রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে লেখাঃ আমরা আজ ব্যর্থ হয়ে গেছি ইয়া রাসুলুল্লাহ

আমরা আজ ব্যর্থ হয়ে গেছি ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 



আমরা আজ ব্যর্থ হয়ে গেছি ইয়া রাসুলুল্লাহ। আমরা আজ অসহায়, পরাজিত, পদপিষ্ট পিঁপড়ের এক জাতিতে পরিণত হয়েছি ইয়া রাসুলুল্লাহ। আপনার সমস্ত ওয়াহীর মত এটাও সত্য প্রমাণিত হয়েছে - আমাদের হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে ওয়াহান - দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুর জন্য ভয়। আমরা আজ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় সংখ্যায় দুশো কোটি কিন্তু আমাদের ভেতরের তেজ, আভিজাত্য, সম্মান সমুদ্রের ফেনার মতনই বুদবুদে ভরা ইয়া রাসুলুল্লাহ। 

ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনার, সেই আপনার, যেই আপনি আমাদের জন্য সারারাত ধরে কেঁদেছেন, আপনার পা ফুলে গেছে নামাজে দাঁড়িয়ে, আমাদের মিস করেছেন, আমাদের জন্য অশ্রু আপনার লম্বা দাড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে পবিত্র গালে, সেই আপনার অপমানে আমরা কিছুই করতে পারছিনা। আপনাকে নিয়ে কুফর রাষ্ট্রে হাসি মস্করা, ব্যঙ্গ-তামাশা চলছে, অথচ আমরা দিব্যি খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, ঘুরছি। আমরা আজকে লজ্জায় পুড়ে যাচ্ছি রাসুলুল্লাহ।

একবারটা কল্পনা করতে পারি, হাশরের ময়দান। সমস্ত নবী আম্বিয়া ভয়ে কাঁপছে, সেখানে হঠাৎই এক কন্ঠস্বর অনুসরণ করে দেখা গেল আপনি কাঁদছেন - ইয়া রাব্বি, উম্মাতি উম্মাতি! না রাসুলুল্লাহ, আপনি তো আপনার আদরের কন্যা ফাতিমার জন্য নয়, কলিজার টুকরো হাসান-হুসেইন বা প্রিয় বন্ধু আবু বকরের জন্য কাঁদছেন না, কাঁদছেন আমার মত কোটি কোটি অভাগার জন্য, আমাদের মত কাপুরুষ, মেরুদন্ডহীন উম্মতের জন্য যাদের ক্ষমতা নেই দম্ভের চাদরে উঁচু হয়ে থাকা আইফেল টাওয়ারটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার। 

কুফফার, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা, নাপাক, নোংরা, অপবিত্র ক্রুসেডবাহিনীর লোলুপ চোখ উপড়ে নেওয়ার, তাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করার৷ কি করে মুখ দেখাব সেদিন আপনাকে! কি স্বার্থপরতায় কাওসারের পানি পান করার সৌভাগ্য অর্জন করব সেদিন?

ইয়া রাসুলুল্লাহ, লজ্জা করছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। ওয়াল্লাহি অনেক কাজের মাঝে, সুখের মাঝেও বুকের  ভেতরটা ঝনঝন হয়ে যাচ্ছে কষ্টে। গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসছে কষ্টগুলো। এই লেখাটা লিখতে লিখতেও বারবার চোখের অশ্রু মুছতে হচ্ছে। 

রাবিউল আউয়ালের মাস। সীরাতের মাস। আপনার মাস ইয়া রাসুলুল্লাহ। এই মাসে এত অপমান সহ্য করতে হবে? আমি জানি আপনি আজকে আমাদের মধ্যে থাকলে কারো দুঃস্বপ্নেও সাহস হত না এই অপকর্মের, কাকে ব্যঙ্গ করছে তারা নিজেরাই জানেনা রাসুলুল্লাহ। কেয়ামত পর্যন্ত আগত কোটি কোটি অগণিত মুসলিম হৃদয়ের সম্রাট, তাদের ভালোবাসার, নিজের স্ত্রী-সন্তান, বাপ মায়ের থেকেও অধিক প্রিয়কে নিয়ে তারা ব্যঙ্গ করে রাস্তায় রাস্তায় হোর্ডিং সাজাচ্ছে, ক্লাস করাচ্ছে। 

তাদের এবং তাদের সমর্থনকারীদের এই ভয়ংকর পাপের পরিণতি তারা অচিরেই পাবে কিন্তু তাদের দুনিয়াবী শাস্তি নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত এই হৃদয় শান্তি পাবেনা রাসুলুল্লাহ। 

কত শরমের কথা, আপনার উম্মাতের এক অংশ আজ আপনার শাতেমদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা আপনার ব্যঙ্গচিত্রকে শিল্পের নাম দিয়ে ইসলামোফোবিয়ার জন্য প্রকারান্তরে দায়ী করে মুসলিমদের। তারা আমাদের রিগ্রেসিভ বলে রাসুলুল্লাহ। 

তারা আমাদের প্রতিক্রিয়াশীল বলে, তারা বলে আমরা নাকি সন্ত্রাসের সমর্থক। ভাবুন আপনি, আপনার শাতেমকে হত্যা করলে, আপনার ভালোবাসায় হৃদয় সিক্ত করি বলে তারা আমাদের মৌলবাদী বলে। আপনি সাক্ষী থাকবেন রাসুলুল্লাহ, বিজয়ের দিন যখন আমরা তাদের পথভুমিতে প্রবেশ করব, সেদিন আমরা তাদের মুখে থুথু ছিটিয়ে দেব। বিইযনিল্লাহ।

এটা সামান্য একটা লেখা রাসুলুল্লাহ। ভিতরের আগুন একটুও নেভেনি, এতটুকুও প্রশমিত হয়নি তাদের প্রতি ক্ষোভ। আমার মত কোটি কোটি ভাইয়ের অবস্থাও আজ এক। তারাও রাতে কাঁদছে, দিনে প্রস্তুতি নিচ্ছে হয়ত। ইয়া রাসুলুল্লাহ, দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টি আপনাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলেও আপনার ইজ্জত এতটুকুও নষ্ট হবেনা আবার দুনিয়ার প্রতিটা সৃষ্টি আপনার প্রশংসা করলেও তা সামান্যই থেকে যাবে আপনার মহানতার কাছে। 

আপনি তো আল্লাহর হাবীব, আপনি তো আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা, আপনি তো মানব সভ্যতার কাছে রহমতস্বরূপ। আপনার প্রতি ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়, আমার মত লক্ষ লক্ষ ভাই নিজের পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, বাসস্থান ত্যাগ করেছে। কেয়ামত অব্ধি করে যাবে ইনশা'আল্লাহ। 

আমার মত লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র, নগন্য জীব যদি আপনার জন্য শাহাদাত পায়, তাহলেও আখিরাত ধন্য। তাই রাসুলুল্লাহ, চেষ্টা করে যাব, ইনশা'আল্লাহ আখরি শ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব আপনার নামকে দুনিয়ার বুকে সমুন্নত করার। আর চেষ্টা করে যাব বিনা প্ররোচনায় আপনার অপমানকারীর সর্বনাশ করার। 

আর এই সফরে যদি প্রাণ যায়, যদি লোকে বলে সন্ত্রাসী, যদি বলে মৌলবাদী, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার মত কোটি কোটি ভাই জান্নাতের গর্বিত সন্ত্রাসী সবুজ পাখি হতে নিজের জান কুরবান দিতে রাজি আছে। বিইযনিল্লাহ।

এই ক্বাব বিন আশরাফের সমাজে আল্লাহ আমাদের মুহাম্মাদ বিন মাশলামা (রা) হওয়ার তাওফীক দিন। বুকের ভেতর এই স্ফুলিঙ্গ যেন নিভে না যায় কখনও ইয়া রাসুলুল্লাহ। হাশরের ময়দানে সেই সুউজ্জ্বল মুখমন্ডল দেখে যেন আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু ক্লান্তির হাসি হাসতে পারি। 

আল্লাহকে যেন এটুকু বলতে পারি সেদিন - ইয়া আল্লাহ, জীবনে হয়ত একটা সিজদাও আদবের সাথে দিতে পারিনি, একটা রোজাও সম্পূর্ণ ইখলাসের সাথে রাখতে পারিনি, একটা টাকাও নিঃস্বার্থভাবে সাদাকাহ করতে পারিনি, কিন্তু শাতেম-ই-রাসুলকে এই হাতে রক্তাক্ত করেছি, তাদের ঘৃণা করে গেছি হৃদয় থেকে, প্রবলভাবে আর আল্লাহ হয়ত এই উসিলায় জান্নাতের একটা কোণ আমাদের জন্য বরাদ্দ রাখেন। 
সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
- সুতীর্থ ভাই

Next Post Previous Post