সাধারণ কাফেরদের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়া এবং ব্যথিত হওয়া যাবে কি না?
সাধারণ কাফেরদের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়া এবং ব্যথিত হওয়া যাবে কি না? বাংলা ইসলামিক পোস্ট
- Iftekhar Sifat
(দলিল লেখার শেষে আছে)
উত্তর হল উভয়টাই যাবে এবং দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্যের কারণে একটা অপরটার বিরোধীও না। তবে দেখতে হবে আমি কেন আনন্দিত হচ্ছি এবং কেন ব্যথিত হচ্ছি।
ক্বাওয়ায়িদুল ফিকহে এর সাথে প্রাসঙ্গিক মূলনীতি আছে। যার সারকথা হল, আনন্দ কিংবা ব্যথিত হওয়ার কারণ হল এখানে দ্রষ্টব্য।
ক্বাওয়ায়িদুল ফিকহে এর সাথে প্রাসঙ্গিক মূলনীতি আছে। যার সারকথা হল, আনন্দ কিংবা ব্যথিত হওয়ার কারণ হল এখানে দ্রষ্টব্য।
ছবিঃ "মুসলিমরা কাফেরদের মৃত্যুতে কষ্ট পেলেও কাফেররা মুসলিমদের মারতে বিন্দুমাত্র কষ্ট পায় না"
কাফেরদের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে। বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আনন্দ প্রকাশের কারণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। রাসূলের সামনে দিয়ে লাশ নেয়া হচ্ছিল। তিনি বললেন, হয়ত সে শান্তি পেল নতুবা অন্যরা তার থেকে শান্তি পেল। সাহাবারা এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে মুমিন হয়ে থাকলে দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে গেল। আর যদি সে পাপাচারী হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহর বান্দারা, ভূখণ্ড, গাছপালা ও পশুপাখি সবাই তার থেকে নিস্তার লাভ করল। হাদিসটি মুসলিম শরীফেও বর্ণিত হয়েছে।
বস্তুত মানুষের আমলের সাথে প্রকৃতির এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা সৃষ্টিগতভাবেই এই সম্পর্ক দিয়ে রেখেছেন। পাপাচার, কুফুরির প্রভাব প্রকৃতির উপর পড়ে। যার ফলে নানান দুর্যোগের সৃষ্টি হয়। আল্লাহর জমিনে কাফেরদের বিচরণ অনধিকারচর্চা ছাড়া আর কিছুই না।
তারপরেও আল্লাহ সুযোগ দিয়ে থাকেন। তাদের প্রতিটি শ্বাস ও পদক্ষেপ ভূখণ্ড, গাছপালা ও পশুপাখির জন্য অভিশাপ। তাদেরকে কুফুর ও পাপ থেকে নিষেধ করলে অবিচার করে বান্দার উপর। আবার চুপ থাকলেও পাপাচার করতেই থাকে। ফলে তাদের মৃত্যুতে এরা সবাই শান্তি লাভ করে। (শরহে মুসলিম লিন নববী, ফাতহুল বারী)
তারপরেও আল্লাহ সুযোগ দিয়ে থাকেন। তাদের প্রতিটি শ্বাস ও পদক্ষেপ ভূখণ্ড, গাছপালা ও পশুপাখির জন্য অভিশাপ। তাদেরকে কুফুর ও পাপ থেকে নিষেধ করলে অবিচার করে বান্দার উপর। আবার চুপ থাকলেও পাপাচার করতেই থাকে। ফলে তাদের মৃত্যুতে এরা সবাই শান্তি লাভ করে। (শরহে মুসলিম লিন নববী, ফাতহুল বারী)
কুফুর ও শিরক থেকে বড় কোন পাপ পৃথিবীতে নেই। কোন প্রকাশ পাপাচারী ও বিদ'আতীর মৃত্যু ও শাস্তিতে আনন্দিত হওয়াই ফুকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে বৈধ। সেখানে কুফুরের মত মহাপাপের ক্ষেত্রে বৈধতা কেন চলে যাবে?
যারা কাফেরদের নিয়ে চিন্তিত তারা মুসলিমদের নিয়ে কত টুকু ভাবে? মুসলিম নির্যাতনে তাদের প্রতিবাদ দেখা যায় না কেনো? |
এই হাদীসের ভিত্তিতে উম্মতের পূর্ববর্তী আলেমগণ সবাই আনন্দিত হওয়াকে বৈধ বলেছেন। আবার তারা একই সাথে ব্যথিতও হয়েছেন। তবে তাঁদের ব্যথিত হওয়ার কারণ কেবল এটা না যে, "মানুষ মারা গেছে"। তাঁরা ব্যথিত হয়েছেন একারণে যে, সে জাহান্নামের মত কঠিন আযাবের জায়গার সম্মুখীন হবে- এই ভয়াবহতা কিংবা মৃত্যুর ভয়াবহতা অথবা মানব সমাজের উপর আসা সামগ্রিক দুর্যোগের কথা চিন্তা করে।
ইহুদির লাশ দেখে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাঁড়ানোর একটা কারণ ছিল মৃত্যুর মত বিশাল ভারি বিষয়ের কথা স্মরণ করা। এই দাঁড়ানোর পিছনে সালাফরা বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কেবল মানুষ হওয়া নেই।
সুতরাং আনন্দিত হওয়া এবং ব্যথিত বা চিন্তিত হওয়া উভয়টাই স্ব স্ব জায়গায় বৈধ। দুটি ক্রিয়ার পিছনে আমাদের কারণ যদি শরিয়তসম্মত হয়, তাহলে ক্রিয়ার প্রকাশও বৈধ হবে। আর যদি কারণ শরীয়াসম্মত না হয়, তবে ক্রিয়া প্রকাশও অবৈধ হবে।
এই উসূল মাথায় রাখলে বিষয়টা সহজেই সমাধান হয়ে যাবে। এখন আনন্দের ক্ষেত্রে সেটা নিজে নিজে হওয়া কিংবা প্রকাশ করা- এর কোন তারতম্য সালাফরা করেননি। ফলে এখানে পরখ করে বিধানে ভিন্নতা আনার কোন সুযোগ নেই। এটা মনগড়া বিধান প্রণয়ন ছাড়া আর কিছুই না।
মুসলিম কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে হিন্দুরা। |
এই উসূল মাথায় রাখলে বিষয়টা সহজেই সমাধান হয়ে যাবে। এখন আনন্দের ক্ষেত্রে সেটা নিজে নিজে হওয়া কিংবা প্রকাশ করা- এর কোন তারতম্য সালাফরা করেননি। ফলে এখানে পরখ করে বিধানে ভিন্নতা আনার কোন সুযোগ নেই। এটা মনগড়া বিধান প্রণয়ন ছাড়া আর কিছুই না।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন- এই দলিল আনন্দ প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার জন্য ব্যবহার করাও অপপ্রয়োগ। কারণ প্রথমত গালি আর আনন্দ এক জিনিস না। দ্বিতীয়ত এই গালি দেয়ার নিষেধাজ্ঞা কেবল মুমিনদের ক্ষেত্রে। কাফির, মুনাফিক, বিদা'আতী এবং প্রকাশ্য ফাসেক ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না।( উমদাতুল কারী-৮/১৯৫)
আবার কাফেরদের থেকে রিপিট আসবে- এই যুক্তিতে যেকোন কিছুকেই অবৈধ ঘোষণা করাও দলিলের অপব্যবহার। আল্লাহ নিষেধ করেছেন মুশরিকদের দেব দেবিদের গালি না দিতে,যেন তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। এই আয়াতকে তার স্থানেই রাখা উচিৎ। এটাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করলে আরো অনেক বিধানে প্রশ্ন তোলা যাবে। যেমন "কাফেরদের উপর জিযিয়া আরোপ করা যাবে না, নতুবা তারাও আমাদের উপর তা প্রয়োগ করবে। কাফেরদের সাথে কিতাল করা যাবে না, নতুনা তারাও আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে।" এরকম আরো বিধানে প্রশ্ন তোলা যাবে। সুতরাং কাফেরদের থেকে রিপিট আসবে এই যুক্তিতে আনন্দ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা মোটেও সঠিক না। এটা কিয়াসে বাতিল হবে নিশ্চয়।
আল্লাহু আ'লআম।
আবার কাফেরদের থেকে রিপিট আসবে- এই যুক্তিতে যেকোন কিছুকেই অবৈধ ঘোষণা করাও দলিলের অপব্যবহার। আল্লাহ নিষেধ করেছেন মুশরিকদের দেব দেবিদের গালি না দিতে,যেন তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। এই আয়াতকে তার স্থানেই রাখা উচিৎ। এটাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করলে আরো অনেক বিধানে প্রশ্ন তোলা যাবে। যেমন "কাফেরদের উপর জিযিয়া আরোপ করা যাবে না, নতুবা তারাও আমাদের উপর তা প্রয়োগ করবে। কাফেরদের সাথে কিতাল করা যাবে না, নতুনা তারাও আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে।" এরকম আরো বিধানে প্রশ্ন তোলা যাবে। সুতরাং কাফেরদের থেকে রিপিট আসবে এই যুক্তিতে আনন্দ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা মোটেও সঠিক না। এটা কিয়াসে বাতিল হবে নিশ্চয়।
আল্লাহু আ'লআম।
- Islam QA