আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর | ভালো লেখক, ভালো শিক্ষক, ভালো বক্তা

আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর | ভালো লেখক, ভালো শিক্ষক, ভালো বক্তা



ভালো লেখক, ভালো শিক্ষক, ভালো বক্তা এই সবগুলো গুণের সমাগম একজনের মাঝে খুব যৎসামান্যই ঘটে। সচরাচর দেখা যায় ভালো শিক্ষক কোনো দিন ভালো বক্তা হন না, ভালো বক্তা কোনো দিন ভালো লেখক হন না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার দেখা একজন ব্যতিক্রমী মানুষ হলেন প্রফেসর ড. খোন্দকার আনম আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহ।



তিনি এমন শিক্ষক যে, দেশ-বিদেশে এতো সফর, এতো লেখালেখি, এতো ওয়ায-নসীহত করে বেড়ানোর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দিন ক্লাস ফাঁকি দেননি। বরং সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্লাস নিয়েছেন।

তিনি এমন বক্তা ছিলেন, সুর আর কিচ্ছা-কাহিনী ছাড়া হাসি মাখা মুখের আলোচনাতেই মানুষের হৃদয়ের গহীনে স্থান করে নিয়েছেন। একজন রিকশাওয়ালাও যার অডিও আলোচনা শুনে বলেন, উনাকে একটু দেখাবেন? অন্ধ প্রতিবন্ধীও বলে উনার আলোচনা থেকে অনেক জরূরী মাসয়ালা শিখেছি। দু'টিই আমার স্বচক্ষে দেখা ঘটনা।
তিনি এমন লেখক ছিলেন, যার মৃত্যুর তিন বছর পরও প্রায় প্রতিটি বই মাসখানেকের ভেতর হাজার খানিক কপি বিক্রি হয়ে যায়। প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা আর মাসে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার বই যার বিক্রি হয়। এর মধ্যে অনেক বই প্রকাশিত হওয়ার দিক দিয়ে দশ-পনেরো বছরের পুরানো। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের একক লেখক হিসেবে বেস্টসেলার লেখক তিনি। তাঁর বই শুধু ইসলামী অঙ্গনে নয়, পুরো বাংলাসাহিত্যের অঙ্গনে বেস্টসেলারের তালিকায় চলে এসেছে।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্‌রাসা জামিয়াতুস সুন্নাহর কিতাব বিভাগের শিক্ষক মুহতারাম শরীফ বিন আব্দুর রহীম বেশ সুন্দর বলেছেন,

''একটি বিষয়ে অনেক জানেন এমন মানুষের সংখ্যা হয়তো কম নয়। তবে একই ব্যাক্তি একাধিক বিষয়ে যেমনঃ হাদীস, তাফসীর, ফিক্‌হ, আরবী ও বাংলাসাহিত্য, ইংরেজি, বিভিন্ন দর্শন ও মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ জানা এবং পাশাপাশি লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম পালন করা এবং সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রহণ করা, যথাঃ উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ, উচ্চতর দাওয়া ও ধর্মবিজ্ঞান গবেষণা বিভাগ, হাদীস সংকলন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসলামী শিক্ষার জন্য নূরানী বিভাগ, ছেলে ও মেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যাবস্থাপনায় হিফ্‌জ ও কিতাব বিভাগ প্রতিষ্ঠা, মসজিদ ভিত্তিক বয়স্ক শিক্ষা, গরীব ও অসহায় নারীদের দর্জিবিজ্ঞান শিক্ষা দানের পাশাপাশি কুরআন ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দান, জনসাধারনের জন্য মাসিক আলোচনা সভা (মাজলিসুস সুন্নাহ), এবং নিয়মিত ইমাম ও আলেমদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা গ্রহণসহ নানা রকম প্রকল্প (অসহায়-দুস্থ পূনরর্বাসন প্রকল্প, যাকাত ভিত্তিক চিকিৎসা প্রকল্প) বাস্তবায়ন করা এবং এগুলোর প্রচার-প্রসারের জন্য বিশেষ করে লিখনী ও বক্তব্যের সর্বোচ্চ প্রচারের জন্য পাবলিকেশন্স, স্টুডিও ও মাল্টি মিডিয়া বিভাগ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি আমার জানা মতে মুহতারাম শাইখ প্রফেসর ড. খোন্দকার আনম আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিমাহুল্লাহ) স্যারই। এমন অন্য কারো ব্যাপারে জানা থাকলে, দয়া করে জানাবেন।''
তাঁকে হারিয়ে জাতি কী হারিয়েছে তা সম্ভবত সামনের দিনগুলোই বলে দিবে। মহান আল্লাহ তাঁকে মাগফিরাতের চাদরে ঢেকে নিন, তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান করে দিন।
Tanbir Hasan Bin AbdurRofiq
Next Post Previous Post