আধুনিক বোরকা হিজাব এবং পর্দা

বিভিন্ন ধরনের বোরকা 

১. কুইন নিকাব

২. কালারফুল বুরকা বা জিলবাব

৩. নিকাব এক সাইডে একটু টেনে পড়া
৪. ফিংগারলেস মোজা বা স্লিভও বলে অনেকে
৫. হরেক ডিজাইনের জাঁকজমকপূর্ণ বুরকা
৬. বিয়ে বা অনুষ্ঠানে স্পেশাল বুরকা
৭. জাঁকজমকপূর্ণ এক্সেসোরিজ বা ব্যাগ ব্যবহার
৮. আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্লিভযুক্ত জিলবাব
৯. রেস্টোরেন্টে খাওয়া-দাওয়া
১০. ভ্রু ও কপাল উন্মুক্ত হয়ে পরে এমন নিকাব
১১. সোশ্যাল মিডিয়ায় বুরকা-নিকাব পরে নিজের ছবি পোস্ট করা
১২. অশোভনীয় অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ ও হাসি-ঠাট্টা করা ইত্যাদি।
এভাবে কি আমি পর্দা করছি নাকি আমি নিজের নফসের খায়েশ মেটাচ্ছি।
পর্দা উদ্দেশ্য ছিলো নিজেকে যথাসম্ভব অনাকর্ষণীয় করে রাখা ও নিজের সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রাখার।
ফিংগারলেস হাত মোজা পড়া যেতে পারে লিখার ক্ষেত্রে। প্রয়োজন শেষে আবার ঢেকে রাখবো। প্রয়োজনে ওপরে আবার হাতমোজা পড়বো। নিজের আঙুলগুলো কি আমার কাছে কি এতোটাই মূল্যহীন যে আমি তা সবাইকে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে রাখি?
প্রয়োজনের অতিরিক্ত বুরকাও রাখা উচিত না। আমরা অনেকে দেখা যায়, বিয়ে বা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে সুন্দর আর জাঁকজমকপূর্ণ বুরকা পরি। কেন পরি কখনো নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি?
বুরকারও নতুন নতুন ট্রেন্ড বের হয়। যেমন এখন ট্রেন্ডে আছে কুইন নিকাব। আমার এরকম নিকাব পরার উদ্দেশ্যটা কি?


পর্দার পোশাক কেনার সময় দেখবো, কোনটা পড়লে আমাকে সুন্দর বা আকর্ষণীয় লাগবে না। কোনটা পড়লে আমাকে অনাড়ম্বর লাগবে। আমরা অনেকেই হাতমোজার ওপর ব্রেসলেট, ঘড়ি ইত্যাদি পরি। নানান ডিজাইনের ব্যাগ বহন করি। ঘড়ি ও ব্যাগ অনেক সময় প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এমন ঘড়ি, ব্যাগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় এক্সেসোরিজ কেনা উচিত যেটা অন্য কারো দৃষ্টি কারবে না। যথাসম্ভব ট্রেন্ড এড়িয়ে চলতে হবে।
আমরা সবাই একরকম না। কেউ মোটা, কেউ চিকন। নিজের পরিপূর্ণ পর্দা হবে এরকম বুরকা বেছে নেবো। আর সবসময় প্রয়োজন সাপেক্ষে একইরকম বুরকা কিনবো। আরো ভালো পোশাক পেলে, যেটায় আরো ভালোভাবে পর্দা করা যাবে সেটা কিনবো। কেনার সময় নিজের নিয়তের ওপর খেয়াল রাখবো কেন কিনছি। নিজের পর্দার জন্য নাকি শখ পূরণের জন্য। আমাদের অনেকের বুরকার বা জিলবাবের বিশাল কালেকশন আছে। প্রয়োজনমতো পর্দা পোশকা কিনবো। পর্দার নামে অপচয় করবো না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকবো। আমার পর্দা যেন অন্যের জন্য ফিতনা না হয়।
পর্দার পোশাক অনেক মূল্যবান। একে পরিধান করার পর এর সম্মান ও মহত্ত্ব ধরে রাখবো। একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিমাহর মতো চলবো। তবে অহংকার করবো না। রাস্তায় হাটার সময় আদব বজিয়ে রেখে চলবো। হাসি-ঠাট্টা করবো না। নিজের অঙ্গভঙ্গি সংযত করবো। দাঁড়ানোর সময়ও এমনভাবে দাঁড়াবো না যাতে দেখতে আকর্ষণীয় লাগে কিংবা শরীরের সাথে কাপড় আঁটসাঁট হয়ে লেগে থাকে ও শরীরের আকৃতি প্রকাশ পায়। যেমনঃ কোমড়ে হাত দিয়ে বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবো বা বসবো না।
নিজের মধ্যে গাইরাত সৃষ্টি করতে হবে। আমি বের হয়েছি আমার প্রয়োজনে। কেন অন্য মানুষকে আমি আমার হাসি, আমার কণ্ঠ বা শরীরের একাংশও আমি দেখতে দিবো। পাব্লিক প্লেসে নিজের আবেগ প্রকাশ করবো না। কপাল ও ভ্রু ঢেকে রাখবো। আমার কাছে আমার শরীরের একাংশও তুচ্ছ না।
ধীরে ধীরে আমরা পর্দার ক্ষেত্রে লেভাল আপ করতে পারি। চোখও পর্দা একটা অংশ। কারণ মেয়েদের চোখও অনেক আকর্ষণীয়। মেয়েরা আল্লাহ তা'আলার এমনই এক অপরূপ সৃষ্টি। যার একাংশও আকর্ষহীন নয়। যারা অপারগ, চশমা ছাড়া দেখতে পারেন না, তাদের কথা ভিন্ন।
আমরা অনেকে রেস্টোরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। রেস্টোরেন্টে কখনো সাচ্ছন্দে খাওয়া যায় না। আমাদের অনেকেরই অভ্যাস হয়ে গেছে তারা খেতে পারি। তবে খাওয়ার সময় হাতমোজা পড়ে খাওয়া যায় না। আমরা অনেকে ফিংগারলেস হাতমোজা পরে খাওয়া-দাওয়া চালিয়ে নেই। তবে এতে কি নন-মাহরামের সামনে আমার হাত উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে না?
রেস্টোরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার জন্য অনুৎসাহিত করলে আমরা কিছু বোন তেড়ে আসি। তর্ক করা শুরু করে দেই, "ইসলাম কি এতোটাই কঠিন নাকি?!"। আমি নিজে ভেবে দেখি আমার কাছে রেস্টোরেন্টে খাওয়াটাকি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ?
ইসলামে মেয়েদের সযত্নে মুক্তার মতো লুকিয়ে রাখা হয়। কারণ সে অনেক দামী। সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আমাকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাহির হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রেস্টোরেন্টে খাওয়াটাকি সেই প্রয়োজনের মধ্যে পরে?
নিজেকে আমি জিজ্ঞেস করি। আমি কি পর্দা করছি নাকি নিজের নফসের দাসত্ব করছি। রেস্টোরেন্টের খাবার খেতে মন চাইলে তা বাসায় এনেই খাওয়া যেতে পারে। রেস্টোরেন্টের মতো পরিবেশ চাইলে প্রয়োজনে বাসা সাজিয়ে নেবো।
ভ্রমণ করা ও কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি উপর্যুক্ত সকল বিষয় খেয়াল রাখবো।
বোরকা-নিকাব পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকবো। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ছবি দেওয়া মানে, নিজেকে সবসময় দেখার সুযোগ করে দেওয়া। আর এটা একজন রুচিশীল, সভ্য ও সম্ভ্রান্ত মুসলিমাহর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
আমি নফসের না, নফস আমার দাস হবে। সে আমাকে কখনো যেন কাবু করতে না পারে।
কিছু অভ্যাস আমাকে ত্যাগ করা শিখতে হবে। কিছু অভ্যাস গড়তে হবে। শুধু মাত্র আমার রব, আমার প্রিয় যিনি আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসেন সেই প্রেমময় আল্লাহর তা'আলার জন্য...
Next Post Previous Post