গালিবের গজল থেকে চয়ন ও পরিচিতি - আবু সয়ীদ আইয়ুব

গালিবের গজল থেকেচয়ন ও পরিচিতি - আবু সয়ীদ আইয়ুব


মুদ্রিত মূল্য- ২২৫
ক্যাটাগরিঃ অনুবাদকৃত গজল
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০


মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব (ডিসেম্বর ২৭, ১৭৭৯ — ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৮৬৯) ভারতবর্ষে মোঘল-সম্রাজ্যের শেষ ও ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিককার একজন উর্দু এবং ফার্সি ভাষার কবি । সাহিত্যে তার অনান্য অবদানের জন্য তাঁকে দাবির-উল-মালিক ও নাজিম-উদ-দৌলা উপাধি দেওয়া হয়। তাঁকে মোঘল সম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ায় তাঁকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। 


গালিব কখনো তাঁর জীবিকার জন্য কাজ করেননি। সারা জীবনই তিনি হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ধার কর্য করে নতুবা কোনো বন্ধু উদারতায় জীবন যাপন করেন। তাঁর খ্যাতি আসে তাঁর মৃত্যুর পর। তিনি তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাঁকে স্বীকৃতি দিবে। ইতিহাস এর সত্যতা প্রমাণ করেছে। উর্দু কবিদের মধ্যে তাঁকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি লেখা হয়েছে।
উর্দুতে যা “শের” তার বাংলা প্রতিশব্দ করলে দাড়ায় দ্বিপদী শ্লোক যা কবিতার অন্ত্যমিল বিশিষ্ট এবং সমান মাপের দুইটি চরণ; গজল হচ্ছে বেশ কিছু ক্রমিক শের এর সমন্বয়। গালিবের শের এর মূল বিষয়বস্তু প্রেম হলেও কখনো বিষয় হিসেবে এসেছে দার্শনিকতা-তাত্ত্বিকতা, ধর্ম নিয়ে উপহাস, ঠাট্টা-বিদ্রূপ যা আবু সয়ীদ আইয়ুব অনুবাদিত “ গালিবের গজল থেকে” বইটিতে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
প্রেম শাশ্বত , সুন্দর , চির পবিত্র। ভয় না পেয়ে সাহসের সাথে প্রেমের পথে হতে হয় অগ্রসর। মানুষের জীবনকে প্রেম কখনো পরিপূর্ণ করে তোলে আবার কখনোবা ব্যর্থতায় ভরিয়ে দেয়, তা সত্ত্বেও মানুষ প্রেমের পথে পা বাড়ায় সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে যা প্রকাশ পায় গালিবের শের এ –
“ দুনিয়ার এই ভয়ানক উজাড় মজলিশে প্রদীপের মত আমি,
প্রেমের শিখাকেই আমার সর্বস্ব জ্ঞান করলাম।”
মানুষের বিভিন্ন রুপের মাঝে স্রষ্টার নিজের রূপ প্রদর্শিত হয়। মানুষের প্রতি মানুষের অপার ভালোবাসায় সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসার নিদর্শন মেলে বিপরীতে ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া নিষ্ঠুর ব্যবহার স্রষ্টার নিষ্ঠুরতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় –
“ আকাশের দিকে তাকালে তার কথাই মনে আসে আসাদ
তার নিষ্ঠুরতায় আমি যে দেখেছি বিধাতার নিষ্ঠুরতার আদল।”
নিষিদ্ধ কোন কিছুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ সর্বদাই বেশি। পুণ্যের রাস্তায় তাই মানুষ ধাবিত হয় কম, পাপের রাস্তাই তাকে বেশি টানে। ভালো হবে না জেনেও মানুষের অবচেতন মন খারাপের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। যাকে ভালোবাসা যায় তার জন্য প্রাণ ও দেয়া যায়। একদিকে তার প্রতি প্রেম মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে অপরদিকে তাকে না দেখতে পেলে তার প্রতি তীব্র ভালোবাসার জন্যই জীবন হয়ে পড়ে দুঃসহ, উভয়ের দ্বিধা দন্দের এক অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে গালিবের শের এ –
“ বাঁচা-মরার ভেদ থাকে না প্রেমে
তাকে দেখেই বেঁচে আছি যে সর্বনাশার জন্য প্রাণ যায়।”
প্রার্থনা করা হয় প্রার্থনা মঞ্জুরের জন্য । সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের আকুল আহবান, আর্তনাদ থাকে কিন্তু স্রস্টা থাকেন নির্বিকার। অপরিসীম ধৈর্য ও সাধনার পর স্রস্টা আমাদের আহবানে সাড়া দেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা ও প্রার্থনায় সাড়া দেবার মধ্যবর্তী সময়ের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ফুটে উঠে গালিবের শের এর মাঝে-
“ এদিকে আমি শতসহস্র আর্তনাদ
ওদিকে তুমি – এক পরমআশ্চর্য না শোনা।”
প্রেম- ভালোবাসা, কামনা-বাসনা, লোভ , স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, নিষ্ঠুরতা সব কিছুর সমন্বয়ে মানব জীবন গড়ে ওঠে। গালিবের শের আমাদের বার বার পরিচয় করিয়ে দেয় গভীর জীবনবোধের সাথে যা হৃদয় স্পর্শ করে, উন্মোচিত করে জীবনের কিছু চরম সত্য।কেউ গালিবের গজল পড়েছেন কি? না পড়লে পড়ে ফেলুন, পস্তাবেন না মোটেও 
- Meherunnesa Taher
Next Post Previous Post