Bangla Islamic Book Darul Ulum Deobonder Shotru Mitru

 দারুল উলূম দেওবন্দের শত্রু-মিত্র



আজকে যে বইটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব, সেটি আমার পড়া সেরা ‘আত্মসমালোচনা মূলক বই।’
বইটি "দারুল উলূম দেওবন্দ" সংশ্লিষ্ট সবার পড়া উচিত বলে মনে করি। 
আর যেসব ভাইয়েরা দূর থেকে দারুল উলূম দেওবন্দের উত্তরসূরিদের ইলমী ও আমলী অবস্থান নিয়ে আপত্তি করছেন, তাদেরও অনুরোধ করবো বইটি পড়ে দেখতে। আশাকরি সন্দেহের নিরসন হবে। ইনশাআল্লাহ। 
এবার তবে বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করি। 

বইয়ের নামঃ দারুল উলূম দেওবন্দের শত্রু-মিত্র।লেখকঃ ‘মাওলানা’ যুবায়ের হোসাইন।প্রকাশকঃ মাকতাবাতুস সিদ্দীক।প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর ২০১৭ খৃষ্টাব্দ।মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা।পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৮৮ পৃষ্ঠা।


১.
এটি ‘দারুল উলূম দেওবন্দের উপর আরোপিত আপত্তির জবাব সিরিজের’ দ্বিতীয় খন্ড। ভূমিকা হিসেবে চারপৃষ্ঠা ব্যাপী বইয়ের চয়নিকা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো পড়লেই ধারণা করা যাবে পুরো বইয়ের অবস্থা। ইলমী মহলের বেশকিছু 'উপেক্ষিত' জরুরী বিষয়ের অবতারণা করেছেন লেখক। যা থেকে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে নেয়া উচিত। তাও সম্ভব না হলে, অন্তত পরাজিত মানসিকতাকে ঘৃণা করতে শিখা উচিত।

২.
লেখক সম্পর্কে আমার বিস্তারিত জানা নেই। যতদূর শুনেছি, তিনি একসময় মারকাযুদ দাওয়াহর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তবে লেখকের লেখা পড়ে আমার মনে হলো লেখক মুহাক্কিক, মু'তাদিল, সচেতন, দরদী ও দূরদর্শী একজন ব্যক্তি। মন থেকে দুয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁর তাসনীফি খেদমতে বরকত দান করেন। অন্তত একবার হলেও তাঁকে দেখার ও তাঁর সুহবত গ্রহণের সুযোগ যেন আল্লাহ আমাকে দান করেন। এবং লেখককে যেন সিরাতে মুস্তাকিমের উপর মৃত্যু পর্যন্ত অবিচল রাখেন।

৩.
বইয়ের শুরুতে মুহতারাম লেখক তাঁর হৃদয়ের কিছু ব্যথা ও বেদনার কথা কলমের কালি দিয়ে নিবেদন করেছেন। যেন অশ্রুর ফোঁটা কলমের কালি হয়ে ঝরে পড়েছে। পুরো বইয়ে ব্যাপারটি আমি অনুভব করেছি। 
এরপরে দুটি কাফেলা নিয়ে আলোচনা করেন। "বড়" ও "ছোট" নিয়ে। এবং তাদের ভাবনা নিয়ে। পুরো বইয়ের মূল আবেদন বুঝার জন্য এই অংশটুকু ভালোভাবে পড়া জরুরি। 

এরপরে দারুল উলূম দেওবন্দের শত্রু-মিত্র নির্ণয় করার মাপকাঠি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, দারুল উলূম দেওবন্দ যদি দলিলভিত্তিক দ্বীন চর্চার একটি দূর্গ হয়ে থাকে, তবে দলীলমুক্ত ও ইলমমুক্ত দ্বীন চর্চাকারীরা দারুল উলূম দেওবন্দের শত্রু হবে। আর যারা ইলমে দ্বীনের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে, তারাই হবে দারুল উলূম দেওবন্দের মিত্র বা বন্ধু। 

বইয়ে ইলম ও আমলের সমন্বয়, বর্তমানের পদস্খলন খুব আমানতদারীর সাথেই উল্লেখ করা হয়েছে। সত্য গ্রহণের ও ভুল বর্জনের যে মানসিকতা আমাদের আকাবীরদের ছিল, আমাদের মাঝে তা কতটুকু আছে, তা উপলব্ধি করার সুযোগ সামনে এসে যাবে। ইনশাআল্লাহ। এই ব্যাপারে আমাদের আকাবীরদের সাহসী ও দুঃসাহসী কিছু ঘটনা লেখক উপস্থাপন করেছেন। এবং এই সিরিজের প্রথম বইয়ের উপর (দারুল উলূম দেওবন্দ; পূর্বসূরি, উত্তরসূরি) যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, ওসবের ব্যাপারে লেখক তার জবানবন্দি দিয়েছেন।

৪.
পুরো বইয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের ইলমী মানহাজ দিয়ে "বড়" ও "ছোট"-র পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। এবং তা কতটুকু ফুটে উঠেছে, তা পাঠকরাই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। বইয়ে প্রায় ১৫ টি শিরোনামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়াদি চলে এসেছে।

এরমধ্যে গ্রিক দেবী, শাপলা চত্বর-কওমী সনদ, নাস্তিক সংলাপ, রাজার দরবার- রাজার কারাগার, ইসলামি খেলাফত, প্রচলিত খতম, মুরতাদ মানসুর হাল্লাজ ও আমাদের অবস্থান এবং مراتب ترك العمل بالعلم প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। 

৫.
পুরো বইটি ইলমি খাযানায় ভরপুর। সাহসিকতা, সত্য বলার হিম্মত ও স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হকের সুস্পষ্ট উচ্চারণ যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। বইটি আলেম ও তালেবে ইলমদের জন্য বেশি উপকারী হবে বলে মনে করি। তবে অন্যরা পড়লে তেমন ক্ষতি হবে বলেও মনে হয়না। তবে দলীলগুলো বুঝতে হয়ত কষ্ট হতে পারে। বাকী সব মিলিয়ে বইটি অসাধারণ। এবং বর্তমান সময়ে এরকম বইয়ের খুব প্রয়োজন ছিল।
আমি রিভিউ লিখতে পারিনা, তবু বই নিয়ে বিক্ষিপ্ত দুইএকটি কথা বললাম। কারণ, আমি এতো চমৎকার বইয়ের সন্ধান পেয়েছি, পড়ে উপকৃত হয়েছি, তবে কেন অন্য ভাইদেরও সন্ধান দিব না! তারাও হয়তো বইটি পড়ে উপকৃত হবেন। সবাইকে সহিহ ইলম, ইলমের দাবী পূরণের ব্যাপারে সচেতন করতে লেখক খুব মেহনত করেছেন। বইয়ে কিছু টাইপিং মিস্টেক ছাড়া তেমন কোন অসংগতি ধরা পড়েনি। 
কষ্ট করে এই অগোছালো লেখা পড়ার জন্য ‘জাযাকুমুল্লাহ।’


- Shuaib Ahmad
Next Post Previous Post