মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ অন্যদিকে এদেশে হিন্দুদের আস্ফালন

এদেশে হিন্দুরা রামের নামে স্লোগান দিয়ে মুসলিমদের জবাই করার ঘোষণা দেই কিভাবে? আমাদের বিভক্তি কাফেরদের শক্তি  


আমরা মিছিলে যে স্লোগানগুলো দিই সেগুলো মিছিলেই সীমাবদ্ধ থাকে। মিছিলের পর শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। কিন্তু তারা জয় শ্রীরাম বলে যে স্লোগানগুলো পথেঘাটে দেয় সেগুলো বাস্তবায়নে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকে। সুযোগ খোঁজে তন্নতন্ন করে। ব্যাটে-বলে হয়ে গেলে পিছনে তাকায় না। জায়গাতেই ব্রেক।


প্রশাসনিক সুবিধা ধরতে গেলে আমরা পাই-ই না। ইউটিলিটি সুবিধা ছাড়া তেমন কিছু কি ইসলামপন্থীরা পায়? তাহলে কারা পূর্ণ সুবিধা ভোগ করছে? সেই সুবিধা কাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে? ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।


সাম্প্রতিক সময়ে আমরা শুধুমাত্র ফ্রান্স কেন্দ্রিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। লেখালেখি হচ্ছে ফরাসি জুলুম নিয়ে। আর ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নাস্তিক রাষ্ট্র। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের বাঘা নাস্তিক। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখে এদেশের নাস্তিকরা খেপতে পারে। কিন্তু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একজোট হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নামল কেন? উত্তর খুব সহজ। এটা ঈমান আর কুফরের দ্বন্দ্ব। আলো-আঁধারের বিবাদ। তারা ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ। আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত। ইতিহাস দ্বারা তা প্রমাণিত। আমরাই বিভাজন করে প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে করছি প্রতারিত।


আমরা জানি, নাস্তিক মানেই ধর্মহীন। তারা ধর্মের অস্তিত্ব অস্বীকারকারী। আসলে কি তাই? না, এগুলো হচ্ছে কিতাবি পাঠ। তারা শুধুমাত্র ইসলামহীন। ইসলাম বিদ্বেষী। আল্লাহর অস্তিত্ব এবং কর্তৃত্ব অস্বীকারকারী। বাকি ধর্মগুলোর ব্যাপারে তাদের মাথাব্যথা নেই। 


ইসলাম ছাড়া বাকি ধর্মগুলো তাদের যাচ্ছেতাই জীবনযাপনের পথে মোটেও বাধা নয়। কেন সেগুলোর পিছনে লাগবে? বরঞ্চ, তারা প্রায় সময় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাঁধে কাঁধ রেখে ইসলামের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের ডাক দেয়। পিছনের ঐতিহাসিক রেফারেন্স টেনে কী লাভ। চোখের সামনেই তো কত শত প্রমাণ।


আপনার কাছে হেফাজত, জামায়াত, সুন্নী আলাদা হলেও তাদের কাছে এক৷ কারণ, উপর্যুক্ত সব গ্রুপই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী মুসলিম।


 আর এই বিশ্বাসীরাই তাদের প্রধান শত্রু। যখন সুযোগ পাবে তখন কে জামায়াতী আর কে হেফাজতী, তা দেখে সাইজ করবে না। ভুলেও তা ভাবতে যাবেন না। এসব ভেবেই তো আমরা দিনদিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। আর কত?


নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক কূটচাল চালানো হচ্ছে। ফ্রান্স বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ বিশ্বের নজর কেড়েছে। এমন বিক্ষুব্ধ আন্দোলন অন্যান্য দেশে খব কমই হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সিক্রেট গ্রুপের আলাদা নজর পড়েছে বাংলাদেশে। ধর্মীয় সহিংসতা লাগিয়ে মুসলিদেরকে কোনঠাসা করার শক্তিশালী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। 


এমন সঙ্কটাপন্ন সময়ে আমাদেরকে মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। ফাঁদ এবং ষড়যন্ত্র চিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে৷ দুচোখ দু'দিকে দিকে নয়; আট দিকেই রাখার চেষ্টা করতে হবে।

- Iftekhar Sifat



চট্টগ্রামের জাগো হিন্দু পরিষদের মিছিলে দেয়া হিংস্র স্লোগান শুনলাম। সাম্প্রদায়িক এই সংগঠন চিৎকার করে বলছে: “কওমির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান
ধইরা ধইরা জবাই কর, একটা দুইটা জবাই কর”


শুনে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।

যখন শাহবাগে সেক্যুলার মৌলবাদিদের মিছিলে জান্তব চিৎকার শুনেছিলাম: “জামাতে ইসলাম, মেড ইন পাকিস্তান, জা*মা*ত ধর..শি*বি*র ধর...ধইরা ধইরা..জবাই কর...।”

এই সেক্যুলার মৌলবাদিরা কিছুদিন আগে এক মিছিলে চিৎকার করে বলেছে: “হেফাজতে ইসলাম, মেড ইন পাকিস্তান, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দাও, হেফাজতের আস্তানা”

সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন কওমি অঙ্গণ সবসময়ই জামাত বিরোধী, যুদ্ধাপরাধ থেকে বিচ্ছিন্ন। এরপরও হেফাজতকে পাকিস্তানি বলা হচ্ছে! ইসলাম মানেই পাকিস্তানি, আফগানি/তালেবানি - এভাবে ভিক্টিমাইজ করা হচ্ছে বহুকাল থেকে। মানবতার ধ্বজাধারীরা হিংস্রতার সাথে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, গুড়িয়ে দিতে চাইছে হেফাজতকে!

তারা ফ্যাসিবাদি যে মঞ্চ কায়েম করেছিল শাহবাগে, তার মোক্ষম অস্ত্র হলো বিরোধীপক্ষকে - পাকিস্তানি, জা*মা*তি বা শি*বি*র ট্যাগ দেয়া, কারণ এদের বিনা বিচারেই মারা যায়। তাই তো আবরার হত্যার পর ক্রমাগত শি*বি*র বানানোর চেষ্টা, তার বাবাকে কোর্টে বারবার জা*মা*তি বানানোর চেষ্টা চলেছে। আবরার হত্যার রক্ত লেগে আছে পুরো শাহবাগে।

হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিকদের সেক্যুলার মৌলবাদ উভয়েরই গোড়া হলো প্রবল ইসলামবিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ। মজার ব্যাপার হলো, হিন্দুত্ববাদের জনক সাভারকার নিজেই নাস্তিক ছিলো (১)।

(১) Andrew Copson, Secularism: A Very Short introduction, ch. 5 (Oxford University Press)



ভারতে প্রতিদিন মুসলিম হত্যা করে সংখ্যালঘু  নির্যাতন করা হিন্দুরা বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেঃ নির্লজ্জ বেয়াদব


যে দেশের সংখ্যালঘুরা প্রকাশ্য রাজপথে সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের সবর্বৃহৎ ধর্মীয় দুটো দলের সদস্যদের ধরে ধরে জবাই করার শ্লোগান দিতে পারে, 
সে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও দুরভিসন্ধিমূলক।



.
“জয় শ্রী রাম” একটি মারাত্মক সাম্প্রদায়িক শ্লোগান। 
ভারতে বজরং ও শিবসেনারা মুসলমানদের পেটাতে এই শ্লোগান ব্যবহার করে। মসজিদ ভাঙার সময় তারা এই শ্লোগানে স্পট মুখরিত করে দাঙ্গাবাজদের রক্তে আগুন সৃষ্টি করে থাকে। 
সেই জয়শ্রীরাম শ্লোগান দিয়ে চট্টগ্রামের মাটিতে আজ একটা একটা করে হেফাজত-চরমোনাই ধরে জবেহ করার ঘোষণা দেবার এই স্পর্ধা কোথায় পেল তারা, তা কি বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন ও একাত্তর টিভি গং খতিয়ে বের করবে?
তারা কি এর ওপর সিরিজ নিউজ করবে, যেমনটি করে থাকে তথাকথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের গল্প বলার সময়? 
.
বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের পথ তৈরি করতে, বিশেষত যখন ক্ষমতাসীন বিজেপির অমিত সিং পাশের পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক সফর করছে, তখন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই কি এদেশি ইসকন সদস্যদের এই আস্ফালন?

- আব্দুল্লাহ আল ফারুক

Next Post Previous Post