বই:আমেরিকা মুসলমানদের আবিষ্কার - লেখক:মূসা আল হাফিজ

বই:আমেরিকা মুসলমানদের আবিষ্কার - লেখক:মূসা আল হাফিজ

বই:আমেরিকা মুসলমানদের আবিষ্কার

বই:আমেরিকা মুসলমানদের আবিষ্কার।লেখক:মূসা আল হাফিজপ্রকাশনা:কালান্তর প্রকাশনীপৃষ্ঠা:১১১মুদ্রিতমূল্য:২০০টাকা



"আমেরিকা মুসলমানের আবিষ্কার" রজব তাইয়্যেব এরদোগান যেদিন এ ঘোষণাটি দিলেন,সেদিন অমুসলিমদের পাশাপাশি অনেক মুসলিমও হতবাক হন!এটি কীভাবে সম্ভব?আমেরিকা আবিষ্কার তো একজন অমুলিম কলম্বাসের।মুসলিম ইতিহাসের সাথে এর কতটুকু সম্পৃক্ততা?এধরণের প্রশ্ন ওঠে আসাই স্বাভাবিক।কারণ পশ্চিমা সভ্যতা বিজয়ী হবার পর তারা নিজেদের মত করেই ইতিহাস সাঁজিয়েছে।তাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে মুসলমানদের শতসিদ্ধ ইতিহাস।এরই মাঝে সবচে' বিলুপ্ত হয়েছে কলম্বাসের আগে আমেরিকান মুসলিম সভ্যতার ইতিহাস।জনাব এরদোয়ান ঘোষণাটির পর আধুনিক ইতিহাসে হেঁচকা খায়।বহুবছর পরে এসে চেপে রাখা এ ইতিহাসটি বিভিন্ন ভাষায় গবেষণা হয়।বাংলা ভাষায়ও গবেষণা-ঋদ্ধ দু'টি বই প্রকাশিত হয়েছে।তন্মধ্যে একটি খ্যাতিমান কবি ও গবেষক মূসা আল হাফিজের "আমেরিকা মুসলমানদের আবিষ্কার"বইটি।

এক.
অভিযানের প্রেরণা:
কলম্বাস তখন ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার বাহিনীতে।যেদিন মুসলিম স্পেনের শাসক আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার কাছে আত্মসমর্পণ করেন,৭৮০ বছরের গৌরবদীপ্ত মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে।স্পেন থেকে মুসলিম শাসন উৎখাত ইউরোপে আনে নতুন প্রাণবন্যা।কলম্বাসের সামনে উন্মুক্ত করে সৌভাগ্যের নতুন জানালা।নতুন পরিস্থিতিতে রাজা-রাণীকে তিনি বুঝাতে সক্ষম হন তার লক্ষ্য -উদ্দেশ্য।তিনি ভারত অভিযান করে।প্রভুত সম্পদ এতে লাভ হবে।নতুন রাজ্য অর্জিত হবে । প্রচার হবে ধর্মের।বিনাশ হবে মোহামেডান তথা মুসলিম শত্রুগণ।রাজা-রাণী যদি খরচ বহন করেন তাহলেই লক্ষ্য অর্জিত হবে।এর আগে কয়েকবার তিনি এই প্রকল্প নিয়ে ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার দরবারে গিয়েছিলেন।১৪৮৫ সাল থেকে চলে আসছিল এই ধারা।প্রতিবারই তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।কিন্তু এখন সময় বদলেছে।

দুই.
কলম্বাস একজন ধর্মযোদ্ধা ও ধর্মপ্রচারক এবং একজন বণিক ও অভিযাত্রী হিসেবে নিজেকে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন।তাই পাদ্রীগণও অভিযানের কথা জোর দিলেন।এদিকে মুসলিম সালতানাতের অনুকরণে ইউরোপে চালু হয়েছিল সোনার মুদ্রা।তখন সোনার প্রতি সকলের কাছে ছিল প্রবল অভিপ্রায়।কলম্বাসের বক্তব্যে ফুটে ওঠে স্বর্ণ-মুদ্রা লুণ্ঠন,খ্রিষ্টবাদের বিস্তৃতি,মুহাম্মদি বিশ্বাসের অপসারণ, ইউরোপের সাথে এসিয়ার নতুন সংযোগ ইত্যাদি।অবশেষে এসবের কারণে রাজদরবার থেকে অনুমতি মিলল।

তিন.
যাত্রা শুরু করবে কলম্বাস।কিন্তু ভৌগলিক জ্ঞান দরকার।এর জন্য দারস্থ হলো মুসলিম ভৌগলিকদের বইয়ের প্রতি।পথের দিশা খুঁজতে লাগলো মুসলিম ভৌগলিকদের দেখানো পথ থেকে।মূলত মুসলিমদের এই ভৌগলিক চিন্তাধারার বিকাশ না ঘটলে ইউরোপের সমুদ্র জয় সম্ভব হতো না।কলম্বাস-ভাস্কো ডাগা মাদের সাফল্যও হতো না।কলম্বাস যে পথ দিয়ে আটলান্টিকে যাত্রা করবে সে পথের নির্দেশনায় ছিল মুসলিম সুত্রাবলি।ঘন কোয়াশা ভরা আটলান্টিকে যাওয়ার অভিযাত্রার সামনে অগ্রাধিকার পেলো মুসলমানদের কম্পাস চার্টি।এ সম্পর্কে সবচে' অভিজ্ঞ ছিলেন মুসলিমরাই।এর জন্য কলম্বাস সাহায্য নিল বেইঞ্জার পরিবারের কাছে।

চার.
কিন্ত আমেরিকা আবিষ্কার মুসলমানদের হাতে।কলম্বাসের আগেই মুসলিমরা আটলান্টিকের পথে যাত্রা করে ছিল । মুসলমানেরা শিকড় গেরে আমেরিকায় সমুদ্রেরবিক্ষুদ্ধ উত্তাল তরঙ্গে দিশেহারা হয়ে যায় নাবিক।অর্ণবপোতের পাল ছিড়ে যায়।অবশেষে এক দ্বীপে গিয়ে পৌঁছে।বলা হয়, ইসলাম বিজয়ের প্রায় প্রথম প্রহরেই আটলান্টিক অতিক্রমের অভিপ্রায় হয় মুসলমানদের।প্রশ্ন উঠেছিল,মুসলিমরা কখন পৌঁছে ছিল আমেরিকায়?এর উত্তরে চার্লস গডফ্রে লেলান্ড বলেন,হিজরীর প্রথম শতকেই এসেছিল।আরবদের ভাষ্যের দাবী অনুযায়ী ওকবা বিন নাফে' রা: সর্বপ্রথম আটলান্টিক সমুদ্র পারি দেওয়ার অভিপ্রায় পোষণ করেন।পরবর্তীতে
আব্দুল্লাহ ও মোবারক নামীয় দুই আরব নাবিক সন্ধ্যান পান আমেরিকার।আমেরিকার বিখ্যাত ঐতিহাসিক S. Frederik Starr আবু রায়হান আল বেরুনি কে আমেরিকার আবিষ্কারক বলে অভিহিত করেন।

পাঁচ.
কলম্বাস আমেরিকা পৌঁছার পূর্বেই সেখানে মুসলিম সভ্যতার প্রতুল প্রত্ন ও নিদর্শন ছিল।কলম্বাস প্রচুর ঝিনুক,মুদ্রা, ফলফলাদি ও নরকঙ্কাল দেখতে পায়।সেগুলো নিজের ডাইরীতেও লিপিবদ্ধ করে রাখে।পরবর্তীতে বিষেজ্ঞো গবেষণা করে বলেন এগুলো প্রাচ্য থেকে আগত।আমেরিকার শহরের নাম আছে যেগুলো মুসলমানদের উপস্থিতির সাক্ষর রাখে।শত শত বছর ধরে আমেরিকায় বহু মক্কা-মদিনা নামক শহর আছে।যেগুলো পূর্ববর্তীতে মুসলমানদের প্রভাবের কথা বলে।আমেরিকার আদিবাসী বিভিন্ন সম্প্রাদয়ের নিত্যদিনের ভাষা বিষয়ক সুত্রসমুহ পর্যালোচনা করে ড. বেরি উল্লেখ করেন,বহু আরবী শব্দ করেন তারা।সেসব শব্দের অনেকটা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে আমেরিকার জীবনে।ড.বেরি এমনই বহু শব্দ উল্লেখ করেন তার একটি গ্রন্থে।যেমন:ওয়াতন(ভূমি),সেকায়া(পানি পান),ইয়া আয়াহ(কী আশ্চার্য) প্রবৃতি।

পাঠপ্রতিক্রিয়া,
কলম্বাস মুসলমানদের এসব স্মৃতিসাক্ষরকে মুছে অভিনব কিছু নাম দিয়ে নিজেকে আমেরিকার আবিষ্কারক বলে অভহিত করে।বিশ্বাস ঘাতকতা করে মুসলমানদের সাথে।আর এদিকে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমারা দাবী করে বসে,কলম্বাসের আগে আমেরিকা ছিলো অনাবিষ্কৃত।বইটিতে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত আছে যেগুলো কলম্বাসের নেপথ্য কর্মকে দিবালোকের মত স্পষ্ট করে তুলে।বই কলম্বাস প্রসঙ্গে পশ্চিমাদের অহেতুক হৈ চৈ য়ে নিস্তব্ধতা এনে দিয়েছে।বইটিতে উন্মেচিত করে তুলে ধরা হয়েছে মুসলমানদের শতসিদ্ধ ইতিহাস।
মাহফুজ আকন্দ,
Next Post Previous Post