র্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট | আমেরিকার প্রস্তুতকৃত মোডারেট মুসলিম নাকি মুনাফিক?
মোডারেট মুসলিম - মুনাফিক মুরতাদ | Bangla bookst
আসুন আসিফ ভাই এর লেখা থেকে জেনে নেই র্যান্ড এর কুট কৌশল। তাদের মতে জঙ্গি কারা।
র্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট– ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন সময় কথাবার্তা ওঠে। পক্ষেবিপক্ষে অনেক তর্ক হয়। তবে আফসোসের ব্যাপারে হল অনেকেই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভাসাভাসা ধারণা নিয়ে কিংবা একেবারে না জেনে কথা বলেন। যার ফলে নিতান্ত আবেগপ্রসূত, ডিফেন্সিভ, কিংবা প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ কথাবার্তা দেখা যায়। আমি ঠিক করেছি, ইন শা আল্লাহ্ এই বিষয়টা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু ম্যাটেরিয়াল তুলে ধরবো। যাতে করে যারা এ ব্যাপারগুলো নিয়ে জানতে আগ্রহী তারা জানার সুযোগ পান। তারপর নিরেট তথ্য আর কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনার ভিত্তিতে যে যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
.
লেখাগুলো কিছুটা এলেমেলো হবে। আমি খুঁতখুঁতে মানুষ, মনমতো গুছিয়ে লিখতে গেলে দেখা যাবে কাজটা হয়তো আর করাই হয়ে উঠবে না। আশা করি লেখার এলেমেলোভাবে পাঠক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই টপিকের লেখাগুলো #র্যান্ড_ইসলাম, এবং #মডারেট_ইসলাম হ্যাশট্যাগের আন্ডারে পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ্।
.
তাহলে শুরু করা যাক। আমরা শুরুটা একটু পেছন থেকে করি। ইসলাম এবং মুসলিমদের চিন্তা বদলানো পশ্চিমা প্রজেক্ট কতো আগে থেকে চলছে তা একটু দেখে নেয়া যাক।
.
.
ব্রিটিশরা মিশরে ঢুকেছিল তৎকালীন শাসক ইসমাইল পাশাকে তার আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে সাহায্য করার অজুহাতে। কিন্তু খুব দ্রুত এই ‘সাহায্য’ পরিণত হয়েছিল ঔপনিবেশিক দখলদারিত্বে। মিশরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সাথেসাথে ব্রিটিশরা এক সুদূরপ্রসারী ‘সংস্কার’ প্রক্রিয়া হাতে নেয়, যার প্রভাব আমরা আজও অনুভব করছি। সহজ ভাষায়, মিশরীয় সমাজ, শিক্ষা, চিন্তা এবং প্রশাসনকে নিজেদের আদলে গড়ে তোলার এক বিস্তৃত প্রজেক্ট চালু করে ব্রিটিশরা - মিশরকে ‘আধুনিক’ বানানোর প্রজেক্ট। ১৮৭৭-১৯০৭ পর্যন্ত মিশরের ব্রিটিশ দখলদারিত্বের নেতৃত্বে ছিল এভারলিন বেরিং ওরফে ‘লর্ড ক্রোমার’। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত ‘মডার্ন ইজিপ্ট’ বইতে মিশরের পশ্চিমাকরণের এ প্রক্রিয়া নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে ক্রোমার।
.
‘লর্ড’ ক্রোমার তার বইতে কী বলেছিল দেখা যাক। র্যান্ড প্রজেক্টের আলোচনায় কথাগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ তা সম্ভবত পাঠক নিজেই ধরতে পারবেন।
.
১. পশ্চিমারা কখনো ইসলামী শাসন ও সরকার মেনে নেবে না।
ক্রোমারের ভাষায় – ‘কেবল মোহাম্মাদান নীতিমালা আর প্রাচ্যীয় ধ্যানধারণার ভিত্তিতে গড়া সরকারকে ইউরোপ মেনে এমন ধারণা করাই হাস্যকর। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এর সাথে জড়িয়ে আছে, (তাই এমন কিছু মেনে নেয়া সম্ভব না)’
.
২. মুসলিমদের অবশ্যই পশ্চিমা ধ্যানধারণা ও মূল্যবোধ গ্রহণ করতে হবে।
.
২. মুসলিমদের অবশ্যই পশ্চিমা ধ্যানধারণা ও মূল্যবোধ গ্রহণ করতে হবে।
ক্রোমারের ভাষায় – ‘...নতুন প্রজন্মের মিশরীয়দেরকে বুঝিয়েসুঝিয়ে কিংবা প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে পশ্চিমা সভ্যতার মূল স্পিরিট ধারণ করাতে হবে।’
.
৩. মুসলিম সমাজে পশ্চিমাকরণ করতে হবে। আর এই প্রক্রিয়া শুরু করার অন্যতম মূল হাতিয়ার হল ‘নারী অধিকার’।
.
৩. মুসলিম সমাজে পশ্চিমাকরণ করতে হবে। আর এই প্রক্রিয়া শুরু করার অন্যতম মূল হাতিয়ার হল ‘নারী অধিকার’।
ক্রোমারের মতে - মুসলিম দেশগুলোতে ‘নারীর সামাজিক অবস্থান’ হল ইউরোপীয় ধ্যনধারণা আমদানির ক্ষেত্রে ‘মারাত্মক প্রতিবন্ধক’ হিসেবে কাজ করে।
.
৪. এক দল তরুণ সেক্যুলার মুসলিম তৈরি করতে হবে, যাদের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে
.
৪. এক দল তরুণ সেক্যুলার মুসলিম তৈরি করতে হবে, যাদের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে
ক্রোমারের ভাষায় – ‘বাস্তবতা হল ইউরোপীয় শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবার পর একজন তরুণ মিশরীয় মুসলিমের ‘ইসলামিসম’ হারিয়ে যায়’।
.
৫. পশ্চিমকে অবশ্যই ইসলামের সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারের ফলে যে ‘ইসলাম’ পাওয়া যায় তা আর ইসলাম থাকে না। নামে ইসলাম, বাস্তবে অন্য কিছু।
.
৫. পশ্চিমকে অবশ্যই ইসলামের সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারের ফলে যে ‘ইসলাম’ পাওয়া যায় তা আর ইসলাম থাকে না। নামে ইসলাম, বাস্তবে অন্য কিছু।
ক্রোমারের ভাষায় – ‘...এটা কখনও ভোলা যাবে না যে, ইসলামের সংস্কার সম্ভব না। অর্থাৎ সংস্কাকৃত ইসলাম সত্যিকার অর্থে আর ইসলাম থাকে না। অন্য কিছুতে পরিণত হয়’।
.
৬. সংস্কার, আধুনিকায়ন কিংবা পশ্চিমাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা তৈরি হয় তারা ‘ডি-মুসলিমাইযড’। তারা না মুসলিম হতে পারে, আর না পুরোপুরি ইউরোপিয়ান হিসেবে গণ্য হয়।
.
৬. সংস্কার, আধুনিকায়ন কিংবা পশ্চিমাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা তৈরি হয় তারা ‘ডি-মুসলিমাইযড’। তারা না মুসলিম হতে পারে, আর না পুরোপুরি ইউরোপিয়ান হিসেবে গণ্য হয়।
ক্রোমারের ভাষায় – ‘বর্তমানে মিশরীয় সমাজ নিরন্তর পরিবর্তনের যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে তার ফলে এমন এক দল মানুষ তৈরি হয়েছে যারা একই সাথে ডি-মুসলিমাইড মুসলিম এবং মেরুদন্ডহীন ইউরোপিয়ান’।
.
৭. ইসলামের ব্যাপারে মুসলিমদের চিন্তাকে প্রভাবিত করার ঐসব ব্যক্তিদের প্রমোট করতে হবে যারা ‘সংস্কারপন্থী’, যারা ‘আধুনিকায়ন’ চায়। মুসলিম বিশ্বে মডার্নিস্ট আন্দোলনের জনক মুহাম্মাদ আবদুহ ছিল ক্রোমারের পছন্দের ব্যক্তি। মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি পদে আব্দুহকে বসানো এবং টিকিয়ে রাখার পেছনে ক্রোমার এবং ব্রিটিশদের অবদান ছিল।
.
ক্রোমারের ভাষায় – ‘ওরা (আব্দুহ-র মতো লোকেরা) ইউরোপীয় সংস্কারকদের সহজাত মিত্র...’
.
৭. ইসলামের ব্যাপারে মুসলিমদের চিন্তাকে প্রভাবিত করার ঐসব ব্যক্তিদের প্রমোট করতে হবে যারা ‘সংস্কারপন্থী’, যারা ‘আধুনিকায়ন’ চায়। মুসলিম বিশ্বে মডার্নিস্ট আন্দোলনের জনক মুহাম্মাদ আবদুহ ছিল ক্রোমারের পছন্দের ব্যক্তি। মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি পদে আব্দুহকে বসানো এবং টিকিয়ে রাখার পেছনে ক্রোমার এবং ব্রিটিশদের অবদান ছিল।
.
ক্রোমারের ভাষায় – ‘ওরা (আব্দুহ-র মতো লোকেরা) ইউরোপীয় সংস্কারকদের সহজাত মিত্র...’
‘বহু বছর ধরে আমি (আব্দুহকে) আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সকলভাবে উৎসাহ দিয়েছি। তবে কাজটা সহজ ছিল না। একদিকে রক্ষণশীল মুসলিমদের দিক থেকে তার প্রতি ব্যাপক বিরোধিতা ছিল। অন্যদিকে, দুঃখজনকভাবে খেদিভের (শাসক) সাথে তার সম্পর্ক খুবই খারাপ ছিল। কেবল মাত্র শক্তিশালী ব্রিটিশ সমর্থনের কারণে আব্দুহ গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে তার অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল’।
.
দেখতেই পাচ্ছেন আজ থেকে ১০০ বছর আগে ‘আধুনিকায়ন’ প্রজেক্টের ব্যাপারে বলা কথাগুলো আজকের ‘র্যান্ড ইসলাম’ প্রজেক্টের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায়। আজকের ‘সিভিল ডেমোক্রেটিক মডারেট ইসলাম’ তৈরি প্রজেক্টে যেন সেই ‘ঔপনিবেশিক সংস্কার’ প্রজেক্টের উত্তরসূরী।
.
যেকোন জনগোষ্ঠীকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাদের মধ্য থেকে ঐ আদর্শ মুছে দিতে হয় যা তাদেরকে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবে উদ্ভূত করবে। পশ্চিমারা তাদের দীর্ঘ ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার আলোকে এটা জানতো। আর মুসলিমদের জন্য এই আদর্শ হল ইসলাম। ইসলামী শরীয়াহ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা গড়ার আকাঙ্ক্ষা। ক্রোমারের ভাষায় ‘ইসলামিসম’। এই আদর্শকে নষ্ট করার উপায় হল ভেতর থেকে একে কলুষিত করা। কাজটা সহজ না। এর বিভিন্ন দিক আছে। পশ্চিমারা এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে সাজাতে পারে যাতে করে এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্য থেকে ‘ডি-মুসলিমাইযড’, মেরুদন্ডহীন, বাদামি চামড়ার সাহেব তৈরি হয়। এটা তারা করেছে। মধ্য প্রাচ্যে করেছে, উপমহাদেশেও করেছে।
.
কিন্তু এটুকু যথেষ্ট না। ইসলামের আদর্শকে নষ্ট করতে হলে যারা ইসলামী জ্ঞান এবং চিন্তাকে কলুষিত করতে হবে। পশ্চিমারা এটা সরাসরি করতে পারবে না। এটা এমন কিছু মানুষ করতে হবে যারা নামে মুসলিম, হয়তো বিশ্বাসেও মুসলিম, কিন্তু পশ্চিমা দর্শন ও সভ্যতা দ্বারা এতোটাই প্রভাবিত যে তারা পশ্চিমের আদলে ইসলামকে বদলে নিতে চায়। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তারা ঐ ‘ইসলাম’টাই প্রচার করে যেটা পশ্চিমারা চায়। এরা হল সেই সংস্কারবাদী, মডার্নিস্ট কিংবা হাল আমলের ‘মডারেট’। আগ্রাসী পশ্চিমের ইসলাম সংস্কার প্রজেক্টের সহজাত মিত্র। পশ্চিমারা খুশিমনে এই সংস্কারবাদী কিংবা মডারেট ইসলাম প্রচারকদের সাহায্য করে। সমর্থন দিয়ে যায়। যেমন মুহাম্মাদ আব্দুহকে ক্রোমার সাহায্য করেছিল। গ্র্যান্ড মুফতির আসনে বসিয়েছিল।
.
এখানে আরো একটা প্রশ্ন এসে যায়, মুহাম্মাদ আব্দুহরা কি পশ্চিমের টাকা খায়?
.
উত্তর হল, টাকা খাওয়া না খাওয়ার বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিটা টাকা খাওয়া নিয়ে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল তারা পশ্চিমের এজেন্ডা অনুযায়ী ইসলামকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে। আর এই অভিযোগ যে সত্য, সেটা সাক্ষ্য খোদ পশ্চিমারাই দেয়। কখনো এই সাক্ষ্য ক্রোমারের বইয়ের মাধ্যমে আসে, কখনো র্যান্ডের রিপোর্টের মাধ্যমে আসে, কখনো হয়তো আসে উইকিলিক্সের মাধ্যমে। কাজেই তারা টাকা না খাওয়া না খাওয়াতে কিছু যায় আসে না। তারা যদি টাকা খাওয়ার পরও প্রকৃত ইসলাম প্রচার করে তাহলে আর অভিযোগের কিছু নেই। আর টাকা না খেয়েও যদি ‘পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া ইসলাম’ প্রচার করে তাহলে টাকা না খেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন পরিবর্তন হয় না। কাজেই এই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক, এবং যারা এই প্রশ্নে আটকে যান তারা হয়তো মূল আলোচনায় বিষয়বস্তুই এখনো ধরতে পারেননি।
.
ইসলামকে পরিবর্তন করার জন্য পশ্চিমারা যে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এটা ঐতিহাসিক সত্য। এটা কোন কন্সপিরেসি থিওরি না। বিদ্বেষপ্রসূত বানোয়াট অভিযোগ না। একথা পশ্চিমারা খোলাখুলি স্বীকার করেছে। আজও করছে। ‘লর্ড ক্রোমার’ পরিকল্পনার ফসল হিসেবে যুলমাই খালিলযাদের মতো লোকেরা জন্ম নিয়েছে, যারা ক্রোমারদের কাজ করে যাচ্ছে। ‘সংস্কার’, ‘আধুনিকায়ন’ আর ‘পশ্চিমাকরণ’ এর জায়গায় এসেছে ‘মডারেট ইসলাম’, ‘ইসলামী জ্ঞান নিয়ে পুনঃভাবনা’ কিংবা ‘ইসলামকে বোঝার জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামো পরিবর্তন’ এর কথা। কিন্তু মৌলিকভাবে এজেন্ডা সেই একই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা, মুসলিমরা – এই ব্যাপারে জানতে আগ্রহী না। আমরা নিজে থেকে এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা তো করি না-ই, যখন কেউ এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে তখন আমরা ব্যক্তিমুগ্ধতা কিংবা দলবাজীর ওপরে উঠে কথাগুলো বিশ্লেষণও করি না।
.
দেখতেই পাচ্ছেন আজ থেকে ১০০ বছর আগে ‘আধুনিকায়ন’ প্রজেক্টের ব্যাপারে বলা কথাগুলো আজকের ‘র্যান্ড ইসলাম’ প্রজেক্টের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায়। আজকের ‘সিভিল ডেমোক্রেটিক মডারেট ইসলাম’ তৈরি প্রজেক্টে যেন সেই ‘ঔপনিবেশিক সংস্কার’ প্রজেক্টের উত্তরসূরী।
.
যেকোন জনগোষ্ঠীকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাদের মধ্য থেকে ঐ আদর্শ মুছে দিতে হয় যা তাদেরকে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবে উদ্ভূত করবে। পশ্চিমারা তাদের দীর্ঘ ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার আলোকে এটা জানতো। আর মুসলিমদের জন্য এই আদর্শ হল ইসলাম। ইসলামী শরীয়াহ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা গড়ার আকাঙ্ক্ষা। ক্রোমারের ভাষায় ‘ইসলামিসম’। এই আদর্শকে নষ্ট করার উপায় হল ভেতর থেকে একে কলুষিত করা। কাজটা সহজ না। এর বিভিন্ন দিক আছে। পশ্চিমারা এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে সাজাতে পারে যাতে করে এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্য থেকে ‘ডি-মুসলিমাইযড’, মেরুদন্ডহীন, বাদামি চামড়ার সাহেব তৈরি হয়। এটা তারা করেছে। মধ্য প্রাচ্যে করেছে, উপমহাদেশেও করেছে।
.
কিন্তু এটুকু যথেষ্ট না। ইসলামের আদর্শকে নষ্ট করতে হলে যারা ইসলামী জ্ঞান এবং চিন্তাকে কলুষিত করতে হবে। পশ্চিমারা এটা সরাসরি করতে পারবে না। এটা এমন কিছু মানুষ করতে হবে যারা নামে মুসলিম, হয়তো বিশ্বাসেও মুসলিম, কিন্তু পশ্চিমা দর্শন ও সভ্যতা দ্বারা এতোটাই প্রভাবিত যে তারা পশ্চিমের আদলে ইসলামকে বদলে নিতে চায়। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তারা ঐ ‘ইসলাম’টাই প্রচার করে যেটা পশ্চিমারা চায়। এরা হল সেই সংস্কারবাদী, মডার্নিস্ট কিংবা হাল আমলের ‘মডারেট’। আগ্রাসী পশ্চিমের ইসলাম সংস্কার প্রজেক্টের সহজাত মিত্র। পশ্চিমারা খুশিমনে এই সংস্কারবাদী কিংবা মডারেট ইসলাম প্রচারকদের সাহায্য করে। সমর্থন দিয়ে যায়। যেমন মুহাম্মাদ আব্দুহকে ক্রোমার সাহায্য করেছিল। গ্র্যান্ড মুফতির আসনে বসিয়েছিল।
.
এখানে আরো একটা প্রশ্ন এসে যায়, মুহাম্মাদ আব্দুহরা কি পশ্চিমের টাকা খায়?
.
উত্তর হল, টাকা খাওয়া না খাওয়ার বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিটা টাকা খাওয়া নিয়ে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল তারা পশ্চিমের এজেন্ডা অনুযায়ী ইসলামকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে। আর এই অভিযোগ যে সত্য, সেটা সাক্ষ্য খোদ পশ্চিমারাই দেয়। কখনো এই সাক্ষ্য ক্রোমারের বইয়ের মাধ্যমে আসে, কখনো র্যান্ডের রিপোর্টের মাধ্যমে আসে, কখনো হয়তো আসে উইকিলিক্সের মাধ্যমে। কাজেই তারা টাকা না খাওয়া না খাওয়াতে কিছু যায় আসে না। তারা যদি টাকা খাওয়ার পরও প্রকৃত ইসলাম প্রচার করে তাহলে আর অভিযোগের কিছু নেই। আর টাকা না খেয়েও যদি ‘পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া ইসলাম’ প্রচার করে তাহলে টাকা না খেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন পরিবর্তন হয় না। কাজেই এই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক, এবং যারা এই প্রশ্নে আটকে যান তারা হয়তো মূল আলোচনায় বিষয়বস্তুই এখনো ধরতে পারেননি।
.
ইসলামকে পরিবর্তন করার জন্য পশ্চিমারা যে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এটা ঐতিহাসিক সত্য। এটা কোন কন্সপিরেসি থিওরি না। বিদ্বেষপ্রসূত বানোয়াট অভিযোগ না। একথা পশ্চিমারা খোলাখুলি স্বীকার করেছে। আজও করছে। ‘লর্ড ক্রোমার’ পরিকল্পনার ফসল হিসেবে যুলমাই খালিলযাদের মতো লোকেরা জন্ম নিয়েছে, যারা ক্রোমারদের কাজ করে যাচ্ছে। ‘সংস্কার’, ‘আধুনিকায়ন’ আর ‘পশ্চিমাকরণ’ এর জায়গায় এসেছে ‘মডারেট ইসলাম’, ‘ইসলামী জ্ঞান নিয়ে পুনঃভাবনা’ কিংবা ‘ইসলামকে বোঝার জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামো পরিবর্তন’ এর কথা। কিন্তু মৌলিকভাবে এজেন্ডা সেই একই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা, মুসলিমরা – এই ব্যাপারে জানতে আগ্রহী না। আমরা নিজে থেকে এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা তো করি না-ই, যখন কেউ এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে তখন আমরা ব্যক্তিমুগ্ধতা কিংবা দলবাজীর ওপরে উঠে কথাগুলো বিশ্লেষণও করি না।
ক্রোমারের বইয়ের লিংক - https://tinyurl.com/y7fgr3q2
২০০৩ সালে অ্যামেরিকান গ্লোবাল পলিসি থিংকট্যাঙ্ক RAND Corporation একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ রিপোর্টের বিষয় হল - কীভাবে এবং কাদের সহায়তায় অ্যামেরিকার বৈশ্বিক পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক নতুন “ইসলাম” বানানো যায়। Civil Democratic Islam: Partners, Resources & Strategies নামের এই রিপোর্টে অ্যামেরিকাবান্ধব নতুন এই ‘ইসলামের’ নাম দেয়া হয় ‘মডারেট ইসলাম’ বা Civil Democratic Islam। ২০০৭ সালে “Building Moderate Muslim Networks নামে র্যান্ড একটি বিস্তারিত ফলোআপ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় Promoting Online Voices for Countering Violent Extremism শিরোনামে তৃতীয় একটি প্রতিবেদন। আজ আমরা ‘মডারেট ইসলাম’ নিয়ে র্যান্ডের প্রথম প্রতিবেদনের দিকে তাকাবো। এই প্রতিবেদনে মোটাদাগে নিচের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।
.
ক) কেন অ্যামেরিকাবান্ধব এই নতুন ‘ইসলাম’-এর প্রবর্তন ও প্রচার করা উচিৎ
খ) মুসলিমদের শ্রেণীবিভাগ
গ) অ্যামেরিকা কী ধরণের ইসলাম ও মুসলিম তৈরি করতে চায়। একজন মডারেট মুসলিমের বৈশিষ্ট্য কী কী হবে?
ঘ) কীভাবে মুসলিমদের মধ্যে এই ‘মডারেট ইসলাম’ –এর প্রচার ও প্রচলন করা হবে।
.
অ্যামেরিকা বান্ধব মডারেট ইসলাম তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে র্যান্ডের বক্তখুব স্পষ্ট। অ্যামেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব এমন এক ‘ইসলাম’ চায় যা ‘গণতন্ত্র এবং আধুনিকতাকে গ্রহণ করে নেবে’। তারা এমন এক মুসলিম বিশ্ব চায় যা ‘গণতান্ত্রিক, সামাজিকভাবে প্রগতিশীল, স্থিতিশীল, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিয়ম মেনে চলে’। সেই সাথে অ্যামেরিকা সরাসরি ইসলামের সাথে ‘সভ্যতার সংঘাতে’ জড়াতে চায় না।
.
এটা পশ্চিমা ডাবলস্পিক। এমন কথা যা শব্দের মারপ্যাঁচে মূল বাস্তবতা আড়াল করে। তাই র্যান্ডের মূল কথাটা সহজ বাংলায় বলি। ওরা এমন ‘ইসলাম’ চায় যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থাকে মেনে নেবে। যে ‘ইসলাম’ ইস্রাইল রাষ্ট্র, উপসাগরীয় যুদ্ধের গণহত্যা, মুসলিম বিশ্বের স্বৈরাচারী তাগুত শাসকের পেছনে পশ্চিমা সমর্থন, মুসলিম ভূখন্ডগুলোতে চালানো পশ্চিমা নব্য-ঔপনিবেশিক লুটপাট মেনে নেবে বিনা বাক্য ব্যয়ে। যা পশ্চিমা সাংস্কৃতিক ও চিন্তার আগ্রাসনের সামনে নতি স্বীকার করে লিবারেল-সেক্যুলারিসমের সাথে খাপ খাইয়ে ইসলামকে নতুন করে ব্যাখ্যা করবে। এমন এক ‘ইসলাম’ যা পশ্চিমা বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে কোন সংঘাত জরুরী মনে করে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট – এমন ‘ইসলাম’ যা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী শাসনের কথা বলে না। সহজ ভাষায় এই হল ‘মডারেট ইসলাম’ তৈরির কারণ।
.
কিন্তু ‘মডারেট ইসলাম’ তৈরির কাজটা কীভাবে হবে? কে করবে? কাজটা সহজ না। র্যান্ড বেইসিকালি মৌলিকভাবে ইসলাম ধর্মকে বদলে দেয়ার কথা বলছে। প্রতিবেদনের লেখিকার ভাষায় – ‘রাষ্ট্রগঠন যদি দুরূহ হয়ে থাকে তাহলে ধর্ম-গঠন আরো অনেক বেশি বিপদজনক এবং জটিল’।
.
‘বিপদজনক এবং জটিল’, কিন্তু র্যান্ডের মতে অসম্ভব না। তবে কাজটা করতে হলে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন আদর্শিক ও ধর্মীয় ধারাগুলোর মধ্য থেকে কিছু কিছু ধারাকে বেছে নিয়ে তাদের সাথে কাজ করতে হবে। তাদেরকে সমর্থন দিতে হবে। এই সমর্থন আর্থিক হতে পারে, কূটনৈতিক হতে পারে, কিংবা হতে পারে মিডিয়ার দিক থেকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু ধারার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হতে যাতে তারা পশ্চিমে দেখানো ছকের মধ্যে চলে আসে। পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া বাক্সের বাইরে না যায়। কোন কোন ধারাকে বাছাই করা হবে, কাদের সাথে মিলে কাজ করা হবে, তা ঠিক করতে হবে খুব সতর্কতার সাথে। র্যান্ডের প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য এই জটিল কাজটার ব্যাপারে অ্যামেরিকান সরকারকে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া।
.
সহজ ভাষায় বললে – আদি ও অকৃত্রিম ইসলাম অ্যামেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদের জন্য সমস্যা মুসলিমদের মধ্যে না, সমস্যা ইসলামেই। এটা অ্যামেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। তাই ইসলামকে বদলে দিতে হবে। এমন এক ‘ইসলাম’ তৈরি ও প্রচার করতে হবে যা নিরীহ। যা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ, আগ্রাসন আর লুটপাটের জন্য হুমকি না। যা লিবারেল-সেক্যলারিসমের জঘন্য কুফরকে মেনে নিতে রাজি। তবে এই কাজটা অ্যামেরিকা বা ইউরোপ সরাসরি করতে পারবে না। এটা করাতে হবে মুসলিমদের সামনে রেখে। এমন কিছু ‘মুসলিম’-কে বাছাই করতে হবে যারা ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে পশ্চিমা এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করবে। কোলাবোরেটর – দালাল – পশ্চিমা ‘রাজাকার’। আর যারা দালালী করবে না, তাদেরকে নানানভাবে চাপ দিয়ে করে কিংবা সুবিধা দিয়ে তুলনামূলক ‘পশ্চিমবান্ধব’ একটা ইসলাম প্রচার করাতে হবে।
.
র্যান্ডের ভাষ্যমতে ‘মডারেট ইসলাম’ এর বিপরীত হল র্যাডিকাল ফান্ডামেন্টালিসম (উগ্র মৌলবাদী ইসলাম)। উগ্র মৌলবাদী ইসলাম বলতে র্যান্ড আসলে কী বোঝায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরী। কারণ র্যান্ডের পুরো আলোচনার কাঠামো গড়ে উঠেছে উগ্র মৌলবাদের এই সংজ্ঞার ওপর। এই সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে র্যান্ড ‘মডারেট’ বা ‘মধ্যপন্থীর’ সংজ্ঞা দাড় করিয়েছে। উগ্রবাদী হিসেবে প্রতিবেদনের বিভিন্ন জায়গায় যেসব মুভমেন্টের নাম এসেছে তাদের মধ্যে আছে – হিযবে ইসলামী (আফগানিস্তান/গুলাবুদ্দিন হেকমতিয়ার), তালিবান, আল-[কা]য়েদা, হামাস, ইসলামিক স্যালভেইশান ফ্রন্ট, হিয[বু]ত তা[হ]রীর, ইরানীয়ান রেভ্যুলুশানারী গার্ডস, ইত্যাদি। এ থেকে মনে হতে পারে যে উগ্র মৌলবাদ বলতে তারা হয়তো বিভিন্ন ইসলামী মুভমেন্টকে বোঝাচ্ছে। কিন্তু তারা আসলে কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি (যেমন সশস্ত্র পদ্ধতি) বা কর্মকান্ডকে উগ্রবাদ বলছে না। তাদের দেয়া উগ্রবাদের সংজ্ঞা আর ব্যাপক। আরো বিস্তৃত।
.
র্যান্ডের এই পুরো প্রতিবেদন পড়লে পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, উগ্রবাদ হল এমন সবকিছু যা আধুনিক গণতন্ত্র, লিবারেল সেক্যুলার মূল্যবোধ, এবং অ্যামেরিকার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। যারা উম্মাহর কথা বলে, এথনিসিটি (বর্ণ পরিচয়) কিংবা পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া জাতিরাষ্ট্রের সীমানার ভিত্তিতে চিন্তা করে না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে থাকবে সে উগ্র মৌলবাদী মুসলিম। সে সশস্ত্র নাকি নিরস্ত্র, তা গুরুত্বপূর্ণ না ( যেমন হি[য]বুত তা[হ]রীর সশস্ত্র দল না)। সে নির্বাচনে কখনো অংশগ্রহণ করেছে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ না (যেমন আলজেরিয়ার FIS নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল)। সে যদি সশস্ত্র হয় তাহলে তার অস্ত্র হাতে নেয় জাস্টিফাইড কি না, আত্মরক্ষার জন্য নেয়া কি না, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নেয়া কি না, আগ্রাসী শত্রুর মোকাবেলায় নেয়া কি না - তাও গুরুত্বপূর্ণ না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকাই যথেষ্টা। আর র্যান্ডের মতে, ইসলামী উগ্র মৌলবাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের অবস্থান থেকে চিন্তা করা। ইসলামী শাসন চাওয়া এবং এর জন্য কোন না কোন ভাবে কাজ করে। সেটা হাত দিয়ে হোক, মুখ দিয়ে হোক বা কলম দিয়ে হোক।
.
কিছু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা সহজে বোঝা যাবে।
.
প্রতিবেদনে আলজেরিয়ার ইসলামিক স্যালভেইশান ফ্রন্ট (FIS) এর মুখপাত্রক আলি বেনহাজকে উগ্র ইসলামী মৌলবাদী আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘ইসলামী মৌলবাদ গণতন্ত্র এবং আধুনিক (মানে পশ্চিমা) সমাজের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধগুলোর প্রতি মৌলিক এবং পূর্ণাংগ প্রত্যাখ্যানের প্রতিনিধিত্ব করে’। তাই বেনহাজ একজন মৌলবাদী, কারণ তিনি বলেছিলেন ‘...গণতন্ত্রের ঘাড় ভেঙ্গে দিতে হবে’। যদিও বেনহাজ এবং তার দল, ইসলামিক স্যালভেইশান ফ্রন্ট ১৯৯০ এ আলজেরিয়ার গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। শুধু তাই না ৯০ এর ৯১ এর নির্বাচনে স্যালভেইশান ফ্রন্ট জিতেছিল। কিন্তু আলজেরিয়ার সামরিক জান্তা - সেক্যুলার এবং অ্যামেরিকার মিত্র – সেই নির্বাচনের ফলাফল মানেনি। হত্যা দমন, পীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে আলজেরিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু র্যান্ডের জন্য গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলা উগ্রবাদী হিসেবে গণ্য হবার জন্য যথেষ্ট।
.
একইভাবে উগ্র মৌলবাদের উদাহরণ হিসেবে শায়খ আব্দুর রাহিম গ্রীন এর নিচের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে -
‘ইসলাম প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষে পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা অন্য কারো বিরোধিতা করে না। আত্মাভিমানে আঘাত লাগার কারণে কিংবা সম্পদ বা জমি দখলের জন্য ইসলাম যুদ্ধ করে না। যুদ্ধের উদ্দেশ্য একটাই - দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। জি[হা]দের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথম পর্যায় হল সঠিক বিশ্বাস ও আকিদাহ অর্জন করা, নিজের ভেতরের সব সন্দেহ ও সংশয় দূর করা...দ্বিতীয় পর্যায়, শত্রুর হাত থেকে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে মুক্ত করা। আর সর্বশেষ পর্যায় হল, কাফিরদের ভূমিতে আল্লাহ্র বিধান প্রতিষ্টার পথ উন্মোচনের জন্য যুদ্ধ করা’।
.
বলাবাহুল্য এই বক্তব্য মোটাদাগে ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম অবস্থান। ইসলামের শুরু থেকে প্রথম তেরশো বছর এটি ছিল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত অবস্থান। কিন্তু র্যান্ডের অবস্থানটা এখানে খেয়াল করুন। যারা ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত অবস্থানের কথা বলছে, র্যান্ডের মতে তারা উগ্র মৌলবাদী। এই অবস্থান ইসলামি শরীয়াহ, কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফুস সালিহিনের অবস্থানের আলোকে সঠিক কি না, সেটা এখান বিবেচ্য বিষয় না। উগ্রতা আর সহনশীলতার মাপকাঠি হল পশ্চিমা এজেন্ডার সাথে সামঞ্জস্যতা, আর কিচ্ছু না।
.
তৃতীয় উদাহরণ। ইসলাম অনলাইন সাইটে প্রকাশিত একটি লেখাকে উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসলামঅনলাইন এর এই লেখায় বলা হয়েছে –
‘কুরআন এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কথা প্রচার করা (অর্থাৎ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দোহাই দিয়ে কুরআনের আয়াত ও বিধান পুনঃব্যাখ্যা করার কথা বলা) লোকেদের অধিকাংশই পুরোপুরিভাবে পশ্চিমের দার্শনিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারণাগুলো আত্মস্থ করেছে। আজকের যুগে সরাসরি সংঘাত আর সামরিক অভিযান হল সংস্কৃতি ও বাজার নিয়ন্ত্রনের সেকেন্ডারি (গৌন) উপাদান। পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার হল মানুষের অভ্যাস এবং লাইফস্টাইল। (এগুলো পরিবর্তনের) মাধ্যমে মুক্ত চিন্তার স্বাধীন ভোক্তাদের নিয়ে গড়ে ওঠা মুক্ত বাজার নিশ্চিত করা যায়।’ [লেখক, আহমেদ কামাল সুলতান]
.
পশ্চিমা চিন্তার আগ্রাসন, অর্থনৈতিক আগ্রাসন এবং নব্য সাম্রাজ্যবাদের এমন তাত্ত্বিক সমালোচনাও র্যান্ডের চোখে প্রবলেম্যাটিক এবং উগ্রবাদের দুর্গন্ধযুক্ত। লেখক এখানে আধুনিক সময়, আপেক্ষিকতা আর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দোহাই দিয়ে ইসলামের পুনঃব্যাখ্যা করার প্রবণতার বিরুদ্ধে বলেছেন, তাই র্যান্ডের মতে তার এই অবস্থান উগ্র। উল্লেখ্য, ইসলামঅনলাইন ইউসুফ আল-ক্বারদ্বাউয়ির অধীনে পরিচালিত সাইট। এবং র্যান্ডের মতে ক্বারদ্বাউয়ি মৌলবাদী না, বরং রিফর্মিস্ট বা সংস্কারপন্থী ট্র্যাডিশানালিস্ট। কিন্তু তবু ওপরের এই কথাগুলো র্যান্ডের কাছে উগ্র মৌলবাদী বক্তব্য।
.
উগ্রবাদী চিন্তার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে এই প্রতিবেদনে ইসলামিক সেন্টার অফ ওয়াশিংটনের সাবেক ইমাম মুহাম্মাদ আল-আসির লেখা একটি গবেষণাপত্রের কথা বলা হয়েছে। আল-আসি এখানে বলেছেন -
‘রাজনীতির পশ্চিমা সংজ্ঞা কলঙ্কিত এবং কলুষিত। আর রাজনীতির ইসলামী সংজ্ঞা পরিষ্কার এবং সুস্থ। (মুসলিমদের উচিৎ) কুফরি ব্যবস্থার পতন ঘটানো, এবং কথিত ‘আধুনিক ও উন্নত বিশ্ব’এর অংশ হওয়া থেকে বিরত থাকা। (কারণ ‘আধুনিক’ আর ‘উন্নত’ বিশ্বে) পুঁজিবাদ আর মুক্তবাজার অর্থনীতির মতো গালভরা নাম দিয়ে অর্থনৈতিক শোষনকে জায়েজ করা হয়।’
.
এর কাছাকাছি বক্তব্য অনেক কমিউনিস্টের আছে। এর চেয়ে আরো অনেক বেশি ‘গরম’ কথাবার্তা অনেক মার্ক্সিস্ট অ্যাকাডেমিক অনেক সময় বলেছে। আজো বলে। তাদের কথা উগ্রবাদ না। কিন্তু মুহাম্মাদ আল-আসির কথা উগ্রবাদী। এই বক্তব্য কেন উগ্রবাদী? কারণ এর মাধ্যমে পশ্চিমা রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। আর র্যান্ডের মতে এগুলো উগ্র মৌলবাদী ইসলামের সুস্পষ্ট নিদর্শন।
.
.
এরকম আরো উদাহরণ দেয়া সম্ভব। কিন্তু আশা করি মূল পয়েন্টটা পাঠক বুঝতে পেরেছেন। উগ্র মৌলবাদ বলতে র্যান্ড আসলে আদি ও অকৃত্রিম ইসলামকে বোঝাচ্ছে। যারা মনে করে ইসলাম শুধু কিছু বিশ্বাস, ইবাদত আর আচার-অনুষ্ঠানের নাম না, বরং ইসলাম হল একটি পলিটিকো-সোশিও-একোনমিক সিস্টেম। একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, একটি শাসন ব্যবস্থা’ – তারাই মৌলবাদী। যারা মনে করে যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আল্লাহ্র যমিনে আল্লাহ্র আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, তারা মৌলবাদী। যারা এনলাইটেনমেন্টের মূল্যবোধগুলোকে সর্বজনীন মনে করে না, যারা লিবারেলিসম এবং সেক্যুলার হিউম্যানিসমকে ইসলামের সাংঘর্ষিক মনে করে এবং এই দর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তারা মৌলবাদী। যারা অ্যামেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী ব্যবস্থা আনতে চায় তারা উগ্রবাদী। যারা লিবারেল ক্রুসেইডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাঁরা উগ্রবাদী। আর যারা এর উল্টোটা তারা হল মডারেট। অ্যামেরিকা আর পশ্চিমের গৃহপালিত ‘মুসলিম’। ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের এজেন্ট, দালাল, পশ্চিমা রাজাকার কিংবা ভীত, স্বন্ত্রস্ত, কাপুরুষ সহযোগী। এই হল বিভিন্ন গালভরা কথাবার্তার আড়ালে র্যান্ডের মূল বক্তব্য।
.
গত পর্বে আমরা ‘লর্ড ক্রোমার’রের কথা বলেছিলাম। ক্রোমারের মতে ‘ইসলামিসম’ (ইসলামপন্থা) হল - ইসলামী শরীয়াহ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা গড়ার আকাঙ্ক্ষা। ক্রোমারের ভাষায় - কেবল মোহাম্মাদান নীতিমালা আর প্রাচ্যীয় ধ্যানধারণার ভিত্তিতে গড়া সরকারকে ইউরোপ মেনে নেবে এমন ধারণা করাই হাস্যকর। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এর সাথে জড়িয়ে আছে, (তাই এমন কিছু মেনে নেয়া সম্ভব না)’। ক্রোমার ‘ইসলামিসম’ এর যে সংজ্ঞা দিয়েছিল তার সাথে র্যান্ডের দেয়া উগ্র মৌলবাদী ইসলাম এর তেমন কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। মূল এজেন্ডা সেই একই। শত বছরের পার্থক্যে খুঁটিনাটি কিছু বিষয় বদলেছে কেবল।
.
Civil Democratic Islam
লিংক- http://ow.ly/f88Q30foshL
.
প্রথম পর্বের লিংক - https://tinyurl.com/ycwm5j8u
.
#RAND
- Asif adnan
RAND কর্পোরেশনের সেই রিপোর্ট : Civil Democratic Islam. ভাইয়েরা বঙ্গানুবাদ করেছে। মুসলিমদের প্রতি পশ্চিমা পরিকল্পনা বুঝতে কাজে দেবে।
(শেয়ার না করে পোস্টটি কপি করুন ও নিজ টাইমলাইনে ছবি সহ আপলোড করুন)
(শেয়ার না করে পোস্টটি কপি করুন ও নিজ টাইমলাইনে ছবি সহ আপলোড করুন)
২০০৪ সাল থেকে আমেরিকা ইসলাম বিকৃত করে নতুন একটি ইসলাম বানাচ্ছে যার নাম "মডারেট ইসলাম" । এই ধর্মের অনুসারীদের নাম দিয়েছে "মডারেট মুসলিম" । ১৬ বছর ধরে সারা পৃথিবীতে এই নতুন ধর্মের প্রচার করে তারা সমস্ত পৃথিবীতে মডারেট মুসলিম তৈরি করে যাচ্ছে।কিন্ত হায়,আমরা অধিকাংশ মানুষ তা জানিই না!!
২০০৪ সালে আমেরিকার একটি বিখ্যাত থিংক ট্যাংক RAND Corporation এই নতুন ধর্ম বানানোর জন্য আমেরিকাকে এই প্রস্তাবনা দেয়।রিসার্স পেপারটির মূলকপি এবং অনুবাদ দেয়া হলো।সবাই এই ষড়যন্ত্র থেকে নিজে বাঁচতে ও উম্মতকে বাঁচাতে কলম ধরুন।প্রয়োজনে ভিডিও বানান।আপনার চেষ্টায় একজন মুসলিমের ঈমান বাঁচলে কেয়ামত পর্যন্ত সে মুসলিমের বংশ যতদিন মুসলিম থাকবে সব সোয়াব আপনি পাবেন ইন শা আল্লাহ।
মূল ইংরেজি PDF এবং অনুবাদটির PDF সরাসরি লিংক দেয়া হলো।প্রথমে PDF ডাউনলোড করে নিন।বলা যায় না পরে ডাউনলোড করা যাবে কি না।পোস্ট শেয়ার করলে অনেকেই দেখে না।তাই নিজ টাইমলাইনে এই ছবি সহ আপলোড করুন।বিভিন্ন ইসলামি গ্রুপে ছড়িয়ে দিন।আলেমদের কাছে পৌছে দিন।সর্বোপরি যে যেভাবে পারেন সবাইকে সতর্ক করুন।
.
RAND এর মূল রিসার্স পেপার -
.
RAND এর মূল রিসার্স পেপার -
অনুবাদ Images - https://bit.ly/2LnpRA5
অনুবাদ PDF - https://bit.ly/3bmfOWA
"RAND মুসলিম" বলে আলাদা কোনো সংগঠন নেই। এমন না যে অমুক র্যান্ড মুসলিমের মহাসচিব, অমুক সেক্রেটারি, অমুক মেম্বার, এরকম কিছু আছে। তাই কেউ যেমন নিজেকে র্যান্ড মুসলিম দাবি করবেও না, কাউকে পদবি দিয়ে র্যান্ড মুসলিম বলে চেনার সুযোগও নেই। বরং র্যান্ড হলো কিছু চিন্তার সমষ্টি, কিছু বিশ্বাসগত বৈশিষ্ট্য। পশ্চিমারা কেমন মুসলিম দেখতে চায়, সেজন্য তারা কিছু বৈশিষ্ট্য, চিন্তাধারা, কিংবা আরো সহজভাবে বললে একটি আকিদার ম্যানুয়াল তৈরি করেছে। তাদের মতে যারা তাদের তৈরি করা এই আকিদা অনুসরণ করবে, তারাই RAND মুসলিম। এবং এসব গোপন কিছু না। তাদের সাইটে গেলে, তাদের প্রকাশিত কাগজপত্রে এসব স্পষ্ট করে বলা আছে। এগুলো কোনো রকেট সাইন্সও না যে, এসব বোঝার জন্য পিএইচডি থাকা লাগবে।
আমাদের ভাবনার মূল বিষয় হওয়া উচিত রেন্ড যে আকিদার কথা বলছে, তার সাথে আমার আকিদা মিলে যায়নি তো? এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে তাদের এজেন্ট হতে হবে, আপনার পছন্দের আলেমকে রেন্ডের প্রডাক্ট হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এসব ছাড়াই আপনি রেন্ডের চিন্তাধারার লোক হয়ে যেতে পারেন।
দাজ্জালের কপালে কাফির লেখা থাকবে, এরপরও মানুষ তার ফিতনায় পড়বে, তার উপর ঈমান এনে ঈমানহারা হবে। তাই যারা রেন্ড কর্পোরেশনের ব্যাপারটাকে নিয়ে হাসি মজাক করেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এদের দেখে বরং আমার এক ধরনের করুণা হয়।
আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছে, যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছে, নামও মুসলিম, কিন্তু তারা মুরতাদ। মানে দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে। দিনে তিনবেলা চেতনা খেতে খেতে এদের বিশ্বাসে আর ধর্ম বা দ্বীন নেই।
শেষ জামানার একটা নিদর্শন হলো রিদ্দা বা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মহামারি আকার ধারণ করবে। মানুষ জানতেও পারবে না সে আর মুসলিম নেই, অথচ সে নিজেকে মুসলিম দাবি করবে। আমাদের চারপাশেই এরা ঘুরবে, ফিরবে, একই টেবিলে বসে খাবে, আমাদের মেয়ে, বোনেদের সাথে এদের বিয়ে হবে, অথচ এরা মুসলিম নয়।
তাই এসব হাসি মজাকের ব্যাপার নয়। ঈমান ও কুফরের ব্যাপার। জান্নাত ও জাহান্নামের ব্যাপার।
"নিশ্চয় তোমাদের পরবর্তী যুগে ফিতনা হবে গভীর অন্ধকার রাতের ন্যায়৷ মানুষ সে সময় সকালে মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফির হয়ে যাবে।" (মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবাহ: ১৩/৩৮৫, যুহদ লি ইমাম আহমাদ: ১৯৯।)
- সাজিদ ইসলাম
দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হাটহাজারী মাদ্রাসার ভবিতব্য প্রধান ও সর্বোচ্চ বিভাগ সমূহের দায়িত্ব নিয়ে নানামুখী সংকটের সূত্রপাত হয়েছে । যতটুকু জানতে পারলাম ইতোমধ্যে মাদ্রাসার প্রধান মুফতির পদ থেকে এশিয়া মহাদেশে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফকিহ আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসার শীর্ষপদে যাতে না আসতে পারে সেজন্য একটি চিহ্নিত মহল সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা শুধু হাটহাজারী মাদ্রাসার চিত্র নয় । সারাদেশে একটি দুষ্টু সিন্ডিকেট কাজ করছে ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদ্রাসার অবশিষ্ট চেতনা ধ্বংস করার জন্য । এর জন্য তারা বেছে নিয়েছে আদর্শ শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে থেকে বিতাড়িত করা আর তা সম্ভব না হলে গুরুত্বহীন করে দেয়া অর্থাৎ অবমূল্যায়ন করা । অপরদিকে বিক্রি হয়ে যাওয়া বা ধোঁকায় পড়ে ভুল পথে হাঁটা সিন্ডিকেট টিকে নানাভাবে প্রমোট দেয়া হচ্ছে ।
বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফি সাহেবকে ঢাল বানিয়ে মৌলভী ফরিদউদ্দিন মাসুদের নেতৃত্বে মূল সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে । এ বিষয়টিকে শুধু একটি দেশীয় বা সরকারি রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখলে যথার্থ হবে বলে মনে হয় না । এই চক্রান্তের শিকড় অনেক গভীরে । দেওবন্দীধারার ইসলামকে সংস্কার করার কথা যে ক্রুসেডারদের গবেষণা সংস্থা Rand Corporation এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার সাথে এই চ্যানেলের কর্মকাণ্ডের যোগসাজশ থাকার বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে । আপনারা জানলে হয়তো অবাক হবেন, এই মৌলভী মাসুদের ছেলে লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার হয়েছে এবং সে মাসুদ পুত্র মার্কিন Rand corporation এর প্রধানের কাছে থেকে প্রকৃত ইসলাম ধ্বংসের ( তাদের মতে মৌলবাদী ইসলাম) বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করা করেছে । এই বিষয়টি মৌলভী মাসুদের ' পাথেয় ' পত্রিকাতেই জানানো হয় । এ বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন বিশিষ্ট ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ মাদানীনগর মাদ্রাসা শিক্ষক প্রসিদ্ধ আরবি সাহিত্যিক মাওলানা সফিউল্লাহ ফুয়াদ , এরপর তাঁকে সে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে আসতে হয়। একই মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিমকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দী রাখা হয়েছে এবং আদালত থেকে ফাঁসীর রায় দেয়া হয়েছে ।
এই সিন্ডিকেটের সাথে প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক গভীর থাকায় সিন্ডিকেটটি তাদের বিরুদ্ধ মতের ঐতিহ্যবাদী আলেমদের বিরুদ্ধে নানামুখী ব্যবস্থা নিচ্ছে । মিডিয়া নানাভাবে এদেরকেই বর্তমানে প্রমোট দিচ্ছে । মাদ্রাসা বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্তে তাদের পস্তাবই এখন অনেকটা অলিখিত চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে হচ্ছে । যারা এই সিন্ডিকেটে নেই তাদের কিভাবে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে তার কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে ।
এখন আপনারা হাফিজ্জি হুজুর রহ. কামরাঙ্গীরচর মাদরাসার তেমন নাম শুনতে পান না ,( এর কারণ কী ভেবে দেখেছেন?) আল্লামা হাফিজ্জি রহ.এর সন্তান যে উক্ত মাদ্রাসার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তাকেও বেফাকের নীতিনির্ধারণে তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না । অপরদিকে সিন্ডিকেট থেকে ইলমী পরিচয়হীন নিত্যনতুন কওমী মুখপত্র বের হচ্ছে ।হেফাজতের মামলায় অন্যতম নির্যাতিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে নানা ভাবে সাইড ও নানাভাবে কোনঠাসা ফেলা হয় দীর্ঘ জেলে থাকা অবস্থায় । এক পর্যায়ে তাঁকে এতায়াতিদের সাথে যেতে বাধ্য করা হয় বললেও খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে বলে মনে হয়না। অবশ্য অতীতের কওমী অঙ্গনের আন্দোলন-সংগ্রাম ের ইতিহাসের আলোকে জীবিতদের মধ্যে উনি সর্বোচ্চ স্থানে থাকার কথা ছিলো ।
এছাড়া ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে অন্যতম হাদিস বিশারদ শাইখুল হাদিস উসমান গনি সাহেবকে । পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠানের ওস্তাদ মাওলানা নাঈম সাহেবকে । দেওবন্দ সিরিজের লেখক গবেষক আলেমেদ্বীন মাওলানা জোবায়ের হোসাইন সাহেবকেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খেদমত ছেড়ে নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে হয়েছে। এভাবে বলতে থাকলে আরো অনেক বলা যাবে । শহর, মফস্বল কিংবা গ্রাম সব স্থানে একই চিত্র । সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ছে হকপন্থী আলেমরা ।
যারা প্রকৃত দ্বীন শিক্ষা দিতে চাচ্ছেন তাদের উপরই মাদ্রাসার অভ্যন্তরে থাকা সিন্ডিকেটটি ব্যবস্থা নিচ্ছে । এভাবে চলতে থাকলে মাদ্রাসার ভবন ঠিকই থাকবে দ্বীনি শিক্ষাটাই থাকবে না । ইতোমধ্যেই কওমী মাদ্রাসার বইয়ে রবীন্দ্র সংগীত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । যা অবশ্য সিলেবাস প্রণয়ন কমিটির সদস্য আল্লামা বাবুনগরী সাহেবকেই জানানো হয়নি । তাহলে বুঝুন কওমী মাদ্রাসা এখন কোন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে । এভাবে চলতে থাকলে কওমী মাদ্রাসার থেকে নতুন কাসেম নানুতবীর তৈরি হবে না, তৈরি হবে ক্লাইভের ভাব শিষ্যরা । মাদ্রাসা তথা দ্বীনি শিক্ষার শত্রু এই সিন্ডিকেটের সকলের মুখোশ উন্মোচন করা এখন সময়ের দাবি । এদেরকে প্রতিহত করতে না পারলে আঁধার আরো ঘনীভূত হবে বলেই মনে হচ্ছে
- Monir Ahmed Monir
➤র্যান্ড কর্পোরেশনের প্রতিবেদনগুলোকে নিছক তথ্য ভাবা ভুল। এটা কেবল তথ্য না, বরং তাদের পলিসি। ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে তাদের আচরণবিধির অংশ। ইসলামের ল অফ পীপলস আছে। ইসলাম কাফেরদের মধ্যে একটা ক্যাটাগরি করে নিজস্ব আচরণবিধি নির্ধারণের জন্য। হারবী কাফের, জিম্মি কাফের, মুস্তামিন কাফের, মু'আহিদ কাফের। এই বিভাজন মূলত তাদের ব্যাপারে ইসলামের পলিসি নির্ধারণের সুবিধার্থে। পাশ্চাত্য সভ্যতারও একটা ল অফ পীপস আছে। এটা নিয়ে তো জন রলস এর বইও আছে। র্যান্ড কর্পোরেশনের রিপোর্টগুলোতে এই ল অফ পীপলস সংক্রান্ত পলিসিরই উন্নত সংস্কার আনা হয়েছে। ফলে এই প্রতিবেদনকে প্রাচ্যবাদীয় তথ্যের সাথে তুলনা করাও ভুল। বরং প্রাচ্যবাদীয় তথ্য র্যান্ডের পলিসির একটা অংশ হতে পারে। কারণ র্যান্ডের পলিসির মূল টার্গেট হল, পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে যেন ইসলামের সংঘর্ষ না বাঁধে সেজন্য ইসলামকেই পরিবর্তন করে ফেলা। এটা তারা করতে চায় নানাভাবে। প্রাচ্যবাদের দ্বারাও এটাই হয়। সুতরাং র্যান্ডের প্রতিবেদন কেবল প্রাচ্যবাদীয় তথ্য না, বরং প্রাচ্যবাদীয় তথ্য র্যান্ডের পলিসির একটা অংশ মাত্র।
পাশ্চাত্য তার সাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছুকে বরদাস্ত করবে না এটা সুস্পষ্ট বিষয়। মহান আল্লাহ তা'য়ালা কাফেরদের এই মনস্তত্ত্বকে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। এখন সেই সংঘর্ষটা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটার এক প্রকার পলিসি মেইকার হিসেবে কাজ করেছে র্যান্ড। আমরা মুসলমানরা তাদের এই পলিসি নিয়ে অবশ্যই চিন্তিত থাকব। এটা মুসলমানের ঈমানি গায়রাত। কেউ দ্বীনকে বিকৃত করার পলিসি বানাবে আর মুসলমান শান্ত ভাব নিয়ে কুল হয়ে থাকবে, এটা গায়রাত চলে গেলেই সম্ভব।
এখন প্রশ্ন হল, আমরা ব্যাপারটা কীভাবে ফেইস করব। ফিকরী এবং ফিকহী উভয় দিক থেকেই। এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে সচেতনতা হল ফিকরী এক্টিভিটি। আর ইসলামকে বিকৃত করার যেই পদ্ধতিগুলো মুসলিম সমাজে চলমান সেই পদ্ধতিগুলোর অসারতা ফিকহী মানদণ্ডে তুলে আনা হবে ফিকহী এক্টিভিটি। যেমন পশ্চিমা ঘেষা দায়ীদের কিছু ভুল ইস্তিদলাল আছে। মাক্বাসিদের অপব্যবহার, ইতিহাসকে বিধানের সূত্র বানানো, বাস্তবতা দিয়ে শরীয়ত পরিবর্তন করা, ইলমে মুতাওয়ারিস এবং ফাহমে মুতাওয়ারিসকে নানা অজুহাতে ক্ষতবিক্ষত করা ইত্যাদি। আবার নির্দিষ্ট কিছু বিধান নিয়েও তাদের চুলকানি আছে। এই জায়গাগুলোতে আমরা ফিকহী এক্টিভিটি দেখাব। ইসলামের একাডেমীক জায়গা থেকে আলোচনা তুলে আনব। সুতরাং আমরা র্যান্ডের প্রতিবেদনকে নিছক তথ্য মনে করি না, পাশ্চাত্যের পলিসি হিসেবে দেখছি। আবার কেবল এটার ভিত্তিতেই মডারেটদের চিহ্নিত করছি না, ফিকহের আলোকেই সেটা করা হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
- Iftekhar Sifat
আমেরিকার বলে দেওয়া সমকামিতাকে বৈধ ভাবা মুসলিম ভালো , না মানলেই জঙ্গি উগ্র!!
আমেরিকার সুদি অর্থনৈতিক মেনে নিলে ভালো মুসলিম আর না মানলেই উগ্র আল কা য়ে দার সদস্য জঙ্গি!!
গান মুভি দেখলে ভালো, উদারমনা, আর হারাম বললেই সন্ত্রাসী!
মোট কথা আপনি কোরান হাদিসের ইসলাম মানলেই জঙ্গি।
আপনাকে আল্লাহ্র দেওয়া ইসলাম ছেড়ে আমেরিকার কাফেরদের বেধে দেওয়া মোডারেট ইসলাম গ্রহন করতে হবে।
আমেরিকান র্যান্ড মুসলিম , এরা মুসলিম নাকি তাতেই সন্দেহ আছে। কারন আমেরিকার বেধে দেওয়া নিয়মে যারা ইসলাম বিশ্বাস করে তারা জানেই না কোরান হাদিসের ইসলাম কি। ইমান এর সংজ্ঞা কি শর্ত কি কি। ঈমান ভঙ্গের কারন গুলো জীবনেও পড়ছে কিনা সন্দেহ।
আমেরিকার বেধে দেওয়া নিয়মে যারা ইসলাম বিশ্বাস করে তারা জানেই না কোরান হাদিসের ইসলাম কি। ইমান এর সংজ্ঞা কি শর্ত কি কি। ঈমান ভঙ্গের কারন গুলো জীবনেও পড়ছে কিনা সন্দেহ।
- শাবীব তাশফী