সমকামিতার ধারক বাহক সেকুলার সমাজের আসল রুপ

 বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লিবারেল-সেক্যুলারিসমের মাদ্রাসা

মিডিয়া এবং এন্টাটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি হল লিবারেল-সেক্যুলারিসমের মিম্বার এবং ওয়াযের মঞ্চ
বুদ্ধিজীবীরা লিবারেল-সেক্যুলারিসমের পীর, আউলিয়া, গণক, জ্যোতিষী, কবিরাজ
অ্যাকাডেমিকরা হল ইজাযাহপ্রাপ্ত আলিম
আর বিজ্ঞানীরা হল আল্লামা এবং মুফতি
.
সব তাত্ত্বিক এবং সফিসটিকেইটেড আলোচনার পর এটা হল সহজ বাস্তবতা। মাদ্রাসা শুধু শিক্ষা দেয় না। মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট ওয়ার্ল্ডভিউ তৈরি করে। ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট ওয়ার্ল্ডভিউ, কিছু নির্দিষ্ট মূল্যবোধ ছাত্রদের মধ্যে গেঁথে দেয়। সেই ওয়ার্ল্ডভিউটা হল লিবারেল-সেক্যুলারিসম।
.‘
প্রাইড মান্থ’ উপলক্ষে গত বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোন এক গ্রুপ পোস্ট দিয়েছিল। এবছর এনএসইউ-র ডিবেটিং ক্লাব দিয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবলে ভুল করবেন। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। মিডিয়া, পপ-কালচার, বিশ্ববিদ্যালয়, বুদ্ধিজীবি এবং অ্যাকাডেমিকদের কাছ থেকে শেখা ন্যারেটিভটা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ডমিন্যান্ট কালচার যা দেখাচ্ছে সেটাই তারা অন্ধভাবে অনুসরণ করছে।
.
প্রাইড মান্থ উপলক্ষে বিশ্বের সব মেগা-কর্পোরেইশানগুলো নিজের লোগোগুলোকে রংধনুতে রাঙিয়েছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে সিস্টেম্যাটিকভাবে মানুষকে বোঝানো হচ্ছে সমকামীতা, ট্র্যান্সজেন্ডারিসম ও অন্যান্য বিকৃত যৌনতাকে সমর্থন করা এবং যৌনতার ব্যাপারে ষাটের দশকের ‘যৌন বিপ্লবের’ চিন্তা গ্রহণ করার অর্থ হল ‘মানবিক’, ‘আধুনিক’ এবং ‘ভালো মানুষ’ হওয়া। অন্যদিকে এর বিরোধিতার অর্থ ধর্মান্ধ, অমানবিক কিংবা বর্বর হওয়া। এই প্যারাডাইমের ভেতরেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি, নর্থ-সাউথ কিংবা ব্র্যাকের ছাত্রছাত্রীরা চিন্তা করছে। অধিকাংশ মানুষ তাই করে।



.
একটা ২০ বছর বয়েসী ছেলে ছোটকালে যেসব কার্টুন দেখে বড় হয়েছে, এখন দেখছে সেই কার্টুনগুলোর চরিত্রগুলো নাকি ‘সমকামী’ ছিল। ডিসনি, কার্টুন নেটওয়ার্ক, নিকোলোডিয়ান, সবাই সক্রিয়ভাবে সমকামীতা এবং ট্র্যান্সজেন্ডারিসমকে এন্ডোর্স করছে। টিভি, ফিল্ম, মিউসিক সব কিছুতে সে দেখছে‘লাভ ইস লাভ’। দু’জন দু’জনকে ভালোবাসলেই হল। বাকি সব কিছু অপ্রাসঙ্গিক। যৌনতার ব্যাপারে অন্য কোন নৈতিকতার সাথে সে ঐভাবে রিলেট করতে পারে না। যেসব মানুষকে আইকন হিসেবে দেখানো হচ্ছেস্টিভ জবস থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক, কিংবা কোন নায়ক-গায়ক কিংবা অ্যাথলিট-সবাই এই ওয়ার্ল্ডভিউ এবং মূল্যবোধগুলোর প্রচার করছে।
.
তার নিজের সমাজও তাকে কখনো ঠিকভাবে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়নি। বরং ইসলাম শিখতে গেলে সেটাকে নেতিবাচক, ভয়ঙ্কর কিছু একটা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। সংস্কৃতির কোন পরিস্কার ধারণাও সে পায়নি। কারণ পরিস্কার ধারণা কারো কাছে নেই। সংস্কৃতি মানে পহেলা বৈশাখের সকালে ‘এসো হে বৈশাখ’ আর বিকাল থেকে হিন্দি গান।
.
সে দেখেছে তার সমাজ ‘রক্ষণশীল’ হবার ভান করে কিন্তু ঠিকই জোরেশোরে ভ্যালেন্টাইন পালন করে। সে দেখেছে যিনাকে ‘পবিত্র প্রেম’ নাম দিয়ে বানানো অসংখ্য নাটক-সিনেমা, বই, গল্প এই সমাজে সমাদৃত হয়। সে দেখেছে তার সমাজ ক্রমাগত এমন সব কাজ করে যার সাথে মুখে বলা কথার কোন মিল পাওয়া যায় না। সে দেখেছে সমাজে যাদেরকে মুক্ত চিন্তার কিংবা ‘ভালো’, ‘জ্ঞানী’ মানুষ বলা হয় তারা সবাই এক বাক্যে লিবারেল-সেক্যুলারিসমের ডগমাগুলো মেনে চলে।
.
এতো সব কিছুর পর সে যে হুবহু মিডিয়া ও কালচারার কতৃত্বশীল বয়ান অনুযায়ী চিন্তা করছে, এতে কি অবাক হবার কিছু আছে? এই তরুণরা শতভাগ অনুসরণকারী। লেমিং এর স্রোতের মতো ওরা অন্ধ ছুটে চলছে। যা শিখেছে, যা দেখেছে ‘মুক্তচিন্তা’ মনে করে সেটাই রিপিট করছে। ওদের আগের প্রজন্মও একই কাজ করেছে। পার্থক্য হল দশ বছর আগে হয়তো ‘লিভ টুগদারের’ স্বাভাবিকীকরণের ওপর মিডিয়া এবং পপ কালচারের ফকাস বেশি ছিল। এখন ফোকাসটা ‘সমকামীতা’ এবং ট্র্যান্সজেন্ডারিসমে।
.
চিন্তার একটা পরিপাটি বাক্স বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা গড়ে দিয়েছে। মুক্তচিন্তার নামে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষ চেষ্টা করছে সেই বাক্সের ভেতর নিজের চিন্তাকে বসিয়ে নিতে। কারণ লিবারেল-সেক্যুলারিসমের মাদ্রাসা, মিম্বার থেকে তাকে বারবার এগুলোই শেখানো হয়েছে।
.
বাস্তবতা হল নর্থ-সাউথ ডিবেইটিং ক্লাবের এই পোস্টের মতো পোস্ট এবং চিন্তাভাবনা আরো বাড়বে। কারণ এধরণের চিন্তা এবং মূল্যবোধ যেখান থেকে উৎপাদিত হচ্ছে, আমরা সেটাকে অ্যাড্রেস করছি না। বাঙ্গালি/বাংলাদেশী ট্র্যাডিশান কিংবা ইসলামের প্রতি হাফ-হার্টেড কমিটমেন্ট দিয়ে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার আরোপিত ধর্মের মোকাবেলা আপনি করতে পারবেন না। মোকাবেলা করলে হলে কনসিস্টেন্ট নৈতিক এবং আদর্শিক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। সেই আদর্শিক অবস্থান ‘বাঙ্গালি সংস্কৃতি’ থেকে আপনি পাবেন না। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ থেকে পাবেন না। সমাজতন্ত্র কিংবা অ্যানার্কিসম থেকেও পাবেন না। লিবারেল-সেক্যুলার ওয়ার্ল্ডভিউ রেখে ‘সমকামীতা’, ট্র্যান্সজেন্ডারিসম কিংবা অন্য কোন চিন্তার অসুখের সমাধান করা সম্ভব না।
.
যদি প্রিন্সিপালড কোন অবস্থান নিতে হয়ে তাহলে সেটা নিতে হবে ইসলামের ভিত্তিতে। আর সেটা হাফ হার্টেড ইসলাম হলে হবে না। সম্পূর্ণভাবে মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। নিজের চিন্তার জগতে প্যারাডাইম শিফট আনতে হবে। কাজটা কঠিন না। কিন্তু কাজটার জন্য নিজেকে কমিট করা কঠিন। নিজের ‘হ্যাপি গো লাকি’, অটোপাইলটে চলা লাইফস্টাইল থেকে বের হয়ে এসে কিছু কঠিন চিন্তাভাবনা করতে হবে। সমস্যা হল, আমরা এটা করতে চাই না। আমরা মৌসুমী নিন্দা এবং ক্ষোভের লেনদেন করি। কিন্তু মৌসুমী ক্ষোভের বিপরীতে লিবারেলিসমের মাদ্রাসা খোলা থাকে সারা বছর।
- Asif Adnan
Next Post Previous Post