আফিয়া সিদ্দিকী - গ্রে লেডি অব বাগরান | আফিয়া সিদ্দিকী বই বাংলা বই রিভিউ ও লিঙ্ক - আফিয়া সিদ্দিকী pdf

আফিয়া সিদ্দিকী - গ্রে লেডি অব বাগরান | বাংলা ইসলামিক বই রিভিউ ও লিঙ্ক - সুরাইয়া টুসু


২০০৩ সালে করাচি থেকে আফিয়া সিদ্দিকীর নিখোঁজের সংবাদ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আলোড়ন তোলে যখন, বাগরাম থেকে পালিয়ে আসা চারজন বন্দি Peace Thru Justice Foundation কে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ননা করে। তারা সেখানে একজন পাকিস্তানি নারী বন্দির ব্যাপারে বলে, যে কিনা আমেরিকান সৈন্যদের হাতে পাষবিক নির্যাতনের স্বীকার।

  আফিয়া সিদ্দিকীর চিঠি - আফিয়া সিদ্দিকীর বক্তব্য

 সেখানে তাকে কয়েদি ৬৫০ নামে ডাকা হতো। ব্রিটিশ নাগরিক বিনিয়াম মুহাম্মদ আমেরিকার গোপন কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আফিয়ার ছবি দেখে একে কয়েদি ৬৫০ বলে চিন্হিত করেন। কয়েদি ৬৫০ অর্থাৎ আফিয়া সিদ্দিকীর ঘটনা সামনে তুলে আনেন বৃটিশ সাংবাদিক ইভন রিডলি। তিনি তার নাম দেন "গ্রে লেডি অব বাগরাম"। ইভন রিডলির মতে গ্রে লেডি অব বাগরাম বলার কারন হচ্ছে, যারাই প্রিজনার ৬৫০—কে দেখেছে, তারা সবাই ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছিল। তার সেল থেকে আমেরিকানদের নির্যাতনের ফলে ভয়ংঙ্কর চিৎকার ভেসে আসতো!!

আফিয়া সিদ্দিকী - গ্রে লেডি অব বাগরান | আফিয়া সিদ্দিকী

           আফিয়া সিদ্দিকী বই  আফিয়া সিদ্দিকী pdf


একনজরে আফিয়া সিদ্দিকী।
আফিয়া সিদ্দিকী ১৯৭২ সালের ২রা মার্চ পাকিস্তানের করাচি শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবকাল কাটে আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়াতে। ৮বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। এরপর পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। তিনি পবিত্র কুরআনও হিফজ করেন। একইভাবে বাইবেল আর তোরাহও (খ্রিষ্টীয়ধর্মগ্রন্থ) পড়েছিলেন। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে অগাধ জ্ঞানের জন্য আফিয়াকে তার বোন 'তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের এনসাইক্লোপিডিয়া' বলে ডাকতেন।


আফিয়া সিদ্দিকা মৃত্যু
  ড আফিয়ার মৃত্যু
আফিয়া সিদ্দিকার কাহিনী
আফিয়া সিদ্দিকার মৃত্যুর তারিখ


১৯৯২ সালে আফিয়া সিদ্দিকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার ভাই মুহাম্মদ সিদ্দিকীর কাছে যান এবং টেক্সাসের হাউস্টন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। হাউস্টনে তৃতীয় সেমিস্টারে থাকা অবস্থায় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) থেকে ফুল স্কলারশিপ পেয়ে সেখানে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে Islamization in Pakistan & it's Effect on Woman বিষয়ে গবেষনা করে CARROL L. WILSON AWARD অর্জন করেন এবং পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার পান। ১৯৯৩ সালে আফিয়া সিদ্দিকী ক্যামব্রিজ এলিমেন্টারি স্কুল প্রাঙ্গণে 'সিটি ডেজ' পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ১২০০ ডলার পুরস্কার জিতেন।

আফিয়া সিদ্দিকী ১৯৯৫ সালে এম আইটি থেকে বায়োলজিতে বিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ব্রান্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ব্রান্ডিজ থেকেই ২০০১ সালে পিএইচডি করেন। তার গবেষনার বিষয় ছিল 'অনুকরণের মাধ্যমে শেখা'। আফিয়া সিদ্দিকী প্রফেসর নোয়াম চমস্কির তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেন। প্রফেসর নোয়াম চমস্কি তার সম্পর্কে বলেন, "আফিয়া যেখানেই যাবে সেখানের পরিবেশকে পাল্টে দিবে।"

ড. আফিয়া বসনিয়ার মজলুম নারী ও শিশুদের জন্য একাই এক হাজার ডলার জমা করেন যা সম্ভবত কোনো ছাত্রীর পক্ষ থেকে ফান্ড গঠনের বিশ্ব রেকর্ড ছিল। শত শত বসনিয়ার এতিমকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আমেরিকায় খুঁজে খুঁজে মুসলিম পরিবার বের করেছেন। তিনি কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্যও এক লক্ষ রুপি জমা করেন। আফিয়ার ভদ্রতা ও চারিত্রিক মাধুর্যতার জন্য সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রিয় ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়েই অনেকে দানের হাত প্রশ্বস্ত করেন।

আফিয়া সিদ্দিকী পবিত্র কুরআনের হাফেজা ছিলেন। ইসলামের প্রতি ছিল তার সীমাহীন ভালোবাসা তিনি মনে করতেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ শান্তির প্রত্যাশায় জাহান্নামের দিকে যাচ্ছে। সুতরাং মুসলমানদের দায়িত্ব হলো তাদের কুরআনের পথ দেখানো। তিনি বলতেন, আমেরিকা আমাকে জাগতিক শিক্ষা দিয়েছে আর আমি আমেরিকার জনগনকে ইসলামের শিক্ষা দেব। এই উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে ড. আফিয়া তার বোন ড. ফাউজিয়াকে সাথে নিয়ে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক রিসার্চ এন্ড টিচিং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

এই ইনস্টিটিউটে কুরআনের দাওয়াতকে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বক্তৃতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ড. আফিয়া হাজার হাজার কপি কুরআন বিতরণ করেছেন। বিশেষভাবে কারাগারে অবস্থানরত বন্দিদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং কুরআন বিতরণ করেছেন। মার্কিন গবেষক ও স্কলার স্টিফেন ল্যান্ডমিন বলেন,
 "ড. আফিয়া সিদ্দিকীর অপরাধ শুধু একটিই সেটা হলো, সে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ইসলামের প্রচার-প্রসার করেছিলেন।"

আফিয়া সিদ্দিকী - গ্রে লেডি অব বাগরাম

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলা কথিত যুদ্ধের নামে ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে ২০০৩ সালে তিন সন্তানসহ আইএসআই অপহরণ করে এফবিআই এর হাতে তুলে দেয়। অপহরণের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে আফিয়া সিদ্দিকীকে পাশবিক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাকে আফগানিস্তানে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০১০ সালে মার্কিন আদালতে অন্যায়ভাবে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আফিয়া সিদ্দিকী: গ্রে লেডি অব বাগরাম বইটি আফিয়ার জীবনকর্ম, অপহরণ, গ্রেফতার নাটক, সন্তানদের অবস্থা, মামলা, কারাদণ্ড এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখা।
ছবিয়াল: টুসু
Previous Post Next Post