ইতিহাস সভ্যতা - মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার এর যত কথা

 ইতিহাস সভ্যতা  - মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার এর যত কথা

ইতিহাস সভ্যতামক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ারবুকস ইয়ার্ড


পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ গেটের কাছাকাছি ৭টি বিশাল টাওয়ারের "আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্স" এর মাঝে তৈরি করা হয়েছে রয়েল 'মক্কা ক্লক টাওয়ার'। এ টাওয়ারের ওপর বসানো হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি ‘মক্কা ঘড়ি’। ১৭ কি.মি. দূর থেকেও এই ঘড়ির সময় গণনা করা যায়।
তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে সেবাহির মলে যে ঘড়িটি আছে আয়তনের দিক দিয়ে এটিই ছিল এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি, যার ডায়াল ছিল ৩৬ মিটার চওড়া। কিন্তু মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৪৩ মিটার। লন্ডনের বিগবেনের চেয়ে মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৬ গুণ বড়।
২০০৪ সালে এটির নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় এবং ২০১০ সালের ১১ আগস্ট পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে মক্কা ঘড়ি তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০১১ সালে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে মুক্ত করা হয়।

মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার বৈশিষ্ট্য 


৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে নির্মিত চতুর্মুখী ঘড়িটির এক মুখে লাগানো হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ পিস গ্লাস মোজাইক। প্রতিটি মুখে আরবিতে লেখা আছে ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দগুচ্ছ, যা ২১০০০ রঙিন বিজলি বাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আর পড়া যায় ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও। আল্লাহর নামের উপরের দিকে ৫৯০ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের একটি বাঁকা চাঁদ। বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে এ চাঁদ থেকে আকাশে বিচ্ছুরিত হবে প্রায় ১৬টি উজ্জ্বল আলোক রশ্মি, যা আকাশের ১০ কিলোমিটার উঁচুতে ছড়িয়ে যাবে।
টাওয়ারের নিচ থেকে উপরে বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বহু লাউড স্পিকার স্থাপন করা হয়েছে যা ৭ কি.মি. দূর পর্যন্ত আজান ও নামাজের ধ্বনি প্রচার করতে পারে। রাতের বেলা ২১ হাজার বাতি ৩০ কি.মি. এলাকাকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলবে। শ্বেত ও সবুজ বাতির বিশেষ আলো প্রক্ষেপণ দেখে বধির হাজীরা নামাজের সময় নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন।


মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার ইতিহাস 


মক্কা টাওয়ারে ঘড়ি স্থাপনের পেছনে আরও অনেক কারণ ক্রিয়াশীল। ১২৬ বছরের পুরনো গ্রিনিচমান (GMT) সময় পরিবর্তন করে মক্কার সময় চালু করা যাবে বলে অনেকের ধারণা। ২০০৮ সালে কাতারের রাজধানী দোহাতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মুসলিম বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেন যে, পৃথিবীর মধ্যম রেখা পবিত্র মক্কার উপর দিয়ে প্রলম্বিত, ফলে মক্কা পৃথিবীর টাইম জোনের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া মক্কা আন্তর্জাতিক ধর্মীয় ও বাণিজ্য নগরী। ১৮৮৪ সালে পশ্চিমা বিশ্ব গ্রিনিচমান সময় চাপিয়ে দেয়।
কমপ্লেক্সটি আইয়াদ দুর্গ ধ্বংসের পরে নির্মিত হয়েছিল। যা ১৮ শতকের একটি অটোমান দুর্গ যেটি গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে দেখা যেত। সৌদি সরকার কর্তৃক ২০০২ সালে দুর্গ ধ্বংস নিয়ে তুর্কিরা স্ফুলিঙ্গ ছড়ান এবং আন্তর্জাতিক হৈচৈ সৃষ্টি হয়।

আবরাজ আল বাইত টাওয়ার্স :
এছাড়াও মক্কা রয়েল হোটেল ক্লক টাওয়ার নামে পরিচিত, হল সৌদি আরবের মক্কার সরকারের মালিকানাধীন একটি কমপ্লেক্স ভবন। এই টাওয়ারটি কিং আব্দুল আজিজ এনডাওমেন্ট প্রকল্পের একটি অংশ। ভবনটি কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড ধারণ করে আছে; যেমন- বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ঘড়ির টাওয়ার এবং বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি মুখ। বিল্ডিং কমপ্লেক্সটি হল বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ এবং ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা মসজিদ আল হারামের সন্নিকটেই। কমপ্লেক্সের ডেভেলপার ও ঠিকাদার হল সৌদির 'বিন লাদিন গ্রুপ' যেটি কিংডমের সর্ববৃহৎ নির্মাণ কোম্পানী।
৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মীয়মাণ এ টাওয়ারে ১০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে সক্ষম এমন বিশাল প্রার্থনা হল রয়েছে। টাওয়ারের সেভেন স্টার হোটেল প্রতি বছর পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালন উপলক্ষে মক্কা নগরী পরিভ্রমণকারী ৫০ লাখ পুণ্যার্থীর আবাসন সুবিধা প্রদান করে। টাওয়ারের প্রথম চার তলা শপিংমল এবং নিচে রয়েছে ১০০০ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। টাওয়ারের একেবারে উপর তলায় দুটি হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য রয়েছে প্রশস্ত হেলিপ্যাড। এ টাওয়ারের ফ্লোরের সর্বমোট স্পেস হচ্ছে ১৬,১৫০,০০০ বর্গফুট, যা আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনালের সমান।
চন্দ্র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, মুসলিম ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাদুঘর এবং হজ ও ওমরাহ পালনকারী পুণ্যার্থীদের জন্য ৩ হাজার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কক্ষ এ টাওয়ারের বৈশিষ্ট্য।
কমপ্লেক্সটি সবচেয়ে লম্বা টাওয়ার ৬০১ মিটার (১,৯৭২ ফুট) উচ্চতা নিয়ে সৌদি আরবে সর্বোচ্চ উচ্চতম ভবন হিসাবে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এটি তাইপেই, তাইওয়ান এর তাইপেই ১০১কে টপকানো বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম ভবন দুবাই এর বুর্জ খলিফা এবং সাংহাই এর সাংহাই টাওয়ার ছাড়া।
মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার হতে দূরত্ব :
হজর - ২৬০ মিটার (৮৫০ ফুট)
জমজম - ২৬০ মিটার (৮৫০ ফুট)
মাকাম - ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট)
কিবলা - ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট)
মারওয়াহ - ২৪০ মিটার (৭৯০ ফুট)
সাফা - ২৪০ মিটার (৭৯০ ফুট)
Next Post Previous Post