মাদানী রহ. এ পুস্তিকায় সহীহ হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদী আগমনের বিষয়টি প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন।

চার. ইয়াজুজ-মাজুজ ও যুলকারনাইনের প্রাচীর। লিখেছেন-মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ.।
এ পর্বে ইয়াজুজ-মাজুজের সংখ্যা, তাদের অবস্থান, আবির্ভাবের সময় এবং সে সময় সাধারণ মানুষের অবস্থাসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পাঁচ. ঈসা আলায়হিস সালামের পুনরাগমনের আকীদা।
এটি লিখেছেন-মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ দা.বা.। এ পর্বে মাওলানা সাহেব কুরআন হাদীসের আলোকে 'হায়াতে ঈসা' সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে কাদিয়ানীদের ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেছেন, সাথে সাথে অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কেও তালিবুল ইলমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ছয়. হাদীসের আলোকে দাজ্জালী ফেতনা।
লিখেছেন-মাওলানা বদরে আলম মুহাজিরে মাদানী রহ.। এ পর্বে দাজ্জাল ও দাজ্জালের ফেতনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। রাসূলের সা. সময়ের এমন এক ব্যক্তিকে নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে যাকে সবাই দাজ্জাল বলে সন্দেহ করতেন।

সাত. হাদীসের দর্পণে বর্তমান যুগ।
লিখেছেন- মাওলানা ইউসুফ লুধয়ানবী রহ.
এ পর্বের নাম দেখে ভেবেছিলাম হাদীসের সাথে মিলিয়ে বর্তমান যুগের অবস্থা এ পর্বে তুলে ধরা হবে, কিন্তু পরে দেখি শেষ যুগের অবস্থা ও ফেতনা সম্পর্কিত হাদিস এখানে জড়ো করা হয়েছে। তবে এত চমৎকারভাবে একটার পর একটা ফেতনার কথা সাজিয়ে লেখা হয়েছে যে, পড়তে গিয়ে বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে ভয়ে গা শিরশির করে উঠেছে। আল্লাহ আমাদের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

আট. আল্লামা ইবনে আরাবী রহ. এর ভবিষ্যদ্বাণী। এ পর্বে চলে যাওয়া সময়ে যুগের সাথে মিলিয়ে কিছু ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সত্যতা তুলে ধরা হয়েছে।



অনুভূতি:-
বইটি পড়ে একটি অনুভূতিই ভেতরে হাহাকার করছে- 'হায়, আমার প্রিয়জনসহ আমি যদি মাটি হতাম! আমি যদি কিছুই না হতাম!' কিন্তু কথা হচ্ছে যতই হাহাকার করি না কেন, আমি তো মানুষ। আর 'কেয়ামত' সংঘটিত হবেই। অচিরেই। আর ভয়াবহ যুগ তো ধ্বংসের বার্তা নিয়ে হা করেই আছে আমার জন্য, আমার সন্তানের জন্য, আমার প্রিয়জনের জন্য। তাই সতর্কতার অবশ্যই প্রয়োজন। নিরাপত্তার কৌশল ও নিরাপদ আশ্রয়ের ঠিকানা জানা প্রয়োজন। আর এর জন্য এরকম একটি বইয়ের বিকল্প দেখি না। আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করুন। বইটির সমস্ত লেখক এবং সংকলক ও অনুবাদককে উত্তম বিনিময় দান ক
রুন। আমিন।
- পোস্ট টা কার লেখা নাম জানিনা, মূল লেখকের নাম জানলে আমাকে জানাবেন। আমি নাম যুক্ত করে দিবো। 
Next Post Previous Post