দিরিলিস আরতুগরুল: উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা PDF Download

দিরিলিস আরতুগরুল:  উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা -  Ainul Haque Qasimi


আরতুগরুল। উসমানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজির পিতা। সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজি হলেও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন কিন্তু আরতুগরুল। তিনি অঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত কায়ি গোত্রপতি সুলাইমান শাহর সুযোগ্য সন্তান।

১২৮৮ সালে সুগুতে তিনি যে জায়গির রেখে মারা গিয়েছিলেন, ১২৯৯ সালে সে জায়গিরটাকেই প্রশস্ত করে উসমান গাজি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাম্রাজ্য। এজন্য উসমানি ইতিহাসে আরতুগরুলের এত কদর। আলাদা সম্মান।

উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা আরতুগরুল Ebook PDF Download



আরতুগরুল শব্দটি তুর্কি। অর্থ সাহসী পুরুষ। তার নাম যেভাবে, তিনি ছিলেনও সেভাবে। বাবা সুলাইমান শাহ আর মা হাইমাহ আনার তত্ত্বাবধানে তিনি বড় হন। যাযাবরি পরিবেশে। তার জীবনের প্রতিটি পদে, প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি কোষে ও ভাঁজে ছিল মা-বাবার সুষ্ঠু লালনপালন। এজন্য তিনি তার অপরাপর ভাই সুনগুর তেকিন, গুনদুগদো ও দুনদার বেগের চেয়ে অধিক যোগ্যতা ও গুণাবলির অধিকারী ছিলেন। এজন্য পিতার পরই তিনি নেতা নির্বাচিত হন। অথচ, তিনি ভাইদের মধ্যে বড় ছিলেন না; ছিলেন সেজো!

সুলাইমান শাহর মৃত্যুর পর আরতুগরুল হন কায়ি গোত্রের নেতা। এই কায়ি হলো অঘুজ তুর্কি বংশের বড় বড় ২৪ টি গোত্রসমূহের একটি অন্যতম গোত্র। কায়ি শব্দের অর্থ হলো শক্তি ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এই গোত্রের প্রতীক ছিল সিনকির নামীয় একপ্রকার বিশালাকৃতির বাজপাখির আকৃতি। আবার তাদের পতাকার মধ্যে IYI আকৃতির একটি চিহ্ন দেখা যায়। এই চিহ্নের মধ্যে মাঝখানের Y দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ধনুক আর আশপাশের দুটি II দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তীর। এতে বুঝা যায়, কায়ি গোত্র ছিল একটি যোদ্ধা জাতি।


মধ্য এশিয়ায় মোঙ্গলদের আক্রমণের পর জীবন বাঁচানোর তাগিদে অন্যান্য তুর্কি জাতীগোষ্ঠীর মতো কায়ি গোত্রও পশ্চিমদিকে হিজরত করে। তারা উত্তর ককেশাসের পাহাড়ি গিরিকন্দর, মাঠঘাট, বনবাদাড় আর তেপান্তর পেরিয়ে আনাতোলিয়ার আখলাতে এসে আশ্রয় নেয়। এ গোত্রের কিছু লোক চতুর্দশ শতাব্দীকালকাল বা তারও পরবর্তীকাল পর্যন্ত বলকানে বসবাস করে। বর্তমান তুরষ্কের বিলেচিক (Bilecik) প্রদেশের সুগুত হলো কায়ি গোত্রের স্বর্গরাজ্য। আরতুগরুল তার গোত্র নিয়ে এখানেই জায়গির প্রতিষ্ঠা করেন।

আফসোসজনক হলেও সত্য যে, ইতিহাসের কিংবদন্তি এই আরতুগরুলের জীবনেতিবৃত্ত খুব বেশি পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়, তাতে বেশিরভাগই মিথ্যার বেসাতি। কারণ, ১৪০২ সালে উসমানি সুলতান প্রথম বায়েজিদের আমলে খোঁড়া পায়ের বিশ্বজয়ী তৈমুর লঙ যখন আংকারায় হামলা করেন, তখন আগুন লাগিয়ে সব জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেন। এতে করে উসমানি সাম্রাজ্যের প্রাথমিক সব নথিপত্র ও ইতিহাস পুড়ে যায়। আবার তখন কে জানত যে, আরতুগরুল একদিন ইতিহাসের কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন? নইলে তো শুরু থেকেই তার ইতিহাস সংরক্ষিত করে রাখা হতো!

গোটা বিশ্বে আজ আরতুগরুল পরিচিত। অপরিচিত বললেই হবে না; বলতে গেলে তাকে নিয়ে রীতিমতো মাতামাতি চলছে। শুধু উসমানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারীর পিতা হিসেবে নয়; উসমানি সাম্রাজ্যের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে। প্রথম বীজ বপনকারী হিসেবে। এই সেই উসমানি সাম্রাজ্য, যেটি পুরো এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মতো তিন মহাদেশকে শাসন করেছে ছয় শতাধিককাল। আর তাইতো আরতুগরুলের জীবন নিয়ে তুরস্কে নির্মিত হিয়েছে ঐতিহাসিক সিরিয়াল--দিরিলিস আরতুগরুল। যা বিশ্বেরবিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং হয়ে পুরো বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তবে এটায় সত্যের চেয়ে মিথ্যা বেশি। কল্পনাশ্রীত।

ইতিমধ্যে আরবি ও অন্যান্য বেশ কিছু ভাষায় আরতুগরুলের সঠিক ইতিহাস-নির্ভর বই লেখা হয়ে গেছে। উম্মাহ জানতে পারছে, মহান এই নায়কের সত্যাশ্রিত জীবনবৃত্তান্ত। কিন্তু অভাব থেকে গিয়েছিল আমরি বাংলাভাষায়। সেই অভাব পূরণ করতে কয়েকমাস পূর্বে আমি কলম ধরেছিলাম আরতুগরুলের জীবনেতিবৃত্ত নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ, বই এখন শেষের দিকে। কিছুদিন পরই হাতে পেয়ে যাবেন।

ইনশাআল্লাহ, এবারের বইমেলায় আসছে> {উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা : আরতুগরল}। বইটি প্রকাশ করছে পুনরায় প্রকাশন। এটি একটি নতুন প্রকাশনী। আরতুগরুলকে দিয়েই তাদের যাত্রা শুরু হবে। লাইক দিয়ে পাশে থাকুন।


রোমানিয়ার দ্বিতীয় ভ্লাড ওরফে ড্রাকুলা।
রোমানিয়ার সিগিসমুন্ড অব লুক্সেমবার্গ।
রোমানিয়ার আর্নেস্ট রুডিগার ভন স্টারহ্যাম্বার্গ।
হাঙ্গেরির জন হুনয়াদি।
আলবেনিয়ার সেকান্দারবেগ।
আলবেনিয়ার জর্জ আরিয়ানিতি।
গ্রিকের নিকিতাস স্তামাতেলোপাওলোস ওরফে তুর্কোফাগস।
ভেনিসের বাজো পিভলজানিন।
মন্টিনেগ্রোর মার্কো মিলজানোভ।

এদের নাম শুনেছেন কখনও? এরা সকলেই ইউরোপের নামকরা ক্রুসেডার সেনাপতি। মুসলমানদের রক্তখেকো। উসমানি সাম্রাজ্যের ভয়ঙ্কর শত্রু। উসমানিদেরকে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করার জন্য এদের প্রত্যেকেই জীবন বাজি রেখেছে। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে নিয়ে ঊনবিংশতি শতাব্দী পর্যন্ত এদের কেউ না কেউ পুরো ইউরোপের হয়ে লড়েছে উসমানি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন প্রান্তরে হাজার হাজার উসমানি সৈন্যের রক্ত ঝরিয়েছে! ঘুম হারাম করেছে উসমানি সুলতানদের!

উসমানি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এদের ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত ইতিহাস পড়তে গেলে শরীরের সবগুলো লোম খাড়া হয়ে যায়। কতইনা বিষাক্ত ছিল এরা! যুগের পর যুগ এদের মতো একেকজন কুখ্যাত ক্রুসেডারের মোকাবেলা করতে হয়েছে উসমানি সাম্রাজ্যের।

অনেক রক্তনদী পেরিয়ে না হয় উসমানিরা ইউরোপের মাটিতে টিকিয়ে রেখেছে স্বীয় ক্ষমতা। আজকে যে আমরা ইউরোপের জমিনে ইসলাম দেখতে পাই, তা কি এমনি এমনিই হয়েছে? ইউরোপে ইসলাম ঠেকাতে এসব বিষাক্ত ক্রুসেডাররা কী না করেছে?

কী একটা কঠিন সময় ও বৈরি পরিস্থিতি পাড়ি দিয়ে সামনে বাড়তে হয়েছে উসমানি সাম্রাজ্যের। এ দিকটা কি আমরা জানি? আমরা যারা উসমানি সাম্রাজ্যের ইতিহাস পড়ুয়া, তারা কি এই রক্তাক্ত অধ্যায়গুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল? এসব জঘন্য ক্রুসেডারদের মোকাবেলায় উসমানিদের ত্যাগের ফিরিস্তি পড়লে, তাদের শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।

আসলে এসব ইতিহাস আমাদের প্রায় সকলের অজানা। এসব ইতিহাস বেশিরভাগই ল্যাটিন, জর্জিয়ান, সিরিলিক ও তুর্কিভাষাতেই লেখা। আরবি ও ইংরেজিতে খুবই কম রূপান্তরিত হয়েছে।

 বাংলায় তো নেই-ই! কেউ যদি এ বিষয়ে বিস্তর পড়াশোনা করে, এসব বিষাক্ত ক্রুসেডারদের সাথে উসমানিদের ত্যাগের ফিরিস্তি নিয়ে আসত, তাহলে উম্মাহ জানতে পারত--ইসলামের জন্য উসমানিদের অবদানকে।

উল্লেখ্য, আমি আমার প্রকাশিত 'নব্যক্রুসেডের পদধ্বনি' বইয়ে এসব ইতিহাসের কিয়দংশ আলোকপাত করেছি। তবে তা যৎসামান্য। প্রয়োজনানুরূপ। আরও বিস্তারিত হওয়া প্রয়োজন। পারলে কেউ হাত দেন। উম্মাহ জানুক, বুঝুক, উপলব্ধি করুক।

আরো পড়ুনঃ 
Next Post Previous Post