কেন বানোয়াট সম্প্রীতির খরব প্রচার করতে হবে ?

কেন বানোয়াট সম্প্রীতির খরব প্রচার করতে হবে ?




দিল্লীতে মুসলিম নিধনের পর মিডিয়া উঠে পড়ে লেগেছে, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির খবর প্রচার করতে। এক্ষেত্রে তারা বানোয়াট বা ফেইক ছবিও প্রচার করতে দ্বিধা করছে না। যেমন গতকালকে অনেক মিডিয়াতে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, হিন্দুরা নাকি মানবঢাল বানিয়ে মুসলমানদের জুম্মার নামাজের পড়তে দিয়েছে। যদি অনলাইন ঘেটে দেখা গেচ্ছে উক্ত ছবিটি ১ মাস পুরাতন, সেই পুরাতন ছবিটি ব্যবহার করে সম্প্রীতির খবর ছড়ানো হচ্ছে। অথচ প্রকৃত খবর হচ্ছে, দাঙ্গার পর অজিত দোভাল মুসলমান এলাকায় গিয়ে বলেছে তোমরা নামাজ পড়তে যাও, কোন সমস্যা নাই। কিন্তু মুসলমানরা জুম্মার নামাজ পড়তে বের হলে তাদেরকে পিটিয়ে পুরো শরীর রক্তাক্ত করেছে হিন্দুরা (https://bit.ly/32C9OpY)। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই খরব বাংলাদেশের মিডিয়া এই খবরটি প্রচার না করে, ১ মাস পুরাতন ফেইক ছবি প্রচার করে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি দেখাইতেছে।
আসলে মিডিয়া যেভাবে প্রচার করে, প্রতিবেশী হিন্দুরা মুসলমানদের বাচাতে এগিয়ে আসে, কিন্তু বহিরাগত হিন্দুরা এসে হামলা চালায়, এটা আসলে একটু ভুয়া কথা। কারণ প্রতিবিশী হিন্দুরা যদি দেখায় নাই দেয়, কোনটা মুসলমানের ঘর, কোনটা মুসলমানের দোকান, কোন সিস্টেমে মুসলমান মারতে হবে, কোনগুরো হিন্দু ঘর, যেখানে আগুন দেয়া যাবে না, তবে কিন্তু বহিরাগতদের পক্ষে এসে কিছুই করা সম্ভব হবে না। বহিরাগতদের কিছু করতে অবশ্যই নিকট প্রতিবেশী হিন্দুদের সহযোগীতা লাগবে।
যেমন- আজকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খরব, কবিরনগরের আসিফ (৩৫) কষ্ট পেয়েছে তার বহুদিনের বন্ধুত্ব হারায়ে। তার ঘনিষ্ট হিন্দু বন্ধু সিদ্ধার্থ দাঙ্গাবাজদের কাছে তার নাম ও ঠিকানা পৌছে দিছে, এতে তার কষ্টের সীমা নেই। (https://bit.ly/2vi1Upz)
শুধু তাই নয়, মুসলমানদের দোকান-কারখানাগুলো যখন খালি হয়ে যায়, তখন প্রতিবেশী হিন্দুরা সেগুলো উৎসবের আনন্দ নিয়ে লুটপাট করে, যার খবর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। (https://bit.ly/3anX9K1)। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় সেই খবরগুলো বাংলাদেশের মিডিয়া না এসে ফেইক ছবি দিয়ে তারা সম্প্রীতির বন্ধন তৈরী করছে।
দিল্লীর শিব বিহার এলাকার ঘটনাও একই। সেখানের স্থানীয় হিন্দুরা রাস্তায় ব্যারিকেড লাগিয়ে দেয়, যেন মুসলমানরা পালাতে না পারে। এরপর নিজেদের বাড়িতে ঢুকে “জয় শ্রী রাম” শ্লোগান দিয়ে বলে- আমরা তোমাদের লোক, অর্থাৎ ওদের বাড়িতে ক্ষতি করো, আমাদের বাড়িতে ক্ষতি করো না। (https://bit.ly/2PCprZk)
আসলে মিডিয়া ঘটনা ঘটার পর যতই প্রতিবেশী হিন্দুদের ভালো বানিয়ে সম্প্রীতির গান রচনা করতে চাক, প্রতিবেশী হিন্দুও তো তার স্বার্থ দেখে। সে চিন্তা করে আমার আমার পাশের মুসলমানকে যদি তাড়ানো যায়, তবে আমি তার বাড়ি দখল করবো, তার সম্পদ লুটপাট করবো, তবে সে সেই সুযোগ হাতছাড়া করবে কেন ?।
উল্লেখ্য গত ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে পশ্চিমবঙ্গের লেখক জিম নেওয়াজ একটা লেখা দিয়েছিলেন তার এক মুসলিম শিক্ষক বন্ধুকে নিয়ে। ঐ মুসলিম শিক্ষক তার তার পাশের হিন্দু পরিবারদের সাথে খুবই সৌহার্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করতেন। একজনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অন্যজন যাইতেন, ধর্মের কারণে কোন ভেদাভেদ করতেন না। ঐ শিক্ষকের ছোট শিশুটি আবার পাশের বাড়ির হিন্দু বাড়ির ছোট শিশুটির সাথে খেলাধুলা করতো। যাই হোক, ভারতের পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পরেরদিনের কথা। দুই বাড়ির ২ শিশু একত্রে খেলা করছিলো। হঠাৎ করে হিন্দু বাড়ির শিশুটি বলে উঠলো, “জানো ! কাল রাতে বাবা-মা গল্প করছিল, তোদের বাড়িটা আমরা নিয়ে নেবো।" (https://bit.ly/2TsstAj)
এই হলো হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি, উপর দিয়ে খুব ফিটফাট, কিন্তু দাঙ্গা লাগলে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক বিষ দাত বের হতে ১ মুহুর্ত সময় লাগে না।
২০১৩ সালের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর দাঙ্গার কথা মনে আছে ?
সেই দাঙ্গায় অনেক মুসলিম নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো। এবং সেটা হয়েছিলো প্রতিবেশী হিন্দুদের দ্বারা, যারা দিনের বেলায় তাদের বলেছিলো- আমরা তোমাদের রক্ষা করবো। কিন্তু রাতের বেলায় দাঙ্গায় লাগলে ঐ নারীদের ধর্ষণ করতে তাদের বিন্দুমাত্র সম্প্রীতির কথা মনে পড়েনি। (https://bit.ly/2I52XMl)
আর আমি তো অনেক আগেই বলেছি, দাঙ্গার দিনের অনেক লাইভ ভিডিওই তো ফেসবুক-টুইটারে ছড়িয়েছে, সেখানে কেউ দেখাতে পেরেছে, হিন্দুরা বুক চিতিয়ে মুসলমানদের বাচাচ্ছে ? লাইভ ভিডিওতে দেখা গেলো না, কিন্তু ঘটনা ঘটার পর হঠাৎ সম্প্রীতি প্রেমীরা সব মিডিয়াতে পোজ দেয়া শুরু করলো, এটা তো সন্দেহজনক। আর মূল কথা হলো, সব হিন্দু যদি ভালোই হলে যায়, তবে গুজরাট কসাই নামে খ্যাত নরেন্দ্র মোদি কিভাবে সর্বকালের রেকর্ড ভোট পেয়ে পর পর ২ বার প্রধানমন্ত্রী হয় ? এই ভোট দাতাগুলো তাহলে কোন সম্প্রীতির রক্ষকরা ??
হয়ত বলতে পারেন-
“আমরা এই খরবগুলো প্রচার করি, যেন দাঙ্গা না লাগে, আপনার উদ্দেশ্য তো দাঙ্গা লাগনো, তাই আপনি এগুলো পছন্দ করেন না। ”
বুঝলাম আপনার কথা, আপনি দাঙ্গা চান না। কিন্তু সেটা ভুল তথ্য প্রচার করে কেন ?
আপনার ভুল তথ্যের কারণে তো মুসলিমরা তো বিভ্রান্ত হচ্ছে, তারা তাদের পাশ্ববর্তী শত্রু সম্পর্কে নূ্ন্যতম সচেতন হতে পারছে না,
আর সেই সচেতনার অভাবে তার জীবন, সম্পদ এবং সম্ভ্র্রম তিনটাই সে হারাচ্ছে।
আপনি খুব সম্প্রীতির বয়ান দিয়ে মহান সাজছেন, কিন্তু মুসলমান যে আপনার ভুল তথ্য ও আবেগ দেখে প্রতারিত হয়ে সব কিছু হারাচ্ছে, এর মূল্য কে দিবে ??
আর ঐ যে বললেন- আমি দাঙ্গা চাই দেখে আমি এ খরবগুলো ছড়াচ্ছি, এটাও ভুল কথা।
আমি দাঙ্গা চাই না, কিন্তু কেউ দাঙ্গা করতে আসলে যেন অন্তত সচেতন থাকা যায়, সেটা আমি চাই ।
আমি সম্ভাব্য নিপীড়িতকে সচেতন করছি, আর আপনি নিপীড়িতকে বিভ্রান্ত করে নিপীড়ক অবাধে সুযোগ করে দিচ্ছেন।
দুই জনের পার্থক্য এখানেই।
Next Post Previous Post