Bangla Islamic Boi - সালাতে খুশু খুজুর উপায়। লেখক-শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল মুনাজ্জিদ

Bangla Islamic Boi - সালাতে খুশু খুজুর উপায়।


'মাকতাবাতুল বায়ান ইসলামি বই গ্রুপ রিভিউ প্রতিযোগিতা ডিসেম্বর ২০১৮'।

বই-সালাতে খুশু খুজুর উপায়।
লেখক-শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল মুনাজ্জিদ। 
অনুবাদ-মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ।
প্রকাশনায়-আর রিহাব পাবলিকেশন্স।
মুদ্রিত মূল্য-১৪০ টাকা।
পৃষ্ঠা সংখ্যা-৯৩ পৃষ্ঠা।

আচ্ছা আপনি কি কখনো কোন মন্ত্রী অথবা অফিসের বসের সাথে এমন আলাপ করেছেন যার অর্থই আপনার জানা ছিল না?কথা বলার সময় স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাকি মৃদু শরীর দুলিয়ে ডানে বামে চেয়ে কথা বলছিলেন?১০ মিনিটের কথা ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে ৫ মিনিটে শেষ করেছিলেন?তার সাথে কথা বলার সময় কি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি কে?এমন হয়েছে যে আপনি কি বলে যাচ্ছেন অথচ আপনার হুশ নাই?কথা বলার সময় জামা/কার্পেট ঠিক করেছিলেন,নাকে-মুখে হাত দিয়েছিলেন?
না??
কিন্তু এসব কাজই যদি আপনি বা আমরা পুরো মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ সুবহানহু তা'আলার সামনে দাঁড়ানোর সময় অর্থাৎ সালাত আদায় করার সময় করে থাকি তাহলে এর চেয়ে পরিতাপের আর কিছু নেই!এর কারণ হচ্ছে সালাতে খুশুর অভাব!সালাত পরিপূর্ণ শুদ্ধভাবে আদায় করতে হলে শুধু খুশু সম্পর্কে জানলেই হবে না,তা সালাতে বজায়ও রাখতে হবে।

খুশু কি?

Bangla Islamic Boi - সালাতে খুশু খুজুর উপায়। লেখক-শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল মুনাজ্জিদ

খুশু এর আসল মানে হচ্ছে স্হিরতা;অন্তরে স্হিরতা থাকা।অর্থাৎ ঝুঁকে পড়া,দমিত বা বশিভূত হওয়া,বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করা।ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ ভীত ও শান্ত থাকা [ইবন কাসীর]।আলী(রা) বলেন,খুশু হচ্ছে ডানে-বাঁয়ে না তাকানো [বাগভী]।আতা বলেন,দেহের কোন অংশ নিয়ে খেলা না করা [বাগভ]।
খুশু এবং খুদূ(খুজু) দুটি পরিভাষা;অর্থ কাছাকাছি।তবে,খুদূ কেবল শরীরের ওপর প্রকাশ পায়।আর খুশু মন,শরীর,চোখ ও শব্দের মধ্যে প্রকাশ পায়।
খুশুর সম্পর্ক মনের সাথে এবং দেহের বাহ্যিক অবস্হার সাথেও।অর্থাৎ,খুশু-খুদূ হচ্ছে মানুষ কারোর ভীতি,শ্রেষ্ঠত্ব,প্রতাপের দরুণ সন্ত্রস্ত ও আড়ষ্ট থাকবে এবং যখন সে তার সামনে যাবে মাথা ও চোখ নত হয়ে যাবে,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঢিলে হয়ে যাবে,কণ্ঠস্বর নিম্নগামী হবে।

★সালাতে খুশুর প্রয়োজনীয়তাঃ



 সালাতে খুশুর প্রয়োজনীয়তা জানার জন্য আমাদের বেশি দূর যেতে হবে না।সেটা পবিত্র কুরআন এবং হাদিসেই আছে।


আল্লাহ বলেন-
قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ﴿۱﴾
অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে,

الَّذِیۡنَ ہُمۡ فِیۡ صَلَاتِہِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ﴿۲﴾
যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।[সূরা মু'মিনুনঃ১-২]



কুরআন এবং সুন্নাহয় যতবার খুশু (خُشُوْعٌ) বা বিনয়ের কথা বলা হয়েছে সেখানে এর অর্থ অক্ষমতা ও অপারগজনিত সেই মানসিক অবস্হাকেই বুঝানো হয়েছে,যা আল্লাহ তা'আলার মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং তার সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা ও দীনতার অনুভূতি থেকে সৃষ্টি হয়।এর ফলে ইবাদাত সহজতর হয়ে যায়।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘সালাতের সময় আল্লাহ্‌ তা‘আলা বান্দার প্রতি সৰ্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না সে অন্য কোন দিকে দৃষ্টি না দেয়। তারপর যখন সে অন্য কোন দিকে মনোনিবেশ করে, তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার দিকে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।’ [ইবনে মাজাহঃ ১০২৩]

আরো এসেছে,
সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর,যে সালাতে চুরি করে।সাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন,হে আল্লাহর রাসূল!সালাতে কিভাবে চুরি করে?তিনি বললেন,"রুকু-সিজদাহকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করে না"।[আহমাদ ও হাকেম-১/২৯]

"নিশ্চয়ই বান্দা সালাত আদায় করে,অথচ তার সে সালাতের সওয়াব তার জন্য লেখা হয় শুধু এক দশমাংশ,এক নবমাংশ,এক অষ্টমাংশ,এক সপ্তমাংশ,এক ষষ্ঠাংশ,এক পঞ্চমাংশ,এক চতুর্থাংশ,এক তৃতীয়াংশ ও অর্ধেক"। [ইমাম আহমাদঃ৪/৩২১]

তাই,সালাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পরিপূর্ণ সওয়াব পেতে সালাতে খুশু আনয়ন এবং বজায় রাখাটা খুব জরুরি।এক্ষেত্রে,আপনার সহায়ক হতে পারে " সালাতে খুশু খুজুর উপায়" এই বইটি।


বইটিতে যা আছেঃ"সালাতে খুশু খুজুর উপায়" নামটা দেখে প্রথমে মনে হতে পারে যে হয়তো শুধু খুশুর কতিপয় উপায় নিয়েই বইটি লেখা।তবে,এছাড়াও বইটিতে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে হয়েছে যা সালাত ও খুশুর সাথে সম্পর্কিত এবং সালাতে খুশু আনয়নে সহায়ক।

–ভূমিকা ও অতঃপরঃ বইটির মূল লিখা শুরু হয়েছে ৯ নং পৃষ্ঠা থেকে।"ভূমিকা" ও "অতঃপর" শীর্ষক দুটি ভাগে আছে সালাতে খুশু কায়েমে আল্লাহ তা'আলার আদেশ,আদম সন্তানকে গোমরাহ করার জন্য ইবলিসের প্রতিজ্ঞা,খুশু কি,খুশুর স্হান এগুলো খুব সুন্দর করে বুঝানো হয়েছে।

সালাতে খুশুর বিধানঃ এ অংশটির মধ্যে বুঝানো হয়েছে "ঈমানী খুশু ও মুনাফিকি খুশুর মধ্যে পার্থক্য" যা আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে।বিষয়টাকে সাবলীল ভাষায় বিস্তারিত উপমাসহ যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকের একবার হলেও পড়া উচিত এবং উপলব্ধি করা উচিত যে সালাতে আমার খুশু ঈমানি নাকি মুনাফিকি?

সালাতে খুশুর হুকুমঃ

দ্বীন সম্পর্কিত একটা বিষয় অবশ্যই কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে হতে হবে,তাইনা?বইটির এই জায়গায় লেখক কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে সালাতে খুশুর হুকুম,খুশুর ফজিলত ও খুশু ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।আর এ বিভাগের শেষ দিকেই লেখক সালাতে খুশু খুজুর উপায় সম্পর্কিত শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহি. এর মত তুলে ধরেন এবং তিনি যে দুটি বিষয়ের কথা বলেছেন সেগুলোকে লেখক সামনে আরো বিস্তারিত ভাবে পয়েন্টাকারে আলোচনা করেছেন।

এক.খুশুর উপায়গুলো শক্তিশালী হওয়া-‌যেসব উপকরণ অবলম্বন করলে সালাতে খুশু আসে এবং শক্তিশালী করে তার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।লেখক এখানে মোট ১৮টি দাবী কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং সাহাবী তাবেয়ীদের মত দ্বারা পেশ করেন।তন্মধ্যে কয়েকটি হলোঃ

১)সালাত আদায়ের জন্য কি কি প্রস্তুতি নেওয়া যায়
২)সালাতে কিভাবে স্হিরতা অবলম্বন করা যায়
৩)সালাতে মধ্যে মৃত্যুকে স্মরণ করার মাধ্যমে কিভাবে খুশু আনা যায়
৪)সালাফে সালেহীনদের সালাতে অবস্হা কেমন ছিল
৫)সালাতে খুশুর বৈশিষ্ট্য গুলো কেমন হয় ইত্যাদি।


দুই.খুশু প্রতিবন্ধকসমূহ দূর্বল হওয়া-সালাতে খুশুর পথে বাধা হয়,প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বা খুশু বিনষ্ট করে এমন যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা।এখানেও লেখক শারীয়াহর আলোকে মোট ১৫ টি উপায় বর্ণনা করেছেন।যেমনঃ

১)পেশাব ও পায়খানার বেগ নিয়ে সালাত আদায় না করা,
২)সালাতে এদিক সেদিক না তাকানো,
৩)সালাতের মধ্যে হাইকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা ইত্যাদি।

–পরিশিষ্টঃ

বইটির অন্যান্য অংশের মতো এই অংশটিও আমার কাছে খুব জরুরি এবং সবার জানা উচিত এমন মনে হয়েছে।এই অংশে লেখক সালাত আদায়কারীদের তাদের সালাতে খুশুর মান এবং পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ৫ ভাগে ভাগ করেছেন।অতঃপর সালাতে খুশু অনুযায়ী কোন শ্রেণীর মানুষ শাস্তি পাবে এবং কোন শ্রেণীর মানুষ সালাতে পরিপূর্ণ খুশুর জন্য আল্লাহর কাছের লোক হয়ে যাবে তার বর্ণনা করেছেন।আপনি কোন শ্রেণীতে আছেন এবং কি ই বা আপনার প্রতিদান তা জানার জন্য পড়তে হবে এই বইটি।

এছাড়াও বইটিতে জরুরত অনুযায়ী সালাতে খুশু সম্পর্কিত কয়েকটি মাসাআলা ও উত্তর,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে কোন কোন সূরা পড়তেন,কিভাবে দোআ করতেন ইত্যাদি দেওয়া আছে।

★ব্যক্তিগত মতামতঃবইয়ের প্রচ্ছদ,বাঁধাই,পৃষ্ঠার মান সবকিছুই সন্তুষ্টিজনক।সহজ-সাবলীল অনুবাদ বইটিকে বুঝতে অনেক সহজ করেছে।যে বিষয়টি সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো,বইটিতে কোনো অপ্রাসঙ্গিক লেখা নেই।তাই পড়তে বিরক্তি আসে না।

বইটির শারয়ী সমালোচনা করার যোগ্যতা এবং ইলম কোনোটাই আমার নেই।তবে,সাধারণ পাঠক হিসেবে দুটি বিষয় একটু চোখে লেগেছে তবে তা বইয়ের মূল বিষয়বস্তুকে ব্যহত করে না।প্রথমত,হাতে গোনা কয়েকটা হাদিসের রেফারেন্স দেওয়া ছিল না।হয়তো প্রায় সবগুলো হাদিসে রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে বলেই ব্যাপারটা চোখে পড়েছে।খুব সম্ভবত এটি 'বাদ পড়ার ভুল' হয়ে থাকবে।আল্লাহ ভালো জানেন।
দ্বিতীয়ত,আমি ব্যক্তিগতভাবে লেখকের কথা,প্রকাশকের কথা,অনুবাদকের কথা দিয়ে বই পড়া শুরু করতে পছন্দ করি।এর ফলে,মূল বই,বইটি লেখার কারণ,প্রকাশনা,বই নিয়ে লেখক-অনুবাদক-প্রকাশকের অনুভূতি সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাওয়া যায়।এই বইতে এগুলো দেওয়া ছিল না যার কারণে এটি মূলত কোন বইয়ের অনুবাদ সেটা জানাও সম্ভব হয় নি।
এগুলো নিতান্ত আমার অভিমত।পাঠকভেদে এ দুটি বিষয়ে আলাদা অভিমত হতে পারে।

বইটি প্রকাশ হয়েছে অনেক আগে।রিভিউ লেখার কারণ হলো বইটির উসিলায় আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি যেসব বিষয়ে অজ্ঞ ছিলাম এবং অনেক উপকৃত হয়েছি।সবার কাছে এক কপি করে হলেও থাকার মতো একটি বই।শুধু পড়ার জন্য নয়,আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সালাতের প্রকৃত স্বাদ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী।

খুশু নিয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দোআ দিয়ে শেষ করি-

"হে আল্লাহ!আমি আপনার নিকট এমন অন্তর থেকে আশ্রয় কামনা করি,যাতে খুশু নেই"। [সুনানে তিরমিযী-৩৪৮২]
_____________________________
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

#ইসলামি_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_ডিসেম্বর_২০১৮


- আমাতুল্লাহ্ রুবায়শা 
Next Post Previous Post