প্রেমের আলকেমি | আকাশের ওপারে আকাশ বই

প্রবন্ধ: আলকেমি বই: আকাশের ওপারে আকাশ

প্রেমের আলকেমির পেছনে খুব শক্তিশালী, খুব বড় একটা ফ্যাক্টর যৌনতা। যৌনতা এমন একটা বিষয় যার ছায়া এবং সীমানা থেকে নারীপুরুষের সম্পর্ক কখনোই বের হতে পারে না। নারী পুরুষের সম্পর্ককে যতোই রোমান্টিকভাবে উপস্থাপন করা হোক না কেন, যতোই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব কিংবা ভাইবোন পাতানো হোক না কেন, যতোই ‘পবিত্র মন’ বা ‘পবিত্র সম্পর্কের’ বুলি আওড়ানো হোক না কেন–তাতে বাস্তবতা বদলায় না।

.
বিষয়টার উপর মানুষের সবসময় নিয়ন্ত্রণও থাকে না। যৌনতার কলকব্জাকে মানুষের মন সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নারী এবং পুরুষকে পাশাপাশি রাখা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চালু হয়ে যায় যৌনতার রসায়ন।
.
আসলে প্রত্যেক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর ‘ট্রু লাভে’র অনুভূতিকে চালিত করে যৌনতা। শরীরী চাহিদা। আর শারীরিক এই ক্ষুধা আমাদের চিন্তাকে প্রভাবিত করে নানাভাবে।
.
‘প্রেমে পড়া’র সময়টাতে এক দিকে মস্তিষ্কে চলতে থাকে হরমোনের বন্যা। অন্যদিকে শরীরী চাহিদার বাস্তবতা অস্বীকার কিংবা আড়াল করতে গিয়ে চলে নিজের সাথে নিজের মিথ্যাচার। দুইয়ে মিলে তৈরি হয় এক বিচিত্র মানসিক অবস্থা। হরমোনের স্রোত আর যৌনতার জোয়ারে ঠিকভাবে চিন্তা করাই কঠিন হয়ে যায়। তীব্র আবেগের এক কল্পজগতে মানুষ হাবুডুবু খেতে শুরু করে।
.
যেটাকে আমরা প্রেম বলছি, যেটাকে আমরা পবিত্র বলে মহিমান্বিত করছি, তা আসলে শরীরী ক্ষুধা আর পিটুইটারির খেলা কেবল। সব কথা, কবিতা আর কল্পনার খেলাঘর পার হবার পর সত্য হলো, এই যে প্রেম–যার জন্য তুমি আকাশ-পৃথিবীর সীমারেখা ভুলতে বসেছো, তা আসলে তোমার মস্তিষ্ক আর যৌনাঙ্গের মিথস্ক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই না।



.
জাপানে কিছু সস্তা হোটেল আছে। শরীরের উষ্ণতা ভাগাভাগি করতে উদগ্রীব যুগলদের জন্য চারদেওয়ালের ভেতরে একটা বিছানার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো এসব হোটেলের মূল কাজ। এই হোটেলগুলোতে পতিতাও মেলে সুলভ মূল্যে। সব দেশেই এ ধরনের হোটেল আছে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই বাংলাদেশেও এখন আছে অনেক।
.
তবে মজার এবং আমাদের আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক দিক হলো, এই হোটেলগুলোকে জাপানে বলা হয় ‘লাভ হোটেল’। সাময়িক যৌন সুখের জন্য ঘণ্টা হিসেবে বিছানা ভাড়া দেওয়া ব্যবসার নাম হল ভালোবাসার হোটেল! এই তো ভালোবাসা!
.
এক দিক থেকে এই নামটা প্রেমের বাস্তবতাকে খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে। কারণ দিন শেষে প্রেমের শতো শতো গল্পের পেছনে মূল বাস্তবতা হল যৌনতা। সরাসরি স্বীকার না করলেও একটা পর্যায়ে আমরা সবাই এ বাস্তবতা জানি। উপলব্ধি করি।
.
এজন্যই তো ভালোবাসা দিবসগুলোতে কনডমের বিক্রি বেড়ে যায়, বিশেষ ছাড় কিংবা প্যাকেজ দেওয়া হয়, তাই না? বিশেষ দিবসগুলোতে আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকে বিশেষ অফার। এজন্যই ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের মার্কেটিং এর জন্য বেছে নেয় হুড তোলা রিকশাকে। এজন্যই তো রিলেশনশিপের 'ওয়াজিব' অংশ হয়ে যায় বিছানায় যাওয়া। এজন্যই তো ভালোবাসার নামে শুরু হওয়া পবিত্র সম্পর্ক ভাঙার কিছুদিনের মধ্যে আরেক ‘পবিত্র ভালোবাসা’ খুঁজে নিতে দেরি হয় না। তাই না?
.
কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে?
.
ক্যাম্পাসের একটা সুন্দরী জুনিয়র মেয়েকে সাহায্য করতে যেভাবে উতলা হয়ে যাও, কোনো ছেলেকে সাহায্য করার জন্য সেভাবে পাগল হও না কেন? কেন বেচারা ছেলেগুলোকে ধরে ধরে সিনিয়দের সালাম দেবার নিয়মকানুন শেখাও? মেয়েদের দিকে যেভাবে মনোযোগ দাও ছেলেদের কেন সেভাবে দাও না?
.
ঘরের মধ্যে তুমি এলোমেলো এলোচুলে ঘরোয়া পোশাকে থাকো। কিন্তু বাইরে বের হলে, ক্যাম্পাসে গেলে কেন সাজগোজ করে, মেকআপ করে, সুন্দর আকর্ষণীয় পোশাক পরে যাও?
.
পুরো দৃশ্যপট থেকে শারীরিক সৌন্দর্য এবং যৌনতার ব্যাপারটা ডিলিট করে দাও। এবার চিন্তা করো। সমীকরণ মেলাতে পারছো?
.
গার্লফ্রেন্ড যদি কখনোই সেক্স করতে না দেয়, শরীরে হাত দিতে না দেয়, তুমি তার সাথে প্রেম করবে? বয়ফ্রেন্ড যদি নপুংসক হয় তুমি তার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাবে? যৌনতাবিহীন কোনো সম্পর্ক কী হবে?
.
সৎ হও। আমাকে বলতে হবে না, তুমি নিজের কাছে স্বীকার করে নাও যে এই ভালোলাগা, এই আকর্ষণ, এই প্রেমের মূলে রয়েছে যৌনতা।
.
আলোবাতাস, পানি, খাবারের মতো যৌনতা মানুষের আরেকটা প্রয়োজন। খাবার না খেলে যেমন ক্ষুধা লাগে তেমনি একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সেক্স করতে না পারলে শরীরের ক্ষুধা জাগবে, এটা অতি স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাছাড়া নারী পুরুষের ভালোবাসা, যৌনতা কেবল নিছক বিনোদন কিংবা শারীরিক ক্ষুধা মেটানোর পদ্ধতি না, প্রাণীজগতে জন্মের প্রক্রিয়াকেও এর সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা। ব্যক্তি মানুষ থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, সভ্যতা সবকিছুকে যৌনতা প্রভাবিত করে।
.
নারীপুরুষের আদিম সম্পর্কের এই বাস্তবতাগুলোকে ইসলাম অস্বীকার করে না। ইসলাম আমাদের কাছে অতিমানবীয় কোনো কিছু দাবি করে না। তবে ইসলাম সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়ে দেয়। আল্লাহ সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা যৌনতা ও আকর্ষণের বিষয়গুলোকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে, শৃঙ্খলের মধ্যে বেঁধে দিয়েছেন –যেন শয়তান মানুষকে প্রতারিত করতে না পারে। যেন যৌনতার ফাঁদে পড়ে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে না যায়।
.
যৌনতার জন্য আল্লাহ সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা নির্ধারণ করেছেন বিয়ের বন্ধনকে। নারীপুরুষের পর্দার বিধান দিয়েছেন, চোখের হিফাযত করতে বলেছেন। সমাজে নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করেছেন। অশ্লীলতা থেকে দূরে সরে থাকার প্রতিদান হিসেবে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যিনা-ব্যভিচারের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে বলেছেন,
.
‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ এবং তা কত না মন্দ পথ! (যা অন্যান্য নিকৃষ্ট কর্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়)।’ [সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৩২]
.
কিন্তু যৌনতার এই দিকটা আধুনিক বিশ্ব কেন যেন স্বীকার করতে চায় না। উল্টো নানা অজুহাত আর রোমান্টিক রহস্যের চাদরে আড়াল করতে চায় নারীপুরুষের চিরাচরিত আকর্ষণের এই আলকেমিকে। একই সাথে ক্রমাগত সবক দিয়ে যায় ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা আর যেমন খুশি তেমন যৌনতার।
.
প্রবন্ধ: আলকেমি
বই: আকাশের ওপারে আকাশ
মূল্য: ২৮০ টাকা
পাওয়া যাচ্ছে অনলাইন শপগুলোতে এবং বাইতুল মুকাররামের ইসলামী বইমেলায়।
- Asif Adnan ভায়ের ওয়াল থেকে নেওয়া

প্রবন্ধ: শরীরে বৃষ্টির মতো মোহ

আমরা এমন একটা অদ্ভূত সময়ে বসবাস করছি যখন মিডিয়া ও কালচার সম্পূর্ণভাবে যৌনায়িত। যৌনতা আজ সব জায়গায়। ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা হলো এটা শুধুমাত্র যিনাকেন্দ্রিকতায় সীমাবদ্ধ না। বরং মিডিয়া এবং তথাকথিত সাংস্কৃতিক অঙ্গন ক্রমাগতভাবে যিনা এবং অবাধ যৌনতার স্বাভাবিকীকরণে ব্যস্ত।
.
জাতীয় পত্রিকার পাতায় কিশোর-কিশোরীদের আজ শেখানো হচ্ছে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে কোনো .সমস্যা নেই, এটিই প্রকৃতির নিয়ম। পত্রিকাগুলোর ফিচারে ধাপে ধাপে শেখানো হচ্ছে কীভাবে নতুন বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের কাছে সাবেকের কথা বলা যায়।
.
শেখানো হচ্ছে কীভাবে ‘মধ্যযুগীয়’ রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আধুনিক হওয়া যায়। কীভাবে নতুন ব্র্যান্ডের সেলফোনের মতো, বারবার নিজের শরীর আর মনের জন্য নতুন নতুন প্রেম খুঁজে নেওয়া যায়। শেখানো হচ্ছে সমকামিতাকে অধিকার হিসেবে দেখতে, পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা রূপান্তরকামিতাকে মানবাধিকারের নামে মেনে নিতে।
.
এটাই এখন নরমাল। এটাই রীতি। নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল, মিউযিক ইন্ডাস্ট্রি, পর্ন ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন–এই উদার ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বব্যবস্থা প্রতিনিয়ত যৌনতার উস্কানি দিয়ে চলেছে। যেন দুনিয়ার সব সুখ, সব আনন্দ কেবল যৌনতায়।
.
এই বিকৃত, মিথ্যা অভিনয়, অতিরঞ্জিত, কল্পিত চিত্র দেখে তোমাদের মগজধোলাই হয়ে গেছে। তুমি ভাবো তোমার যেসব বন্ধুরা সেক্স করছে তারা চুটিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করছে। সেই লেভেলের মজা করছে। তোমার যেহেতু গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড নেই, তাই তুমি কিছুই করতে পারছো না। লাইফকে উপভোগ করতে পারছো না। তাই তোমার প্রেম করতেই হবে। মাস্ট!
.
যা একসময় ছিল অগ্রহণযোগ্য, সমাজ ও মিডিয়ার ক্রমপরিবর্তনশীল আপেক্ষিক নৈতিকতা অনুযায়ী তা-ই আজ নিয়মে পরিণত হয়েছে। যেই যিনা-ব্যভিচার ছিল অপমানের, লজ্জার, লুকিয়ে রাখার, তা এখন গর্ব, মর্যাদার ও ঘোষণা করার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
তাই আসমান ও যমীনের মালিকের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে আজ মানুষ জোর গলায় বলে–প্রেমই তো করছি, কোনো অপরাধ তো করছি না! অথবা কেউ হয়তো বলে বসে–‘আমরা সত্যি সত্যি একে অপরকে ভালোবাসি’–আর সত্যি ভালোবাসার ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া বিধান বদলে যায় কি না, এর জন্য আলাদা কোনো হিসেব আছে নাকি, সেটা নিয়ে চিন্তায় ফেলে দেয়।
.
কিংবা টেনে আনা হয় সেক্যুলার সমাজের সবচেয়ে প্রিয় যুক্তি, স্বাধীনতাকে। মাই লাইফ মাই রুলস–মন যা চায় তাই করবো, বাধা দেওয়ার তুমি কে?
.
বারবার শুনতে শুনতে, দেখতে দেখতে, তোমরাও হয়তো এই যুক্তিগুলো মেনে নিয়েছো। হয়তো চেষ্টা করেছো এই যুক্তির মধ্য দিয়ে নিজের কাজগুলোর অজুহাত দাঁড় করাতে। বন্ধুদের আড্ডায়, অনলাইনের কোনো তর্কে, নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে কনভিন্স করতে, কিংবা নির্ঘুম রাতে নিজের বিবেকের খচখচানিকে চাপা দেওয়ার জন্যে–কোনো না কোনো প্রেক্ষাপটে তুমিও হয়তো চেষ্টা করেছো এই যুক্তিগুলো টেনে নিজের ভুলগুলোর সঠিক সমীকরণ বানাতে।
.
কিন্তু মিডিয়া আর সমাজের তৈরি করা আপেক্ষিক নৈতিকতার বুলিগুলো আওড়ানোর সময় তুমি কি চিরন্তন, শ্বাশ্বত নৈতিকতার কথা চিন্তা করো? যে নৈতিকতা ঠিক করে দিয়েছেন তোমার মালিক? তুমি কি সেই পবিত্র সত্ত্বার কথা চিন্তা করো যাঁর কাছে অণু-পরমাণু পরিমাণ কাজেরও হিসেব দিতে হবে? যার কাছে, ‘সবাই করছিলো তাই আমিও করেছি’–এই যুক্তি দিয়ে পার পাওয়া যাবে না? যার কাছে মিথ্যা বলা যাবে না? যার সামনে যুক্তির পসরা সাজিয়ে বসা যাবে না?
.
হরমোনের জোয়ারে, শরীরী সুখের উন্মত্ততায় হয়তো সেই পরম করুণাময়ের কথা তুমি ভুলে বসেছো। হয়তো তাঁর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়েছো নিজের বিবেকের জ্বালা অবশ করতে। হয়তো নষ্ট সভ্যতা তোমাকে সেই মালিকের কথা আর তাঁর দেওয়া শিক্ষাকে ভুলিয়ে দিয়েছে, যে শিক্ষাকে তুমি তোমার হৃদয়ের ভেতর সত্য হিসেবে জানো।
.
তাই তোমাদের মনে করিয়ে দেই....
.
.
প্রবন্ধ: শরীরে বৃষ্টির মতো মোহ
বই: আকাশের ওপারে আকাশ
- Asif Adnan ভায়ের ওয়াল থেকে নেওয়া



Previous Post