কাফের মুশরিকদের তৈরি করা পরিভাষাগুলো মিম্বার কিংবা ওয়াজের মঞ্চ থেকে হুবহু একইভাবে উচ্চারিত হওয়া অত্যন্ত কুৎসিত একটা ব্যাপার

একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় স্বতন্ত্র। সে কাফিরদের অনুকরণ করে না।




একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় স্বতন্ত্র। সে কাফিরদের অনুকরণ করে না। কাফিরদের বানানো নতুন নতুন ট্রেন্ডে সে গা ভাসায় না। মুসলিম স্রোতের টানে ভেসে আসা খড়কুটো না। সে ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান, তাওহিদের পরিচয়ে সুদৃঢ়। সবকিছুতেই সে অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র। আর তাই যে শব্দগুলো সে ব্যবহার করে, সেগুলোও আলাদা।
.
কাফের, মুশরিক আর মুনাফিকদের ব্যবহার করা শব্দগুলো মুসলিমদের মুখে উচ্চারিত হতে দেখা খুব দুঃখজনক। শুধু দুঃখজনক না, কাফের মুশরিকদের তৈরি করা পরিভাষাগুলো মিম্বার কিংবা ওয়াজের মঞ্চ থেকে হুবহু একইভাবে উচ্চারিত হতে দেখাটা অত্যন্ত কুৎসিত একটা ব্যাপার। এ কুৎসিত ব্যাপারটা আজ আমাদের নিয়মিত দেখতে হচ্ছে।
.
আমরা প্রায়ই দেখি, বিভিন্ন আলিম অতিথি হিসেবে বিভিন্ন টক-শোতে যান। এসব অনুষ্ঠানে সাধারণত এমন উপস্থাপিকারা থাকে, যারা অনর্গল শুধু মিথ্যাই বলে যায় না বরং নিজেদের দেহগুলোও উন্মুক্ত করে রাখে। সেই সাথে অনুষ্ঠানে আলিমদের পাশাপাশি অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় এমন-সব লোকদের যাদের অন্তর তাওহিদ ও রিসালাতের প্রতি ঘৃণায় ভরা। আশ্চর্যের ব্যাপারে হলো, সেখানে গিয়ে শাইখরা ওই মানুষগুলোর ভাষাতেই, তাদের সাথে সুর মিলিয়ে ‘উগ্রবাদ আর জঙ্গীবাদ’ নিয়ে কথা বলেন।
.
বিশ্বাস করুন, পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে খুব জঘন্য আর কুৎসিত মনে হয়। গা গুলিয়ে ওঠে। আচ্ছা কাফের, মুশরিক, মুনাফিক আর দুনিয়ার জন্য দ্বীন বিক্রি করা লোকেরা ‘উগ্রবাদ’ বলতে কী বোঝায়?
এ প্রশ্নের উত্তর কি আমরা জানি না?
.
আল্লাহর যমীনে আল্লাহর শরীয়াহ কায়েম হোক, এ মাটিতে চূড়ান্ত আইন হোক ইসলামী শরীয়াহ—এই চাওয়াটা ওদের সংজ্ঞা অনুযায়ী উগ্রবাদ।
বিধানদাতা এক আল্লাহ, শাসনকর্তৃত্ব কেবলই আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সার্বভৌম না। সংবিধান, গণতন্ত্র কিংবা আন্তর্জাতিক আইন, যা কিছু আল্লাহর দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না—এ কথাগুলো বিশ্বাস করাও তাদের মতে উগ্রবাদ।
.
অথচ একজন আলিম বা দা’ঈ এমন-সব লোকের মাঝে বসে তাদের সাথে সুর মিলিয়ে এই ‘উগ্রবাদের’ বিরোধিতা করছেন। নিন্দা জানাচ্ছেন। তারপর আবার এসে বলছেন ‘আরে আমি তো উগ্রবাদ বলতে ‘দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘনকে বুঝিয়েছি।’...
.
কতটা কুৎসিত এবং জঘন্য একটা ব্যাপার!
.
না! এ অজুহাত গ্রহণযোগ্য না। কক্ষনো না। কারণ, আপনি যাই বুঝিয়ে থাকুন না কেন, ‘উগ্রবাদ’ বলতে তারা কী বোঝায় সেটা তো আপনি জানেন। তারা সাধারণ মানুষের সামনে কোন জিনিসকে উগ্রবাদ হিসেবে তুলে ধরে, সেটাও আপনার জানা। তাহলে আপনি কেন তাদের বুঝের বিরোধিতা করলেন না?
এরাই তো আল্লাহ-এর দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে নিজেদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বানিয়ে নিয়েছে। দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধের নাম দিয়েছে ‘উগ্রবাদ আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। প্রকৃত ইসলামের জায়গায় ক্রুসেইডারদের পছন্দমতো কাটছাঁট করা এক গৃহপালিত ইসলাম তৈরি করা।
.
এসবই তো আপনার জানা। তাহলে কীভাবে আপনি তাদের সাথে বসে একই সুরে, একই ভাষায় কথা বলেন? তাদের সাথে একই নৌকায় ওঠেন?
.
চরমপন্থা বোঝাতে ইসলামে আমরা ‘গ্বূলুহ’ শব্দটা ব্যবহার করি। যার অর্থ হলো সীমা অতিক্রম করা। কিন্তু সেটা কোন সীমা? সেটা হলো শরীয়াহর দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সীমা। আন্তর্জাতিক আইনের বেঁধে দেয়া সীমা না। মানুষের বানানো সংবিধানের সীমা না। আল্লাহর শরীয়াহর সীমা অতিক্রম করার নিন্দা আমরা করি। কারণ, এর অর্থ হলো আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। আল্লাহ এই কাজকে ঘৃণা করেন এবং নিষিদ্ধ করেছেন।
.
কিন্তু আমাদের অবস্থান হবে ইসলামের আলোকে। কাফির-মুরতাদদের পলিসির আলোকে না। কাফেররা কোনো কিছুকে উগ্রবাদ বললেই আমরা সেটার নিন্দা করি না। ভালোমন্দ, মধ্যপন্থা, শিথিলতা, উগ্রবাদ—এ সবকিছুর মাপকাঠি হলো আল্লাহর শরীয়াহ। আন্তর্জাতিক আইন না। মানবরচিত সংবিধান না। কাফেরের তৈরি করা সংজ্ঞা না।
আপাত দৃষ্টিতে ছোটখাটো ব্যাপারেও রাসূলুল্লাহ ﷺ আহলুল কিতাব ও মুশরিকদের সাথে পার্থক্য বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন তাদের বিপরীত করতে। তাঁকে দেখে ইহুদীরা এমনও বলেছিল যে,
.
ما يريد هذا الرجل, يقصدون النبي- أن يدَعَ من أمرنا شيئا إلا خالفنا فيه
‘এই ব্যক্তি (অর্থাৎ নবী ﷺ) তো এমন কিছুই বাকি রাখেনি যেখানে সে আমাদের বিরোধিতা করছে না।’ [সহিহ মুসলিম, ৩০২]
.
সেই নবী ﷺ-এর উম্মাহ হয়ে আজ আমরা কী করছি? নবী (আলাইহিমুস সালাম)-দের ওয়ারিশ হবার দাবিদারেরা আজ কী করছেন?
.
কাফির-মুশরিকদের মতো করে শব্দ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্কতা এবং নিষেধাজ্ঞা এসেছে কুরআনেও। রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সম্বোধন করার সময় ‘রাইনা’ শব্দটি ব্যবহার করতে আল্লাহ আমাদের মানা করেছেন। [সূরা আল-বাক্বারা, ১০৪]। আরবীতে এর অর্থ হলো ‘আমাদের কথা শুনুন’। কিন্তু হিব্রুতে এর অর্থ নেতিবাচক। সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ‘রাইনা’ শব্দটি ব্যবহার করতেন ভালো নিয়্যাতে। কিন্তু ইহুদীরা খারাপ উদ্দেশ্যে শব্দটি ব্যবহার করত । তাই আল্লাহ তাঁদের ইহুদীদের বিপরীত করতে বললেন। এবং কুরআনের আয়াত নাযিল করে বললেন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতে।
.
তাহলে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় কাফেররাআ জ যেসব শব্দ ব্যবহার করছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত?
.
হে মুসলিম, নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখুন। কাফির-মুশরিক আর মুনাফিকদের পাতা ফাঁদের ব্যাপারে সতর্ক হোন। আর যারা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, কখনো তাদের অনুসরণ করবেন না।
.
মূল - ড. ইয়াদ কুনাইবী
প্রকাশিতব্য 'আয়নাঘর' থেকে।
Next Post Previous Post