হাদিসের আলোকে নবিজিকে গালমন্দ করার শাস্তি |
হাদিসের আলোকে নবিজিকে গালমন্দ করার শাস্তি | উহুদ থেকে শাপলা সর্বশেষ ভোলা
হাদিসের আলোকে নবিজিকে গালমন্দ করার শাস্তি
.
প্রথম হাদিস
ইমাম শাবি রাহিমাহুল্লাহ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে,
أَنَّ يَهُودِيَّة كَانَتْ تَشْتِمُ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- وَتَقَعُ فِيهِ فَخَنَقَهَا رَجُلٌ حَتَّى مَاتَتْ فَأَبْطَلَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- دَمَهَا
‘এক অভিশপ্ত ইহুদি মহিলা নবিজিকে গালমন্দ করত। ফলে একলোক অভিশপ্ত মহিলাটাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফেলে। নবি (সা.) মহিলার রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করেন।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৪৩৬৪]
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ, ইবনু বাত্তাহ। ইমাম আহমাদ হাদিসটি দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। আরেক বর্ণনায় এসেছে, হত্যাকারী লোকটি অন্ধ ছিলেন। হাদিসটির সনদ জাইয়িদ ও মুত্তাসিল। কেননা ইমাম শাবি রাহিমাহুল্লাহ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাত পেয়েছিলেন। আর যদি মুরসালও হয়, তবুও হাদিসটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রমাণযোগ্য হবে। কেননা ইমাম শাবি বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাগুলোও মুহাদ্দিসগণের নিকটে সহিহ। কারণ তার যত মুরসাল বর্ণনা আছে, সবই সহিহ হিসেবে প্রমাণিত।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করার কারণে অভিশপ্ত ইহুদি নারীকে কতল করার ব্যাপারে হাদিসটি একেবারেই দ্ব্যর্থহীন। আর এই হাদিসটি আরো স্পষ্টভাবে ঐ সকল যিম্মি ও মুসলিম নারী-পুরুষের রক্ত হালাল বানানোর দলিল, যারা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করে।
Download : ইসলামিক পিকচার
.দ্বিতীয় হাদিস
ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘এক অন্ধ লোকের একটি উম্মু ওয়ালাদ দাসী—যে দাসীর গর্ভে মালিকের সন্তান থাকে—ছিল। সে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করত, তাকে নিয়ে কটূক্তি করতো। একরাতে দাসীটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে কটূ মন্তব্য করছিল। তো অন্ধ লোকটি ধারালো একটি ছুরি নিয়ে দাসীর পেটে বিঁধিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চেপে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করল। এই ঘটনা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনানো হলে তিনি ওই দাসীর রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করেন।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৪৩৬৩]
.
আবু দাউদ ও নাসায়ি রাহিমাহুমাল্লাহ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ হাদিসটিকে দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। হতে পারে এই ঘটনাটা হুবহু প্রথম ঘটনা। তাহলে এই ঘটনার বাঁদিটাও ইহুদি হবে। কাযি আবু ইয়ালাসহ অন্যান্য আলিমদের অভিমত এটাই। তারা উভয় হাদিসের ঘটনাকে একই ঘটনা মনে করেন। অথবা হতে পারে এটা ভিন্ন আরেকটা ঘটনা।
.
ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وفيه بيان ان ساب النبي ﷺ مقتول وذلك أن السب منها لرسول الله ﷺ ارتداد عن الدين
‘এ হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহর নবির গালমন্দকারীকে হত্যা করা হবে। কারণ, গালমন্দ বা অমার্জিত ভাষা ব্যবহার করা ইরতিদাদ আদদীন (ইসলাম পরিত্যাগ)।’ [খাত্তাবি, মায়ালিমুস সুনান : ৩/২৯৬]
এদ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম খাত্তাবি মহিলাটি মুসলিম ছিল বলে মনে করতেন। কেননা ‘ইরতিদাদ’ হলো ইসলাম ত্যাগের নাম। অথচ হাদিসের মধ্যে এমন বুঝার কোন দলিল নেই। বরং হাদিসের বাহ্য দিক হলো মহিলাটা কাফির ছিল। কেননা হাদিসের মধ্যে উল্লেখ আছে, দাসীটার মনিব তাকে এমন ঘৃণ্য কাজ থেকে বেশ কয়েকবার নিষেধ করেছিলেন। সুতরাং দাসীটা যদি মুরতাদই হতো তাহলে তার সাথে সহবাস করা ও দীর্ঘ সময় ধরে নিজের অধিনে রাখা কোনমতেই মুসলিম মনিবের জন্য বৈধ ছিল না।
.
তৃতীয় হাদিস
হাদিসটি হলো ইহুদি কবি ও গোত্রনেতা কাব ইবনু আশরাফের ঘটনা সম্বলিত বর্ণনা। এটি একটি প্রসিদ্ধ ও স্বতঃসিদ্ধ ঘটনা। একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
«مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُولَهُ»
‘কে আছো কাব ইবনু আশরাফের জন্য (যে তার গর্দান ওড়িয়ে দেবে)? কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে।’
তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি চান আমি তাকে হত্যার দায়িত্ব নিই?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তখন সাহাবি বললেন, ‘তাহলে আমাকে কিছু কৌশলী কথা বলার সুযোগ দিন।’ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন। মুহাম্মাদ বিন মাসলামা অভিশপ্ত ইহুদি কাবের কাছে এসে বললেন, এই লোকটা (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো এখন আমাদের কাছে সাদাকাহ চাচ্ছে। লোকটা আমাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।’ কাব এই কথা শুনে তাল মিলিয়ে বলল, শুধু কি তাই, তোমরা তার ব্যাপারে আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।’ (এভাবে তারা কাবের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।) পরিশেষে তারা তাকে হত্যা করেন। [বুখারি, আসসাহিহ : ৩৮১১, মুসলিম, আসসাহিহ : ৪৭৬৫]
এ হাদিস থেকে ইমাম শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহ দলিল পেশ করেছেন যে, কোন যিম্মি যখন নবিজিকে গালমন্দের মতো অমার্জনীয় কাজে জড়িয়ে পড়বে তার শাস্তি হবে হত্যা।
.
ইহুদি কাব ইবনু আশরাফ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিন্দা গাইত আর নোংরা নোংরা অপবাদ দিত ফলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে হত্যা করার আহ্বান জানান। তার দলবল নবিজির কাছে এসে বলল, ‘আমাদের নেতা কাবকে গুপ্তহত্যা করা হয়েছে।’ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অন্যদের মতো সেও যদি সংযত থাকত তাহলে এমন ক্ষতির মুখোমুখি হত না। সে আমাদেরকে কষ্ট দিয়েছে, আমাদের ব্যাপারে কটূ মন্তব্য করেছে। তোমাদের কেউ যদি এমন জঘন্য কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তাহলে তরবারিই তার ফায়সালা করবে।’
এ পর্যায়ে ইহুদিরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কাব ইবনুল আশরাফের হত্যার পর থেক তারা পুরোপুরি সাবধানী হয়ে উঠে। এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে শুরু করে।
.
কাব ইবনুল আশরাফ তো ‘মুয়াহিদ’ বা নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। যখন গালমন্দের মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ল, নোংরা- অশালীন ও মানহানিকর মিথ্যা-বানোয়াট কথা ছড়াতে লাগল তখন তার নিরাপত্তাবিধান সে নিজেই ভেঙে দিল। এর কারণ হিসেবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُولَهُ»
‘কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে।’
সুতরাং যে কেউই আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয় তার শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা হবে। আর মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে গালমন্দ করা আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয়। সুতরাং এমন জঘন্য কর্মকান্ডে কেউ জড়ালে সে হত্যার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
.
চতুর্থ হাদিস
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَبَّ الأَنْبِيَاءَ قُتِلَ، وَمَنْ سَبَّ أَصْحَابِي جُلِدَ
‘যে ব্যক্তি কোন নবিকে গালি দেয় তার শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা হবে, আর যে ব্যক্তি আমার কোনো সাহাবিকে গালমন্দ করে তার শাস্তি হলো তাকে বেত্রাঘাত করা হবে।’ [তাবারানি, মুজামুস সাগির : ৬৫৯]
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আলখাল্লাল, আলআযাজিয়্যি ও আলহারাওয়ি। হাদিসের বাহ্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে, এমন ব্যক্তিকে হত্যা করতে হবে, তাওবার সুযোগ দেয়া হবে না। শাইখুল ইসলাম বলেন, এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হলো আবদুল আযিয ইবনু হাসান ইবনু যাবালাহ, তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী।
.
পঞ্চম হাদিস
আবদুল্লাহ ইবনু কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ আবু বারযাহ আসলামি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক লোক আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করেন। আমি আবু বকরকে বললাম, আমি কি তাকে হত্যা করে ফেলব? তখন আবু বকর আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এমন হুকুম তো নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারী ছাড়া অন্য কারো জন্য নয়।’ [নাসায়ি, সুনানুল কুবরা : ৩৫৩৪]
.
তৃতীয় হাদিস
হাদিসটি হলো ইহুদি কবি ও গোত্রনেতা কাব ইবনু আশরাফের ঘটনা সম্বলিত বর্ণনা। এটি একটি প্রসিদ্ধ ও স্বতঃসিদ্ধ ঘটনা। একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
«مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُولَهُ»
‘কে আছো কাব ইবনু আশরাফের জন্য (যে তার গর্দান ওড়িয়ে দেবে)? কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে।’
তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি চান আমি তাকে হত্যার দায়িত্ব নিই?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তখন সাহাবি বললেন, ‘তাহলে আমাকে কিছু কৌশলী কথা বলার সুযোগ দিন।’ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন। মুহাম্মাদ বিন মাসলামা অভিশপ্ত ইহুদি কাবের কাছে এসে বললেন, এই লোকটা (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো এখন আমাদের কাছে সাদাকাহ চাচ্ছে। লোকটা আমাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।’ কাব এই কথা শুনে তাল মিলিয়ে বলল, শুধু কি তাই, তোমরা তার ব্যাপারে আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।’ (এভাবে তারা কাবের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।) পরিশেষে তারা তাকে হত্যা করেন। [বুখারি, আসসাহিহ : ৩৮১১, মুসলিম, আসসাহিহ : ৪৭৬৫]
এ হাদিস থেকে ইমাম শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহ দলিল পেশ করেছেন যে, কোন যিম্মি যখন নবিজিকে গালমন্দের মতো অমার্জনীয় কাজে জড়িয়ে পড়বে তার শাস্তি হবে হত্যা।
.
ইহুদি কাব ইবনু আশরাফ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিন্দা গাইত আর নোংরা নোংরা অপবাদ দিত ফলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে হত্যা করার আহ্বান জানান। তার দলবল নবিজির কাছে এসে বলল, ‘আমাদের নেতা কাবকে গুপ্তহত্যা করা হয়েছে।’ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অন্যদের মতো সেও যদি সংযত থাকত তাহলে এমন ক্ষতির মুখোমুখি হত না। সে আমাদেরকে কষ্ট দিয়েছে, আমাদের ব্যাপারে কটূ মন্তব্য করেছে। তোমাদের কেউ যদি এমন জঘন্য কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তাহলে তরবারিই তার ফায়সালা করবে।’
এ পর্যায়ে ইহুদিরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কাব ইবনুল আশরাফের হত্যার পর থেক তারা পুরোপুরি সাবধানী হয়ে উঠে। এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে শুরু করে।
.
কাব ইবনুল আশরাফ তো ‘মুয়াহিদ’ বা নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। যখন গালমন্দের মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ল, নোংরা- অশালীন ও মানহানিকর মিথ্যা-বানোয়াট কথা ছড়াতে লাগল তখন তার নিরাপত্তাবিধান সে নিজেই ভেঙে দিল। এর কারণ হিসেবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُولَهُ»
‘কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে।’
সুতরাং যে কেউই আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয় তার শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা হবে। আর মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে গালমন্দ করা আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয়। সুতরাং এমন জঘন্য কর্মকান্ডে কেউ জড়ালে সে হত্যার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
.
চতুর্থ হাদিস
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَبَّ الأَنْبِيَاءَ قُتِلَ، وَمَنْ سَبَّ أَصْحَابِي جُلِدَ
‘যে ব্যক্তি কোন নবিকে গালি দেয় তার শাস্তি হলো তাকে হত্যা করা হবে, আর যে ব্যক্তি আমার কোনো সাহাবিকে গালমন্দ করে তার শাস্তি হলো তাকে বেত্রাঘাত করা হবে।’ [তাবারানি, মুজামুস সাগির : ৬৫৯]
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আলখাল্লাল, আলআযাজিয়্যি ও আলহারাওয়ি। হাদিসের বাহ্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে, এমন ব্যক্তিকে হত্যা করতে হবে, তাওবার সুযোগ দেয়া হবে না। শাইখুল ইসলাম বলেন, এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হলো আবদুল আযিয ইবনু হাসান ইবনু যাবালাহ, তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী।
.
পঞ্চম হাদিস
আবদুল্লাহ ইবনু কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ আবু বারযাহ আসলামি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক লোক আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করেন। আমি আবু বকরকে বললাম, আমি কি তাকে হত্যা করে ফেলব? তখন আবু বকর আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এমন হুকুম তো নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারী ছাড়া অন্য কারো জন্য নয়।’ [নাসায়ি, সুনানুল কুবরা : ৩৫৩৪]
আরেক বর্ণনায় আছে, এক লোক আবু বকর রাযিয়াল্লাহ আনহুকে গালমন্দ করলে তিনি উক্ত কথাটি বলেন। আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ সহিহ সনদে তার সুনানগ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। [আবু দাউদ, আসসুনান : ৪৩৬৫]
আলিমদের বিরাট একটি জামায়াত এ হাদিস দিয়ে দলিল পেশ করেছেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দকারীর শাস্তি নিশ্চিত হত্যা। এই অভিমত পোষণকারীদের মধ্যে আছেন ইমাম আবু দাউদ, ইসমাইল ইবনু ইসহাক, আবু বকর আবদুল আযিয এবং কাযি আবু ইয়ালাসহ বহু উলামা কিরাম। এই হাদিসটির ফায়দা হলো, যে ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালমন্দ করবে তাকে হত্যা করা বৈধ। কাফির-মুসলিম এক্ষেত্রে সমান।
.
বই : আসসারিমুল মাসলুল আলা শাতিমির রাসুল
মূল : শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ.)
সংক্ষেপায়ন : ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আলি আলবা’লি (রহ.)
তরজমা, তাহকিক ও তাখরিজ : আবু তালহা ও ইবনু যাকির।
- Taqwa
রাসুলের তরে রক্ত দিতে তার উম্মাহ কখনই কৃপণতা করে নি। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
- Mufty Monoar Hossen
.
১.
তখন মাত্র ঊনচল্লিশজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আবু বকর রা. প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করে প্রহৃত হলেন।মুশরিকদের গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো, হিংস্র হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ল ওরা।জ্ঞান হারালেন, সম্বিত ফিরে পেয়ে জানতে চাইলেন প্রিয় হাবিব স.এর কথা। রাসুলকে দেখার দাবিতে খাবার, শুশ্রুষা সবকিছু প্রত্যাখ্যান করলেন। দেখা হলো, জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন,কাঁদালেন।
.
২.
অহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণ সাময়ীক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। উদভ্রান্ত,তটস্থ এক নারী ছুটে চলেছেন।একজন সংবাদ দিলেন ‘তোমার বাবা শহীদ হয়েছেন’ ভ্রক্ষেপ না করে আনমনে ইন্নালিল্লাহ বলে কী যেন খুঁজতে সামনে ছুটে চলেছেন। এরপর এক এক করে তাঁর স্বামী, ভ্রাতা ও পুত্রের শাহাদাতের সংবাদ জানানো হল তাঁকে। কিন্তু তিনি ইন্নালিল্লাহি… উচ্চারণ করে বারবার মানুষের কাছে শুধু প্রিয়নবীর কথাই জিজ্ঞেস করছিলেন। এক সময় তিনি শুনতে পেলেন যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো আছেন। কিন্তু ব্যাকুল হৃদয় তাতেও শান্ত হলো না। এরপর নবীজিকে স্বচক্ষে দেখেই তবে শান্ত হলেন সেই আনসারী নারী সাহাবি। রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহা
৩.
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আবদি রাব্বিহি। তিনি তার বাগানে ফল-ফলাদি ও গাছ-গাছালি দেখাশোনা করছেন। এমন সময় নবীজির ইন্তিকালের সংবাদ জানতে পেলেন। হৃদয়ের কোমল বৃত্তে তিনি আচমকা প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। দুঃখে শোকে আর মহব্বতের আতিশয্যে আল্লাহর কাছ প্রার্থনা করে বসলেন, হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দাও। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আমি এই চোখ দিয়ে আর কিছুই দেখতে চাই না। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত এই প্রার্থনা বৃথা গেল না। সত্যিই দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দেয়া হলো তার। মানুষের প্রতি কি মানুষের এমন ভালোবাসাও হতে পারে, যে ভালোবাসার কাছে নিজের দৃষ্টিশক্তির মহব্বতও হার মানে! আহ ভালোবাসা!
.
৪.
উমার! (রজি) শক্ত হৃদয়ের মানুষ হিসেবে পরিচিতি,কঠোরতার জন্য হয়তো। ভেঙে পড়েছেন, স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে তরবারী উঁচু করে ধরেছেন- রাসুল মারা যায় নি,কেউ এটা বললে মেরে ফেলব। কি অদ্ভুদ ভালোবাসা। ‘আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন,’ [সূরা আলে ইমরান : ১৪৪]
কুরআনের এই বাণী শুনে সবাই প্রকৃতিস্থ হয়ে গেলেন। মহা সমুদ্রের মত গভীরভাবে ঠান্ডা হলেন।
.
৫.
রাসুলের নিকট একটি কিশোর গোলাম। গোলামের পিতা কেঁদে কেঁদে ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে আবেদন করলেন। বাচ্চাটা হারানো পিতাকে পেয়ে ফিরে যাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন- পিতা বলল,যায়েদ! তুমি আজাদির উপর গোলামীকে প্রাধান্য দিচ্ছো?
যায়েদ রা. বললেন, আমি নবীজির মাঝে এমন সৌন্দর্য দেখেছি, যার বিপরীতে কোন কিছুই পছন্দ করতে পারি না। একথা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে টেনে নিলেন আর বললেন, একে আমি আমার পুত্র বানিয়ে নিলাম।কিশোরের কি ভালোবাসা! যার সামনে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের ভালোবাসাও সেখানে ম্লান হয়ে যায়।
.
৬.
অহুদ যুদ্ধের সময় যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শির মোবারকে শিরস্ত্রানের দু’টি কড়া ঢুকে পড়লো। হযরত আবু বকর রা. ও হযরত উবায়দা রা. অধীর চিত্তে দৌড়ে এলেন। দাঁত দিয়ে শিরস্ত্রাণের কড়া টেনে বের করে আনলেন। হযরত উবায়দা রা. এর একটি দাঁতও ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তিনি দমলেন না অপর কড়াটিও দাঁত দিয়ে টেনে বের করে আনলেন। এতে তার আরেকটি দাঁত ভেঙ্গে গেল। কড়াটি বেরিয়ে এলে নবীজির মাথা মোবারক থেকে রক্তের ফিনকি ছুটছিল। এ দৃশ্য দেখে সাহাবী মালেক ইবনে সিনান দৌড়ে এলেন এবং তার দুই অধরে নবীজির রক্ত চুষে পান করে ফেললেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, ‘যার রক্তের সাথে আমার রক্ত মিশে গেছে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না।’ কি গভীর ভালোবাসা থাকলে মানুষ মানুষের রক্ত পান করতে পারে! সত্যিই কি তা কল্পনীয়?!
.
৭.
হযরত যায়েদ ইবনে দাসানা রা. কাফিরদের হাতে বন্দী হবার পর পাপিষ্ঠরা তাকে শূলে চড়ানোর আয়োজন করে। তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয় অনেক লোক। আবু সুফিয়ান তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নরম সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, যায়েদ! সত্যি করে বলতো; আল্লাহর শপথ দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে, তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদের গর্দান উড়িয়ে দেয়া হোক আর তোমাকে হাসিমুখে তোমার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হোক। হযরত যায়েদ রা. দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন, আল্লাহর শপথ! নবীজির যাত্রাপথে একটি কাঁটা লুকিয়ে রাখা হবে আর আমি ঘরে বসে আরাম করবো, এতটুকুও আমার সহ্য হবে না।
হযরত যায়েদের জবাব শুনে সেদিন মক্কার কাফেররা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। আরব নেতা আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেছিলেন, মুহাম্মদের প্রতি তার সাথীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, অন্য কারো প্রতি এমন ভালোবাসা আমি আর কখনো দেখিনি।
-----------------------------------------------------------------------
উহুদ থেকে শাপলা সর্বশেষ ভোলা পর্যন্ত, এভাবে নিজের জীবন দিয়ে নবিজীকে ভালোবাসার উদাহরণ বৃষ্টির ফোটার মত অগণিত।
.
ভোলা থেকে ভালোবাসার রক্তের নাযরানা সে ধারাবাহিকতার অংশ। কোনদিনই আমরা রক্ত দিতে কৃপণতা করি নি। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
.
বই : আসসারিমুল মাসলুল আলা শাতিমির রাসুল
মূল : শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ.)
সংক্ষেপায়ন : ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আলি আলবা’লি (রহ.)
তরজমা, তাহকিক ও তাখরিজ : আবু তালহা ও ইবনু যাকির।
- Taqwa
রাসুলের তরে রক্ত দিতে তার উম্মাহ কখনই কৃপণতা করে নি। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
- Mufty Monoar Hossen
.
১.
তখন মাত্র ঊনচল্লিশজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আবু বকর রা. প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করে প্রহৃত হলেন।মুশরিকদের গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো, হিংস্র হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ল ওরা।জ্ঞান হারালেন, সম্বিত ফিরে পেয়ে জানতে চাইলেন প্রিয় হাবিব স.এর কথা। রাসুলকে দেখার দাবিতে খাবার, শুশ্রুষা সবকিছু প্রত্যাখ্যান করলেন। দেখা হলো, জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন,কাঁদালেন।
.
২.
অহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণ সাময়ীক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। উদভ্রান্ত,তটস্থ এক নারী ছুটে চলেছেন।একজন সংবাদ দিলেন ‘তোমার বাবা শহীদ হয়েছেন’ ভ্রক্ষেপ না করে আনমনে ইন্নালিল্লাহ বলে কী যেন খুঁজতে সামনে ছুটে চলেছেন। এরপর এক এক করে তাঁর স্বামী, ভ্রাতা ও পুত্রের শাহাদাতের সংবাদ জানানো হল তাঁকে। কিন্তু তিনি ইন্নালিল্লাহি… উচ্চারণ করে বারবার মানুষের কাছে শুধু প্রিয়নবীর কথাই জিজ্ঞেস করছিলেন। এক সময় তিনি শুনতে পেলেন যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো আছেন। কিন্তু ব্যাকুল হৃদয় তাতেও শান্ত হলো না। এরপর নবীজিকে স্বচক্ষে দেখেই তবে শান্ত হলেন সেই আনসারী নারী সাহাবি। রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহা
৩.
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আবদি রাব্বিহি। তিনি তার বাগানে ফল-ফলাদি ও গাছ-গাছালি দেখাশোনা করছেন। এমন সময় নবীজির ইন্তিকালের সংবাদ জানতে পেলেন। হৃদয়ের কোমল বৃত্তে তিনি আচমকা প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। দুঃখে শোকে আর মহব্বতের আতিশয্যে আল্লাহর কাছ প্রার্থনা করে বসলেন, হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দাও। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আমি এই চোখ দিয়ে আর কিছুই দেখতে চাই না। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত এই প্রার্থনা বৃথা গেল না। সত্যিই দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দেয়া হলো তার। মানুষের প্রতি কি মানুষের এমন ভালোবাসাও হতে পারে, যে ভালোবাসার কাছে নিজের দৃষ্টিশক্তির মহব্বতও হার মানে! আহ ভালোবাসা!
.
৪.
উমার! (রজি) শক্ত হৃদয়ের মানুষ হিসেবে পরিচিতি,কঠোরতার জন্য হয়তো। ভেঙে পড়েছেন, স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে তরবারী উঁচু করে ধরেছেন- রাসুল মারা যায় নি,কেউ এটা বললে মেরে ফেলব। কি অদ্ভুদ ভালোবাসা। ‘আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন,’ [সূরা আলে ইমরান : ১৪৪]
কুরআনের এই বাণী শুনে সবাই প্রকৃতিস্থ হয়ে গেলেন। মহা সমুদ্রের মত গভীরভাবে ঠান্ডা হলেন।
.
৫.
রাসুলের নিকট একটি কিশোর গোলাম। গোলামের পিতা কেঁদে কেঁদে ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে আবেদন করলেন। বাচ্চাটা হারানো পিতাকে পেয়ে ফিরে যাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন- পিতা বলল,যায়েদ! তুমি আজাদির উপর গোলামীকে প্রাধান্য দিচ্ছো?
যায়েদ রা. বললেন, আমি নবীজির মাঝে এমন সৌন্দর্য দেখেছি, যার বিপরীতে কোন কিছুই পছন্দ করতে পারি না। একথা শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোলে টেনে নিলেন আর বললেন, একে আমি আমার পুত্র বানিয়ে নিলাম।কিশোরের কি ভালোবাসা! যার সামনে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের ভালোবাসাও সেখানে ম্লান হয়ে যায়।
.
৬.
অহুদ যুদ্ধের সময় যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শির মোবারকে শিরস্ত্রানের দু’টি কড়া ঢুকে পড়লো। হযরত আবু বকর রা. ও হযরত উবায়দা রা. অধীর চিত্তে দৌড়ে এলেন। দাঁত দিয়ে শিরস্ত্রাণের কড়া টেনে বের করে আনলেন। হযরত উবায়দা রা. এর একটি দাঁতও ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তিনি দমলেন না অপর কড়াটিও দাঁত দিয়ে টেনে বের করে আনলেন। এতে তার আরেকটি দাঁত ভেঙ্গে গেল। কড়াটি বেরিয়ে এলে নবীজির মাথা মোবারক থেকে রক্তের ফিনকি ছুটছিল। এ দৃশ্য দেখে সাহাবী মালেক ইবনে সিনান দৌড়ে এলেন এবং তার দুই অধরে নবীজির রক্ত চুষে পান করে ফেললেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, ‘যার রক্তের সাথে আমার রক্ত মিশে গেছে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না।’ কি গভীর ভালোবাসা থাকলে মানুষ মানুষের রক্ত পান করতে পারে! সত্যিই কি তা কল্পনীয়?!
.
৭.
হযরত যায়েদ ইবনে দাসানা রা. কাফিরদের হাতে বন্দী হবার পর পাপিষ্ঠরা তাকে শূলে চড়ানোর আয়োজন করে। তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয় অনেক লোক। আবু সুফিয়ান তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নরম সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, যায়েদ! সত্যি করে বলতো; আল্লাহর শপথ দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে, তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদের গর্দান উড়িয়ে দেয়া হোক আর তোমাকে হাসিমুখে তোমার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হোক। হযরত যায়েদ রা. দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন, আল্লাহর শপথ! নবীজির যাত্রাপথে একটি কাঁটা লুকিয়ে রাখা হবে আর আমি ঘরে বসে আরাম করবো, এতটুকুও আমার সহ্য হবে না।
হযরত যায়েদের জবাব শুনে সেদিন মক্কার কাফেররা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। আরব নেতা আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেছিলেন, মুহাম্মদের প্রতি তার সাথীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, অন্য কারো প্রতি এমন ভালোবাসা আমি আর কখনো দেখিনি।
-----------------------------------------------------------------------
উহুদ থেকে শাপলা সর্বশেষ ভোলা পর্যন্ত, এভাবে নিজের জীবন দিয়ে নবিজীকে ভালোবাসার উদাহরণ বৃষ্টির ফোটার মত অগণিত।
.
ভোলা থেকে ভালোবাসার রক্তের নাযরানা সে ধারাবাহিকতার অংশ। কোনদিনই আমরা রক্ত দিতে কৃপণতা করি নি। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।