ইসলামিক গল্প ও কাহিনী | হাদিস ও কুরআনের কথা | পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ, বুজুর্গদের প্রতি অন্ধ ভক্তি, কৌশলে নব উদ্ভাবনের পক্ষে যুক্তি, জেদ ও একগুঁয়েমির মধ্যে শুধুমাত্র পথভ্রষ্টতা

ইসলামিক গল্প ও কাহিনী | হাদিস ও কুরআনের কথা  | পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ, বুজুর্গদের প্রতি অন্ধ ভক্তি, কৌশলে নব উদ্ভাবনের পক্ষে যুক্তি, জেদ ও একগুঁয়েমির মধ্যে শুধুমাত্র পথভ্রষ্টতা ।

Muhammad Mushfiqur Rahman Minar




নবী নুহ(আ.) এর জাতি এবং তাদের ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে আল কুরআনে সবিশেষ আলোচনা আছে। কিভাবে তারা একত্ববাদী বিশ্বাস থেকে আস্তে আস্তে পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসের দিকে ধাবিত হয়েছিলো, এর বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় কিছু হাদিসেও। যা বাইবেলে বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো প্রাচীন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
কী ছিলো তাদের ধর্মবিশ্বাস?


    Content Tag
  1. একটি ইসলামিক গল্প
  2.  ইসলামিক গল্প ও কাহিনী 
  3. নামাজ নিয়ে ইসলামিক গল্প
  4.  ইসলামিক গল্প ও কাহিনী pdf 
  5. ইসলামিক ছোট গল্প
  6.  শিশুদের ইসলামিক গল্প 
  7. ইসলামিক শিক্ষামুলক গল্প 
  8. ছোটদের ইসলামিক গল্প "



.মানবজাতির আদি পিতা আদম(আ.) হতে নুহ(আ.)-এর মধ্যবর্তী সময়ে কিছু নেককার মানুষ খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁদের নাম ছিলো ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসর। তাঁরা মৃত্যুবরণ করলে ইবলিস তাদের ভক্ত-অনুসারীদের প্ররোচনা দিলো এই বলে যে, ঐসব নেককার লোকদের স্থানে তোমরা তাদের মূর্তি বানাও এবং সেগুলোকে তাদের নামে নামকরণ করো। শয়তান তাদেরকে বোঝালো, যদি তোমরা মূর্তিগুলোকে সামনে রেখে ইবাদত করো,তাহলে তাদের স্মরণ করে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি তোমাদের অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। লোকেরা সেটা মেনে নিলো। অতঃপর এই লোকেরা মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরবর্তী বংশধরদেরকে শয়তান কুমন্ত্রণা দিলো এই বলে যে,তোমাদের বাপ-দাদারা এইসব মূর্তির পূজা করতেন এবং এদের ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন ও তাতে বৃষ্টি হতো। এ কথা শুনে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সরাসরি মূর্তিপূজা শুরু করে দিলো। এভাবেই পৃথিবীতে মূর্তিপূজার সূচনা হয়। এদের মধ্যে ‘ওয়াদ’ ছিলেন পৃথিবীর প্রথম পূজিত ব্যক্তি যার মূর্তি বানানো হয় [১] আল কুরআনে বলা হয়েছে,
.
“ তারা [নুহ(আ.) এর জাতি] বলছেঃ তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে।” [২]

                          
 Read More: ইসলামিক গল্প ও কাহিনী pdf
 ইসলামিক ছোট গল্প 
ইসলামিক শিক্ষামুলক গল্প
 ইসলামিক করুন কাহিনী 
ইসলামিক হাসির গল্প 
নামাজ নিয়ে ইসলামিক গল্প 
ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প"
.
আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ সুরা নুহ এবং সুরা হুদ এর ২৫-৪৯ আয়াত পড়ে দেখতে পারি। এ ছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বারংবার নুহ(আ.) এর জাতির কথা আলোচনা করা হয়েছে।
.
বলুন তো আল্লাহ এই প্রাচীন জাতিগুলোর কথা কেন তাঁর শেষ নবীর দ্বারা আমাদেরকে জানিয়েছেন?
কারণ আমরা যাতে শিক্ষা নিই। তারা যে ভুলগুলো করেছে আমরা যেন তা না করি। যেভাবে ধীরে ধীরে অল্প কিছু ব্যাপারের দ্বারা তাদের সম্পূর্ণ দ্বীনই বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো – আমরা যেন কখনো এমন কিছুতে লিপ্ত না হই।
.
নুহ(আ.) এর জাতির ধর্ম কিভাবে বিকৃত হয়েছিলো? তারা কি একবারে মূর্তিপুজা শুরু করেছিলো?
উত্তর হচ্ছে – না। তারা অতি উত্তম নিয়তে কিছু নেককার ব্যক্তির মূর্তি তৈরি করেছিলো। এই কাজের পেছনে ওলী-বুজুর্গদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ব্যতিত কোনো খারাপ উদ্যেশ্য ছিলো না। কিন্তু এটি এমন একটি কাজ ছিলো যার নির্দেশ তাদেরকে আল্লাহ দেননি। শয়তানের প্ররোচনায় নিজেদের খেয়ালে তারা এই কাজটি করেছিলো। যাকে বলা যায় দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবন বা আরবিতে ‘বিদআত’। ছোট্ট সেই বিদআত আস্তে আস্তে ডালপালা মেলে বিশাল হয়ে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে পুরোদস্তুর মূর্তিপুজারী বানিয়ে দিলো। লক্ষ্য করুন, সামান্য একটু বিচ্যুতি কিভাবে বিশাল পথভ্রষ্টতায় গিয়ে শেষ হয়।
.
নুহ(আ.) এর জাতি যে ভুল করেছিলো, পরবর্তী নবীদের উম্মতগুলোও কি একই ভুল করেনি? ঈসা(আ.) এর উম্মতরা তাঁকে, তাঁর মা’কে এবং তাদের সাধু-সন্তদের ভালো নিয়তেই ভক্তি করতো। কিন্তু তারা এমন কায়দায় তাঁদের ভক্তি করতে শুরু করেছিলো যার আদেশ আল্লাহ তাদেরকে দেননি। সামান্য বিদআত আস্তে আস্তে তাদেরকে ত্রিত্ববাদী এবং সাধু-সন্তদের পুজারী বানিয়ে দিয়েছিলো। খ্রিষ্টানদের এই বিদআত ও পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে জানতে সুরা তাওবার ৩০-৩১ নং আয়াত এবং সুরা হাদিদের ২৭ নং আয়াত ইবন কাসিরের তাফসিরসহ পড়ে নিতে পারেন।


  • হাদিসের কথা ছবি 
  • কোরআন হাদিসের কথা 
  • কুরআনের কথা pdf 
  • হাদিসের কথা ডাউনলোড 
  • ইসলামিক হাদিসের কথা 
  • হাদিসের কাহিনী 
  • কুরআনের কিছু তথ্য
  •  ছোট হাদিস



.নুহ(আ.) এর জাতির লোকেরা হয়তোবা নিজেদের ভাষায় নিজেদেরকে “আশেকে ওয়াদ”, “আশেকে সুওয়া”, “আশেকে নাসর” ইত্যাদি বলতো। ঈসা(আ.) এর বিদআতি অনুসারীদেরকেও হয়তো “আশেকে সেইন্ট মেরি”, “আশেকে সেইন্ট পিটার”, “আশেকে সেইন্ট থমাস” বলে অভিহিত করা যায়। কিন্তু এই “আশেক” হয়ে তাদের জন্য কি ভালো হয়েছিলো? এই ধরণের “আশেক” হয়ে তারা কি শেষ দিবসে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাবে?


শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উম্মতও একই ভুলের পথে পা বাড়িয়েছে। ওলী-বুজুর্গদের অতি ভক্তি করে এবং কুরআন-হাদিসের বাইরের বিভিন্ন রসম-রেওয়াজকে নিজেদের আমল ও আকিদার অংশ বানিয়ে। এগুলোর ব্যাপারে আপত্তি তুললে তারা সেই ওলী-বুজুর্গের ভক্তির কথা বলেন, পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া রসমের কথা বলেন, “এগুলো করলে ক্ষতি কী?” – বলেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার পবিত্র কালামে ও তাঁর নবীর হাদিসে কত উত্তমভাবেই না এইসব পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে উদাহরণ দেয়া হয়েছে ও সাবধাণ করা হয়েছে। যেমন ধরা যাক “ঈদে মিলাদুন্নবী” নামে কথিত ঈদের ব্যাপারটি। নবীপ্রেমের কথা বলে এই জিনিসটি পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্নর আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী (৫৮৬-৬৩০ হি.)। সর্বপ্রথম মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী ৬০৪ হিজরীতে [কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে ৬২৫ হিজরীতে] মিলাদের প্রচলন ঘটান। সময়টি ছিল রাসুলের(ﷺ) মৃত্যুর ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে। [৩] নবী(ﷺ) এর এতকাল পরে শুরু হওয়া একটা জিনিসকে পালন করে এই উম্মত “আশেকে রাসুল” হতে চায়।
মানবপ্রজাতির সেই আদিম পথভ্রষ্টতা। সেই আদিম বিভ্রান্তি। ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন মোড়কে।

.
নবীপ্রেম বা ওলী-বুজুর্গের প্রতি ভক্তির নাম দিয়ে কতো কৌশলে আর কতো অপযুক্তি দিয়েই না মানুষ এগুলোকে জায়েজ করবার চেষ্টা করে কিন্তু এর পরিনতি যে কী তা তো আমরা আল্লাহর পবিত্র কালাম এবং তাঁর নবীর হাদিস থেকে জানতে পারি। ওহীর বিপরীতে এইসব "সৃজনশীল" যুক্তি কিয়ামতের দিন কোনো কাজে আসবে না। এসব জিনিস করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞাও শেষ নবী(ﷺ) এর হাদিসে পাওয়া যায়।
.
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন,
“কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের এই দ্বীনের ভেতর এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” [৪]
.
তিনি আরো বলেন,
‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হ’তে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’। [৫]
জাবির(রা.) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ﻭَﻛُﻞَّ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ
অর্থাৎ: ‘এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম’। [৬]
.
ইসলামের মুবারক যুগের প্রজন্ম তথা সালাফে সলিহীনগণ ব্যাপারটিকে কিভাবে বুঝতেন?
.
ইমাম মালিক(র.) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফিঈ(র.)কে বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসুল(ﷺ) স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন’। [৭]
.
আমরা কি কুরআন আর হাদিস থেকে একটু শিক্ষা নেবো না? কুরআনকে শুধুমাত্র ভক্তিভরে চুমু দিয়ে গিলাফে মুড়ে আলমারীর উপরে তুলে রাখবো? একে তাবিজ বানিয়ে দেহে লটকে রাখার জিনিস বানাবো? নাকি এর অর্থ অনুধাবন করে কিছু শিক্ষা নেবো? কুরআন এবং হাদিস বুঝে পড়লে ও সরলভাবে মানার চেষ্টা করলে এইসব পথভ্রষ্টতার মধ্যে পড়া থেকে বেঁচে থাকা যেতো। এগুলো হচ্ছে ওহী। আর ওহীকে আঁকড়ে ধরার মাঝেই যুগে যুগে মুক্তি নিহিত ছিলো, আজও আছে। পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ, বুজুর্গদের প্রতি অন্ধ ভক্তি, কৌশলে নব উদ্ভাবনের পক্ষে যুক্তি, জেদ ও একগুঁয়েমির মধ্যে শুধুমাত্র পথভ্রষ্টতাই আছে।
.
.
সুন্নাত ও বিদআতের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র) এর 'এহইয়াউস সুনান' বইটি পড়া যেতে পারে।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://xeroxtree.com/pdf/ehyaus_sunan.pdf
.
.
___ ___ ___
[১] ইবন কাসির, বুখারী হা/৪৯২০ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; তাফসীর কুরতুবী, বাগাভী, ইবনু কাছীর, শাওকানী প্রভৃতি)
[২] আল কুরআন, নুহ ৭১ : ২৩
[৩] আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (দারুল ফিকর, ১৯৮৬) পৃঃ ১৩/১৩৭
[৪] বুখারী ও মুসলিম, রিয়াদুস সলিহীন, বই ১, বিদ’আত বা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন নিষিদ্ধ অধ্যায়; হাদিস নং ১৬৯
[৫] আবু দাউদ ৪৬০৭; মিশকাত ১৬৫, সনদ সহীহ
[৬] আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ১৫৭৯; দুই ঈদ-এর খুৎবা’ অধ্যায়
[৭] আল ইনসাফ, পৃষ্ঠা ৩২
Next Post Previous Post