উসমানী খেলাফতের স্বর্ণকণিকা | লেখক : আইনুল হক কাসিমী | Islamic Book Bangla PDF

উসমানী খেলাফতের স্বর্ণকণিকা |  লেখক : আইনুল হক কাসিমী

বইয়ের নাম : উসমানী খেলাফতের স্বর্ণকণিকা 
লেখক : আইনুল হক কাসিমী

প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৫০
মুদ্রিত মূল্য : ২৬০ টাকা

বইয়ের ধরণ : ইসলামের ইতিহাস, উসমানী সম্রাজ্যের ইতিহাস
বিষয়বস্তু : উসমানী সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অনবদ্য কিছু কাহিনীর সংকলন।

উসমানী খিলাফাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :

ত্রয়োদশ শতাব্দী। আনাতোলিয়া। রূমের সেলজুক সম্রাজ্যের ভগ্নদশা। ক্রুসেডের যুদ্ধ ও মোঙ্গলদের হামলায় জর্জরিত-দিশেহারা মুসলিম উম্মাহ। অতীত গৌরব ও আধিপত্য স্তিমিত হয়ে আসছে। কিন্তু এই সংকটের মাঝেই আনাতোলিয়ার বুকে এক নতুন শক্তির আগমন হতে যাচ্ছিল তা হয়ত অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল। তারা জাতিতে ছিল তুর্কি। গোত্রগতভাবে বসবাস ছিল তাদের।সাহসী, পরিশ্রমী ও ঈমানদার। এমন একটি গোত্রের প্রধান ছিল আরতুগ্রুল গাজী। মোঙ্গলদের হামলায় নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করে আনাতোলিয়ায় আশ্রয় নেয়া একদল তুর্কি-মুসলিম পশুপালক গোত্রের হাতেই আল্লাহর ইচ্ছায় পরবর্তী কয়েকশো বছর ইসলামের পতাকা সমুন্নয় ছিল।

Bangla Book উসমানী খেলাফতের স্বর্ণকণিকা

১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ।বর্বর মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের হাতে বাগদাদের পতন হলো। আব্বাসীয় খিলাফাতের স্বর্ণযুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকী ছিল শুধু এই নির্মম পরিণতি। ২০ লক্ষ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।এককালের "House of Wisdom" পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে।

ঠিক সে বছরই আরতুগ্রুল গাজীর ঘর আলো করে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। সন্তানের নাম রাখা হয়।এই সন্তানই ছিল ভবিষ্যতের উসমান গাজী যার হাত ধরে শুরু হয় উসমানী সম্রাজ্যের যাত্রা। একে একে উসমানী সম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে পুরো আনাতোলিয়া, আরব, শাম, লেভান্ত, হেজাজ, মিসর, সমগ্র উত্তর আফ্রিকার উপকূল, ক্রিমিয়া, আর্মেনিয়া ও পূর্ব ইউরোপ।


 একসময় লাভ করে খিলাফাতের দায়িত্ব। দীর্ঘ ৬০০ বছর তারা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছিল। মহা প্রতাপের সাথে দীর্ঘকাল তিন মহাদেশ শাসণ করে উসমানীরা। সুলাইমান আল কানুনির শাসনামল ছিল তাদের স্বর্ণযুগ। 

তবে তার শাসণামল শেষ হবার পর থেকেই সম্রাজ্যের গতি ধীর হতে থাকে। অন্তর্দ্বন্দ, বহিঃশত্রু, প্রাসাদের ষড়যন্ত্র, ভোগবিলাস ধীরে ধীরে তাদের শক্তি খর্ব করতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের মানচিত্র ছোট হয়ে আসতে থাকে। 

শেষদিকে হাতেগোনা অল্পকয়েকজন যোগ্য শাসক বাদে সম্রাজ্য খুব বেশি যোগ্য শাসক পায়নি। ১৯১৪ সালে সম্রাজ্য রক্ষার জন্য জার্মানির পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে এবং অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের পরও পরাজয় বরণ করে।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি কতৃক সালতানাত এবং ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে খিলাফাত বিলুপ্ত করা হয়। এটিই ছিল মুসলিমদের শেষ খিলাফাত এবং শেষ ইসলামী শাসন।

আরো দেখুনঃ 


উসমানি নৌবাহিনীর প্রধান খাইরুদ্দিন পাশা বারবারোস এর ইতিহাস
 উসমানী খিলাফতের পুরাতন কিছু ছবি 

দিরিলিস আরতুগরুল:  উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা 

64


উসমানী খেলাফতের স্বর্ণকণিকা সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা : 


মুসলিমদের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদী শাসণকাল উসমানী সম্রাজ্যের শাসণামল। তিন মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত এই সম্রাজ্য দীর্ঘকাল মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বদান করে। 


উসমানী সম্রাজ্যের দীর্ঘ ৬ শতাধিক বছরের শাসণামল হাজারো বিস্ময়কর ইতিহাসের উপাখ্যানে পরিপূর্ণ। তেমনি এককালের প্রভাবশালী এই সম্রাজ্য নিয়ে ইতিহাসের বিকৃতিও নেহায়েত কম হয়নি। আরব-তুর্কি জাতীয়তাবাদের উত্থানে আরবরা যেমন তুর্কিদের শোষক ভাবতে শিখেছে তেমনি তুর্কিদের কাছে আজ আরবরা বিশ্বাসঘাতক।আনাতোলিয়া বাদে অন্যান্য যেসব অঞ্চলে উসমানী শাসণ বজায় ছিল তারা তো বটেই খোদ তুর্কিদের কাছেই ঈমানী চেতনার এসব শাসকদের ইতিহাস ভুলে যাবার মত অবস্থা।

 উসমানী সম্রাজ্যের মহান শাসকদের, ইনসাফের শাসণামল, সম্রাজ্যের বিভিন্ন ঈমানদীপ্ত ঘটনার চমৎকার একটি সংকলন এই বই।

যেকোনো শেকড়সন্ধানী পাঠক বইটি দ্বারা উসমানী সম্রাজ্যের সাথে নতুন রূপে পরিচিত হতে পারবে।জাতীয়তাবাদ ও সম্রাজ্যবাদের মোড়কে উসমানী সম্রাজ্যের হারিয়ে যেতে বসা ঈমানদীপ্ত কাহিনীগুলো পাঠককে তখনকার সুলতানদের, মানুষদের ইসলামী চেতনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম হবে।

সুলতান প্রথম উসমানের বিস্ময়কর স্বপ্নের মতই তার প্রথমদিকের উত্তরসূরিদের জীবনও ছিল বিস্ময়কর। সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ আল্লাহর নামে পানির জাহাজ ডাঙ্গায় চালিয়ে দখল করেছিলেন কন্সট্যান্টিনোপল। 


সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে পোশাকের ধুলোবালি একটি শিশিতে জমিয়ে রাখতেন কেবল নাজাতের জন্য। সুলতান সুলাইমান আল কানুনি কবরে গিয়েছিলেন তার দেয়া সমস্ত ফরমান ও শায়খুল ইসলামের ফতোয়ার দলিল-দস্তাবেজ সাথে করে। সুলতান চতুর্থ মুরাদের আমলের আল্লাহর এক ঈমানী বান্দার কাহিনী পড়েছিলাম অনেক আগে যা এই বইয়ে খুব সুন্দরভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। 

এক ব্যক্তি নিয়মিত পানশালা, সরাইখানায় গমন করত, কিন্তু পাপাচারে লিপ্ত হতে নয়; বরং কিছুটা হলেও অন্যের পাপাচারে বাধা দিতে। তার স্ত্রীর আশংকা ছিল যে তার স্বামীর মৃত্যুর পর কেউ তার জানাজা পড়াবে না।কিন্তু সেই ব্যক্তি স্মিত হেসে বলেছিল যে আল্লাহ চাইলে স্বয়ং সুলতানই তার জানাজা পড়াবেন। আল্লাহ তার বান্দার ইচ্ছা কবুল করেছিলেন। 

উসমানী সম্রাজ্যের শেষ প্রতাপশালী সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের কাছে ইহুদীররা ফিলিস্তিনের বিনিময়ে লোভনীয় এক প্রস্তাব নিয়ে আসলেও তিনি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। 

ফ্রান্সে যখন ইসলামবিরোধী নাটক মঞ্চায়িত করার তোড়জোড় চলছিল তখন খলিফা আবদুল হামিদের হুঙ্কারে ফ্রান্স তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।ইতিহাসের লুকানো এমন আরো বিস্ময়কর অধ্যায় উঠে এসেছে বইটিতে।



লেখক পরিচিতি :- আইনুল হক কাসিমী


আইনুল হক কাসিমী। তরুণ আলেম,অনুবাদক। জনপ্রিয় অনলাইন লেখক। ১৯৯২ সালের ২০ অক্টোবর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।


ব্যক্তিগত মতামতঃ
ব্যক্তিগতভাবে ইতিহাসের অনুরাগী হিসেবে সবসময়ই নির্ভরযোগ্য ইতিহাস অনুসন্ধান করে এসেছি।


আমাদের অতীত ইতিহাসের অনেককিছুই ওরিয়েন্টালিস্টদের দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে, ইতিহাসের বিকৃতি করা হয়েছে।

 মুসলিমদের নানা অজানা অধ্যায় হারিয়ে গেছে। উসমানী খিলাফাত নিয়েও বিকৃতি কম হয়নি।

 কোন পশ্চিমা ঐতিহাসিক মুসলিমদের গৌরবময় কাহিনীগুলোকে তুলে ধরে না, ঈমানদীপ্ত কাহিনীগুলো ইতিহাস হিসেবে স্থান পায় না। 

আইনুল হক কাসিমী ভাইয়ের লেখা বইটি সেরকম কিছু গৌরবময় অতীতের কাহিনীতে ভরপুর যা কিছুটা হলেও অতীত গৌরবকে অনুভব করার সুযোগ করে দিবে। 
ব্যক্তিগতভাবে ৫ এ ৪.৫ দেয়ার মত একটি বই।

কালান্তর প্রকাশনীর বই বাঁধাই ও পৃষ্ঠার মান যথেষ্ট ভাল। যদিও বানান এবং তথ্যে কিছু ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়। আমার মতে বইয়ের বিষয়বস্তুর বেশি উপরই নির্ভর করে বইয়ের মান, বানানের উপর নয়।

যদিও বইয়ের নাম "উসমানী খেলাফতের স্বর্ণকণিকা", তবে বইয়ের সিংহভাগ কাহিনী উসমানী সম্রাজ্যের খিলাফাত লাভের পূর্বেকার। তাই বইয়ের নামটি নিয়ে কিঞ্চিত আপত্তি ছিল। তবে বইটি অবশ্যই সুখপাঠ্য এবং চমৎকার কিছু ঈমানদীপ্ত কাহিনীতে ভরপুর।
Next Post