দুইজন নবী দানিয়াল আ. ও ইরমিয়া আ. এর সময়ের ঘটনাঃ Arju Ahmad
দুইজন নবী দানিয়াল আ. ও ইরমিয়া আ. এর সময়ের ঘটনাঃ Arju Ahmad
দজলা ও ফুরাত এই দুই নদী আধুনিক তুরস্কের পূর্বাংশের আনাতোলিয়া পর্বতমালা থেকে উদ্ভূত হয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হওয়ার মধ্যবর্তী দীর্ঘ অববাহিকায় যে ইকোরিজিয়ন গড়ে তুলেছে সেখানেই বিলাদ আর রাফিদাইন (Mesopotamia) সভ্যতার উদ্ভব।
এই বিলাদ আর রাফিদাইন বা মেসোপটোমীয় সভ্যতায় অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল বাবিল (Babylon) কেন্দ্রিক। বাবিল আধুনিক ইরাকের একটা প্রাচীন নগরী। খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতক থেকে ১৮ শতক অবধি এই শহর কেন্দ্রিক সেখানকার রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত হয়েছে।
শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতকে এবং ও ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় শতকে দুই মেয়াদে প্রায় চারশো বছর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ নগরীর মর্যাদা ধরে রেখেছিল। বাবিল কেন্দ্রিক সেই সম্রাজ্যে নাবুখায নাসর (Nebuchadnezzarr) নামে মোট দুইজন শাসন ছিলেন।
প্রথম জন ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকের। অপরজন ছিলেন পঞ্চম শতাব্দীর। এই দুই জনই শাসক হিসেবে ছিলেন শক্তিশালী। প্রথম জন শাসন করেছেন ২২ বছর। দ্বিতীয়জন শাসন করেছেন ৫৭ বছর।
এই দ্বিতীয় নাবুখায নাসর (Nebuchadnezzarr-ii) নয়া বাবিল সম্রাজ্যের তো বটেই মেসোপটেমীয় সভ্যতার তামাম ইতিহাসে সবচে' শক্তিমান শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে তিনি প্রাচীন শাম (Assyrian) বিজয় করেন৷ জেরুজালেমে সোলাইমান আ. নির্মিত মসজিদ ধ্বংস করেন।
আধুনিক ইরানের খুজেস্তান থেকে শুরু করে ইরাক, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল, জর্ডান এবং আরবের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল হতে মিসরের প্রান্তসীমা অবধি তার শাসনভূমি বিস্তৃত করেন। দুনিয়ায় একক পরাশক্তি হিসেবে নিজের সাম্রাজ্যকে প্রতিষ্ঠা করেন।
তার শাসনামল ছিল স্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম উদাহরণ। কিন্তু একইসাথে সুশাসন ও ইনসাফ ছিল ভয়াবহরকমভাবে ব্যহত। তার মত ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের নজির সেকালের আর একটা শাসকের ইতিহাসেও নেই।
কিন্তু ইনসাফ কায়েম ব্যতীত কেবল উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে কোনও সম্মানের ঠাঁই যে মেলে না এর জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত তিনি। আজও ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম তিন ধর্মের মানুষই তাকে ঘৃণিত হিসেবে বিবেচনা করে।
প্রথম জীবনে তিনি মূর্তিপূজক থাকলেও ইতিহাসের যে বর্ণনা মেলে তাতে মনে হয় পরবর্তী জীবনে তিনি নাস্তিক ছিলেন। তার সময়ে বাবিলে নবী হিসেবে দানিয়াল আ. প্রেরিত হন। অপরদিকে জেরুজালেম কেন্দ্রিক ইহুদি সাম্রাজ্যে নবী হিসেবে ছিলেন ইরমিয়া আ. (Jeremiah)।
ইবনে আবিদ দুনিয়া রহ. বর্ণনা করেন, দ্বিতীয় নাবুখায নাসর (Nebuchadnezzarr-ii) দানিয়াল আ. কে একবার ভূগর্ভস্থ বন্দিশালায় বন্দী করেন৷ সেখানে আগে থেকেই বন থেকে ধরে আনা দুটো সিংহকে কয়েকদিন না খাইয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বন্দী রাখা ছিল৷
সিংহ দুটো দানিয়াল আ. কে আল্লাহর ইচ্ছেয় স্পর্শ অবধি করে নি। বরং দানিয়াল আ. যখন ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন তখন আল্লাহ ইরমিয়া আ. খাদ্য ও শরবত প্রস্তুত করতে আদেশ করলেন। ইরমিয়া আ. বললেন, 'ও রব্ব আমি তো জেরুজালেমে আর দানিয়াল তো বাবিলে।'
আল্লাহ জানালেন, 'যা নির্দেশ হয়েছে তা পালন করো।' এরপর আল্লাহ বাহন পাঠালেন, সেই বাহনে করে খাবারসমেত তিনি সেই বন্দিশালায় পৌঁছুলেন। দানিয়াল আ. জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনি কে?'
সে জানালো, 'আমি ইরমিয়া, তোমার রব্বের নির্দেশে তোমার জন্য খাদ্য ও পানীয় নিয়ে এসেছি।' দানিয়াল আ. খুশির ঝলক তুলে বললেন, 'তবে আমার রব্ব আমাকে স্মরণে রেখেছেন!'
বাবিল থেকে জেরুজালেমের দূরত্ব প্রায় ২৭ শত কিলোমিটার। সেখান থেকে আল্লাহ খাবার এনে খাইয়েছেন দানিয়াল আ. কে। অথচ তদানীং দুনিয়ার সবচে' প্রতাপশালী শাসক ছিল তাঁর বিরুদ্ধে, অন্ধকার ভূগর্ভস্থ বন্দিশালায় তিনি ছিলেন বন্দী, সেখানে ক্ষুধার্ত বুনো সিংহ ছিল, যার এক থাবাই একজন মানুষকে ধরাশায়ী করতে যথেষ্ট।
এত প্রতিকূলতাতেও তিনি ভরসা রেখেছেন কেবল এক আল্লাহর উপর। সেই মালিক তাঁকে নিরাশ করেন নি, ভুলে যান নি। তখন দানিয়াল আ. যা বলেছিলেন, সেই কথাগুলো আমাদের সমগ্র জীবনের জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেছিলেন,
প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তাঁর বান্দাহকে কখনো ভুলেন না।
স্তুতি সেই রব্বের যে রব্ব কখনো কোনও প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেন না।
শুকরিয়া সেই প্রতিপালকের যিনি উত্তমের বিনিময় দেন উত্তমতরভাবে।
ধৈর্য্যের বদলায় দেন নিরাপত্তা এবং বিপদকে করেন দূরীভূত ।
যিনি স্বস্তি দেন সঙ্কটে এবং যখন আমরা ব্যর্থ হই আমাদের মনে আশার সঞ্চার করেন।
স্তুতি সেই রব্বের যে রব্ব কখনো কোনও প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেন না।
শুকরিয়া সেই প্রতিপালকের যিনি উত্তমের বিনিময় দেন উত্তমতরভাবে।
ধৈর্য্যের বদলায় দেন নিরাপত্তা এবং বিপদকে করেন দূরীভূত ।
যিনি স্বস্তি দেন সঙ্কটে এবং যখন আমরা ব্যর্থ হই আমাদের মনে আশার সঞ্চার করেন।
আহা! এই তো আমাদের রব্ব। তিনি আমাদের ভুলেন না। অথচ আমরা ভুলে যাই। আফসোস, নিজের প্রতি। সমস্ত প্রশংসা ও পবিত্রতা কেবল আপনারই, হে মহামহিম।