মহামারী প্রতিরোধে মরক্কোর দেখানো পথে আজকের দুনিয়া

১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দ।
মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় মহামারি দেখা দেয়। দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করতে থাকে। 




মহামারির প্রকোপ যদি আলেকজান্দ্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে ভালোই ছিল। কিন্তু মহামারি আলেকজান্দ্রিয়ায়সীমাবদ্ধ থাকেনি; ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন দেশে। 

আলেকজান্দ্রিয়া থেকে আগত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা ছড়ায় তিউনিসে। অত:পর আলজেরিয়ায়। সবশেষে মরক্কোয়। এরমাঝে কেটে যায় বেশ কটি বছর।


১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ।
মহামারি মরক্কোতেও ছড়িয়ে পড়ে। মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া হতে উদ্ভূত এই মহামারি তিউনিস, আলজেরিয়া হয়ে মরক্কোয় এসে ছড়াতে ছড়াতে ১৫ বছর সময় লাগে। 


বিশেষ করে ফেস, মেকনেস ও রাজধানী রাবাতে মহামারির প্রকোপ ছিল মারাত্মক। অবস্থা এতোটাই শোচনীয় আকার ধারণ করে যে, রোজ কমপক্ষে ১৩০ টা লাশের খাটিয়া বহন করতে হতো!


মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে তিউনিস ও আলজেরিয়ায় মহামারি ছড়ানোর খবর পেতেই মরোক্কোপ্রধান সায়্যিদি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ সচকিত হয়ে উঠেন। 

নিজের দেশ ও দশকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। স্বাস্থ্যসুরক্ষার সমূহ সব ব্যবস্থাগ্রহণ করেন। তার সাথে সঙ্গ দেয় মরোক্কোর জনগণ। 

সবাই মিলে দেশ বাঁচানোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। আল্লাহর কাছে দুআ ও কান্নাকাটি তো আছেই।
১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দ।


তখন আলজেরিয়া এই মহামারিতে আক্রান্ত। সেখানে মৃত্যুর মিছিল। সতর্কতা ও সচেতনতার অংশ হিসেবে মরক্কোর
সায়্যিদি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ মরোক্কোর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে দেন। 


যাতে করে আলজেরিয়া থেকে মহামারির ভাইরাস নিয়ে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে। মরোক্কোর তাঞ্জায় অবস্থিত দূতাবাস সমুদ্রকূলে স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি আলজেরিয়ার সাথে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।


আলেকজান্দ্রিয়ায় উদ্ভূত মহামারি থেকে মরক্কো বাঁচতে পারেনি তা ঠিক; তবে স্বাস্থ্যসুরক্ষার সমূহ সব ব্যবস্থাগ্রহণ করার কারণে অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত তা দূরে ঠেলে রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদি মরক্কো তা না করত, তাহলে তিউনিস ও আলজেরিয়ার মতো তৎক্ষণাৎ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যেত।


পুনশ্চ : করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্ব আজ মরক্কোর দেখানো পথেই হাঁটছে। পুরো বিশ্বই আজ লকডাউনে আছে। আন্তঃযোগাযোগ সব বন্ধ। 

কিন্তু সোনার বাংলাদেশের অবস্থা ভিন্ন। বিদেশ ফেরত যাত্রীরা ভাইরাসের জীবাণু নিয়ে দিব্যি ঘোরাফেরা করছে। 

গতকাল করোনাভাইরাসাক্রান্ত মরণাপন্ন এক বোনের লাইভ ভিডিও দেখে চোখেরজল আটকে রাখতে পারিনি। বোনটির তথ্যমতে জানতে পারলাম, ফেনির কোনো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ইতালি থেকে আগত একটি পরিবার প্রায় ৪০ জন বাঙালির মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। দুইজন নাকি মারাও গেছে। ওই বোনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। জানি না তিনি বেঁচে আছেন কি না!


পুনঃ পুনশ্চ : ১৭৮৩ সালে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় উদ্ভূত মহামারি তিউনিস ও আলজেরিয়া হয়ে ১৭৯৮ সালে মরক্কোতে এসে ছড়াতে সময় নিয়েছিল ১৫ বছর। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে ওই মহামারির জীবাণু বেঁচে ছিল বাতাসের গায়ে ভর করে প্রকৃতির মাঝে। সে হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাইরাস করোনাও এভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার পুরো সম্ভাবনা রয়েছে। কদিন পরই তা কেটে যাবে--এরকম কিছু আশা করে আশ্বস্ত থাকার কোনো মানে নেই। আল্লাহ সবাইকে পানাহ দিন--আমিন।


সূত্র : তারিখুল আওবিআহ ওয়াল মাজাআত বিল মাগরিব, পৃষ্ঠা : ৮৬-৯২, মুহাম্মাদ আল-আমিন আল-বাজ্জাজ।
Next Post Previous Post