সাদা চামড়ার কাফের মরলে বীর আর মুসলিম মরলে সন্ত্রাসী!! কেনো?

 ছবিটা ইউএস সান পত্রিকার। ভিটালি নামে ইউক্রেনের একজন সৈন্য রাশিয়ান ট্যাংক থামাতে বিস্ফোরক দিয়ে সেতু উড়িয়ে দিয়েছে। একইসাথে নিজেকেও উড়িয়ে দিয়েছে। খবরটা খুব ঘটা করে প্রচার হচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়াতে। প্রশংসা করা হচ্ছে ভিটালির সাহস আর আত্মত্যাগের।

.
এই প্রতিক্রিয়া যৌক্তিক। ভিটালিদের প্রশংসা করা জরুরী। এটা নিছক আবেগের কথা না। ঠান্ডা মাথার হিসেবনিকেশের কথা।
.
মানবসভ্যতায় সংঘাত অনিবার্য। আর সংঘাতে জিততে হলে প্রয়োজন রক্ত, সম্পদ আর জীবনের কুরবানী। সমাজের কিছু মানুষকে স্বেচ্ছায় এই আত্মত্যাগগুলো করতে হয়। সমাজ তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এই মানুষগুলোর কাছে সবচেয়ে দামী জিনিসটার কুরবানী দাবি করে – জীবন।
.
বিনিময়ে সমাজ তাদের মহিমান্বিত করে। তাদের বীরত্বগাঁথা লেখে, তাদের জন্য তৈরি করে মনুমেন্ট। তাদের নাম উচ্চারিত হয় মুখে মুখে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
.
প্রত্যেক সমাজ তার যোদ্ধাদের সম্মানের আসনে বসায়। তাদের ওপর মহত্ব এবং পবিত্রতা আরোপ করে। তাদেরকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান আখ্যা দেয়। একোনমিক্সের কাঠখোট্টা ভাষায় বলা যায় -


.
সমাজ যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের জন্য ইনসেনটিভ তৈরি করে। আত্মত্যাগের কাজগুলোর সাথে সমাজ কিছু প্রণোদনা, কিছু পুরস্কারের ধারণা যুক্ত করে। উৎসাহ দেয়। যাতে ঐ সমাজের পুরুষরা স্বেচ্ছায় এই কুরবানীগুলো করতে উদ্বুদ্ধ হয়। নিজ স্বার্থেই সমাজ এটা করে।
.
তাই ইউক্রেনের মানুষ, পশ্চিমের মানুষ ভিটালির প্রশংসা করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা মুসলিমরা কী করি?
.
যারা হাসিমুখে সময়,সম্পদ, জীবন আমাদের জন্য বিলিয়ে দেয় তাদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন?
.
পশ্চিমের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আমরা গালি দেই। পশ্চিমারা সমালোচনা করবে। তারা তো শত্রু। কিন্তু ওরা যতোটুকু বলে, আগ বেড়ে আমরা তার চেয়ে আরো বেশি বলি। আমাদের জন্য, আমাদের দ্বীনের কুরবানী করা মানুষদের আমরা মহিমান্বিত করি না। প্রাপ্য সম্মান দেই না। বরং আমরা তাদের অপমান করার চেষ্টা করি।
.
আমরা আমাদের যোদ্ধাদের জন্য ডিস-ইনসেনটিভ তৈরি করি। আমরা আত্মত্যাগকে নিরুৎসাহিত করি। 'নিরুৎসাহিত' খুব হালকা শব্দ হয়ে যায়। আমরা এই মানুষগুলোকে ডিমনাইয করি। তাঁদেরকে উপস্থাপন করি দৈত্য-দানো-পিশাচ টাইপের কিছু হিসেবে। আর তারপর এই আমরাই আবার হাহুতাশ করি,
.
কেন আমরা দুর্বল?
কেন আমরা অসহায়?
কেন আমাদের রক্ষা করার কেউ নেই?
.
যে জাতি বীরদের সম্মান করে না, সেই জাতি বীরদের জন্মও দিতে পারে না।
.
দেখুন আমাদের এতো ভূগোল বোঝানোর পর পশ্চিম কিন্তু ঠিকই ওদের বীরদের সম্মান দেয়। বীরত্বগাঁথা প্রচার করে। শুধু আমরা বোকারাই ওদের কথায় ভুলে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারি।
.
তবে আশার কথা কী জানেন?
.
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মাহর একটা সৌন্দর্য হল এই উম্মাহতে সবসময় কিছু মানুষ থাকবে যারা হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আল্লাহ এবং দ্বীনের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাবেন। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁরা হক্বের ওপর লড়াই করতে থাকবেন। এবং তাঁরা নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে্ন না।
.
হাজারো সালাম উম্মাহর সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি।
.
"মু’মিনদের মধ্যে মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের সংকল্পে তিল পরিমাণ পরিবর্তন করেনি"। [তরজমা, সূরা আহযাব, ৩৩]
- Asif Adnan
Next Post Previous Post