ইওরোপের প্রিমা নকটে আইন ও বাংলাদেশের সোনার ছাত্রলীগের ধর্ষণ নামা

বাংলাদেশের সোনার ছাত্রলীগের ধর্ষণ নামা ঃ অধঃপতনের কারন ও ফল কি? 

 আইনটাকে ইংল্যান্ডে ডাকা হয় প্রিমা নকটে (Primae Noctis), আর ফ্রান্সে দ্রা দি সিনিয়ের (Droit du Seigneur)।

এটা হচ্ছে মধ্যযুগে ইওরোপের রাজ্যগুলোতে সরকারী লোকজনের একটি আইনী অধিকার, যার আওতায় সরকারী কর্তাব্যক্তি তার এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় কোন বিয়ে-শাদি হলে নববধুর প্রথম রাত তার সাথে কাটাতে বাধ্য করতে পারত।


গুগলে "ছাত্রলীগ ধর্ষণ" লিখে সার্চ করলে ০.৪৯ সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় ২৮ লক্ষ রেজাল্ট আসে। আপনি যদি নিউজগুলোয় হালকা চোখও বুলান, দেখবেন নববধু, তরুণী গৃহবধু, বয়স্কা গৃহবধু, মাদ্রাসা ছাত্রী, স্কুল ছাত্রী, কলেজ ছাত্রী, শিক্ষিকা, শ্রমজীবি, নিজেদের কালচারাল প্রোগ্রামের গাতকী-নর্তকী, এমনকি নিজেদের নেত্রী - এরা কাউকেই বাদ দেয়নি।


একটি সমাজে মেয়ে-মহিলারা যত ধরণের পেশা, ভূমিকা, বয়স আর পরিস্থিতিতে থাকতে পারে, ছাত্রলীগ প্রায় সমস্ত ক্যাটেগরির কাউকে না কাউকে ধর্ষণ করে ফেলেছে।


নববধু বা তরুণী গৃহবধু দিয়ে শুরু করার কারণ, আপনি গুগল করলেই জানতে পারবেন যে এই ক্যাটাগরিতে ছাত্রলীগের বিশেষ দূর্বলতা আছে। বরযাত্রী থেকে নববধুকে ছিনিয়ে নিয়ে, বিয়েবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে, স্বামীকে বেঁধে রেখে, এমন কয়টা নিউজ আছে আমার মত নিন্দুকের কাছ থেকে শুনতে হবে না, নিজে খোঁজ করে যাচাই করে নিন।


ভাইয়ারা ভেবেছিল একটা গোটা জাতির অভিশাপ কাঁধে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করা যায়।

আসলে যায় না।

নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা সকল প্রশংসার মালিক, সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী ও দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।




এখন, কোন দেশে কি অফিসিয়ালি প্রিমা নকটে আইন বলবৎ থাকার প্রয়োজন আছে? উত্তর হচ্ছে, না। কোন অপরাধের ইমপিউনিটি বা শাস্তিহীনতা নিশ্চিত করলে সেই অপরাধের অফিসিয়াল বৈধতার কোন প্রয়োজন নেই। দু'টো একই কথা।


বাংলাদেশে কি প্রিমা নকটে অর্থাৎ "সরকারী লোকজন কর্তৃক বধু-ধর্ষণ অধিকার আইন" চালু আছে? দেশের যেকোন মহিলার প্রতি কি সরকারী লোকজনের বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতাদের নিরবিচ্ছিন যৌন অধিকারবোধ আছে?


বিষয়টা এভাবে দেখুন - শীর্ষ নেতা প্লাস আত্মীয় হয়েও শেখ সেলিম আর ওমর ফারুক এখন ঠুঁটো জগন্নাথ, তাদের একসময়কার গমগমে বাড়ি-অফিসগুলোয় এখন ঘুঘু চড়ে; যার নামে ঢাকার সব চাঁদাবাজ এক ঘাটে পানি খেত সেই সম্রাট জেলে, বিছানায় মেয়ে পাঠিয়ে নেতা-আমলাদের সন্তুষ্ট রাখা জিকে শামীম আর পাপিয়াও জেলে, মুজিব-জিয়া বাদে মোটামুটি বাদবাকি সব নেতার সাথে ছবি তোলা সাহেদও জেলে - এত কিছুর পরও কোথাকার কোন কলেজের কিছু ফকিন্নি ছাত্রলীগ নেতা হাসবেন্ডকে আটকে রেখে তার ওয়াইফকে গণধর্ষণের সাহস পায় কীভাবে?


এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, তাদের সেই অধিকারবোধ আছে। দীর্ঘ দিনের বিচারহীনতায় এই অধিকারবোধটা জন্মেছে। মায়ের আলমারির উপরে মোয়ার বয়াম রাখা, মা খেতে নিষেধ করেছে কিন্তু আপনি পেড়ে পেড়ে খেলে মা কিছু বলছে না। এভাবে একদিন দু'দিন করে শেষমেষ সেই নিষেধ কি আর থাকে? এমন নিষেধের কোন মূল্য আছে?


অতএব, বাংলাদেশে আনঅফিসিয়ালি প্রিমা নকটে বলবৎ আছে। মা'আযাল্লাহ, নাজ'আলুল্লাহি ফী নু'হূরিহিম ওয়া না'ঊযু বিল্লাহি মিন শুরূরিহিম।


আল্লাহ 'আজ্জা ওয়া জাল ছাড়া বাঁচানোর কেউ নাই। উনার সাহায্য চান। উনার নিয়ম মত চলুন। বউ, মেয়ে, বোনকে উনার নিয়ম মত চালান। তাঁর ওয়াস্তে স্পিরিচুয়াল ও প্র্যাক্টিকাল প্রোটেকশান নিন, সতর্ক ভাবে চলাফেরা করুন। সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ছাড়বেন না।


এছাড়াও, হাদিসে যৌন নিগ্রহ থেকে বাঁচার একটি 'আমল আছে, কমেন্টে দিয়েছি। হাদিসে বর্ণিত পরিস্থিতি বাস্তবে পুরোটা না-ও মিলতে পারে। কিন্তু দু'আটা তো আছে, দু'আ তো দু'আই, বান্দা-বান্দী একটু কষ্ট করে ঈমানের সাথে পড়লে আল্লাহ তা'আলা তো জবাব দেয়ার জন্য আছেনই।


তিনি কবে কোন মুখলিস-মুমিনকে ফিরিয়ে দিয়েছেন?

ইন্না রাব্বুনার রা'হমানুল মুস্তা'আন।

Mohammed Tawsif Salam (Shatil)


খাবারের ছবি শেয়ার 


কথাটা শেষমেষ হাসি-মশকরায় পরিণত হওয়ার একটা জোরালো সম্ভাবনা আছে । তবুও দুয়েক জন হলেও আমলে নিবেন এই আশায় আল্লাহ তা'আলার ওয়াস্তে বলছি।

দুনিয়ায় মানুষের ফিতরাতে যত ধরণের আকর্ষণ দেয়া হয়েছে, তার সবগুলো আখিরাত পর্যন্ত টিকবে না। একেবারে হাতে গোণা যে ক'টা টিকবে বলে ক্বুরআন ও সুন্নাহে এসেছে, তার একটা হচ্ছে সুখাদ্যের প্রতি আকর্ষণ।

"আর [জান্নাতিরা ঘোরাফেরা করবে] তাদের পছন্দের ফলমূল নিয়ে আর তাদের ইপ্সিত পাখির মাংস নিয়ে।" (সূরা আল-ওয়াক্বিয়াহ, আয়াত ২০-২১)

আপনি যখন আপনার ফেসবুকে কোন একটা সুখাদ্যের ছবি দেন বা সেটা খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স পোস্ট করেন, ঘরে বা রেস্টুরেন্ট যেখানেই হোক, তখন সেটা এমন অনেক মানুষের চোখে পড়ে যাদের কাছে ঐ খাবারটা বেশ দূরহস্ত।

ফ্রেন্ডলিস্ট বা ফলোয়ারদের সবাই তো এক রকম না৷ কারও আর্থিক সামর্থে কুলোয় না, কালেভদ্রে কোন অকেশন ছাড়া আর সুযোগ হয় না। কেউ রোগব্যাধি বা কোন শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য খেতে পারে না। অন্য অনেক কারণও থাকে। তাদের কাছে কেমন লাগে যখন তারা সেই খাবারের ছবিগুলো দেখে, খাওয়ার গল্পগুলো পড়ে?

এখানে অতিশয়োক্তির কিছু নেই। মানুষ এমন না যে নিউজফীডে অন্যের চকচকে কাচ্চির ছবি দেখে মুখ থেকে লোল ফেলবে বা না খাওয়ার দুঃখে সিনেম্যাটিক ভাবে কান্নাকাটি করবে।

কিন্তু, যারা আর্থিক বা অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ভাবে অপারগ, তাদের যদি ঐ ছবিগুলো দেখে মনটা সামান্য খারাপও হয়, বা একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাসও পড়ে, সেই সামান্য আক্ষেপটাও কি আপনি চান?

ফেসবুকে এসব উপদেশ বাণী লেখা যেমন সহজ, লেখার পর গালাগাল খাওয়াও সহজ। আঁতলামি করছি, আজাইরা উপদেশ দিচ্ছি, নিজেকে বেশি তালেবর মনে করি, কে কি করল তাতে মাথা ঘামাচ্ছি, আমার বেশি জ্বলে, ইত্যাদি অনেক কথা আসে।

কিন্তু আমার মনে হয়েছে যেসব মানুষ তাদের ঐসব দামী ও সুস্বাদু খাবারের ছবিগুলো দেন, তাদের অনেককেই তো চিনি, তাদের সামান্য একটা খেয়ালের পরিণতিতে অন্য কারও এক কণা পরিমাণ হলেও মন খারাপ হচ্ছে এটা হয়তো তারা চাইবেন না।

আর 'আইন বা বদনজরের কথা তো বাদই দিলাম। এটা এমন ইস্যু যে যে বুঝে সে বুঝে, যে বুঝে না তাকে বোঝাতে গেলে পাগল ভাবে। মা'আযাল্লাহ।

অতএব ভাই, সামান্য একটা ছবি পোস্ট না করলে কী এমন আসবে যাবে? হয়তো আমাদের নফসটাকে দমাতে এক চিমটি কষ্ট হবে, কিন্তু তার বিনিময়ে আমাদের অপারগ ভাইদের মনের যেটুকু তোয়াক্কা করা হবে, তাতে আশা করা যায় আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্ট হবেন ও উত্তম যাজা দিবেন। ইল্লা মা শা আল্লাহ।

Next Post Previous Post