বাংলা সংবাদ বাংলাদেশের সুপেয় পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে, বাড়বে খরচ

সাবধান ! বাংলাদেশের সুপেয় পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে, বাড়বে খরচ - Noyon chatterjee


বছর খানেক যাবত হঠাৎ দেশে খাবার পানির জন্য বিদেশী ইনভেস্ট বেড়ে গেছে-
১) ১৯টি জেলায় খাবার পানিতে ইনভেস্ট করছে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (https://bit.ly/2OSCNPZ)

২) সায়দাবাদ পানি শোধনাগারে অর্থ দিচ্ছে ডেনমার্ক (https://bit.ly/33erXJc)

৩) গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগারে অর্থ দিচ্ছে এডিবি, ফ্রান্সের এএফডি এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (https://bit.ly/33bwhsp)

৪) পানির নেটওয়ার্কে অর্থ দিচ্ছে এডিবি (https://bit.ly/37rzsQ6)

৫) মেঘনা নদী থেকে সুপেয় পানি সরবরাহে অর্থায়ন করবে জার্মানির কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (https://bit.ly/2XIvLRz)

৬) সুপেয় পানিতে ইনভেস্ট করবে জাপান (https://bit.ly/2QNTyhy)


এই যে হঠাৎ করে খাবার পানিতে বিদেশী ইনভেস্ট বেড়ে গেছে এটা কিন্তু একটা ভয়ের কারণ। গত ৭ই মে, ২০১৯ তারিখে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ কিন্তু এ সম্পর্কে বলেছিলো-

“আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। কোকাকোলা এখন কোক বিক্রির বদলে বাংলাদেশে পানি বিক্রির চিন্তা করছে। এসব কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার পরও ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবেই এগুলো করা হচ্ছে।
(https://bit.ly/2OgEyaw)

১৪ই অক্টোবর, ২০১৪ সালে আনু মুহাম্মদ “পানি বাণিজ্যিকীকরণ ও সর্বজনের বিপদ” শিরোনামে এক কলামে বলে,

“ ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকেই উন্নয়নের নামে জগতের বাকি সবকিছু ব্যক্তিমালিকানা, বাণিজ্য আর মুনাফার কর্তৃত্বে আনার উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়। খনিজ সম্পদ, সড়ক, রেলপথ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ শুধু নয়; ক্রমে পানিও এই আগ্রাসনের অধীনে যাচ্ছে। এই কাজে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পানির বাণিজ্যিকীকরণেও অগ্রণী। ঋণের জালের বিশেষ শর্ত হিসেবে পানি ব্যক্তিমালিকানায় বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে রূপান্তরের চাপ দিনে দিনে বেড়েছে। পানি-বাণিজ্যের উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনায় এই খাতে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগও তাই ক্রমবর্ধমান। এখন বিশ্বের তিনটি বৃহৎ পানি বহুজাতিক কোম্পানি হলো সুয়েজ, ভিওলিয়া ভিভেন্দি এবং আরডব্লিউই। কোক-পেপসি এবং যারা খাওয়ার পানি দখল করে পানীয়-বাণিজ্য করছে, তারাও এখন পানি-বাণিজ্যে প্রবেশ করেছে। জার্মান কয়লা কোম্পানি আরডব্লিউই, যাদের মুনাফা বাড়াতে পানিসম্পদ বিনষ্ট হয়, তারাও এখন পানি-বাণিজ্য শুরু করেছে।.......


বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী বলিভিয়া নব্বইয়ের দশকের শেষেই পানি বাণিজ্যিকীকরণ করার নীতি গ্রহণ করে। সেই মোতাবেক মার্কিন কোম্পানি বেখটেল বলিভিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর কোচাবাম্বার সব পানি সরবরাহব্যবস্থার ওপর কর্তৃত্ব লাভ করে। এমনকি বৃষ্টির পানিও তাদের কর্তৃত্বাধীন করা হয়। পানির দাম পরিশোধে ব্যর্থ হলে নাগরিকদের ঘরবাড়ি বাজেয়াপ্ত করারও অধিকার দেওয়া হয় এই মার্কিন কোম্পানিকে। বলিভিয়ার গ্যাস নিয়েও এ রকম চুক্তি করা হয়। রাস্তায় প্রতিরোধ তৈরি করা ছাড়া তখন বলিভিয়ার জনগণের সামনে আর কোনো পথ ছিল না। তারা তা-ই করেছে। ক্রমে পানি ও গ্যাসসম্পদ রক্ষার আন্দোলন বলিভিয়ায় বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর মধ্য দিয়ে পানির ওপর বলিভিয়ার সব নাগরিকের অধিকার, গ্যাসসম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা এখন স্বীকৃত।


তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবই বলছে, ১৯৯০-এর দশকে যত পানি সরবরাহব্যবস্থা ব্যক্তিমালিকানার বাণিজ্যিক তৎপরতার আওতায় আনা হয়েছিল, তার ৮৪ ভাগ ২০০৭ পর্যন্ত টিকে আছে, ২৪টি দেশ পানিব্যবস্থার আবারও রাষ্ট্রীয়করণ করেছে। বিভিন্ন সমীক্ষার সূত্রে দ্য ওয়াটার বিজনেস গ্রন্থ দেখাচ্ছে যে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পানির ওপর সুয়েজ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের পরই পানিদূষণ বৃদ্ধি পায়। কানাডার অন্টারিওতে পানিদূষণে কমপক্ষে সাতজন মৃত্যুবরণ করে, কেননা তাদের প্ল্যান্ট ও টেস্ট-প্রক্রিয়া তারা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি হিসেবে গোপন রেখেছিল। 

মরক্কোর মানুষ কাসাব্লাঙ্কায় পানির দাম তিন গুণ বৃদ্ধির মধ্যেই বাণিজ্যিকীকরণের মর্ম বুঝতে পেরেছিল। আর্জেন্টিনার পানির কর্তৃত্বও পেয়েছিল সুয়েজ কোম্পানি। ফলে পানির দাম দ্বিগুণ হয়েছিল, কিন্তু এর গুণগত মানের অবনতি হয়েছিল। মানুষের প্রতিবাদে, বিল পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোয় পরে কোম্পানি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। একই কারণে ব্রিটেনেও পানির দাম বেড়ে যায়। পানির বাণিজ্যিকীকরণের প্রতিবাদে নিউজিল্যান্ডের মানুষকেও রাস্তায় নামতে হয়। 

দক্ষিণ আফ্রিকায়ও পানি বাণিজ্যিকীকরণে সুয়েজ কর্তৃত্ব পেয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই পানি এমন বিষাক্ত হয়েছিল যে কলেরা মহামারি আকার নেওয়ায় পানি-সংযোগ অনেক দিন বিচ্ছিন্ন থাকে। ইরাক ধ্বংসযজ্ঞের পর বেখটেল ও এসব কোম্পানির জন্য সোনায় সোহাগা হয়। এখন আর বিশুদ্ধ পানি পান ইরাকের মানুষের জন্য সহজ নয়। জীবন, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা—সবই এখন আগ্রাসী দখলদারদের কবলে। ঘানা ও উরুগুয়েও এই পথে গিয়েছিল, পরে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে জনবিক্ষোভ তৈরি হয়। ২০০৪ সালে গণভোটের মাধ্যমে এ দুই দেশে পানির ব্যক্তি বাণিজ্যিকীকরণ নিষিদ্ধ হয়। নেদারল্যান্ডসও একই বছর সর্বজনের পানি সরবরাহ ব্যক্তীকরণ নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। (https://bit.ly/2rh4gT7)


কথা অনেক লম্বা, সংক্ষেপে বললে-
সরকার দেশের সুপেয় পানি দেখিয়ে বিদেশীদের টাকা আনছে,
আর তাতেই ফাঁদে আটকা পড়ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সুপেয় পানিকে নিয়ন্ত্রনে নিতে যাচ্ছে বিদেশী কর্পোরেটরা- এটাই আমাদের ভবিষ্যত।


এতে কয়েক ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে-
ক) সুপেয় পানি নিয়ে একটা কৃত্তিম সংকট আসন্ন।
খ) দেশের নিচে গ্যাস আছে। কিন্তু বিদেশী কোম্পানিরা সেই গ্যাস উত্তোলন করে ফের বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করছে। ঠিক তেমনি দেশে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি আছে, কিন্তু জনগণ সেটা ব্যবহার করতে পারবে না, বিদেশীদের কাছ থেকে সেটা কিনে ব্যবহার করতে হবে।
গ) অযাচিত প্রকল্পের নামে বিদেশী ইনভেস্ট আনায় বাজেটে চাপ বাড়বে, জনগণের দৈনন্দিন খরচ বাড়বে।
ঘ) সুপেয় পানির মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাবে।
ঙ) পানির উপর বিদেশীরা বিভিন্ন নিয়ম কানুন আরোপ করায় একদিকে কৃষিতে সমস্যা হবে, অন্যদিকে তা দেশী শিল্পায়নে বাধার সৃষ্টি করবে।

                বাংলা সংবাদ - বাংলাদেশের খবর 


         " চার লেনের সড়ক ও কর্পোরেটোক্রেসি "

গতকাল আন্তঃজেলা সড়ক ৪ লেন হচ্ছে, এই বিষয়টিকে কর্পোরেটোক্রেসি এবং জনবিরুদ্ধ বলায় কেউ কেউ অবজেকশন দিয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- দুর্ঘটনা হ্রাস এবং স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য ৪ লেনের সড়কের দরকার আছে। 

যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের কথা আসলে ফেলে দেবার মত নয়। 
সত্যিই আমার-আপনার জন্য এই ৪ লেনের সড়ক দরকার আছে। 
কিন্তু কথা হচ্ছে- এই যে উন্নত সড়ক ব্যবস্থা হচ্ছে, এটা কি সত্যিই আমার-আপনার জন্য হচ্ছে ?
নাকি আমার-আপনার পকেটের টাকা দিয়ে অন্য কারো জন্য তৈরী হচ্ছে এই অত্যাধুনিক সড়ক ??

(১) ঢাকা - মাওয়া - ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে নামক যে অত্যাধুনিক ৪ লেন সড়ক হচ্ছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক বলে ইতিমধ্যে পরিচিত পেয়েছে। এই সড়কের নির্মাণ ব্যয় ইতিমধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। এই অত্যাধুনিক সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক “এশিয়ান হাইওয়ের করিডর-১” এর অংশ হিসেবে। (https://bit.ly/33rmaQz)

(২) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেন করছে, তাতে প্রাথমিক ব্যয় ১৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যদিও নির্মাণ শেষ হতে আরো অনেক বাড়বে। এই সড়কটি মূলত আন্তর্জাতিক এশিয়ান হাইওয়ে ১ ও ২-এর রুটভুক্ত। আবার বিমসটেক রোড করিডোর ৩ ও সাসেক হাইওয়ে করিডোর ৫-এর রুটভুক্তও এ মহাসড়ক। (https://bit.ly/2OTi2Du)

(৩) উত্তরাঞ্চলে যে ৪ লেন (অনেকে ৬ লেন বলে) সড়ক হচ্ছে তার প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা, যা প্রকল্প শেষ হতে আরো অনেক বাড়বে। এই প্রকল্পটি মূলত এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ে করিডর, সাসেক করিডর, এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে উপ আঞ্চলিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে তৈরী হচ্ছে।
(https://bit.ly/37KLQuy)

(৪) কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। এই টানেল হচ্ছে মূলত সিবিআই ও বিসিআিইসি করিডর, সেভেন সিস্টারস করিডর এবং ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান করিডর’কে সাপোর্ট দিতেই। (https://bit.ly/2Dl3dEi)

অর্থাৎ এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, এগুলো কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা হচ্ছে না, তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত, চীন, ভুটান, মায়ানমার, নেপালের ব্যবসায়ীরা যে ব্যবসা করবে, তাদের গাড়িগুলো যেন দ্রুত গতিতে এবং নির্ভিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সে সুবিধার্থে।

এখন কথা আসতে পারে, 
যদি তাদের জন্য নির্মাণ হয়ও, তবে সমস্যা কি ?
আমরাও তো সেটা ব্যবহার করতে পারবো।

সমস্যা আছে। 
সমস্যা হলো- এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এগুলোর খরচ তো আকাশ থেকে নামবে না কিংবা সরকার তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়েও আসবে না, জনগণের পকেট থেকেই আসবে। আবার কোন বিদেশী যদি ঋণও দেয়, তবুও সেটা জনগণের পকেট থেকেই সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে।

এখন কথা হইলো- এই যে জনগণ তার তেল, নুন, চাল, ডাল, পেয়াজ, আটার মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫, ১০ বা ১৫ বছর যাবত এই অত্যাধুনিক রাস্তাগুলোর ব্যয় নির্বাহ করবে, এরপর কি তাদের আর সেই রাস্তায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ থাকবে ? নাকি ঐ অত্যাধুনিক রাস্তার ধারে দাড়িয়ে ভিক্ষা করার সামর্থ হবে, এটা বুঝতে হবে।

হ্যা আমরা আমাদের রাস্তাঘাট উন্নত করবো না কেন, অবশ্যই করবো।
কিন্তু কোনটার প্রয়োজন আগে সেটা আগে বুঝতে হবে।
এখন কোনটা বেশি প্রয়োজন, 
জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে দেশী উৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে স্ট্যাবলিশ করা?
নাকি বিদেশীরা আসবে বলে তাদের জন্য দেশ সাজাতে গিয়ে জনগণের খরচ বাড়িয়ে কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ তৈরী করা ??

আসলে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসিটি হলো সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা ব্যবসায়ীদের কৈ এর তেলে কৈ ভাজা পলিসি।
অর্থাৎ জনগনের টাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সেই জনগণের উপর ব্যবসা করা। আবার সেই রাস্তা নির্মাণ খরচ জোগাতে জনগণ দরিদ্র হয়ে গেলে তাদের সস্তায় শ্রমিক রূপে ব্যবহার করা, এটাই তাদের কূটচক্র। অথচ জনগণ সেটা বুঝবে না, একবার বুঝবে উন্নয়ন, আরেকবার বুঝবে বিদেশী ইনভেস্ট, আরেকবার বুঝবে বেকারদের চাকুরী, এর বাইরে বুঝার ক্ষমতা জনগণের নেই।

তবে এখানে একটা আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে-
এই যে জনগণের সাথে এত বড় একটা ধোকাবাজি হচ্ছে, এটা কেন কেউ ফাঁস করছে না ?
আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন- আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা কিন্তু এইসব প্রকল্প করতে সরকার যে দুর্নীতি করছে তার বিরোধীতা করে, কিন্তু মূল যে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসি তার বিরোধীতা করে না, তারা ।
এর কারণ- এই পলিসির উপরে রয়েছে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক। যারা দুর্নীতিবাজ সরকারের উপর ভর করে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা শুধু চায় সরকারের বিরোধীতা করে রাজনীতি করতে, বিপরীতপক্ষকে দলে ভিড়াতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের কার্যক্রমের বিরোধীতা করতে তারা মোটেও চায় না। হয়ত ভাবে সেটা করলে ভবিষ্যতে হয়ত তারা আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যার কারণে কর্পোরেটোক্রেসি নামক মূল ঘটনাটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যায়, জনগণ আর তা বুঝতে পারে না।

ছবি: ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ ঢাকা - মাওয়া - ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে।


বাংলাদেশের অর্থনীতি কাদের হাতে?


আমি একটা কথা অনেক আগে থেকে বলছি-
বর্তমানে দেশে যে অর্থনৈতিক সংকট এসেছে বা আরো বড় যে সংকট আসছে,
এর পেছনে সরকারের ভুল অর্থনৈতিক পলিসি দায়ী।
এক্ষেত্রে সরকারের অর্থনৈতিক পলিসি মেকার কারা আগে তাদের যাচাই করতে হবে।
তারা যে দেশকে একটা ভুল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে সেটা কি তারা বুঝতে পারছে ?
এবং ভুলের কারণে যে সংকট হয়েছে, সেটা কি তারা সামাল দিতে পারবে ?
যদি না পারে, তবে ঐ পলিসি মেকারদের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত।
এর বদলে যারা এই কঠিন সময়ে দেশকে শক্ত হাতে ধরে সমস্যার সামাল দিতে পারবে,
তাদের হাতে অর্থনৈতিক পলিসি মেকিং (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা না) এর দায়িত্ব নেয়া উচিত।
এবং অবশ্যই সেটা অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষভাবে।
বতর্মান সরকারের ভুল হলো-সরকার দুই নীতি নিয়েই খুশি।
এক দুর্নীতি, দুই রাজনীতি।
সরকারের ভুল নীতির সুযোগে একদল দুর্নীতি করছে।
আরার যখন ভুল ধরা পড়েতেছে, তখন ভুলটা স্বীকার না করে সরকার বলতেছে-
“বিএনপি আমলের সাথে তুলনা করে দেখুন তো আমরা ভালো আছি কি না ?”
এই যে অন্য রাজনৈতিক দলকে পাল্লা মেনে ভালো-মন্দের যাচাই করার রাজনৈতিক মানসিকতা,
সেখান থেকেই আর ভুল শুধুরাতে পারছে না সরকার।
আর এই দুই নীতির পিশাপিশিতে বিকল হচ্ছে অর্থনীতি।
আবার পাবলিকলি যাদের ভয়েস আছে, তারাও রাজনীতির অংশ হয়ে উঠেছে।
মানে তারা শুধু সরকারবিরোধীতাই প্রচার করতেছে, এবং সেটা প্রচার করে নিজের দল ভারি করছে।
কিন্তু মূল কোন অংশটায় দেশের সমস্যা হচ্ছে,সেটা চিহ্নিত করে সঠিকটা ধরিয়ে দিচ্ছে না (অথবা তারা নিজেরাই ভালোটা জানে না)।
মূলত অর্থনৈতিক পলিসি’র ক্ষেত্রে সরকার যে মাস্টার প্ল্যান নিয়েছে, আমার দৃষ্টিতে সেটা একটা বিরাট ভুল সিদ্ধান্ত। শুধু ভালো ভালো রাস্তাঘাট, তেল-বিদ্যুৎ আর সস্তায় শ্রমিক দিলেই বিদেশী ইনভেস্ট আসবে বলে আমার মনে হয় না। এখানে আরেকটি জিনিস দরকার আছে, সেটা হলো – কাচামাল।
আমাদের দেশে কিন্তু কাচামাল নাই। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাচামালের জন্য আমারাই কিন্তু চীন-ভারতের উপর নির্ভরশীল। তাহলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কেন ভারত-চীন বাদ দিয়ে বাংলাদেশে ইনভেস্ট করতে যাবে ?
কাচামাল আর শ্রমিকের কম্বিনেশন হলে পাওয়ার-এনার্জি আর রাস্তাঘাট কম সময়েই পাওয়া যায়। সমস্যা হলো- আমাদের যারা অর্থনৈতিক পলিসি মেকার, তাদের চিন্তার দৌড় কতদূর সেটা জানার বিষয়।
তাদের ভাববার বিষয় ছিলো, আমাদের দেশী ব্যবসায়ী বা উৎপাদকরা কেন পারছেন না ? কেন তাদের পণ্য খরচ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি হয়ে উঠছে ? তাহলে আমাদের দেশে দেশী ব্যবসায়ীরা যদি না পারে, তবে বিদেশী ব্যবসায়ীরা পারবে পারবে কোন যাদুবলে ? এখানে মূল বটলনেক চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা বাদ দিয়ে আনুসাঙ্গিক নিয়ে দৌড়াচ্ছি।
আসলে এখন যেটা করতে হবে-
দেশের অর্থনীতিকে বাচানোর জন্য নিরপেক্ষভাবে বৃদ্ধিবৃত্তিকভাবে কাজ করার প্রয়োজন। কোন রাজনৈতিক দল বা পক্ষ বিপক্ষ নয়, শুধু জনগণের পক্ষে দেশের পক্ষে। রাজনৈতিক দল বা পক্ষ থেকে মুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক দিক নির্দেশনা ও সে অনুসারে অর্থনীতি চালনা করতে পারলে এ সংকটময় মুহুর্তে দেশকে কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব, এছাড়া নয়।
- Noyon C 5
Next Post Previous Post