শিয়া - সুন্নি ঃ কাসিম সুলাইমানির কেন এত কদর?

কাসিম সুলাইমানির কেন এত কদর?


২০১১ সালে, সিরিয়ার বিদ্রোহ শুরু হতেই ইরান থেকে ছুটে এসেছিলেন সদ্য প্রয়াত ইরানি শিয়া জেনারেল কাসিম সুলাইমানি। সিরিয়ার কসাই, তার জাতভাই বাশার আল-আসাদকে রক্ষা করতে। তিনি একা আসেননি; এসেছিলেন তার আল-কুদস ব্রিগেড নিয়েই। যার মিশনই হলো মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াদের স্বার্থরক্ষা। সুলাইমানির সিরিয়ার জাতিগত বিদ্রোহে নাক গলানো গতানুগতিক কিছু ছিল না; ছিল সুদূরপ্রসারী টার্গেটের একটি অংশ। আপন মিশনের অন্তর্ভুক্ত। মানে সুন্নি নিধন, আর শিয়াদের রক্ষাকরণ।

সিরিয়ার বিদ্রোহের সময় সুলাইমানি ঘনঘন সিরিয়া আসতেন। তেহরান থেকে ফ্লাইটে আসতেন দামেশক। দামেশক থেকে আবার তেহরান। সিরিয়ায় এসে বৈঠক করতেন বাশার আল-আসাদের সাথে। ইরানে গিয়ে বৈঠক করতেন ইমাম খামেনায়ির সাথে। আবার প্রায়ই লেবাননের ফ্লাইট ধরে উড়াল দিতেন বৈরুতে। গোপনে মিলিত হতেন হিজবুল্লাহর হাসান নাসরুল্লাহর সাথে। পাশাপাশি ইরাকের শিয়া নেতা ও ইয়েমেনের হুতি নেতাদের সাথেও শলাপরামর্শে একত্রিত হতেন।

ইসলামিক ছবি

দামেশক থেকেই সুলাইমানি সিরিয়া যুদ্ধে বাশার আল-আসাদ রক্ষার গুটি নাড়াতেন। এজন্য গড়ে তুলেন শিয়াদের লাখো সৈন্যের এক বিশাল সেনাবাহিনী। এই দলে ছিল তার ইরান থেকে আগত আল-কুদস ব্রিগেড, লেবাননের হিজবুল্লাহ, বাশারের সরকারি বাহিনী, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের শিয়া যুবকদের নিয়ে গঠিত মিলিশিয়া বাহিনী। আমেরিকা ও রাশিয়ার পাশাপাশি এই শিয়া সেনারা সিরিয়ার সুন্নিদেরকে যেভাবে হত্যা, গুম, অপহরণ, বন্দি আর দেশান্তর করছে, নারীদের ইজ্জত লুটেছে, তা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির সম্পর্কে অবগত প্রতিটি লোকই জানে।

সুলাইমানি শুধু সিরিয়াতেই শিয়াদের স্বার্থরক্ষা করেননি; গোটা মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াদের দৌরাত্ম্য গড়তে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। দামেশক, বাগদাদ, বৈরুত ও সানআ--এই চারটি রাজধানী আজ শিয়াদের দখলে। এখানে সরকার নির্মাতা গোষ্ঠী হলো শিয়া! আর তা একমাত্র জেনারেল কাসিম সুলাইমানির অবদান। এই বাস্তবতাটা ইরানের পার্লামেন্টে আয়াতুল্লাহ ইউনুস নামে একজন শিয়া ধর্মীয় নেতা স্বীকার করেছেন। আবার জেনারেল সুলাইমানিও তার এক বক্তব্যে বলেছেন--সিরিয়া হলো আমাদের যুদ্ধের প্রথম সারি। এই বাস্তবতাটা অস্বীকার করা যায় না!

এজন্য জেনারেল কাসিম সুলাইমানির কদর শুধু ইরান নয়; গোটা শিয়া জগতে অনেক বেশি। সুলাইমানির মৃত্যুতে শিয়ারা শুধু তাদের একজন নামিদামি সমরবিদকে হারায়নি; হারিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া নেটওয়ার্কের এক নির্মাতাকে। লাখ লাখ সুন্নি-নিধনে এক ঠান্ডা মাথার খুনিকে। শিয়াদের কাছে সুলাইমানির অভাব পূরণ হবার মতো নয়। এমনিই কি আর তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করছে? মাতম করছে? বুক চাপড়াচ্ছে? মর্ছিয়া গাইছে? আন্দোলন করছে?

জেনারেল কাসিম সুলাইমানি বিশ্বসেরা একজন সমরবিদ ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসরাইল-আমেরিকার এক রহস্যজনক বিরোধী ছিলেন, এটা ঠিক। কিন্তু ইসরাইল-আমেরিকার বিরোধিতার চেয়ে সুন্নি মুসলমানদের বিরোধী ছিলেন বেশি। এটাই যে তার মিশন! ইরাক-সিরিয়ায় তার আগমন ও তৎপরতাই ছিল সুন্নিদের নিধনে। এজন্য আমেরিকার সাথে হাতও মিলিয়েছিলেন। ধ্বংস করেছিলেন দামেশক। এবার আমেরিকা তার প্রয়োজন সেরে আগাছা সাফ করে নিয়েছে। তোমরা যারা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার ক্রীড়নক এই সুলাইমানির মৃত্যুতে মায়াকান্না দেখাচ্ছো, তোমরা কি একবার ভেবো না, এই সুলাইমানি একজন রাফেজি-শিয়া। খাট্টা কাফির-বেইমান। লাখ লাখ সুন্নি মুসলমানের রক্তখেকো?

সুলাইমানির মৃত্যুর পরপর সিরিয়ায় ২৫ জন সুন্নি মুসলমানকে শিয়ারা ধরে জবাই করে ফেলল। তাদের অপরাধ--তারা জেনারেল সুলাইমানির মৃত্যুতে খুশি হয়েছিল! এই শিয়ারা কারা, এরা কাদের দুশমন মনে করে--এটা বুঝার জন্য তো এই একটি ঘটনাই যথেষ্ট! তাই বলছি, সুলাইমানির জন্য মায়াকান্না দেখানোর আগে শিয়াদের চেনো। সুলাইমানির মিশন জানো। তাদের কুফরি আকিদা বুঝো। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদা কী, তা জানো। তারপর মায়াকান্না দেখাও!
Ainul Haque Qasimi
Previous Post Next Post