কুরআন ও সাইকোলজি - বাংলা ইসলামিক গল্প

কুরআন ও সাইকোলজি - বাংলা ইসলামিক গল্প 



একটা অত্যন্ত বুদ্ধিমান খেলা পৃথিবী থেকে উঠে যাচ্ছে প্রায়, দাবা খেলা। দাবা খেলার প্রতিটা দান দেওয়ার আগে আপনাকে আপনার প্রতিপক্ষের পরবর্তী অনেকগুলো দান মাথায় রাখতে হবে। দাবা খেলার ডিজাইনটা একটা ছোট যুদ্ধক্ষেত্রের মতন। যেকোন যুদ্ধে জিততে হলে শত্রুকে গভীরভাবে স্টাডি করতে হয়। শত্রুর চালগুলো যদি আপনি আগে থেকেই না জেনে রাখেন, আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনি আসলে তার ফাঁদে পড়েছেন বহু আগেই এবং সে আপনাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করছে।
_
মুসলিমরা পৃথিবীতে একজন শত্রুর সাথে বসবাস করে। তাকে তারা ইবলিস বা শয়তান নামে চিনে। এই আর্টিকেলটি শয়তান কিভাবে মানুষের সাইকোলজী নিয়ে কাজ করে সেটার উপর একটা কেস স্টাডি। এই কেস স্টাডির স্যাম্পল আমি আর আমার সাইকোলজী। জীবনে অগনিতবার আমি শয়তানের কাছে ধরা খেয়েছি, অসংখ্যবার তার ফাঁদে পা দিয়ে আমি ভয়ঙ্কর সব অন্যায় করেছি এবং বহুদিন ধরে আমি বুঝতেও পারিনি যে আমি আসলে তার প্রতারনার শিকার ! এখানে লেখা অনেকগুলো ঘটনাই কোন না কোনভাবে আমার জীবনে ঘটেছে। এই আর্টিকেল আমি লিখেছি সবার আগে আমার জন্য। এগুলো আমার জন্যই আমার রিমাইন্ডার। শয়তানের অগনিত ধোঁকা দেওয়ার স্টাইল আছে। যেগুলো অত্যন্ত চতুর আর সুক্ষ্ম মনে হয়েছে আমার কাছে সেগুলো আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আল্লাহর বলা আয়াতের অসাধারন সৌন্দর্য দিয়ে। চেষ্টা করেছি শয়তানের সাইকোলজী থেকে মূল শিক্ষাগুলো সিরিয়ালী তুলে ধরার। যে আয়াতগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর পাশে ওয়েব লিঙ্ক দেয়া আছে, যাতে আপনি আরবি আয়াতগুলো পড়তে পারেন।
Satan একটি হিব্রু শব্দ। এটার অর্থ হচ্ছে Adversary ( One's opponent in a contest, conflict) । বাংলা প্রতিশব্দগুলো হবে প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু। পৃথিবীর অনেকগুলো ধর্মেই শয়তান নামক চরিত্রটি আছে। মুসলিমরা তাকে দুটি নামে ডাকে। তার আসল নাম ছিল ইবলিস, মহান আল্লাহকে অবাধ্যতার কারনে তাকে উপাধি দেওয়া হয় শয়তান ( Shaitan- Any being that rebels against God) । ইবলিস হচ্ছে একজন "শয়তানের" নাম, তার মতন আরো অনেক "শয়তান" আছে জীন ও মানুষের মধ্যে। খ্রীষ্টানরা তাকে স্যাটান/লুসিফার/ ডেভিল নামে ডাকে।
-
ইসলাম ও খ্রীষ্ট ধর্মের মতন ইহূদী ধর্মে শয়তান কোন জীবিত সত্ত্বা নয়। তারা এটাকে ডাকে Yetzer Hara বলে। এটার মানে হচ্ছে- "প্রত্যেক মানুষের মধ্যে খারাপ কাজ করার প্রবনতা আছে , যেটা আমাদেরকে সারাক্ষন প্রলুব্ধ করতে থাকে।" (The evil natural tendency or urge that exists in every person and tempts us to do wrong)। আস্তিক হোক আর নাস্তিক হোক, শয়তানের অস্তিত্ব মানুক আর না মানুক, প্রতিটি মানুষ স্বীকার করে যে প্রত্যেকটি মানুষের ভিতরে একটি পবিত্র অংশ ও একটি অন্ধকার অংশ আছে। এই ভাল-মন্দ সত্ত্বার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন, ড. জেকিল এন্ড মিঃ হাইড এর মতন চরিত্র। শয়তানকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও কার্টুনে রূপ দেয়া হয়েছে মাথায় শিং ওয়ালা লাল রঙের একটি জীব হিসেবে।
-
প্রত্যেকটি মুসলিম শিশু "শয়তান" নামক চরিত্রটিকে জেনেই বড় হয়। শয়তান সবার কাছে অভিশপ্ত, ঘৃনিত, কুৎসিত একটি সত্ত্বা। শয়তানের কাহিনী সবার জানা, সে কি ভয়ঙ্কর অন্যায় ও বেয়াদবী করেছিল প্রত্যেকটি মুসলিম সেগুলো জানে। ইন্টারেস্টিং জিনিস হল ইবলিস ছিল একজন অকল্পনীয় পর্যায়ের ধার্মিক জীন। সে কত শত বা কত হাজার বছর ধরে আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদাহ করেছিল আমরা জানিনা। কিন্তু সে ঠিক আমাদের মতই ফ্রী উইল সম্পন্ন একটি সত্ত্বা (Free Will= You decide whatever you do, good or bad. God doesn't force you anything) । আপনি চাইলে দিনে ৫ বার নামাজ পড়তে পারেন, চাইলে ৫০বারও পড়তে পারেন। ইবলিস ঠিক করেছিল সে ইবাদাতের দিক দিয়ে একজন সুপারস্টার হবে আল্লাহর কাছে। চাইলে সে সাধারন ইবাদাহ করে একজন সাধারন জীন হয়ে থাকতে পারত, কিন্তু তার লক্ষ্য ও ডেডিকেশন ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সে আল্লাহকে খুশি করার জন্য ইবাদাহ করতেই থাকল আর আল্লাহ্‌ আস্তে আস্তে তাকে প্রমোশন দিতে থাকলেন, তার মর্যাদা বাড়াতে থাকলেন। ইবলিস ছিল একজন সত্যিকারের আব্‌দ-আল্লাহ, আল্লাহর দাস।
-
ধরুন আপনি একজন বাংলাদেশি, কিন্তু বড় হয়েছেন আমেরিকায়। আপনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে আমেরিকান আর্মিতে যোগ দিলেন ও সেখানে ৫০ বছর ধরে এমন সার্ভিস দিলেন যা মানব ইতিহাসে কেউ কোনদিন করেনি। একদিন আপনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেলেন আপনার যোগ্যতার কারনে। পৃথিবীর ইতিহাসে আপনিই একমাত্র বাংগালী মুসলিম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। ইবলিস ছিল একজন জীন, কিন্তু আল্লাহ্‌ তাকে একদিন প্রমোশন দিয়ে করে দিলেন ফেরেশতাদের সর্দার !! এটা ইবলিসের অকল্পনীয় যোগ্যতার পুরস্কার ছিল। পবিত্র আলোর তৈরী ফেরেশতাদের মাঝে নেতা হয়ে গেল আগুনের তৈরী ইবলিস।
-
আল্লাহ্‌ জানতেন ইবলিস তাঁকে অমান্য করবে, কবে কখন করবে আল্লাহ্‌ সব জানতেন। কিন্তু আল্লাহ্‌ তারপরো তাকে সম্মান দিয়েছিলেন, পুরস্কার দিয়েছিলেন, নিজের সাথে ইবলিসকে কথা বলতে দেওয়ার মতন বিরল সম্মান দিয়েছিলেন ।
ইবলিস সম্মানের শ্রেষ্ঠতম পর্যায়ে উঠে গিয়েছিল। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি, তার মনের ভিতর ঈমান ছাড়াও আরো কয়েকটি জিনিস খুব আস্তে আস্তে এক কনা এক কনা করে দানা বেঁধেছিল। অহংকার, হিংসা, ইগো, Jealousy, Arrogance।
মানুষ সৃষ্টি করার আগে পৃথিবীতে জীন জাতি বসবাস করত। তারা মারামারি, হানাহানি, বিশৃঙ্খলার জঘন্যতম পর্যায়ে নেমে গেলে আল্লাহ্‌ সবাইকে ধ্বংস করে দেন ।একদিন আল্লাহ্‌ ফেরেশতাদেরকে যখন বললেন তিনি পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে নতুন একটি মানুষ জাতি পাঠাবেন, তখন ফেরেশতারা খুব অবাক হয়েছিলেন,কারন তারা এর আগে জীনদের জঘন্য অবস্থা দেখেছিলেন। তারা আল্লাহকে জিজ্ঞেশ করেছিলেন- "আল্লাহ্‌! আমরাই তো সারাক্ষন আপনার প্রশংসা করি। আপনি কি আবার এমন কাউকে পাঠাবেন যারা আবার হানাহানি রক্তপাত অশান্তি করবে? " বিষয়টা এমন না যে তাঁরা আল্লাহর কাছে কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। তাঁরা অবাক হয়ে ব্যাপারটার কারন জানতে চেয়েছিলেন শুধু। আল্লাহ্‌ তাঁদের বললেন-
"Inni A'lamu Ma Ta'lamun - আমি যা জানি, তোমরা সেটা জান না । [2:30]
আল্লাহ্‌ আদম(আ) কে কাদামাটি দিয়ে বানিয়ে তাঁর ভেতর রূহ দান করার আগে কিছুদিন রেখে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্‌ জানতেন ইবলিস কি করবে। তারপরো আল্লাহ্‌ এভাবে উদাহরনগুলো দেন যাতে আমরা সেটা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। মানুষ সৃষ্টির খবর ইবলিসের কানেও গেল। সে ধরেই নিয়েছিল সে সবচেয়ে সম্মানিত, সে শ্রেষ্ঠ। যখন সে জানতে পারল আল্লাহ্‌ আরো একটি প্রজাতি সৃষ্টি করবেন তাঁর ইবাদাতের জন্য, তাঁর ভিতরে জীবনে প্রথমবারের মতন কতগুলো অদ্ভূত অনুভূতির সৃষ্টি হল।
অহংকার, হিংসা, ঈর্ষা, ইগো, ক্ষোভ, রাগ, Jealousy, Arrogance ।
তার বুকের ভিতর তীব্র হিংসা জন্ম নিল এই মানুষ নামের প্রানীর প্রতি।অবশেষে যেদিন আল্লাহ্‌ সব ফেরেশতা ও ইবলিসকে ডেকে বললেন আদম(আ) কে সিজদা করতে-
"Wa idha qulna lil mala'ikatis judu li Adama FAsajadu illa lblisa abaa wastakbara wa kaana minal kafireen "
(তারপর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম- আদমকে সিজদা কর; সাথে সাথে তারা সিজদা করল, একমাত্র ইবলিস বাদে। সে অবাধ্য হল আর অহংকার করল আর সে ছিল অকৃতজ্ঞ অবিশ্বাসীদের মধ্যে একজন ) [ 2:34 ]
-
আল্লাহ্‌ এখানে বলেছেন "ফা সাজাদু" । "ফা" মানে সাথেসাথে, Instantly। ফেরেশতারা এক মূহুর্তও দেরি করেননি আদম(আ) কে সিজদা করতে। ইবলিস মেনে নিতে পারেনি যে, সে হাজার হাজার বছর ধরে আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হয়েছে, তাকে এখন মাটির তৈরী এই মানুষের সামনে সিজদা করতে হবে। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এখানে ইবলিসের সাইকোলজী বলে দিচ্ছেন। ইবলিসের বক্তব্য ছিল- "আমি এত এত মর্যাদার অধিকারী, এখন কেন সবাই এই আদমকে সিজদা করবে? " সে মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বলল- " আমি ওর থেকে উন্নত। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে বানিয়েছেন আর ওকে বানিয়েছেন কাদামাটি থেকে। "
-
আল্লাহ্‌ এই আয়াতে বলেছেন - "Kaana(Was- past tense)" । আল্লাহ্‌ বলতে পারতেন- "ইবলিস অবিশ্বাসীতে পরিণত হয়ে গেল", কিন্তু আল্লাহ্‌ সেটা বলেননি। আল্লাহর চোখে ইবলিস সবসময়ই একজন কাফির ছিল। ইবলিসের মনের গভীরে একটা ভয়ঙ্কর অন্ধকার ব্যাধি ছিল ( Disease of Arrogance in his heart) । আল্লাহ্‌ তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু ঠিক যেইদিন আল্লাহ্‌ তার পরীক্ষা নিলেন সাথে সাথে তাঁর অবাধ্যতা বের হয়ে আসল।
আসুন ইবলিসের সমস্যাটা দেখি। আল্লাহকে সিজদা করতে তার কোন সমস্যা ছিলনা। কিন্তু আল্লাহ্‌ যখন তাকে আদেশ করলেন অন্য আরেকজনকে মেনে নিতে, অন্য আরেকজনকে সম্মান করতে, সেটা ইবলিস কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তার কথা ছিল একটাই- "আমি ওর চেয়ে বড় ,আমি ওর চেয়ে উন্নত। আমি কোনভাবেই নিজেকে ওর চেয়ে ছোট করতে পারিনা। " ঔদ্ধ্যতা আর অহংকার ছিল ইবলিসের সবচেয়ে বড় সমস্যা। Arrogance and Pride.
-
এবার দেখুন আমাদের জীবনে একই ঘটনা ঘটে(এটা কাল্পনিক উদাহরণ) . ধরুন, আপনি প্রচুর পড়াশোনা করে সাহীহ ভাবে নামাজ পড়ার নিয়মগুলো শিখলেন। একদিন একটা ভাল রেফারেন্স সহ বই নিয়ে আপনার পাড়ার ইমাম সাহেবের কাছে গেলেন তাকে উপহার দিতে, কারন তাঁর নামাজ রাসূলুল্লাহ(সা) এর দেখানো নিয়মে হয়না । ইমাম সাহেবকে আপনি মূল হাদিস গ্রন্থগুলোর রেফারেন্স দিলেন, ইউটিউব এ মক্কার নামাজের ভিডিও দেখালেন। কোনভাবেই ইমাম সাহেব আপনার যুক্তি মেনে নিলেন না এবং একপর্যায়ে আপনার সাথে তর্ক শুরু করে দিলেন। তাঁর যুক্তিগুলো এরকম-
- এটা আমাদের মাযহাব। ঐটা অন্য মাযহাব। এক মাযহাব থেকে আরেক মাযহাবে যাওয়া যায়না। আমি যার কাছে নামাজ পড়া শিখেছি উনি অনেক বড় হুজুর, অনেক বড় আলেম। আপনার এই নাসিরুদ্দিন আলবানি ( বইটার লেখক) কি অমুক তমুকের চেয়েও বড়? এত এত মানুষ এভাবে নামাজ পড়ে, আপনি কি বলতে চান আপনি একা ঠিক আর সবাই ভুল? এইসব লা-মাযহাব আহলে হাদিস রা আপনার ব্রেইন ওয়াস করে দিসে। আমি এইভাবে নামাজ পড়াতে পারব না।
-
সেই একই সমস্যা। Arrogance & Ego. ইমাম সাহেব মনে করেন তিনি ধর্মীয় জ্ঞানে আপনার চেয়ে বড়, তিনি কোনভাবেই আপনার কথা মেনে নিয়ে মাসজিদ কমিটি ও পাড়ার লোকের চক্ষুশূল হয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের বারোটা বাজাবেন না, আপনি যতই নির্ভূল প্রমান দেন না কেন।
-
আল্লাহ্‌ ইবলিসকে বললেন-
"এখান থেকে নেমে যাও ! অহংকারী উদ্ধত তোমার জন্য এ জায়গা নয়। বের হয়ে যাও (Get Out) , অবশ্যই তুমি সাঘিরিন (Humiliated, Disgraced) " [7:13]
আল্লাহ্‌ বলেছেন- Min ha ( এখান থেকে) । এই "এখান" জান্নাত কিনা সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে জানিনা, কারন এই আয়াতের আশেপাশে জান্নাতের কোন কথা নেই। আল্লাহ্‌ ইবলিসকে যে সম্মান দিয়েছিলেন সেখান থেকে অত্যন্ত নীচ স্তরে নামিয়ে দিয়েছিলেন। ইবলিস মর্যাদার যে স্তরে পৌঁছেছিল সেখানে অহঙ্কারীর( Arrogant) কোন স্থান নেই।
আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত কঠিন সাবধানবাণী। পৃথিবীতে মানুষ যত উপরের দিকে উঠে, তার অহংকার, দেমাগ, দাপট, চোটপাট, ভাব তত বাড়তে থাকে। বড় কোন ডাক্তার, অফিসারের সাথে দেখা করতে গেলে আপনাকে অনন্তকাল ধরে বসে থাকতে হবে। আল্লাহর কাছে ব্যাপারটা শতভাগ উলটা। আপনি আল্লাহর যত কাছের বান্দা হবেন, আপনার ভিতর থেকে অহংকার, ঔদ্ধত্য তত কমতে থাকবে আর আপনি নিজেকে আরো বেশি বিনয়ী, নম্র(Humble) করে তুলবেন। ইসলাম আমাদেরকে নিজেকে ছোট ভাবতে শেখায়, ইসলাম আমাদের Arrogance দূর করে Humility শেখায়। যতক্ষন আমরা নিজেদেরকে ছোট, দূর্বল, আল্লাহর দয়ার উপর নির্ভরশীল ভাবতে না পারব ততক্ষন আমাদের সাথে ইবলিসের সাইকোলজীর তেমন কোন পার্থক্য নেই।
-
ইবলিস খুব ইন্টারেস্টিং একটি চরিত্র। সে তৎক্ষনাৎ মাফ চাইতে পারত। সে বলতে পারত-"আমার ভুল হয়েছে, আল্লাহ্‌ আমাকে মাফ করে দেন।" সেক্ষেত্রে কি হত আমরা জানিনা, আমরা খালি জানি আল্লাহ্‌ সবকিছু মাফ করতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ্‌ সবই জানতেন কি হবে । কিন্তু ইবলিস তার ভাগ্য জানত না, তার হাতে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ ছিল, সে সুযোগটা নেয় নি। ইবলিস আল্লাহকে বলল-
"আমাকে সময় দিন ( আমার জন্য অপেক্ষা করুন) সেদিন পর্যন্ত যেদিন তাদেরকে আবার জীবিত করা হবে। " [7:14]
আল্লাহ্‌ দিলেন তাকে সেটা।
"কোন সন্দেহ নেই তুমি তাদের একজন যাকে ততটুকু সময় দেয়া হল।" [7:15]
-
শয়তান একটা কাজ করল এখন। সে তার অপরাধের জন্য, ধ্বংসের জন্য আল্লাহকে দোষ দিয়ে দিল ! স্বয়ং আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে সে তাঁকে অমান্য করল, তারপর সেটার জন্য আল্লাহকে দায়ী করল। তার বক্তব্য হচ্ছে- "এটা আমার দোষ না। আপনি এটা করেছেন আমার সাথে। " সে বলল-
"যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও প্রতিশোধ নেব। আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের (সিরাত আল-মুস্তাকিম) উপর বসে তাদের জন্য অপেক্ষা করব" [7:16]
-
ইবলিস এখানে একটা শব্দ বলেছে- Qu'ood. সাধারনত আরবিতে Jalasa= বসা। কিন্তু Qu'ood= অনেকক্ষন ধরে বসা, বারবার বসা।ইবলিস প্রতিজ্ঞা করে বলেছে যে সে আল্লাহর দিকে যাওয়ার যে সরলতম রাস্তা আছে ( ঈমান, সালাত, যাকাত, ভাল কাজ, দাওয়াহ...) সেটা থেকে মানুষকে তার সম্ভাব্য সকল উপায়ে সরিয়ে রাখবে। সে সেখানে বসে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। যতভাবে সম্ভব সে সেখান থেকে মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
-
ইবলিস আরো শপথ করে বলল-
"আমি অবশ্যই তাদেরকে আক্রমন করব তাদের সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডানদিক থেকে আর বামদিক থেকে। আর আপনি তাদের মধ্যে খুব বেশি কৃতজ্ঞ বান্দা খুজে পাবেন না। "
শয়তান নিজেই বলে দিয়েছে সে কিভাবে আমাদের আক্রমন করবে !!! সে পেছন থেকে নিঃশব্দে আসবে বলেছে। ইবলিস আমাদের মস্তিষ্কের একটি অংশ। সে ঘুরে বেড়ায় আমাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে। সে আমাদেরকে একটার পর একটা আইডিয়া দিতে থাকে। প্রতি মূহুর্তে, প্রতি মিনিটে, প্রতি দিন ধরে। ধীরে ধীরে। অত্যন্ত ধীরে। এত ধীরে, যে আপনি বুঝতে পারবেন না এটা আপনার আইডিয়া নাকি তার আইডিয়া। ব্যস, এই চান্সটাই সে খুঁজে। সে কক্ষনো আপনার মাথার ভিতর কথা বলবে না- "এই খারাপ কাজটা কর। " আপনার চিন্তাও আপনি করবেন, কাজও আপনি করবেন। কিন্তু আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, আইডিয়াটা আসলে আপনার ছিলনা। যতক্ষনে আপনি খারাপ কাজটা করে ফেলবেন, নিজের ক্ষতি করে ফেলবেন, তার পর হলেও হতে পারে যে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি আসলে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। He will make you think that it's your idea but actually its his idea. Thats how he motivates you. As soon as you commit crime, He wins.
ডানদিক মানে ভাল কাজ। ইবলিস মানুষের ভাল চিন্তা, ভাল কাজের মধ্যেও ঢুকে মিশে যায়। কাউকে সে ভাল কাজের মধ্যে দিয়েও ভয়ঙ্কর অন্যায়ের দিকে নিয়ে যায়। কিভাবে সে এটা করে এটা আমি নিচে লিখেছি। বামদিক হচ্ছে খারাপ কাজ। ইবলিস আমাদেরকে সকল প্রকার খারাপ কাজের দিকে আকর্ষন করে। জন্মগত ভাবেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের একটা তীব্র আকর্ষন থাকে। ইবলিস সেটাকেই বারবার ব্যবহার করে।
-
আদম(আ) আর ইবলিস দুজনেই আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিলেন। আদম(আ) সাথে সাথে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং আল্লাহ্‌ তাঁকে মাফ করে দিয়েছিলেন এবং মাফ চাওয়ার দু'আও শিখিয়ে দিয়েছিলেন। [7:24]
আল্লাহ্‌ ইবলিসকে বললেন-
" ...অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তোমাকে অনুসরন করবে, আমি তোমাদের প্রত্যেককে দিয়ে জাহান্নাম কানায় কানায় পূর্ন করব" [7:18]
আল্লাহ এখানে বলেছেন Amla’a= (কানায় কানায় পূর্ন করা- fill and fill to the brim)। তারপর আল্লাহ্‌ বলেছেন Minkum ajma’in = ( সম্ভাব্য প্রত্যেককে, যারা শয়তানের রাস্তায় যাবে- all of you, altogether, every single one) . আমাদের প্রত্যেকের জন্য ভয়ঙ্কর সাবধানবানী এটা।
-
এরপর আল্লাহ্‌ আদম(আ) কে বললেন-
"তুমি আর তোমার স্ত্রী জান্নাতে থাক, যা ইচ্ছা খাও। নিশ্চিতভাবেই শয়তান তোমাদের শত্রু। তাকে কোনভাবেই সুযোগ দিও না তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়ার। এখানে তুমি কখনো ক্ষুধার্তও হবে না, বস্ত্রহীনও অনুভব করবে না। আর তুমি কখনো পিপাসায় ভুগবে না বা সূর্যের তাপে কষ্টও পাবেনা।"
আল্লাহ্‌ অনেক অনেক দূরে একটা গাছ দেখিয়ে বললেন- "দূরের ঐ গাছটির ধারে কাছেও যাবে না। "
বিষয়টা এমন না গাছটা আদম(আ) এর বাড়ির সামনে ছিল। বিষয়টা এমনও না যে আদম(আ) ছিলেন বাংলাদেশে আর গাছটা ছিল আমেরিকায়। আল্লাহ্‌ এক জায়গায় বলেছেন, জান্নাতের প্রস্থ আকাশ আর পৃথিবীর সমান (3:133)।গাছটা কত শত বা হাজার বছরের দূরত্বে ছিল আমরা জানিনা। আর ফল খাওয়া তো দূরের কথা, আল্লাহ্‌ তাদেরকে গাছের ধারে কাছে যেতেই নিষেধ করেছিলেন।
"...এরপর শয়তান তাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিল..." [7:20]
-
ওয়াসওয়াসা মানে ফিসফিস করা। যখন কেউ পেছন থেকে এসে ফিসফিস করে চলে যায়, তারপর আবার আসে, আবার ফিসফিস করে, আবার চলে যায়, এভাবে চলতেই থাকে, চলতেই থাকে......এটাকে বলে ওয়াসওয়াসা। শয়তান আরো বলল-
" এই গাছের ফল খেলে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে, অথবা অমর হয়ে এখানে চিরদিন বসবাস করবে। তোমাদের প্রভু এই কারনেই এই গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন তোমাদেরকে। আল্লাহর শপথ নিয়ে বলছি , কোন সন্দেহ নেই যে আমি তোমাদের ভাল চাই ।"
-
আদম(আ) ও হাওয়া(আ) জানতেন তারা অমর নন, একদিন তারা মারা যাবেন। শয়তান তাদের একমাত্র দূর্বল অংশটিতে চাল চেলেছিল।
A successful waswasa from shaytaan is when you think the idea is from your own. He was able to convince them absolutely that this idea is a good idea from them and he settled it in their hearts.
" তারপর শয়তান তাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে খুব ধীরে ধীরে ধোকায় ফেলল...( So very slowly He made both of them fall by deception) " [7:22]
-
এখানে আল্লাহ্‌ একটা শব্দ বলেছেন- "Dalla" । মনে করুন আপনি হুইল ছিপ আর বড়শি নিয়ে মাছ ধরছেন। একটা ৪০ কেজি ওজনের মাছ আপনার ছিপে ধরা পড়ল। আপনি যদি সেটাকে টানা শুরু করেন, চোখের নিমেষে মাছটা আপনার সূতা ছিঁড়ে চলে যাবে। আপনাকে খুব আস্তে আস্তে এক বিন্দু বিন্দু করে সূতা টানতে হবে, মাঝে মাঝে ঢিল দিতে হবে। মাছটাকে একবারও বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে সে আপনার ফাদে পড়েছে। এভাবে হয়ত ২ ঘন্টা ধরে আপনি মাছটিকে ধরলেন। এই পুরো কাজটির নাম DALLA(to get somebody to do something after a very slowly process of convincing them) .
-
এটাই শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সে কখনো আদম(আ) কে বলেনি- ঐ ফলটা খাও। হয়ত একদিন সে আদম(আ) কে বলেছিল- চল ঐ এলাকায় যাই, বেশ সুন্দর গাছ আছে কিছু। হয়ত এক বছর পরে আবার বলেছিল- আদম, কি সুন্দর জান্নাত তাইনা? কিন্তু একদিন সবাইকে মরতে হবে। ইশ যদি অমর হওয়ার কোন ফল থাকত কি ভাল হোত তাইনা?? আদম(আ) এক বিন্দুও বুঝতে পারেননি কিভাবে তিনি তিলে তিলে এগিয়ে গিয়েছিলেন গাছটির দিকে। তিনি প্রতিবারই নিজেকে কনভিন্স করেছিলেন যে তিনি খারাপ কিছু করছেন না। কত বছর ধরে সে চেষ্টা করে গিয়েছিল আমরা জানিনা। শয়তান অত্যন্ত জ্ঞানী, অভিজ্ঞ, বুদ্ধিমান। সে মানুষের সাইকোলজী খুব ভাল করে বুঝে। মানুষকে কিভাবে কিসের লোভ দেখালে মানুষের ক্ষতি হয় সে খুব ভাল করে জানে। এটা একদিনে হয় না। কিন্তু শয়তানের ধৈর্যের কোন অভাব নেই। আর সে বেচে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। বহু মানুষকে সে ধ্বংস করেছে। সে আপনাকেও তিলে তিলে ধ্বংস করবে যদি আপনি সতর্ক না হোন ।
বিষয়টা এমন না যে " আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানীর রাজীম" বলা মাত্রই শয়তান আমাদের ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যাবে আর কখনো আসবে না। সে প্রতিজ্ঞা করেছে সে বারবার আসবে, বারবার আমাদেরকে আইডিয়া দিয়েই যাবে, দিয়েই যাবে।
আউযু মানে নিবিড় আশ্রয় চাওয়া। আপনার বাচ্চাটা রাতে দৌড় দিয়ে এসে আপনার কোলে ঢুকে বলল- "মা খাটের নিচে ভূত ! " আপনি আপনার শিশুর জন্য পরম আশ্রয়। তেমনি আল্লাহ্‌ আমাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়। আমরা যখন আউযুবিল্লাহ বলি, আমরা বিশ্বাস করি শয়তানের বিরুদ্ধে আল্লাহর চেয়ে বড় আশ্রয় আর কেউ হতে পারেনা। আউযুবিল্লাহ একটি শক্তিশালী অটো-সাজেশন যা নিজেকে শয়তান সম্পর্কে আরো সচেতন করে।
শয়তানের "দাল্লা"-র একটা ঘটনা বলি আমি আপনাকে-
শুভ খুব ভাল ছেলে ছিল। নিয়মিত নামাজ পড়ত। ইউনিভার্সিটিতে উঠে তার অনেক বন্ধুবান্ধব হল। সে নামাজে একটু ঢিলে হল আগের চেয়ে। ক্লাসের একটা মেয়ের সাথে তার পরিচয় হল । সেখান থেকে বন্ধুত্ত, সেখান থেকে আরো বাড়তে লাগল। শুভর জীবন আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে গেল। সে আল্লাহর জন্য এখন আর কিছু করে না। সে যা কিছু করে, ভাবে, চিন্তা করে, সব ঐ মেয়েটাকে নিয়ে। পাশ করে বের হয়ে মেয়েটার আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে গেল। শুভ-র জীবন যতটুকু বাকি ছিল সে সেটাকেও ধ্বংস করে ফেলল। সে ড্রাগস শুরু করল। নেশার টাকার জন্য রাতে ছিনতাই করা শুরু করল। ২৮ বছর বয়সে শুভর স্থান হয় একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন সেন্টারে। নিজের সেল এ বসে বসে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে তার আবছা আবছা মনে পড়ে, এককালে সে নিয়মিত মাসজিদে যেত, পয়সা দিয়ে ইসলামিক লেকচার শুনত। আর কি কখনো ফিরে যেতে পারবে সেই জীবনে সে? তার খুব ইচ্ছা করে আবার আগের মতন হতে, কিন্তু ভেতর থেকে কে যেন তাকে বলে- "না তুই যাবি না ! নষ্ট হ, আরো নষ্ট হ। "
-
এখান থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটা সাইকোলজি তুলে ধরা হল-
-
১- নামাজ পড়তে না দেওয়া-
-
আপনি যদি নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়েন আপনি এই সাইকোলজীটা বুঝতে পারবেন। ভোর ৫টা বাজে । ফজরের নামাজের টাইম। তারস্বরে এলার্ম বাজছে। আপনি রাত্রে ঠিক করেছিলেন আপনি ফজরের নামাজে আজকে মাসজিদে যাবেন। ঘুমের ঘোরে আপনি মোবাইলটা নিলেন। নিয়ে একটা স্নুজ দিলেন। ভাবলেন- "ঠিক ৫ মিনিট পর উঠব, নামাজ সোয়া ৫টায়।" আপনি প্রথম ধরাটা খেলেন। আপনি ভেবেছেন আইডিয়াটা আপনার, কিন্তু আইডিয়াটা শয়তানের। একটু পর আপনি দেখলেন, ৫টা ২০ বাজে। আপনি ভাবলেন- "হায় হায়, এখন আর মাসজিদে গিয়ে কি হবে? এরচেয়ে বাসায় পড়ে নিব। ৬টা পর্যন্ত টাইম আছে, এইতো উঠছি।" আপনি উঠে আবিষ্কার করলেন ৭টা বাজে। ফজরের নামাজ কাজা হল আবার।
-
সালাত হচ্ছে একটি প্রচন্ড শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সালাত মানুষকে যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। যদি কেউ নামাজ পড়ে, কিন্তু এখনো গালাগালি, পরনিন্দা, ঝগড়া, অহংকার, নোংরা সিনেমা দেখা, সিগারেট খাওয়া ছাড়তে না পারে, তাহলে তার সালাত উঠবস ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু যদি আপনি নিয়মিত "সত্যিকার" সালাত আদায় শুরু করেন তাহলে শয়তানের বিরুদ্ধে আপনার মনে একটা শক্তিশালী ফায়ার্ওয়্যাল তৈরী হতে থাকে। শয়তান তখন আপনার ভিতরে আগের মতন কুবুদ্ধি দিতে পারেনা। সেজন্যে সে আপনাকে টার্গেট করে সবচেয়ে দূর্বল একটি সময়ে আপনার ঘুমের মধ্যে, যে সময়ে আপনাকে ভুলানো তার জন্য সবচেয়ে সোজা।শয়তান পারলে আপনার মুখের উপর একটা পা দিয়ে পাড়া দিয়ে চেপে রাখে যাতে আপনি উঠতে না পারেন। আপনি যদি না পারেন, আপনি হেরে গেলেন। মানুষ শয়তানের গলা শুনলে পেলে সম্ভবত শুনতে পেত যে , সে যখন ঘুমের জন্য নামাজ মিস করে শয়তান তার পাশে দাঁড়িয়ে কুটিল খলখল করে অট্টহাসি হাসে। ভারি আনন্দ হয় শয়তানের তখন। জাহান্নামের দিকে আরেকটু নেওয়া গেল নির্বোধ মানুষটাকে।
-
ধরুন মাশাআ-আল্লাহ্‌ আপনি নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ মাসজিদে গিয়ে পড়েন। শয়তান কি আপনাকে ছেড়ে দিবে তাও ? না, কখনই না। একসময় আপনি যেতেন আজানের সাথে সাথেই। এরপর আস্তে আস্তে আপনি কখনো ৩য় রাকাতে, কখনো শেষ রাকাতে জামাত ধরা শুরু করলেন। এরপর কোন কোন দিন আপনার জামাত মিস হতে লাগল। এরপর আপনি আগের চেয়ে কম কম মাসজিদে যাওয়া শুরু করলেন। এরপর আপনি বেশিরভাগ নামাজ বাসায়ই পড়েন, তাও শুধু ফরজ নামাজ। আপনি শয়তানের যে আইডিয়া গুলোকে নিজের বলে ভেবেছিলেন সেগুলো এরকম-
- আরে আরেকটু পরেই যাই, খেলাটা আর মাত্র ২ ওভার বাকি।
- আচ্ছা, বাসায় পড়ে নিচ্ছি। এট লিস্ট পড়ছি তো। কত মানুষ তো তাও পড়ে না।
- এশার নামাজ পড়া বাকি। ওহ আমি খুব ক্লান্ত। একটু রেস্ট নেই, একটু পরেই পড়ে নিচ্ছি। (ফলাফল- নামাজ কাজা)।
-
বহু মানুষ আছে যারা এককালে নিয়মিত নামাজ পড়তেন, কিন্তু গত দুই চার পাঁচ দশ বছর ধরে তারা একবেলাও নামায পড়েন না। আমাকে একজন দুঃখ করে বলেছিলেন- "জানো আমি এত খারাপ হয়ে গিয়েছি। আগে রেগুলার নামাজ পড়তাম। এখন সূরাও ভুলে গিয়েছি। "
-
আপনাকে আমি অনুরোধ করব, নামাজ ছাড়বেন না দয়া করে। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নামাজ পড়ে যাবেন। অদ্ভূত সব জায়গায় আমি নামাজ পড়েছি জীবনে। খেলার মাঠে, রাস্তার উপর, হোটেলের লবিতে, লঞ্চের ছাদে, লোকাল বাসে, বিমানে, সমুদ্র সৈকতে, ট্রেনে। নামাজ মানেই আল্লাহর সামনে হাজিরা। নামাজকে আঁকড়ে ধরুন, আপনি পারবেন ইনশা-আল্লাহ। সালাত আপনার সিকিউরিটি। শয়তান এটা নষ্ট করবে সবার আগে। তাকে এটা নষ্ট করে দিবেন না কোনভাবেই। এরচে বড় উপদেশ আমি আপনাকে আর দিতে পারবনা।
-
২- নিজের অপরাধের জন্য নিজেকে নিজে কনভিন্স করাঃ
-
[] আপনি ফজরের নামায কাজা করেছেন। আপনার একটু একটু খারাপ লাগছে। আপনার ঐ হাদিসটা মনে পড়ছে যে ইচ্ছা করে এক ওয়াক্ত নামাজ ছাড়লেও সেই ব্যক্তি আর মুসলিম থাকেনা। আপনি নিজে নিজে যুক্তি দিচ্ছেন- হ্যা, এলার্ম বেজেছিল, কিন্তু আমি যখন স্নুজ দেই তখন আসলে মাথা পুরো কাজ করছিল না। আর পরেরবার তো আমি এলার্মটা শুনতেই পারলাম না। আর আসলে রাতে ঘুমাতেও দেরি হয়েছিল, হ্যা, সিনেমা একটা দেখেছিলাম... কিন্তু আমার তো বিনোদনেরও প্রয়োজন আছে । কাজেই এটা আসলে পুরোপুরি আমার দোষ না। আল্লাহ্‌ জানেন আমি চেষ্টা করেছিলাম। ইনশা-আল্লাহ কালকে থেকে অবশ্যই পড়ব। "
-
মনে আছে শয়তান কি করেছিল? সে নিজেকে নিজেকে কনভিন্স করে ফেলেছিল যে সে নিজে থেকে আল্লাহর অবাধ্যতা করেনি, আল্লাহই তাকে দিয়ে এটা করিয়েছেন। শয়তানের এই সমস্যাটা আমাদের মধ্যেও আছে। যখন আমরা কোন অন্যায় করি, আমরা সেটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। এটা মানুষের সাইকোলজী। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা শয়তানের অনুসারী না, আমরা আদম(আ) এর অনুসারী। আমরা যতই জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি না কেন, অপরাধ হচ্ছে অপরাধ। অপরাধ করামাত্র আমাদের প্রত্যেককে স্বীকার করতে হবে যে আমরা ভুল করেছি। অপরাধ করাটা যত না বড় অপরাধ, তার চেয়ে বেশি অপরাধ হোল সেটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করা।
-
[] কিছু কিছু পাপ আছে যেগুলো আমরা প্রতিদিন করি কিন্তু পাপ হিসেবে সেগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেইনা। এরকম পাপকে বলা হয় - Taken for Granted Sins. এরকম একটা পাপ হল নিজের দৃষ্টিকে সংযত না করা। এটা একজন মুসলিম পুরুষের জন্য পৃথিবীতে কঠিনতম পরীক্ষাগুলোর একটা। একটা সুন্দরী মেয়ের উপর আপনার চোখ পড়ল প্রথমবার। না, এটা অন্যায় না। অন্যায় শুরু হবে এখন। আপনার মস্তিষ্কের জৈবিক অংশের ভিতর শয়তান ফিসফিস করে বলবে- "তাকাও, আরেকবার তাকাও ! চেহারা দেখলে কি পাপ হয় নাকি বোকা? আরে সবাই করে, তুমি কোথাকার কোন পরহে্যগার ? " আপনার মনের ভিতর আরেকটি অংশ আপনাকে বারবার রিমাইন্ড করছে- " খবরদার ! তুমি মুসলিম। সে তোমার বোন। তোমরা একই মায়ের সন্তান। আল্লাহকে ভয় কর। "
-
যেই মূহুর্তে আপনি দ্বিতীয়বার তাকালেন, আপনি হেরে গেলেন। আপনি দৃষ্টি সংযত রাখলেন, শয়তান হেরে গেল। একটু পর আবার আসবে সে। এটা বড় কঠিন পরীক্ষা। মানুষের সৃষ্টি কোন আইন আপনাকে বলবে না এটা অন্যায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে এটা অন্যায়। সমাজ আপনাকে বলবে- "সৌন্দর্য সবার জন্য" . মানুষের সৃষ্ট কোন আইন দিয়ে আপনি নিজের এই দোষ সংশোধন করতে পারবেন না, যদি না আপনি স্রষ্টার কথা স্মরন করতে না পারেন ঐ দূর্বল মূহুর্তে।
-
৩- দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজের মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি করা-
-
শফিক সাহেব অফিসে দেরি করে গেছেন। তার অফিস ৮টায়, তিনি পৌঁছেছেন ৯টায়। তিনি জানেন যে তার বসের সামনে পড়লে আপনার খবর আছে। তাই তিনি অফিসে যেয়েই সোজা মাটির দিকে তাকিয়ে একটু চোর-চোর ভাব নিয়ে চুপচাপ করে হেটে নিজের কিউবিকলে গিয়ে বসে পড়লেন আর কাজে চরম নিমগ্ন হয়ে গেলেন !
-
শয়তান হুবহু একই সুযোগটা নেয় আমাদের সাথে। আমরা যখন কারো সাথে কোন অপরাধ করি, আমরা তার সামনে যেতে চাইনা, আমরা তাকে এড়িয়ে চলি। এটা মানুষের সাইকোলজি। শফিক সাহেব একদিন বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একটু "ইয়ে" খেয়ে ফেললেন ক্লাবে যেয়ে। বাসায় ফেরার পথে তিনি তীব্র অপরাধবোধ এ ভুগতে থাকলেন। তিনি ঠিক করলেন, বাসায় যেয়েই নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন।
-
বাসায় যেয়েই শয়তান শফিক সাহেবকে আইডিয়া দিতে লাগল- " লজ্জা করে না তোমার ? এত বড় অন্যায় করে এসে এখন আবার মাফ চাও? হিপোক্রেসীর আর যায়গা পাও না?? তোমার ধারনা আল্লাহ্‌ তোমার মতন মুনাফেক দুই মুখো সাপকে মাফ করবে? জীবনেও না ! শুনো, ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। পরে একবারে মাফ চেয়ে নিও। চল, আজকে তোমার বন্ধুরা যেই নতুন নতুন ওয়েবসাইটগুলোর কথা বলেছিল সেগুলোতে একটু ঘুরে আসি। বাসা একদম খালি। চল চল, দেরি কোরনা। "
-
শফিক সাহেব আরেকটি ভয়ঙ্কর অন্যায় করলেন নিজের প্রবৃত্তির উপর। তিনি আবারো ধোঁকা খেলেন। একজন সত্যিকারের মু'মিন অপরাধ করামাত্র আল্লাহকে স্মরন করে, সে একমূহুর্ত দেরি করেনা। এমন কোন পাপ নেই যা আল্লাহ্‌ ক্ষমা করতে পারেন না, যদি সিনসিয়ারলী মাফ চাওয়া হয়। আমাদের সবার সম্মিলিত পাপও আল্লাহর দয়ার ধারেকাছেও না। তাঁর মতন করে কেউ আমাদের ভালবাসে না, তাঁর মতন করে কেউ আমাদেরকে ক্ষমা করবেনা কোনদিন। তিনি ছাড়া আমাদের যাওয়ার কোন যায়গা নেই। তাহলে আমরা কেন অপরাধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবনা ??? আমরা যদি লাখ লাখ অপরাধ করি, আল্লাহ্‌ কোটি কোটি বার ক্ষমা করবেন। আমি আপনাকে অপরাধ করার জন্য অনুপ্রানিত করছি না। আমি আপনাকে বলছি যে, আশা ছাড়বেন না কখনই। Never Lose Hope in Allah's Infinite Mercy. এটা আমার কথা না, এটা আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন।
-
৪- Arrogance:
-
এই শব্দটার ভাল কোন বাংলা নেই। এটা মানুষের অনেকগুলো নেগেটিভ অনূভুতির একটি মিশ্রন। গোয়ার্তুমি, ঘাড়ত্যাড়ামি, অহংকার, ঔদ্ধত্য, ইগো, তর্ক করার প্রবনতা, অবাধ্যতা, জিদ করা, নিজেকে বড় মনে করা এই সবকিছু মিলিয়ে তৈরী হয় Arrogance. এটা একটা ভয়ঙ্কর ব্যাধি যেটার কারনে ইবলিস চিরজীবনের জন্য ধ্বংস হয়েছে। আমাদের সবার মধ্যে কমবেশি এই ব্যাধি রয়েছে।
-
শয়তান আমাদেরকে আইডিয়া দেয়- "তুমি অনেক জান। তুমি ওর চেয়ে বেশি জান। তুমি অমুকদের লেকচার শুন, তুমি ওর চেয়ে বেশি যুক্তি জান। তুমি কেন ওর কথা মেনে নিবে। খবরদার, হার মানবে না ! "
-
বহু ইসলামিক স্কলারদের মধ্যেও Arrogance ব্যাধি উপস্থিত। তারা একজন আরেকজনের কথা শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন, প্রত্যেকেই দাবি করেন তাদেরটাই সঠিক। মু'মিন হতে হলে আমাদের ভিতর থেকে এই ব্যাধি ঝেড়ে পুছে বিদায় করতে হবে। আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা এক জনও গুরূত্তপুর্ন কেউ না। আমাদেরকে ইসলামের কোন দরকার নেই। আমাদেরকে আল্লাহর কোন দরকার নেই। ইসলাম আল্লাহর ধর্ম, আল্লাহই যথেষ্ঠ এটার জন্য। কারোর মতামত ভাল না লাগলে আমরা তার সাথে তর্ক করতে যাবনা, বা প্রমান করতে যাবনা যে আমরা তার চেয়ে বেশি জানি। ইসলাম কোন ডিবেট করার হাতিয়ার না, তর্ক করে ইসলামের মতন মহান জীবনবিধানকে অপবিত্র করার কোন মানে নেই। শয়তানের জ্ঞানের কোন অভাব ছিলনা। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। সে আল্লাহকে যুক্তি দেখাতে গিয়েছিল। নিজের বাপকেও যুক্তি দেওয়া যায়, কিন্তু নিজের স্রষ্টাকে যুক্তি দেখানো যায়না।
-আমরা সবাই কমবেশি অন্যদের দোষ ধরি, কিন্তু সেটা যে আমার মধ্যেও আছে সেটার দিকে খেয়াল কর�

-Post Credit - Facebook Group
-------------------------------------------------------------------------------

বাবা! আমরা কি কুরবানীতে গোশত খাবো
না?
শাযিয়াঃ বাবা, কুরবানীর আর মাত্র তিনদিন
বাকি। আমরা কি কুরবানীতে গোশত খাবো
না?
বাবাঃ হ্যাঁ মা, কেন খাব না?
শাযিয়াঃ কিন্তু বাবা গত ঈদে তো
আমাদেরকে কেউ গোশত দেয় নি। বছর তো পার
হতে চলল, গোশত দেখি না।
বাবাঃ শাযিয়া মা, আল্লাহ তায়ালা তো
আমাদেরকে ক্ষুধার্ত রাখেন নি। মা মণি,
সর্বাস্থায় আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়
করতে হয়। তাছাড়া হাজী সাহেব কুরবানীর
জন্য বড় গরু কিনেছেন, মিয়াঁ সাহেব কিনেছেন
বকরী। কুরবানীর গোশত তো আমাদের মতো
গরিবদের জন্যই। বড়লোকেরা তো এমনিতেই
সারা বছর গোশত খায়।
আজ ঈদুল আযহা।
খতিব সাহেব বয়ানে বললেন, আমরা যেন
অসহায়-গরিবদের ভুলে না যাই। আমাদের ওপর
তাদের হক্ব রয়েছে।
শাযিয়ার আব্বু ঈদের সালাত আদায় করে ঘরে
ফিরে এলেন। এদিকে গোশতের অপেক্ষায়
অধৈর্য হয়ে পড়ল শাযিয়া। বলল, বাবা! এখনো
তো কেউ গোশত নিয়ে এলো না?
বড় মেয়ে রাফিয়া বলল, চুপ করো শাযিয়া,
আব্বুকে বিরক্ত করো না। বাবা নীরবে দুই
মেয়ের কথা শুনে গেলেন, কিছুই বলতে
পারলেন না।
দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে মা বললেন, আমি
তো পিঁয়াজ-মরিচ কেটে রেখেছিলাম, কেউ
তো গোশত পাঠালো না! প্রতিবেশীরা
আমাদের কথা ভুলে গেলো না তো? আপনি কি
একটু গিয়ে দেখবেন?
বাবাঃ শাযিয়ার মা, তুমি তো জানো আজ
পর্যন্ত কারো কাছে আমি হাত পাতি নি।
আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কোন না কোন
ব্যবস্থা করে দেবেন।
দুপুরের পর শাযিয়ার পীড়াপীড়িতে বাবা বের
না হয়ে পারলেন না। প্রথমে গেলেন হাজী
সাহেবের বাড়ীতে।
বললেন, হাজী সাহেব! আমি আপনার পড়শী।
কিছু গোশত দেবেন?
গোশত চাইতেই হাজী সাহেবের চেহারা
গোস্বায় লালা হয়ে গেল। তাচ্ছিল্যের সাথে
বললেন, কি জানি কোত্থেকে গোশত চাইতে
চলে আসে-বলেই ধরাম করে দরজা বন্ধ করে
দিলেন।
অপমানে শাযিয়ার বাবার চোখে পানি চলে
আসলো। ভারী পায়ে চলতে চলতে এবার
গেলেন মিঁয়া সাহেবের ঘরের দিকে। দরজায়
করাঘাত করে বিনীতভাবে কিছু গোশত
চাইলেন। মিঁয়া সাহেব গোশতের কথা শুনেই
বিরক্তিভরে তাকালেন। পলিথিনে কয়েক
টুকরো গোশত দিয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করে
দিলেন। গোশত চেয়ে যেন বড় অন্যায় করে
ফেলেছেন। যাক অবশেষে ছোট মেয়েটাকে
তো একটা বুঝ দেয়া যাবে-এমনটা ভাবতে
ভাবতে শাযিয়ার বাবা ঘরে ফিরে এলেন।
ঘরে ফিরে পলিথিন খুলে দেখলেন শুধু দুটো
হাড্ডি আর চর্বি। চুপচাপ রুমে গিয়ে কাঁদতে
লাগলেন।
শাযিয়ার মা এসে বললেন, আপনি মন খারাপ
করবেন না। আমি টমেটো দিয়ে চাটনি
বানিয়ে ফেলি।
এরই মধ্যে ছোট্ট শাযিয়া বাবাকে জড়িয়ে
ধরে বলল, বাবা! গোশত লাগবে না। আমি
গোশত খাবো না, আমার পেট ব্যথা করছে।
মেয়ের একথা শুনে বাবা আর চাপা কান্না
ধরে রাখতে পারলেন না।
ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
এমন সময় বাইরে থেকে সবজি বিক্রেতা
আকরাম ডাক দিলো। আনওয়ার ভাই! ঘরে
আছেন?
শাযিয়ার আব্বু দরজা খুলতেই আকরাম তিন-চার
কেজি গোশতের একটি ব্যাগ হাতে দিয়ে বলল,
গ্রাম থেকে ছোট ভাই নিয়ে এসেছে। এতো
গোশত কি একা একা খাওয়া সম্ভব,বলেন? এটা
আপনারা খাবেন। আনন্দ আর কৃতজ্ঞতায়
শাযিয়ার বাবা ভেজা চোখ মুছতে লাগলেন।
অন্তর থেকে আকরামের জন্য দুয়া করতে
লাগলেন।
গোশত রান্না করে সবাই মজা করে খেয়ে
উঠতে না উঠতেই প্রচণ্ড তুফান শুরু হলো।
বিদ্যুৎও চলে গেল। সারাদিন গেল, এমনকি
দ্বিতীয় দিনেও বিদ্যুৎ এলো না। তুফানে
ট্রান্সমিটার জ্বলে গিয়েছলো যে...
শাযিয়ার বাবা তৃতীয় দিন শাযিয়াকে নিয়ে
হাঁটতে বেরুলেন। বাবা-মেয়ে দেখলো, হাজী
সাহেব ও মিঁয়া সাহেব গোশতে ভরা
অনেকগুলো পোঁটলা ডাস্টবিনে ফেলছেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রীজে থাকা সব গোশত নষ্ট
হয়ে গিয়েছে।
ফেলে দেয়া পঁচা গোশতের উপর একদল কুকুরকে
হামলে পড়তে দেখে শাযিয়া বলল, বাবা!
তারা কি কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য কুরবানী
করেছিলেন?
বাবা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
পাশ থেকে মিঁয়া সাহেব ও হাজী সাহেবও
ছোট মেয়েটির কথা শুনে লজ্জায় মাথা নুইয়ে
ফেললেন।
হ্যাঁ, এটিই আমাদের সমাজের বাস্তবচিত্র।
আমরা যেন মিঁয়া সাহেব আর হাজী
সাহেবদের মতো না হই। লাইনে দাঁড় করিয়ে নয়
বরং (সম্ভব হলে) অভাবীদের ঘরে ঘরে
কুরবানীর মাংস পৌঁছে দিই-আল্লাহ তায়ালার
কাছ থেকে উত্তম বিনিময় পাওয়ার আশায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমস্ত নেক
আমলগুলো কবুল করুন,
আমাদের ভূল-ত্রুটিগুলো মার্জনা করুন।
©লিখেছেনঃ শায়েখ আবু আফীফা
(হাফিজাহুল্লাহ)


-----------------------------------------------------------

সম্প্রীতির গন্ধ কোথায় পেলে?!


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, لكم دينكم ولي دين অর্থাৎ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আমার জন্য আমার ধর্ম। বাংলাদেশে সমসাময়িক ঘটে যাওয়া একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে এই আয়াতের অপব্যাখ্যা দেখা যাচ্ছে। কী ধর্মীয় অঙ্গন থেকে আর কী অধর্মীয় অঙ্গন থেকে- সকলেই অপব্যাখ্যা করে চলেছে আয়াতটির। সকলেই যেন সকল ধর্মের মাঝে সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত উপস্থাপনে ব্যস্ত। কে কার চেয়ে বেশি দৃষ্টান্ত পেশ করতে পারে। বিশেষ করে ইসলাম এবং অপরাপর ধর্মের মাঝে যে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে তার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন চলছে ব্যাপক হারে। কেউ বা মসজিদ এবং মন্দির এর পাশাপাশি অবস্থানকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করছে। আবার কেউ ইসলামী বিদ্যাপীঠ এর পাশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বসতি কে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফিকহ-ফতোয়ার যাবতীয় মূলনীতিকে গলাটিপে হত্যা করে সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে চলেছে। কেউ এটা চিন্তা করছে না যে, আয়াতটি কখন অবতীর্ণ হয়েছিল, কোন পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছিল, এর পরবর্তীতে অন্য কোন আয়াতের মাধ্যমে এ বিধানের মাঝে কোন ধরণের পরিবর্তন আসছে কিনা? অথচ উচিত ছিল এ বিষয়গুলো ভাবা। কারণ, ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের সম্মিলিত কোনরূপ সম্ভব নয়। অপর ধর্মসমূহের জন্য ইসলামের কোন অংশে কোনরূপ ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ইসলাম হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ধর্ম। আর ইসলাম ছাড়া অন্যান্য যত আদর্শ বা মতবাদকে মানুষ আজ ধর্ম বলছে, এর কোনটিই ধর্ম নয়; বরং সবগুলোই হচ্ছে মানুষের বানানো অধর্ম। ইসলামের অনুসারীগণ হচ্ছেন মানুষ এবং সৃষ্টির সেরা জাতি আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা হচ্ছেন শুকর, কুকুর বা তার চেয়েও অধম। ইসলামের অনুসারীগণ হচ্ছেন চিরসুখের জান্নাতের মালিক আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা জাহান্নামের কয়েদি। ইসলামের অনুসারীগণ হচ্ছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা হচ্ছে ক্রোধে নিপতিত, ভ্রষ্ঠ ও নাপাক। ইসলামের অনুসারীগণ হচ্ছেন আল্লাহর চিরবন্ধু আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা হলো আল্লাহর চিরশত্রু। ইসলামের অনুসারীগণের অভিভাবক হচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের অভিভাবক সৃষ্টিকর্তার চিরশত্রু মালউন ইবলিস। অতএব, আমার ধর্ম আমার আর তোমাদের ধর্ম তোমাদের। এমন কোন মোহনা নেই যেখানে এ দুইয়ের মিলন সম্ভব। দুটোকে তুলনা করা যায় এমন কোন পাল্লা নেই এবং এক কাতারে দাঁড়ানোর কোন বৈধতা ও নেই।
এ ছিল ইসলামের এমন একটি স্পষ্ট ঘোষণা যা, নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার মাক্কীজীবনেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মূলত এ ঘোষণার মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে ইসলামের অনুসারীদের অবস্থান কিরূপ হবে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান এই আয়াতে দেওয়া হয়নি; এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কীজীবনীতেই দেওয়া হয়নি।
ব্যবস্থা গ্রহণের হুকুমঃ
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন তখন অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত এসে গেছে। যে বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের অসংখ্য আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। রয়েছে রাসূলের অসংখ্য বাচনিক হাদিস এবং ইতিহাসের পাতায় রয়েছে অসংখ্য জিহাদের দাস্তান, যা একথাতেই স্পষ্ট করে যে, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার কেবল তখনই রয়েছে, যখন তারা ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের হাতে বন্দি হয়ে গোলাম-বন্দী হিসেবে বেঁচে থাকবে, অথবা কুফরির অপরাধে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদেরকে কর দিয়ে হীনতার সাথে বেঁচে থাকবে। ইসলাম ছাড়া ভিন্ন ধর্মের অনুসারী কেউ যদি এই দুইয়ের কোন একটা গ্রহণ না করে, তবে তারা সকলেই ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য হারবি কাফির বলে বিবেচিত হবে। যুদ্ধবিরতির যে সাময়িক সময়, সে সময় ব্যতীত সর্বদাই তারা মুসলিমদের জিহাদের ময়দানের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আয়াতের মাঝে কোন অস্পষ্টতা নেই তবু.......
আমরা দৃষ্টান্তস্বরূপ এ বিষয়ক একটি আয়াত পেশ করছি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন,
{ قٰتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْءَاخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتٰبَ حَتّٰى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صٰغِرُونَ } [ سورة التوبة : 29 ]
তোমরা লড়াই কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়। (সূরা আত-তওবাঃ ২৯)
আল্লাহ আমাদের কুরআনের বিধানের অব্যবহার ও অপব্যবহার থেকে হিফাযত করেন।

Next Post Previous Post