বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, ইসলামের প্রথম মু'আজ্জিন বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, ইসলামের প্রথম মু'আজ্জিন Islamic History Bangla

বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, ইসলামের প্রথম মু'আজ্জিন বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, ইসলামের প্রথম মু'আজ্জিন Islamic History Bangla


বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, ইসলামের প্রথম মু'আজ্জিন islamic history bangla



হযরত বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ইন্তেকালের সময় ঘনিয়ে আসলো, তখন তাঁর স্ত্রী চূড়ান্ত দুঃখে বলে উঠলেন ”ওয়াহয নাহু” (হায়রে দুঃখ!) এটা শুনে হযরত বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, "ওয়াত রাবাহ" (বাহ রে খুশির সংবাদ!), কারণ আমি অনতিবিলম্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং প্রিয় সঙ্গীদের সাথে মিলিত হবো। (বুখারি শরিফ)
বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিচ্ছেদের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মদিনা মুনাওয়ারা থেকে হিজরত করে সিরিয়ার হালাবে চলে যান। প্রায় এক বছর পর স্বপ্নে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলালকে স্বপ্নে বললেন, "ও বিলাল! তুমি আমার সাথে সাক্ষাত করা কেন ছেড়ে দিয়েছো? তোমার হৃদয় কি আমার সাথে সাক্ষাত করতে চায় না?"
বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর চোখ খুলে গেল। অস্থিরতা বেড়ে গেলো তাঁর। "লাব্বাইকা ইয়া সাইয়েদী" বলতে বলতে বিছানা থেকে উঠে পড়লেন তিনি। একেবারে রাতারাতি উটনীর পিঠে সাওয়ার
হয়ে গেলেন, ছুটে চললেন মদীনা মুনাওয়ারার পানে। মদীনায় পৌঁছানোর পর শুরু হল মানুষের কাকুতি মিনতি। বহু বছর পর তারা ফিরে পেয়েছেন বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে, ইসলামের প্রথম মু'আজ্জিনকে। যাঁর মধুমাখা কণ্ঠের আযানের সুরে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতো মদীনার অলিগলি। মদীনাবাসী সেই আযানের পাখিকে আবার ফিরে পেয়েছেন। শুরু হয়ে গেল কাতর আহবান, অনুরোধ-উপরোধের ঢেউ।
- হে বিলাল, একটিবারের জন্য হলেও আবার আযান দিন। সেই আযান যেটা আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনাতেন । হযরত বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বারবার হাত জোড় করে অপারগতা প্রকাশ করছিলেন। বলছিলেন, "ভাইয়েরা আমার, এটা আমার সাধ্যের বাইরে। কারণ আমি যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় আযান দিতাম, তখন তো আমি আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলু্ল্লাহ বলার সময় নিজের চোখে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিদার করে নিতাম। আহা! এখনতো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দার আড়ালে তাশরিফ রাখছেন। এখন বলো আযানে আমি আমার সারকারে দিদার কিভাবে করবো? অনুগ্রহ করে আমাকে এই খেদমত থেকে অব্যাহতি দাও। আমার মধ্যে বরদাশত করার ক্ষমতা নেই।"
কিন্তু মানুষ ক্ষান্ত হল না। আর বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুও প্রত্যেকবারই অস্বীকার করতে লাগলেন। কোন কোন সম্মানিত সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) অভিমত প্রকাশ করলেন যে, যে কোনমতে হোক হযরত হাসান ও হুসাঈন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) দের ডেকে নাও! যদি উনারা হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আযান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন, তবে তিনি অবশ্যই মেনে নিবেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইতের প্রতি হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর অসাধারণ ভালোবাসা রয়েছে। এ অভিমতটা পছন্দ হলো সবার। সুতরাং, একজন লোক গিয়ে হযরত হাসান ও হুসাঈন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) দের ডেকে নিয়ে আসলেন। আসতেই হযরত হুসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত বিলালের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হাত ধরে ফেললেন । আর বললেন, "হে বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু), আজ আমাদের কে ওই আযান শুনিয়ে দিন। যা আমার নানাজান (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনাতেন।"
হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় হুসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কোলে তুলে নিলেন। অতঃপর বললেন, "আপনি আমাদের মাহবুব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কলিজার টুকরা। আপনি যা বলবেন তাই হবে। "
বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আযান শুরু করলেন।
আল্লাহু আকবার ! আল্লাহু আকবার !
আল্লাহু আকবার ! আল্লাহু আকবার !
আশ’হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ !
আশ’ হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ !
মদীনার আকাশে বাতাসে বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর সুরেলা আযান ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে শুরু করলো। মদীনাবাসীদের হৃদয় আন্দোলিত হয়ে উঠলো । দীর্ঘ কয়েক মাস পর হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর আযান শুনে মানুষের চোখের সামনে নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবদ্দশার দৃশ্য ভেসে উঠলো।
লোকেরা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াতে লাগলো মাসজিদে নববীর দিকে। প্রত্যেকে অস্থির হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। লোকেরা কাঁদছিলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। যখন হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু "আশ’হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ" এই বাক্যে এসে পৌঁছুলেন, তখন হাজার হাজার কণ্ঠে চিৎকার একসাথে আকাশে ধ্বনিত হলো যার কারণে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। নারী, পুরুষ সবাই কাঁদছিলেন, অঝোর নয়নে, বৃষ্টির মত অঝোর ধারায়। স্নেহের ছোট ছোট শিশুরা বলতে লাগলো ‘আম্মু! মু’আযযিনে নবী হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু তো এসে গেছেন কিন্তু নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবে তাশরিফ আনবেন?"
যখন বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ" বললেন তখন স্বাভাবিকভাবে তাঁর দৃষ্টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিম্বর শরিফের দিকে পড়লো। আহা ! মিম্বর শরিফ যে এখন খালি! আহা! নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিদার পাওয়া গেল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিচ্ছেদের জ্বালা তাঁকে অস্থির করে তুললো, তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না। বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। যখন অনেকক্ষণ পরে হুঁশ ফিরে আসলো তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং কাঁদতে কাঁদতে পুনরায় সিরিয়ায় ফিরে গেলেন।
( বহু কিতাবে এভাবে বর্ণিত হয়েছে )
ক্বিসমত মুঝে মিল যায়ে বেলাল হাবশী কী
দম্ ইশক্বে মুহাম্মদ মে নিকল
যায়ে তো আচ্ছা …।
অর্থ : আহা ! আমি যদি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর সৌভাগ্যটুকু পেয়ে যেতাম। তবে ইশক্বে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে বিভোর হয়ে আমার প্রাণবায়ুটুকু বের হয়ে গেলেও তা উত্তম ছিল।
আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম 'আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
.
 শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !
Courtesy : Ruku (A project dedicate to bring back to the forgotten Sunnahs)
Next Post Previous Post