ইসলামিক ইতিহাসের গল্প - আরজু আহমেদ ভাই এর লেখা সমূহ
ইসলামিক ইতিহাসের গল্প ঃ Islamic Story In Bangla
নোমাডিক যোদ্ধা গোত্রের ইসলাম গ্রহণ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুধবোন
মক্কার জনগণের ব্যবসা সূত্রে ইরাকের কুফা হয়ে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্ডান অবধি যে চলাচলের পথ- তা ছিল মূলত উত্তর-পূর্ব আরবের আদিবাসী গোত্রগুলোর বসতির মধ্য দিয়ে।
এরা ছিল বেদুঈন, হাওয়াজিন গোত্র। নগর সভ্যতা থেকে দূরে থাকায় সার্বাভাইভিং স্কিল ছিল অসাধারণ। সমর দক্ষতা ছিল সমগ্র আরবে বিশ্রুত। তাদের সঙ্গে মক্কার অধিবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর ঘটনা ঘটত প্রায়শ।
সেই হাওয়াজিনেরই এক উপগোত্র বনু সা'দে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর শিশুকালে লালিতপালিত হন। দুধ মা হালিমাতুস-সাদিয় ার পরিবারে।
সে সময় হালিমার আরও দুজন সন্তান ছিল। একজন হলেন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দুধ ভাই, হালিমার সদ্য প্রসূত সন্তান আব্দুল্লাহ।
হালিমার আরও এক কন্যা সন্তান ছিল, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বছর পাঁচেক আগে তাঁর জন্ম। তাঁর নাম ছিল 'হায-যাক্বা'। মুখে ও শরীরে অনেক তিলক চিহ্ন থাকায় তাঁকে 'শাইমা' নামে ডাকা হোত।
শাইমা মানে হচ্ছে, যার গায়ে অনেক সৌন্দর্য তিলক আছে। সে অর্থে এককথায় এর প্রাঞ্জল বাঙলা অনুবাদ হতে পারে 'তিলোত্তমা।' এই উপনামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। সেকালে আর কারো এমন নামের অস্তিত্ব ছিল না।
অষ্টম হিজরিতে হাওয়াযিন গোত্র মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের অব্যবহিত পরপরই মুসলমানদে উপর আক্রমণের চেষ্টা করে। এই প্রেক্ষিতে হুনাইনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হুনাইনের যুদ্ধে হাওয়াযিনরা পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে ছয় হাজারের মত অংশগ্রহণকারী যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক হয়।
বন্দিদের মধ্য থেকে এক প্রবীণ মহিলা সাহাবাদের কাছে দাবি করেন, তিনি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর দুধবোন।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আল্লাহ্ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে চান, তাঁর দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ কী?
তিনি শৈশবের বহু ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, একবার আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে তিনি কোলে নিয়েছিলেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কাঁধে কামড়ে দেন। সেই কামড়ের দাগ তাঁর গায়ে তখনো ছিল।
সুবহানআল্লাহ, কামড়ে দেবার ঘটনাটা ভীষণ চমৎকার। আদতে এই নবী তো আমাদের মধ্য থেকে প্রেরিত আমাদেরই একজন। শৈশবে দুচারবার না কামড়ে আমরা কে বেড়ে উঠেছি!
যা হোক, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে চিনতে পেরে নিজের গায়ের চাদর পেতে বসতে দেন। স্মৃতিকাতরতায় তাঁর চোখ বেয়ে কান্মা বেরুতে থাকে। আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেন।
প্রস্তাব করেন, 'চাইলে আপনি আমার সঙ্গে যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে থাকতে পারেন। আপনার খিদমতে আমি রয়েছি। অথবা ইচ্ছে হলে আপনার নিজের গোত্রে ফিরে যেতে পারেন।'
তিনি তাঁর গোত্রে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যথেষ্ট পরিমাণ উপহার সামগ্রীসহ তাঁকে তাঁর গ্রামে প্রেরণ করেন। এরপর থেকে তিনি তাঁর নিয়মিত খোঁজ নিতেন।
এই সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতেই যুদ্ধবন্দী বাকি ছয় হাজার যুদ্ধবন্দীকে বিনা মুক্তিপণে মুক্তি দেওয়া হয়। এমনকি তিনি প্রত্যেক বন্দীকেই একটা করে শাল উপহার দেওয়া হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে এইরকম যুদ্ধবন্দী মুক্তির ঘটনা ছিল অভূতপূর্ব এবং অশ্রুতপূর্ব। এইরকম ঘটনা না আগে কখনো ঘটেছে! না আজও অবধি কখনো এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে!
এই মহানুভবতা হাওয়াযিন গোত্রকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই বিশাল নোমাডিক যোদ্ধা গোত্রের ইসলাম গ্রহণ ছিল আরব উপদ্বীপে শিরকের অবলোপনের সর্বোচ্চ ও সর্বশেষ ধাপ।
এর ভূরাজনৈতিক ফলও ছিল সদূরপ্রসারী। এর ফলে আরব উপদ্বীপের বাইরে ইসলামের বিজয়াভিজানের পথ উন্মুক্ত হয়। বাইজেন্টানাইন এবং সাসানিদ এই উভয় পরাশক্তির দ্বারপ্রান্তে ইসলাম পৌঁছে যায়।
মহান আল্লাহ্র কত উত্তম পরিকল্পনা। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুধ পানের জন্য বনু সা'দের কাছে প্রেরণের মধ্যেও হিকমাহ রেখেছিলেন।
যা হোক, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর সহোদর কোনও ভাইবোন ছিল না। দুধবোনের প্রতি অপরিসীম সম্মান ও ইজ্জত দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন আমাদের বোনেদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কত প্রবল হওয়া চাই।
অথচ আজকাল প্রায় ভাইয়েরাই বোনদের ন্যায্য ওয়ারিশ থেকে বঞ্চিত করে। বছরের পর বছর তাদের খোঁজ নেয় না। পাশে দাঁড়ায় না।
শাইমার স্নেহ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর শৈশবে বিশেষভাবে পেয়েছিলেন। তাঁর হাত ধরে এক পা দু পা করে হাঁটতে শিখেছেন। তাঁরসঙ্গে খেলেছেন। তাঁর কোলে মানুষ হয়েছেন।
শাইমা তাঁকে এত স্নেহ করতেন যে, তাঁর সঙ্গে খেলবার সময়েও তাঁর জন্য দোয়া করে কবিতা আবৃত্তি করতেন।
'ও প্রতিপালক, মুহাম্মদকে আপনি দীর্ঘায়ু করুন
তাঁর তারুণ্য বিকশিত করুন
এবং কবুল করুন এমন নেতা হিসেবে
যেন বিদ্বেষপরায়ণ শত্রুও তাঁর সম্মানে আনত হয়
আর তাঁর মর্যাদাকে আপনি করুন চিরস্থায়ী।'
তাঁর তারুণ্য বিকশিত করুন
এবং কবুল করুন এমন নেতা হিসেবে
যেন বিদ্বেষপরায়ণ শত্রুও তাঁর সম্মানে আনত হয়
আর তাঁর মর্যাদাকে আপনি করুন চিরস্থায়ী।'
সুবহানআল্লাহ! সেই শিশু শাইমা রা. এঁর সেই দোয়া কি চমৎকার ছিল!
প্রকৃতই তাঁর শত্রুও তাঁর সামনে নত হয়েছে। এমনকি যারা দুনিয়াতে হয় নি, তারাও হাশরের মাঠে হবে। প্রত্যেকেই তাঁর দ্বারস্থ হবে। আল্লাহ্ তাঁর মর্যাদাকে পৃথিবীর অস্তিত্ব পর্যন্ত স্থায়ী করেছেন। আবার পৃথিবীর ধ্বংসের পরও তা স্থায়ী থাকবে।
আল্লাহ্ শাইমা রা. এঁর মর্যাদা উঁচু করুন। দেখবেন, সিরাতের যত আলাপ হয়, তার মধ্যে কেন জানি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর শৈশবকালে প্রতিপালন করা পুরুষদের চে' নারীদের আলোচনা আমাদের মধ্যে তুলনামূলক কম হয়।
অথচ তিনিও অন্য সবার মত তাঁর শৈশবে সবচে' বেশি স্নেহ পেয়েছেন নারীদের কাছ থেকেই।
➤➤➤➤➤➤➤➤➤➤
একাই একজন উম্মত "যাইদ বিন আমর বিন নুফাইল"
সমগ্র আরবের মানুষ যখন মুশরিক। একজন মানুষও যখন আর আল্লাহ্ প্রেরিত দ্বীনের উপর নাই। সেই ঘোর অন্ধকার যুগে যাইদ বিন আমর বিন নুফাইল ছিলেন ব্যতিক্রম একজন।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, একবার বালদা উপত্যকার শেষপ্রান্তে রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কিছু খাবার পরিবেশন করা হলো। তিনি তা খাওয়া থেকে বিরত থাকলেন।
এরপর তা যাইদের সামনে পরিবেশন করা হলে, যাইদ বললেন, 'তোমরা পাথরের মূর্তির নামে যা জবেহ করো তা আমি আহার করি না।'
তিনি মক্কার লোকদের বলতেন, 'আল্লাহই এই প্রাণী সৃষ্টি করেন, তিনিই এর পানির বন্দোবস্ত করেন আর মাটিতে খাওয়ার ঘাস জন্মান। অথচ তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে তা জবাই করো।'
আবু বক্বর রা. এঁর কন্যা আসমা রা. বর্ণনা করেন, 'আমি যাইদ বিন আমরকে দেখেছি একদিন সে কা'বার সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, 'আমি ছাড়া তোমরা আর কেউই দ্বীনে ইব্রাহিমের উপর নেই।'
তার মধ্যে সকলের থেকে আলাদা কি ছিল?
১। তিনি মূর্তিপূজার বিরোধিতা করতেন। এক আল্লাহকেই রব্ব বলে মানতেন। তিনি কা'বার সামনে দাঁড়িয়ে লোকদের মূর্তিপূজা না করার জন্য আহ্বান জানাতেন।
২। রক্ত, মৃত প্রাণী বা কোনও মূর্তির নামে জবাইকৃত কোনও প্রাণী তিনি খেতেন না।
৩। তিনি শিশু কন্যাদের হত্যার বিরোধিতা করতেন। কেউ সেরকম করছে জানতে পারলে সেই শিশুকে উদ্ধার করে নিজে লালন পালন করতেন।
সেই শিশু কন্যা বড়ো হবার পর তাঁর পিতাকে গিয়ে বলতেন, চাইলে তুমি তোমার কন্যাকে গ্রহণ করতে পারো অথবা তোমার পক্ষ থেকে আমিই তার প্রতিপালন করব।
প্রকৃতপক্ষে সত্য দ্বীনের সন্ধানে যাইদ বিন আমর ছিলেন ব্যাকুল। ফলে ধর্মের সন্ধানে তিনি মক্কার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁর স্ত্রী এই পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট ছিলেন না।
তাঁর স্ত্রী তাঁর চাচা খাত্তাবকে অনুরোধ করেন যেন সে যাইদকে বাঁধা দেয়। পিতৃধর্ম ত্যাগের কারণে চাচার কাছে নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এমনকি তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলে কয়েক বছর তিনি পাহাড়ের গুহায় বাস করতে বাধ্য হন।
তিনিও থাকতেন হেরা পর্বতে।
এরপর সুযোগ বুঝে পূর্বপরিকল্পনা পূরণ করতে ইরাকের মসুল হয়ে সিরিয়ার দামেস্কে পৌঁছান। আরব উপদ্বীপের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলও ধর্মের খোঁজে সফর করেন। কোথাও কোনও ধর্মতত্ত্ববিদের সন্ধান পেলেই ছুটে যেতেন।
তিনি খ্রিষ্ট ও ইহুদী ধর্ম দুই-ই অধ্যয়ন করেন এবং অনুধাবন করেন এই দুটো ধর্মই মূল থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। ফলে তিনি এই দুটোর একটিও গ্রহণ করেন নি।
একসময় তিনি জানতে পারেন, বালক্বায় এক খ্রিস্টান সন্নাসীর কথা। যিনি খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কে সমূহ জ্ঞান রাখেন। বালক্বা আধুনিক জর্ডানের রাজধানী আম্মানের উত্তর পশ্চিমের এক শহর।
সেখানে গেলে সেই সন্নাসী তাঁকে নতুন নবী আগমনের সংবাদ দেয়। আর এও অবগত করেন যে, সেই নবীর আবির্ভাব হবে তাঁরই অঞ্চলে। ফলে তিনি দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তা ছিল পনেরোশো কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ পথ!
পথিমধ্যে ইরাকের কুফায় তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এটা নবুওয়ত প্রাপ্তিরও পাঁচ বছর আগেকার ঘটনা।
যাইদ বিন আমর ছিলেন উমার রা. এঁর চাচাত ভাই। ইতিহাস থেকে আমরা তাঁর একজন পুত্র ও একজন কন্যার কথা জানতে পারি। যাঁরা উভয়েই প্রাথমিক যুগেই ইসলাম কবুল করেন।
১। সা'ইদ বিন যাইদ- তিনি ছিলেন আশারায়ে মুবাশশিরা বা জান্মাতের দশ সুসংবাদপ্রাপ্তে র একজন। যুবক বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। উমার রা. এঁর বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (উম্মে জামিল) ছিল তাঁর স্ত্রী। উমার রা. এঁর ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত ঘটনা তাঁর সংগেই সম্পৃক্ত।
একবার তাঁর অনুমতি ছাড়াই তাঁকে দামেস্কের গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেন, 'আমি এত বড়ো কুরবানির জন্য প্রস্তুত নই। অন্যেরা জিহাদ করবে আর আমি তা থেকে বঞ্চিত হব তা হয় না।' ফলে তিনি আমৃত্যু সাধারণ সৈনিক হিসেবেই যুদ্ধে শরিক হন।
পারিবারিক জীবনে উমার রা. এঁর মত খলিফার ভগ্নিপতি ছিলেন। আশারায়ে মুবাশ্বশিরার একজন ছিলেন। অথচ নিজেকে এত লুকিয়ে রাখতেন, এতখানি বিনয় অবলম্বন করতেন যে, তাঁকে নিয়ে যতখানি আলোচনা হওয়া উচিত আজও তা থেকে বহু কম হয়।
২। আতিক্বা বিনতে যাইদ- আল্লাহ্ এই এক কন্যার দ্বারাই যাইদ বিন আমরকে পাঁচজন প্রখ্যাত সাহাবার শ্বশুর হওয়ার সম্মান দান করেছেন। এমনকি এর মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে খোদ নবী পরিবারের সঙ্গেও আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে।
i. যাইদ ইবনুল খাত্তাব রা. - তাঁর প্রথম বিবাহ হয় যাইদ ইবনুল খাত্তাব রা. এঁর সঙ্গে। বয়সে তিনি বেশ ছোট ছিলেন তাঁর। তাঁরা মদিনায় একত্রে হিজরত করেন। যাইদ রা. ইয়ামামার যুদ্ধে ৬৩২ সালে শাহাদাত বরণ করেন।
ii. আবদুল্লাহ ইবনে আবু বাক্বার রা.- তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয় আবু বাক্বার রা. এঁর পুত্র আব্দুল্লাহর সঙ্গে। হুনায়ুনের যুদ্ধের পর তাইফ অবরোধকালে তিনি আহত হয়েছিলেন। সেই পুরনো ক্ষত থেকে প্রায় তিন বছর পর সৃষ্ট সংক্রমণে তিনি ৬৩৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
iii. উমার ইবনুল খাত্তাব- উমার রা. এঁর প্রতি তাঁর বড়ো ভাই যাইদ বিশেষ স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তাঁরই হাতে ব্যবসায় হাতেখড়ি। সেই ভাইয়ের বিপত্নীক স্ত্রী আবার একইসঙ্গে পিতৃহীন চাচাত বোনের বিয়ের পর পুনরায় স্বামী হারা হবার ঘটনা সম্ভবত উমার রা. কে নাড়া দিয়েছিল।
তিনি নিজেই কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব প্রেরণ করেন। তাঁর সঙ্গে তৃতীয় বিবাহ হয়। আতিক্বা রা. সেইদিন মসজিদেই ছিলেন যেদিন উমার রা. মসজিদে ছুরিকাহত হন এবং পরে মারা যান।
iv. যুবাইর বিন আল আওয়াম রা. - উমার রা. এঁর মৃত্যুর পর যুবাইর রা. এঁর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তিনি ছিলেন উমার রা. মনোনীত খলিফা নির্বাচনের পাঁচজনের একজন। ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমর নায়ক। ৬৫৬ সালের ডিসেম্বরে উটের যুদ্ধে তিনি শাহাদাত করেন।
v. হুসাইন ইবনে আলী রা. - যুবাইর বিন আওয়ামের ইন্তেকালের পর তাঁর বিবাহ হয় নবী দৌহিত্র হুসাইন রা. এঁর সঙ্গে। আতিক্বা বিনতে যাইদ রা. হুসাইন রা. এঁর ৮ বছর পূর্বে ইন্তেকাল করেন। তাঁর পাঁচজন স্বামীর প্রত্যেকেই শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।
যা হোক, ফেরা যাক যাইদ বিন আমরের কথায়। তাঁর জন্ম হয়েছিল জাহিলিয়াতের যুগে। জন্মেছিলেন মুশরিক পরিবারে। তাঁর কাছে না কিতাব ছিল, না ছিল অক্ষত দ্বীন, না ছিল কোনও নবী, না প্রকৃত দ্বীনের কোনও প্রচারক।
কিন্তু আল্লাহ্র আনুগত্য আর তাঁর প্রদেয় জীবনবিধান লাভের যে আকাঙ্ক্ষা তাতে কোনও ঘাটতি ছিল না। ফলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আমাদের জানিয়েছেন আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে দুটো স্তর দ্বারা সম্মানিত করেছেন।
আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেন, পুনরুত্থানের দিনে যখন প্রত্যেক উম্মত আলাদা আলাদা কাতার করে দাঁড়াবে।তখন, 'যাইদ বিন আমর, আমার এবং ঈসা ইবনে মরিয়ামের মাঝে একাই এক উম্মাহ হিসেবে দাঁড়াবে।'
ফলত জীবনের যাবতীয় সঙ্কটে আমরা যদি হক্বের উপর থাকি আর তামাম দুনিয়াও বিপক্ষে দাঁড়ায় তবুও আল্লাহর জন্য সেই হক্বকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। কারোর কটূবাক্য, লোকেদের বলার ভাবনায়, সম্পদ কিম্বা দুনিয়ার জন্য সে পথ ত্যাগ করা যাবে না।
নিঃসন্দেহে আল্লাহই উত্তম বিনিময়দাতা।