কোরান হাদিসের ইসলাম বনাম মোডারেট ইসলাম | কাফেরদের শিখানো ইসলাম মানবেন নাকি হক আলেমদের?

কাফেরদের মোডারেট আলেমদের শিখানো ইসলাম মানবেন নাকি হক আলেমদের?  


ইসলাম কোন জগাখিচুড়ি ধর্ম নয় যে কাফেরদের ধর্মের  সাথে এক হতে হবে।


মডারেট আলেমদের ভ্রান্তির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ।


"আলেমদের বিরল ও বিচ্ছিন্ন মতের অনুসরণ...."


'যাল্লাত, শুযুযাত, নাওয়াদের' ইত্যাদি দ্বারা বোঝানো হয়, শরীয়তের কোন সুষ্পষ্ট প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিপরীতে, প্রায় সকল ইমামদের মতামতের চেয়ে ভিন্ন ও সাংঘর্ষিক মত প্রদান করা। যেমন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। কেও একজন এটাকে মুস্তাহাব বলল। মদ খাওয়া হারাম। কেও একজন, এটাকে জায়েজ বলল। এই ধরণের মতামত যদি কেও দিয়েও থাকেন, সেটা অনুসরণ করা হারাম ও নিকৃষ্ট কাজ।

কেন এই বিষয়টা লিখছি?


বর্তমান সময়ের 'প্রাক্টিসিং' বা ইসলামি বিধিবিধান অনুসরণ করতে আগ্রহীদের সবচেয়ে বড় কয়েকটা ফেতনার মাঝে একটি হচ্ছে, 'শায আকওয়াল অনুসরণ করা'! অর্থাৎ, কোন ইমাম বা গবেষক এমন মত দিয়েছেন, যা প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিপরীত অথবা সালাফে সালিহিনদের কেও এই মত দেন নি। কিংবা, পূর্বে কেও এই মত দিলেও সে মত উম্মাহর অন্যান্য আলেমগণ গ্রহণ করে নি। এর অনুসরণ ও হয় নি।

যেমন, ইবনে হাজাম যাহেরী। তিনি কিছু মত দিয়েছেন, যা সকল আলেম প্রত্যাখ্যান করেছে। কেও এর অনুসরণ করে নি। তিনি বলেছেন, 'সন্তানের পিতা ধনী হলে সে তার সন্তানকে হত্যা করতে পারবে। কারণ পবিত্র কুরআনে দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। ধনী ব্যক্তির তো দারিদ্র্যের ভয় নেই।'

এই জাতীয় প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য মত আরো আছে। যা সরাসরি কুরআন ও হাদিসের বিরুদ্ধে। একজন মুজতাহিদ লাখো মাসালার সমাধান উদ্ভাবনকালে দুয়েকটা মাসালায় এইরুপ ভুল করতে পারেন। যেহেতু তারাও মানুষ। এইভুলগুলোকে অন্যান্য আলেমরা চিহ্নিত করেছেন। এগুলোর অনুসরণ মোটেও জায়েজ নেই।

বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে, মোডারেট বা আধুনিকমনা মুসলিমগণ এই শুযুযের সন্ধানে ছুটছেন। খুঁজে খুঁজে দেখছেন, কোন মত অনুসরণ করলে নফসের পূজাও হয় আবার ইসলামও অনুসরণ করা হয়। উর্দুতে এটাকে বলা হয়, 'তা কেহ, শয়তান ভী খুশ রহে আওর আল্লাহ ভী নারাজ না হো', অর্থাৎ শয়তানও খুশি থাকল, আর আল্লাহও নারাজ হলেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

তারা খুঁজে বের করেছেন, মিউজিককে কোন মত এর আলোকে জায়েজ করা যায়? ইতিহাসে কোন আলেম গানকে জায়েজ বলেছে? কোন আলেম সামান্য মদ খাওয়াকে, মেয়েদের মুখ খোলা থাকা বা ছেলেমেয়ে সহবস্থান করাকে জায়েজ বলেছেন? কোন স্কলার দাড়ি কাটাকে জায়েজ বলেছেন? ইত্যাদির সুযোগ তারা সন্ধান করেই যাচ্ছেন।

একটা পাপকাজকে যখন জায়েজ মনে করে করা হয়, তখন সেটার প্রতি ঘৃণা বা অনুশোচনা কোনটাই আসে না। এই ব্যক্তিদের তওবার তাওফীকও হয়ে উঠে না। আল্লাহ পানাহ!

যেমন, মহিলা পুরুষের খোলামেলা অবস্থান, এমনকি সেটা যদি পবিত্র মসজিদেও হয়। মহিলাদের মুখ খোলা রাখাকে জায়েজ ভাবা, মিউজিককে হালাল ভাবা, দাড়ি কাটা বা একমুষ্টির কম রাখাকে জায়েজ মনে করা ইত্যাদি সবই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। শুধু কোন 'স্কলার' বলেছেন, এই অজুহাত দিয়ে কেয়ামতের দিন পার পাওয়া যাবে না।

* * *

শাযনাদেররুখসত,যাল্লাত অনুসরণ করা নিয়ে সালাফে সালেহীনদের বক্তব্যঃ

১/-- ইমাম আওযায়ী রহ. বলেন "যে ব্যক্তি আলেমদের 'নাদেরসমূহ' অনুসরণ করবে সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে"।

(নাদের মানে হচ্ছে, সকল আলেমের বিপরীতে বিরল এক মত)

-সুনানে কুবরা বায়হাকী, ১০/২১১ -সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/১২৫ -তাজকিরাতুল হুফফাজ ১/১৮০

২/-- সুলাইমান আত তায়মী রহ. বলেন " যদি তুমি সকল আলেমের 'রুখসতগুলো' গ্রহণ করো, তাহলে তোমার মধ্যে সকল নিকৃষ্ট কাজগুলোর সমাবেশ ঘটবে"

ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. এই উক্তি নকল করার পর লিখেন "এই ব্যাপারটা সকল ইমামের ইজমা', এক্ষেত্রে ভিন্ন কোন মত আছে বলে জানা নেই আমার"

(রুখসত মানে, সুযোগ বা ছাড়গুলো খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী আমল করা। বর্তমানে অনেককেই দেখা যায়, বিভিন্ন মাজহাবের আলেমদের মতগুলো থেকে যেটা সহজ, যেটাতে ছাড় আছে সে সুযোগ এর উপর আমল করছেন। এটাতে তিনি ভাবছেন যে ইসলাম মানা হলো। মূলত, এটাতে নফসের পূজাই হয়। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত হয় না।)

-জামিউ বয়ানিল ইলম- ২/৯০ -সিয়ারু আলামিন নুবালা ৬/১৯৮

৩/-- ইমাম মালেকের একজন উস্তাদ, বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম বিন আবী আ'বলাহ রহ. বলেন "যে ব্যক্তি আলেমদের 'শায মতামতগুলো' গ্রহণ করবে সে বিপুল পরিমাণে নিকৃষ্ট কাজ করবে"।

৪/-- মুয়াবিয়া বিন কুররাহ বলেন "সাবধান! আলেমদের 'শায' মত অনুসরণ করা থেকে বেচে থাকো"

-শারহু ইলালিত তিরমিজি ১/৪১০, -হিলইয়া ৮/২৭

৫/-- ইমাম বায়হাকী তার সুনানে ইসমাইল ইবনে ইসহাক রহ. এর একটা ঘটনা উল্লেখ করেন। একবার তিনি খালীফা মুতাজিদ এর কাছে গেলেন। খালীফা তার সামনে একটি কিতাব পেশ করল। তিনি বলেন, "আমার সামনে খালীফা আবুল আব্বাস মুতাদিদ বিল্লাহ একটা কিতাব পেশ করল। আমি সেটাতে দৃষ্টি দিলাম। তাতে আলেমদের 'যাল্লাত' আর 'রুখসত'গুলো সংকলন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেসব দলীলগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইমামগণ উক্ত শায মতের পক্ষে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অত:পর আমি তাকে বললাম। 'হে আমিরুল মুমিনীন! এই কিতাবের লেখক একজন যিনদীক।'

খালীফা মুতাজিদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল- 'এই সমস্ত হাদিস কি সহীহ নয়?' আমি বললাম- হাদিসগুলো যেমনই হোক, কিন্তু যে ইমাম মুসকিরকে হালাল বলেছেন তিনি বুঝিয়েছেন নাবীয জায়েজ, কিন্তু তিনি মুতয়াহ বিয়েকে তো জায়েজ বলেন নি। আর যিনি মুতয়াহ কে জায়েজ বলেছেন, তিনি গান মিউজিককে হালাল বলেন নি। আবার যে গানকে হালাল বলেছেন তিনি মুসকিরকে হালাল বলেন নি। এমন কোন মুজতাহিদ আলেম নেই, যার কিছু শায মত নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি সকল আলেমের যাল্লাতগুলো সংকলন করে সেগুলোকে অনুসরণ করছে তার দ্বীন বরবাদ হয়ে গিয়েছে।

এরপর মুতাদিদ সেই কিতাবকে আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।

-সুনানে বায়হাকী ১০/২১১

(যিনদীক বলতে বোঝানো হয়েছে, যে লোক ভন্ড ও ইসলামের শত্রু । মোনাফেক, কিন্তু বাহ্যিকভাবে ইসলামের বড় কোন ব্যক্তিত্ব বলে মনে হয়।)

৬/-- ইমাম মা'মার রহ. এর একটি উক্তি ইমাম ইবনে হাজার রহ. উল্লেখ করেছেন। মা'মার রহ. বলেন "যদি কোন ব্যক্তি মদীনাবাসীর কারো কারো মত অনুযায়ী গান শোনা আর স্ত্রীর পায়ুগমনকে জায়েজ বলে ধরে নেয়, আহলে মক্কার কারো কারো মত অনুযায়ী মুতয়াহ বিয়েকে জায়েজ মনে করে, কুফাবাসীর কারো কারো মতানুসারে নেশা তৈরিকারী নাবীযকে হালাল বলে মনে করে তবে সে আল্লাহর সকল বান্দার মঝে সর্বনিকৃষ্ট বান্দা হিসেবে পরিণত হবে।"

-তালখীসুল হাবীর ৩/১৮৭

৭/-- হজরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন তিনটি বস্তু ধ্বংসকারী।এক- পথভ্রষ্ট নেতা। দুই- মোনাফেক এর কুরআন নিয়ে বিতর্ক। তিন- আলেমদের 'যাল্লাত'।

-তাহরিমুন নারদি ওয়া শাতরাঞ্জ ওয়াল মালাহী- ইমাম আবু বাকার আজুররী পৃঃ ১৭০ হা- ৪৯

আজকে খুব সংক্ষেপে কিছু কথা লেখা হলো। সালাফে সালেহিন যা অনুসরণ করেন নি, যা বলেন নি এমন 'নতুন নতুন' বক্তব্য হাল আমলের অনেক গবেষক দিয়ে যাচ্ছেন। 'তাওয়ারুছে আমাল'কে তোয়াক্কাই করছেন না। আগামীতে বিস্তারিত লিখব ইনশাআল্লাহ।

-শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

**নাসিহাহ সব সময় ইনশা'আল্লাহ্‌ আহলে সুন্নাহর জামাহের আলেমদের অনুসরন করে । যেসব কথিত মডারেট আলেমগন এই ধরনের বিচ্ছিন্ন মত কে প্রচার করছেন । ইসলামকে পশ্চিমা ধাচে কাস্টমাইজ করছেন ,আমরা তাদের ব্যাপারে উম্মাহ কে সচেতন করা আমাদের দায়িত্ব মনে করি । এটাকে আপনারা হেইট স্পিচ ভাবেন আর যাই ভাবেন না কেনো । যুগে যুগে উলামায় কেরামগন ভ্রান্ত ফিরকার ব্যাপারে আওয়াম কে সচেতন করেছেন। আমরা শুধু তাদের অনুসরন করছি । নিশ্চয়ই দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ন হয়ে গেছে । একে নতুন করে সাজানো কিংবা বাদ দেবার সুযোগ নেই । আল্লাহ্‌ আমাদের বোঝাও তাওফিক দান করুক ।**


সাজ্জাদুর রহমান শাওন > ‎Naseehah (দ্বীনি পরামর্শ)

https://mbasic.facebook.com/photo.php?fbid=2537806643150224&id=100007627387095&set=gm.2695644917349736&refid=7&ref=104&_ft_=qid.6844899784306631131%3Amf_story_key.-214374459516066720%3Agroup_id.1787065274874376%3Atop_level_post_id.2695644917349736%3Acontent_owner_id_new.100007627387095%3Apage_id.1787065274874376%3Asrc.22%3Aphoto_id.2537806643150224%3Astory_location.5%3Astory_attachment_style.photo%3Aview_time.1593702421%3Afilter.h_nor%3Atds_flgs.3%3Apage_insights.%7B%221787065274874376%22%3A%7B%22page_id%22%3A1787065274874376%2C%22page_id_type%22%3A%22group%22%2C%22actor_id%22%3A100007627387095%2C%22dm%22%3A%7B%22isShare%22%3A0%2C%22originalPostOwnerID%22%3A0%7D%2C%22psn%22%3A%22EntGroupMallPostCreationStory%22%2C%22post_context%22%3A%7B%22object_fbtype%22%3A657%2C%22publish_time%22%3A1593539099%2C%22story_name%22%3A%22EntGroupMallPostCreationStory%22%2C%22story_fbid%22%3A%5B2695644917349736%5D%7D%2C%22role%22%3A1%2C%22sl%22%3A5%7D%7D&__tn__=EH-R
Next Post Previous Post