Islamic History In Bangla | Bangla Islamic History | Tarik Bin Ziyad | Salah Uddin Ayubi | Mohammad Ibne Kasim

Islamic History In Bangla | Bangla Islamic History |  Tarik Bin Ziyad | Salah Uddin Ayubi | Mohammad Ibne Kasim 

মধ্যএশিয়ার ট্রান্সঅক্সিয়া না,খাওয়ারিজম ও চীনের কাশগড় বিজেতা দিগ্বিজয়ী বীর কুতাইবা বিন মুসলিম


পর্ব :১ 
ইরাকের বসরার আরবের বাহলী গোত্রে আত্মপ্রকাশ করে এক বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম বীর ; যার নাম কুতাইবা বিন মুসলিম।তাবেয়ীদের যুগে যিনি ইসালমী জ্ঞান - বিজ্ঞান ও যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। যাকে বলা হয় মধ্য এশিয়া বিজয়ের নায়ক।মাত্র ১০ টি বছরের শাসনামলে ট্রান্সঅক্সিয়ানা, খাওয়ারিজম ও চীনের কাশগড়কে জয় করে উমাইয়া খিলাফতের অধীনে খোরাসানের নিজস্ব মুসলিম রাজ্যের সীমাকে বিস্তৃত করেন।

কুতাইবা বিন মুসলিম

                                              Read Here

  • bangla islamic history video
  • islamic documentary in bangla
  • kafela bangla
  • islamic life bangla
  • bangla islamic documentary video
  • islamic kahini bangla
  • bangla islamic site
ট্রান্স অক্সিয়ানা অবস্থান ছিল তৎকালীন সময়ে খোরাসানের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত উজবেকিস্তানের, তাজাকিস্তানের বিরাট অংশ ও কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান এর দক্ষিণের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ; যাকে আরবরা "মারওয়ান নাহর" বলে চিনত যার সীমানা 'আমু দরিয়া' তথা 'জাইহুন' নদী দ্বারা পৃথক ছিল। বুখারা ও সমরখন্দ ছিল ট্রান্সঅক্সিয়ানার গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর যা তখন মূর্তিপূজকদের অধীনে ছিল। 

আর খাওয়ারিজম হল উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এর এক অংশ ও কাজাখস্তান এক অংশ নিয়ে গঠিত।আর কাশগড় বর্তমানে চীনের জিংজিয়াং প্রদেশে অবস্থিত যেখানে বর্তমানে উইঘুর মুসলিম ও চীনা হান মুসলিমরা অবস্থান করছে। ট্রান্সঅক্সিয়ানাতে দুর্ধর্ষ তুর্কি সম্প্রদায় বসবাস করত বলে একে তুর্কিস্থানের একটা অংশ বলা হত।

মধ্য এশিয়ার যে অংশে সেলজুকেরা ঈমান এনে গজনবী সম্রাজ্যে প্রথম আবাস গড়ে তুলেছিল তাকে বলা হত তুর্কমেনিস্তান তথা (তুর্ক+ঈমান)=তুর্কমান। পরবর্তীতে চেঙ্গিস খানের উত্থানের পর তুর্কিদের একটা বিরাট অংশ যারা মুসলিম হয়েছিল তারা "seljuk of rome" এর আনাতোলিয়ার দিকে স্থানান্তর হয় ও আরেক অংশ যারা অমুসলিম ছিল তারা চেঙ্গিস খানের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মঙ্গোল তাতরীদের দলভুক্ত হয়ে যায়। 

পরবর্তীতে তাতারী সম্রাট বারকে খান ইসলাম গ্রহণের পর রাশিয়ার ক্রিমিয়াতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে।
খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে খোরাসানের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল আফগানিস্তানের বিশাল অংশ, ইরানের একাংশ নিয়ে গঠিত। খলিফা উমর ইবনে খত্তাব রাঃ ও উসমান রাঃ এর আমলে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ ও আহনাফ ইবনে কায়েস রাঃ এর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ খোরাসানের এক বিরাট অংশ মুসলমানদের অধীনে চলে আসে।উমাইয়া খিলাফতের অধীনে ইরাকের বসরার শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। তার অধীনে তৎকালীন খোরাসানের ওয়ালী(গর্ভনয়)নিযুক্ত হত।

হাজ্জাজ ছিল ইতিহাসে এক রক্তপিপাসু শাসক যার হাত থেকে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইয় রাঃ ও নিস্তার পায় নি।কিন্তু তার কিছু গুণ ছিল তন্মধ্যে একটি হল কুরআনের আয়াতে আরবী যের জবর যুক্ত করে অনারবদের জন্য কুরআন বুঝতে সহজ করে দেন।

 এছাড়া তিনি সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল আরবিতে অনুবাদের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন এবং প্রথমবারের মত তিনি খলিফা আবদুল মালিককে মুসলিম বিশ্বের জন্য বিশেষ মুদ্রা চালুর ব্যাপারে রাজি করাতে সক্ষম হন।

 আরেকটি হল উনি যুদ্ধমনা ছিল যা উমাইয়া খিলাফতকে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত করতে সাহায্য করেছে ও খলিফা ওয়ালীদ বিন মালিকের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।আফ্রিকার মুসলিম মুসা বিন নুসাইর স্পেনে অভিযানের অনুমতিপত্রের জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। 
Islamic History In Bangla | Bangla Islamic History |  Tarik Bin Ziyad | Salah Uddin Ayubi | Mohammad Ibne Kasim
অপরদিকে এক মেয়ের আর্তনাদে সাড়া দিয়ে দেবলের হিন্দু রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিতে তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ছিল। এছাড়া খোরাসানের অকর্ম মদপ্য, ভোগবিলাসী, বুখারা ও সমরখন্দের কাফের শাসকদের খোরাসান দখলের ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বেখবর ওয়ালী ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাবকে অপসারণ করে কুতাইবা বিন মুসলিমকে খোরাসানে ওয়ালী নিযুক্ত করার তার দূরদর্শিতা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তায়েফে জন্ম নেওয়া হাজ্জাজ যদিও মক্কাও ইরাকে শত শত মুসলিমের রক্ত ঝড়িয়েছে তবুও তার তরবারি রোমান বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধেও লড়েছেন। হাজ্জাজ যেমন অসংখ্য জুলুম করেছে তেমনিভাবে আবার মজলুমের পাশেও দাঁড়িয়েছে। 

শত জুলুম করলেও তিনি আল্লাহর কাছে অসহায় ও কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর শাসক ছিলেন ও সাধারণ জনগণের পকরতি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। তাইতো শেষ মুহূর্তে মৃত্যুশয্যায় শায়িত হাজ্জাজের পাশে বসা একজন বলল, "আজ তোমার মুক্তিও নেই ও মুক্তির ফরিয়াদও নেই।"

কথাটা হাজ্জাজের কানে গেলে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলেন, "ইয়া আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেন! লোকজন বলছে, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন না! আপনি ক্ষমা না করলে তো আমার ধ্বংস অনিবার্য।"

রাসুল্লাহ সাঃ এর সময় আরব উপদ্বীপ যে ইসালমের চারা রোপিত হয়েছিল তা খলিফা ওয়ালিদ সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে তথা ৯০বছরের ইসলামী রাজত্বে শামের সিরিয়া,ফিলিস্তিন,ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন,উত্তর আফ্রিকার মরক্কো, মিশর,আলজেরিয়া, তিউনেসিয়ার ও সাইপ্রাস দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। 

আর উমাইয়া খলিফা ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিকের মাত্র ১০ বছরের আমলে ইসলামের শাখাপ্রশাখা পৃথিবীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।পৃথিবীতে চারটি মুসলিম বিখ্যাত বীরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রথমবারের মত ইউরোপের মুসলমানদের বিজয় যাত্রা শুরু হয় বর্তমান স্পেন পর্তুগাল,দক্ষিণ ফ্রান্সের দক্ষিণাংশকে পদানত করে বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদ ও আফ্রিকার গর্ভনয় ও বিজেতা মুসা বিন নুসাইর এর যৌথ আক্রমণে। 

অপরদিকে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ বিজয় করে ভারত উপমহাদেশে ইসলামের পতাকা উত্তোলনের সূচনা করেন ১৭ বছরের বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম। 

অপরদিকে খোরাসান থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রান্স অক্সিয়ানা হতে চীনের কাশগড় পর্যন্ত সমগ্র মধ্য এশিয়ার ইসলামের পতাকা ও বিজয়কে সুসংহত করতে আসেন আরেক মহান সেনাপতি যার নাম কুতাইবা বিন মুসলিম ;যার বীরত্বগাঁথাগুলো এইখানে ফুটে ওঠবে ধারাবাহিকভাবে।

খোরাসানের ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত চমৎকার যাতে রয়েছে পৃথিবীর ছাদ খ্যাত বিখ্যাত' পামীর মালভূমি'।খোরাসানে বেশিরভাগ ভূমিই পাহাড়ি এবড়ো থেবড়ো পথে ঘেরা। রয়েছে বিখ্যাত হিন্দুকুশ পর্বতমালা। রয়েছে তিনটি বড় নদী। একটি জাইহুন আরেকটি সাফাদ ও অপরটি সাইহুন নদী। 


তিব্বতের একটি মাউন্ট এভারেস্টের নিকটবর্তী ঝিল থেকে বের হয়ে 'জাইহুন' নদীটি আরাল হ্রদে পতিত হয়েছে। এই নদীর অসংখ্য শাখা আছে যেগুলো নৌপথ ধরে চীনের কাশগড় পর্যন্তও চলে যাওয়া যায়। আর 'সাফাদ' নদীটি কোন শাখা প্রশাখা নাই বরং এটি হিন্দুকুশের বিতামের পর্বতশ্রেণী থেকে বের হয়ে সোজা খোরাসান থেকে সমরখন্দ হয়ে বোখারায় চলে গেছে। আর 'সাইহুন' নদীটা জাইহুন নদীর সমান্তরালে অনেক দূরে প্রবাহিত হয়েছে। এর কিছু শাখা আছে যার একটি চীনের একেবারে অভ্যন্তরে চলে গেছে।

খোরাসানের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুদূর তুর্কিস্তানের বুখারা ও সমরখন্দের মূর্তিপুজারী শাসকরা ক্রমেই ষড়যন্ত্রের দানা বিস্তৃত করতে লাগল।এমনই সময়ে হাজ্জাজের দূরদর্শিতায় নতুন গর্ভনয় হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেই সমগ্র মধ্য এশিয়ায় ইসলামের ঝাণ্ডা উড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন কুতাইবা বিন মুসলিম।উনার যুদ্ধের ধরণ ছিল শত্রুপক্ষের উপর দ্রুত শক্তিশালী একটি কার্যকরী আক্রমণ এবং বিচ্ছিন্ন শত্রুপক্ষকে সুসংহত করার সময় না দিয়ে সমূলে উৎপাটন করা যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ না করে।

তার সাথে ছিল তার তিন ভাই আব্দুর রহমান, সালেহ ও উবায়দুল্লাহ।আর তার সাথে ছিল বনু উমাইয়ার পরবর্তী ইতিহাসে স্মরণীয় এক জেনারেল নাসর বিন সাইয়ার। এছাড়া ছিল খোরাসানে জন্মগ্রহণকারী বনু তামীম গোত্রের সেনানায়ক খুনাইস বিন ইউসুফ। 

খোরাসানে বনু তামিম গোত্রের দুইটি অংশ ছিল। একটি পরিচালিত করত সর্দার হুরাইম ও অপরটি পরিচালিত করত সর্দার ওয়াকি।ইতিহাসে এই ওয়াকিই একসময় কুতাইবা বিন মুসলিমের হত্যাকারী হয়েছে।বনু তামিম গোত্রের উভয় সর্দারই খোরাসানের বনু তামীম গোত্রের সৈন্যদেরকে কুতাইবা বিন মুসলিমের নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধাভিযানের জন্য প্রস্তুত করে থাকত।

তুর্কিস্তানে ইসলামে পতাকা উত্তোলনের জন্য কুতাইবা বিন মুসলিমের কাছে দুইটা পথ খোলা থাকে। একটি হল মার্ভ থেকে জাইহুন নদী পাড়ি দিয়ে অনেক এবড়ো থেবড়ো বিপদাসংকুল পাহাড়ি পথ হয়ে ট্রান্সঅক্সিয়ানার দিকে ও অপরটি মার্ভ থেকে সোজা বলখ হয়ে তিরমিজ এবং সেখান থেকে জাইহুন নদী পাড়ি দিয়ে তুর্কিস্তানের ট্রান্সঅক্সিয়ানার দিকে। সেনানায়কদের সাথে পরামর্শ করে কুতাইবা বিন মুসলিম দ্বিতীয় পথটি বেছে নেয় যেহেতু এই পথে তুর্কিস্তান যেতে কম বাধা বিপত্তি পড়বে। 

যেহেতু এই পথে দূর্বল শাসকগুলোকে আগে শায়েস্তা করে পথের কন্টকমুক্ত করে সবলের দিকে হাত বাড়ানো যাবে।তিনি অগ্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করেন তার ভাই সালেহ।আর তার সাথে অগ্রবাহিনীতে ডান ও বাম বাহু পরিচালনার জন্য প্রয়োজনমাফিক নাসর বিন সাইয়ার ও খুনাইস বিন ইউসুফকে সেনানায়ক করা হয় । 

আর তার অপর ভাইদ্বয় আব্দুর রহমান ও উবায়দুল্লাহকে সাথে নিয়ে অগ্রবাহিনী থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পিছনে পিছনে আসতে থাকে ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরেতে লেখা আগামী দিনের মধ্য এশিয়া বিজেতা খোরাসানের রাষ্ট্রপ্রধান কুতাইবা বিন মুসলিম আল বাহিলী।৮৬ হিজরী মোতাবেক ৯০৫ ঈসায়ীতে প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে খোরাসানের মার্ভ থেকে খাওয়ারিজম, তুর্কিস্তানের ট্রান্সঅক্সিয়ানা ও চীন বিজয়ের জন্য অগ্রসর হতে থাকেন ।

প্রথমেই উমাইয়া খিলাফতের অধীনে খোরাসানে তৎকালীন রাজধানী মার্ভ থেকে অগ্রবাহিনী নিয়ে বলখের উপকণ্ঠে পৌঁছে 'বলখ ' শহরের অবরোধ করে।পশ্চাৎবাহিনীতে কুতাইবা বিন মুসলিমের আগমনের সংবাদ শুনে ছোট্ট বলখের দূর্বল শাসক জিযিয়া করের মাধ্যমে সন্ধির পথ বেছে নেয়। নির্দিষ্ট মুসলিম সৈন্যবাহিনী ও শাসক নিযুক্ত করে কুতাইবা বিন মুসলিম তিরমিজে পৌঁছে জাইহুন নদী অতিক্রম করে সাফানিয়ান শহরের দিকে অগ্রসর হন। কুতাইবা বিন মুসলিমের বিশাল শক্তিশালী বাহিনী দেখে ছোট্ট সাফানিয়ানের রাজ্যের শাসকও একই পথে হাটা দেয়। 

এরপর আসে শুমান শহর। কুতাইবা বিন মুসলিমের এই অগ্রযাত্রায় এই ছোট্ট শহরটির রাজাও একইভাবে জিযিয়া করের মাধ্যমে সন্ধিচুক্তি করে রেহাই পায়।এভাবে কুতাইবা বিন মুসলিমের তুর্কিস্তানের ট্রান্সঅক্সিয়ানা বিজয়ের যাত্রাপথে খাওয়ারিজমের প্রথম তিনটি শহরই কোন রক্তপাত ছাড়া জয় হয়।প্রতিটি শহরে কিছু সৈন্য রাখায় সৈন্য সংখ্যা কিছুটা কমে গিয়েছিল।তবে খাওয়ারিজমের তিনটি ছোট শহরের নিয়জিত স্বায়ত্তশাসিত অমুসলিম গর্ভনয়দের থেকে তিনি অনেক উপহার-উপঢৌকন পান এই তিনটি রক্তপাতহীন বিজয়ে।

খাওয়ারিজমের 'বাগদিস 'শহরের শাসক বনী তামিম গোত্রের কয়কজন লোককে বন্দী করে রেখেছিল। কুতাইবা যখন ঐ এলাকায় পৌছেন তখন তিনি উক্ত শাসককে জিযিয়া কর দিয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেন ও যেসকল মুসলমানদেরকে বন্দী করে রেখেছে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুংকার দেন। কুতাইবার ভয়ে ধমক খেয়ে বাগদিসের শাসক বন্দীগুলো ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি বরং সে বার্ষিক জিজিয়া কর দিয়ে সন্ধি করতে রাজি হয়।

সালেহকে মুসলিম সৈন্যবাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে কুতাইবা রাষ্ট্রীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য কিছুদিনের জন্য মার্ভে চলে যান। সালেহ, নাসর ও খুনাইস তিনজনে নিরবিচ্ছিন্ন অভিযানে কাশান, ফারগানা, মুশত, বায়গিস ও খশক নামের অঞ্চলগুলো উমাইয়া খিলাফতের অধীন খোরাসান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।তেমন উল্লেখযোগ্য কোন যুদ্ধ করতে হয় নি এইএলাকাগুলো অনেকটা পূর্বের মতই পরিণতি বরণ করে।

ইতিমধ্যে কুতাইবা বিন মুসলিম প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় কাজ সমাধা করে মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সাথে আবারো যোগ দেন। এবার লক্ষ্য তুর্কিস্তানের কাঙ্খিত ট্রান্সঅক্সিয়ানার গুরুত্বপূর্ণ শহর বুখারা ও সমরখন্দ!
(বিঃদ্রঃ ইনশাল্লাহ আগামী সপ্তাহে পরবর্তী পর্ব।তিনপর্বে শেষ করব ইনশাল্লাহ। দোয়া করবেন )


বায়তুল মোকদ্দাস বিজেতার পিতা-মাতা কেমন ছিল?


দৃশ্যপট:১
নাজিমুদ্দীন আইয়ুবী রহঃ।তার হাতে ইরাকের তিকরিতের শাসনভারের গুরুদায়িত্ব। তখন মুসলিম বিশ্বে বাগদাদ ভিত্তিক আব্বাসীয়া খলিফার রাজত্ব ছিল। ওদিকে স্পেনে কর্ডোভা ভিত্তিক আরেক খিলাফত উমাইয়ার পতন ঘটল কয়েক যুগ পূর্বে । 

ইউসুফ বিন তাশফীন আফ্রিকার মরক্কো থেকে ঝড়ের বেগে এসে গাদ্দার তাইফা শাসক ও খ্রিস্টান আলফানসূর হাত থেকে সবেমাত্র স্পেনের কর্ডোভা, সেভিল ও গ্রানাডাসহ সমগ্র স্পেনের অর্ধেক অংশ(দক্ষিণ স্পেন) তথা আন্দালূসিয়া উদ্ধার করে মুসলমানদের মনে সাহস জুগিয়ে গেল যে এখনও মুসলিমদের ঈমানী চেতনা মরে যায় নাই। 

তারা এক বীরের জাতি যারা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দয়া ও সাহায্যে জয়লাভ করে থাকে।
নাজিমুদ্দীন আইয়ুবীর বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ের নামগন্ধ নাই। এটা দেখে ভাই আসাদুদ্দীন শিরকুহ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

ভাই নাজিমুদ্দীনের সাথে এব্যাপারে মতামত জানার জন্য কথাবার্তা শুরু করলেন তিনি।
-কী রে! বিয়ে - টিয়ে করবে না?
-মনমতো পাত্রী পাচ্ছি না তো।
-আমি পাত্রী দেখে তোমার জন্যে?
-পাত্রীটা কে হবে শুনি?
-সেলজুক সম্রাজ্যের বিখ্যাত সুলতান আল্প আরসালান পুত্র মালিক শাহের মেয়ে অথবা সেলজুক সম্রাজ্যের উযিরে আযম (প্রধানমন্ত্রী) বিখ্যাত আলেম নিযামুল মূলকের মেয়ে?
-নাহ! তারা আমার কাঙ্খিত পাত্রী নয়।
-তোমার কাঙ্খিত পাত্রীর বৈশিষ্ট্য কী বল তো শুনি!
-আমি চাই এমন একজন সুশীলা নারী যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আমাকে একটা নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথভাবে লালন - পালন করবে। বড় হয়ে সে ছেলে একজন দূর্দান্ত ঘোড়সওয়ার ও সাহসী মুজাহিদ হবে। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মোকদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।

দুই ভাইয়ের মধ্যে যখন কথা হচ্ছিল তখন তারা তিকরিতে যা জেরুজালেম তথা কুদস থেকে অনেক দূরে। বায়তুল মোকদ্দাস ছিল ক্রুশেডারদের হাতে। কিন্তু নাজিমুদ্দীনের তনুমন পড়ে ছিল আকসার পানে। এমনকি নিজের বিয়েটা পর্যন্ত স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।

আসাদুদ্দীন ভাইয়ের কথায় আশ্বস্ত হতে পারলেন না।
তিনি বললেন, "তুমি যেমন পাত্রীর আশায় বসে আছ, ইহজীবনে তেমনটা পাবে কি না! আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে রে!"
নাজিমুদ্দীন বলল, "যে ইখলাসের সাথে আল্লাহকে রাজি করার জন্যে কোনও নিয়ত করে, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন।"


দ়শ্যপট:২
উক্ত ঘটনার কয়েকদিন পর, নাজিমুদ্দীন তিকরিতেই এক শায়েখের মজলিসে বসে আছেন। কথা বলছেন। এমন এক সময় এক যুবতী এসে পর্দার আড়াল থেকে শায়খকে সালাম দিল। শায়খ সালামের উত্তর দিয়ে তার সাথে কথা বলা শুরু করলেন,
-তোমার জন্য যে পাত্রটা পাঠিয়েছিলাম তাকে ফিরিয়ে দিলে কেন? সে কম কিসে?
-শায়খ! আপনার পাঠানো পাত্র জ্ঞানে - গরীমায় কোন অংশে ফেলনা নয়। রূপে-গুণে - পদে অর্থেও বাছার মত নয়।
-তাহলে ফিরিয়ে দিলে যে?
-শায়খ! এই পাত্রের মধ্যে আমার কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য নেই!
-কেমন পাত্র চাও?
-আমি চাই এমন নেককার পাত্র যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আমাকে একটা নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথভাবে লালন - পালন করবে। বড় হয়ে সে ছেলে একজন দূর্দান্ত ঘোড়সওয়ার ও সাহসী মুজাহিদ হবে। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মোকদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
নাজিমুদ্দীন অবাক হয়ে দুজনের কথাপোকথন শুনলেন। মেয়েটার শেষ কথা শুনে তিনি একেবারে বাকহারা হয়ে গেলেন। দুজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের মনের কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় কিভাবে?ভাবনার অতলে হারিয়ে গেলেন। হঠাৎ করে সম্বিত ফিরে পেয়েই বলে উঠলেন,"শাইখ! আমি এই পূণ্যবর্তী মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাই। "
শাইখ বললেন," নাহ! তা কি করে সম্ভব! এই মেয়ে আমাদের মহল্লার সবচেয়ে গরীব ঘরের সন্তান। আর তুমি হলে আমাদের ওয়ালী (গর্ভনয়) ।"
নাজিমুদ্দীন শায়খকে সব কথা খুলে বললেন। শায়খ উভয়ের মধ্যে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন।
দুজন মহৎপ্রাণ যুবক-যুবতীর মাঝে বিয়ে হয়ে গেল। তাদের ইখলাস ও নিয়তের বরকতে আল্লাহ তাদেরকে দান করলেন একটা অন্যন্য উপহার। অপূর্ব এক পুত্র সন্তান।

🌠🌠🌠দৃশ্যপট:৩
ছোট সালাহউদ্দিন বাড়ির সামনে খেলা করছে। সাথে আরও কিছু ছেলে আছে। বাবা নাজিমুদ্দীন আইয়ুব সদ্য জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে এসেছেন। গত একমাস সুলতান ইমামুদ্দীন জংগী রহঃ ও তার সুযোগ্য সন্তান সুলতান নুরুদুদ্দিন জংগী এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে বেড়িয়েছেন। । এখানে 'জংগ' মানে 'যুদ্ধ' আর 'জংগী ' মানে'যোদ্ধা তথা মুজাহিদ ' ।এগুলো ফারসী অর্থ। কিন্তু আজ কাফেররা এইসকল অর্থগুলো বিকৃতি করে মুসলমানদের প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে এগুলোকে সন্ত্রাসী অর্থে নিচ্ছে আর নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে মিডিয়ার অপপ্রচারে ঢেকে রাখতে চাচ্ছে ও নিজেদেরকে সাধু সাজছে। অথচ দুঃখের বিষয় যে আমরা 'জংগী বিমান ' শব্দ বলতে ভয় পাই না।প্রকৃত সন্ত্রাসী কারা সেই ব্যপার পূর্ববর্তী তিনটি পর্বের পোস্টে আমি আগেই বিশ্লেষণ করেছি।অনেকেই এই নাম ইংরেজী জিংকী শব্দ ব্যবহার করে থাকে যেমনটি খ্রিস্টানরা স্পেনের ' জাবালুত তারেক' পর্বতকে 'জিব্রাল্টার 'রেখেছে।
আমি জিহাদকে সন্ত্রাসের সাথে মিলাতে চাই না। সন্ত্রাস আর জিহাদ এক নয়। ইসলামে জিহাদ শব্দটা সন্ত্রাস দমনের অর্থে ব্যবহৃত হয় ও আল্লাহর জমিনে শুধু আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহৃত হয়।
যাইহোক নাজিমুদ্দীন আইয়ুবী দেখলেন, ইদানিং সিরিয়ার উপকূলে খ্রিস্টানদের উৎপাত বড্ড বেড়ে গেছে। তাদের দ্রুত শায়েস্তা করা দরকার। কয়েকটা দিন ছুটি নিয়ে এসেছেন। আবার ময়দানে ফিরে যাবেন। দূর থেকে দেখলেন, "সালাহউদ্দিন থালা বাসন নিয়ে খেলছে। ঘোড়া থেকে নামলেন। ছেলেকে কোলে উঠিয়ে নিলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘকায় বলিষ্ঠ সুপুরুষ। ছেলেকে হাত দিয়ে ওপরে তুলে ধরে বললেন," আমি তোমার আম্মুকে বিয়ে করে তোমার জন্ম দিয়েছি বায়তুল মোকদ্দাস জয় করার জন্যে। মাটিতে বসে খেলা করার জন্য নয়। "
বাবা এবার ছেলেকে ওপর থেকে ছেড়ে দিলেন। ছেলের মুখে ব্যথার ছাপ ফুটে ওঠেই মিলিয়ে গেল।
-কী ব্যাপার! ব্যথা পাওনি?
-জি পেয়েছি।
-কাঁদোনি যে?
ছোট শিশু উত্তর দিল," যে বায়তুল মোকদ্দাস জয় করবে সামান্য ব্যথা পেয়ে কান্না করা তার জন্য শোভা পায় না। "

🌠🌠🌠দ়শ্যপট:৪
বাগদাদ শহরে একজন কাঠমিস্ত্রি থাকতো। লোকটি একদিন খুব সুন্দর একটি মিম্বার বানালেন। চারিদিক থেকে লোকেরা দলে দলে এসে মুগ্ধ হয়ে মিম্বারটি দেখছে। ক্রেতারা বেশ চড়া মুল্য দিয়ে হলেও মিম্বারটি কিনতে চায়। কিন্তু বুড়োর এক কথা- তিনি এটি বিক্রি করবেন না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো- তা হলে আপনি এতো কষ্ট করে এটি বানালেন কেন? তখন মিস্ত্রি উত্তর দিলেন- এটি বানিয়েছি মসজিদে আকসায় লাগানোর জন্য। লোকেরা তার কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। আকসা এখনও খ্রিষ্টানদের দখলে আর এই বুড়ো বাগদাদে বসে তার জন্য মিম্বার বানাচ্ছে। কেউ কেউ তাকে পাগলও ঠাওরাল। তখন বৃদ্ধ কাঠমিস্ত্রি বললেন- এটিই তো আমার পেশা। আমি তো আর যোদ্ধা নই। তার উপর আবার বৃদ্ধ। তো আমার যা সাধ্যে আছে তা-ই মসজিদে আকসার জন্য ব্যায় করছি। আমার কাজ মিম্বারটি বানানো। সেটি আকসায় বসানোর লোক আল্লাহ ঠিক করে দেবেন। ওইদিন একটি শিশুও তার বাবার হাত ধরে ওই কাঠমিস্ত্রির মিম্বারটি দেখতে গিয়েছিল। ঠিক একদিন ওই শিশুটির হাতে কুদস বিজয় হয়, এবং তিনি মিম্বারটি সংগ্রহ করে নিজ হাতে তা মসজিদে আকসায় লাগিয়ে দেন। শিশুটির নাম ছিল সালাহুদ্দীন!
শিক্ষণীয় :
এখন কী এমন পাত্র বা পাত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে যারা সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জন্ম দেওয়ার স্বপ্ন দেখে? বরং এখন সকলেই স্বপ্ন দেখে হয় তার ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা শুধু হুজুর হবে! তবে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা আজকাল সমাজে দুঃস্বপ্নই মনে হয়।
আল্লাহ যখন চাইবেন তখন হয়ত গোবরেও পদ্মফুল ফুটবে।আল্লাহর দ্বীনকে টিকিয়ে রাখতে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত প্রতি শতাব্দির মধ্যে আল্লাহ তা'লা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর মত বিখ্যাত কোন মুসলিম বীর ঠিকই পাঠাবেন। গোবরের পদ্মফুলের মত রুকনুদ্দিন বাইবার্সের মতই রাশিয়ার কিপচাকের দাস থেকে বিখ্যাত বীরের মত আত্মপ্রকাশ করবে। বা ইমাম ইবনে তাইমিয়াহর মতই একদিকে আলেম ও অপরদিকে তাতারী ফেতনার মত ভায়াবহ ফেতনা গুলোর বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাবেন।
কুদস আজ কাঁদছে। ইহুদীরা মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে তাতে মাইন পুতে বায়তুল মোকদ্দাসকে ধ্বসিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বায়তুল মোকদ্দাস ইহুদীদের দখলে। ৭০বছর ধরে আমেরিকা ইসরাইলকে প্রকাশ্যে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। আজ ট্রাম্পের ছবি ইসরাইলের মুদ্রার দেখা যাচ্ছে যেহেতু ট্রাম্প কট্টর ইহুদীপন্থী ও জেরুজালেমে আমেরিকান দূতাবাস স্থাপন করেছে ইসরাইলকে প্রতিরক্ষা করতে ও ইহুদীদের কাঙ্খিত সোলেমান মন্দির তৈরী করার কাজ নির্বিঘ্নে সমিধা করার জন্য। মুসলমানরা ও বিশ্বমানবতাবাদীরা আজ আরেকজন সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর জন্য অপেক্ষা করছে।আল্লাহ মুসলমানদের জন্য আরেকজন সালাহউদ্দিন আইয়ুবী দান করুক ও মুসলমানদের মাঝে এইরূপ ঈমানী চেতনা জাগ্রত করুক ও এই অধমকেও হেদায়েতের পথে অটল রাখুক। ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফেরদের পণ্য যথাসম্ভব বর্জন করে ঘুমিয়ে থাকা মুসলমানদেরকে অন্তত কাঠমিস্ত্রির মত আমল করার তৌফিক দান করুক। আর জাগ্রত মুসলমানদেরকে বায়তুল মোকদ্দাস উদ্ধারের জন্য নব সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বা ইমাম মাহদীর দলের সঙ্গী হওয়ার তৌফিক দান করুক। আমিন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
"O you who believe! whoever from among you turns back from his religion, then Allah will bring a people, Allah shall love them and they shall love Allah. lowly before the believers, mighty against the unbelievers, they shall strive hard in Allah's way and shall not fear the censure of any censurer; this is Allah's Face, He gives it to whom He pleases, and Allah is Ample-giving, Knowing".(sura mayeda:54)




ইতিহাস থেকে কী আমরা শিক্ষা নিতে পেরেছি?


✍️আহমাদ মুখতার। তিনি আন্দালুসের ইতিহাসের উপর PhD করেছেন। তিনি বললেন-
"ছোটবেলা থেকেই আমার ইতিহাসের প্রতি ঝোঁক। বিশেষ করে আন্দালুসের ইতিহাস। সে সুবাদে আমি আন্দালুসের ইতিহাস সম্পর্কিত যত জায়গা আছে, সবখানে গিয়েছি। এখনো যাচ্ছি। এবার গেলাম মরক্কোতে। উপকূলীয় শহর তানজারে। আমার ইচ্ছে ছিল জিব্রাল্টার প্রণালীটা স্বচক্ষে দেখবো। এই প্রণালীটা জাবালুত তারেক ও সিউটা শহরের মাঝে অবস্থিত।
সিউটা শহরটা আইনত মরক্কোর অংশ। কিন্তু স্পেনের শাসক শহরটাকে জোড় করে দখল করে রেখেছে। ছোট্ট শহরটাতে স্পেনিশ সেনাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। কর্তৃপক্ষের অনুমতি দিয়ে সিউটায় গেলাম। গবেষণার কাজে গিয়েছি, তাই চেষ্টা করলাম সেখানকার উচ্চপদস্থ কোনো অফিসারের সাথে দেখা করতে। অনুমতি মিললো। জেনারেল মিগুয়েল আমাকে অনেকক্ষণ সময় দিলেন। কথা বলার এক পর্যায়ে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে জেনারেলকে প্রশ্ন করলাম,

-এই শহরটা তো আইনগতভাবে মরক্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা?
-হ্যাঁ। অনেকটাই তাই।
-তাহলে আপানারা এটাকে জবরদখল করে রেখেছেন কেন?
আমার প্রশ্ন শুনে জেনারেল রাগ করলেন না। বরং হাসিতে ফেটে পড়ে বললেন,
"আমরা এই বিপজ্জনক স্থানটা অরক্ষিত রেখে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাই। আর আপনারা আরেকজন তারেক বিন যিয়াদ পাঠিয়ে স্পেন দখল করে নেন আর কি! "
আমরা কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি? কিন্তু প্রতিপক্ষ তো ইতিহাসের বাঁক থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে।
শত শত বছর পরও সে শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না। পূর্ণ সচেতন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।
আর আমাদের মুসলিমরা?
Reference : " ইতিহাসের স্বর্ণরেনু"
 FUll Credit Goes  To : Ahmad Musa Usmani 








Next Post Previous Post