ভাস্কর্যনামা : ভাস্কর্য মূর্তি স্ট্যাচু পূজক নামধারী মুসলিম গুলো মুশ্রিকদের ফাঁদে

 ভাস্কর্যনামা ঃ ভাস্কর্য মূর্তি স্ট্যাচু 



এক লোকের তিন ছেলে। প্রথমজন ডাকে আব্বা। দ্বিতীয়জন ডাকে বাবা। তৃতীয়জন ডাকে বাপজান। আব্বা, বাবা এবং বাপজান শব্দত্রয়ের মধ্যে আক্ষরিক বৈপরীত্য থাকলেও অর্থ অভিন্ন। তিনটি শব্দের অর্থই পিতা। ঠিক তেমনি মূর্তি, ভাস্কর্য এবং প্রতিমার মধ্যে আক্ষরিক পরিবর্তন থাকলেও অর্থে এবং হুকুমে কোনো পরিবর্তন নেই। যেটা মূর্তি সেটাই ভাস্কর্য, যেটা ভাস্কর্য সেটাই প্রতিমা।

Statue শব্দের অর্থ খুঁজে দেখুন না! মন্দিরে রাখলে মূর্তি বা প্রতিমা, রাস্তায় রাখলে ভাস্কর্য—এমন ব্যাখ্যা যারা দাঁড় করান তারা মূর্তির ইতিহাসই জানেন না। জানলেও অপব্যাখ্যা করে সাধারণ মুসলিমদেরকে ধোঁকায় ফেলে তাদের চিন্তাভাবনায় ভাস্কর্যকে শুধুমাত্র স্মারক হিসাবে উপস্থাপন করে মহাপাপকে হালকা করে দিচ্ছেন। কী সাংঘাতিক ব্যাপার!

ওয়াদ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘উক ও নাসর। তাঁরা প্রত্যেকেই নূহ আ.-য়ের যুগের নেক বান্দা ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর শয়তান পরবর্তী প্রজন্মকে তাঁদের চেহারার আদলে মানবমূর্তি নির্মাণ করার কুমন্ত্রণা দেয়। যাতে মানুষেরা তাঁদের সুকীর্তি ভুলে না যায়। শয়তানের কুপরামর্শ পেয়ে সেই যুগের মানুষেরা ওয়াদ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরদের স্ট্যাচু নির্মাণ করে এমনসব জায়গায় প্রতিস্থাপন করে যেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরা বক্তৃতা দিতেন, বৈঠকে মিলিত হতেন। তখন পর্যন্ত স্ট্যাচুগুলো পূজিত হত না৷ শুধুই স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

তারপর চলে গেল বহুবছর। যারা মানবমূর্তি নির্মাণ এবং প্রতিস্থাপন করেছিল তারা মারা গেল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম গত হল৷ শয়তান ওয়াসওয়াসার নতুন ভার্সন নিয়ে হাজির৷ জনপদের বাসিন্দাদেরকে বলল, "তোমাদের পূর্বপুরুষেররা এসব মূর্তির পূজা করত। যা চাওয়ার তাদের কাছেই চাইত। সুতরাং তোমরা এসবের এবাদত করো।" ব্যাস, শুরু হল স্ট্যাচু পূজা। বিস্তারিত জানতে হলে সূরা নূহের ২৩ নাম্বার আয়াতের তাফসীর পড়তে হবে৷ সময় করে পড়ে নেবেন।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. বলেন, নূহ আ.-য়ের যুগে শুরু হওয়া মূর্তি পূজা আরবদের মাঝেও প্রচলিত ছিল। ওয়াদ্, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরদের নামের মূর্তি আরবেও ছিল। পূজা হত নিয়মিত।

বর্তমানে যারা স্ট্যাচু বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায়, ঐতিহাসিক স্থানে বা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে বসিয়ে দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য কি নূহ আ.-য়ের যুগের ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য থেকে আলাদা? এই জায়াগায় খুব গভীরভাবে ভাবতে হবে। দুই যুগের দুটো ঘটনাকে এক টেবিলে রাখলে পার্থক্য করা অনেক কষ্ট হবে।

এই যুগের মানুষেরাও খ্যাতিমান লোকদের স্ট্যাচু বানিয়ে ঐ যুগের লোকদের নিয়তেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রতিস্থাপন করে দিচ্ছেন। যাতে এই কালের বাসিন্দারা সেসব ভাস্কর্য অবলোকন করে চিত্রায়িত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, আশীর্বাদ কামনা করেন। করছেও কিন্তু। কোথাও তো জুতা নিয়ে যাওয়া যায় না, পিঠ প্রদর্শন করে প্রস্থান করা যায় না, ফুল দিয়ে সম্মান জানাতে হয়।

কয়েক প্রজন্মের পর এসব ভাস্কর্যগুলো যে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজিত হবে না তার নিশ্চিয়তা কি? শিরকের ফোর্থ গ্রেডের ক্যান্সার কিন্তু এভাবেই শুরু হয়। ইতিহাস তো তাই বলছে।

ইট-বালি-সিমেন্টের তৈরি কোনো ভাস্কর্য যখন বিশেষ সম্মান পায় তখন সেটাকে জাস্ট কলা অনুষদের নিরামিষ ভাস্কর্য বলে চালিয়ে দেওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক ওয়াসওয়াসা।
- Nazrul Islam
Next Post Previous Post