সেকুলার কাফের কিন্তু আবার আল্লাহ্‌র অস্তিত্বে বিশ্বাসী - বিস্তারিত

 ইদানিং টকশোতে সেকুলার বুদ্ধিজীবীদের আল্লাহর অস্তিত্বে স্বীকৃতি দিতে দেখা যাচ্ছে। আর এতে দারুণ সন্তুষ্ট বা অবাক হয়ে যাচ্ছেন কিছু ভাই‌। কেউ তো আবার মনে মনে অনুশোচনা করছেন আহ! এই ভালো লোকটাকে আমি এতোদিন কতইনা ভুল বুঝতাম!( হ্যাঁ যারা 'আস্তিক' সেকুলার ব্যক্তিকে নাস্তিক মনে করতেন তাদের অনুশোচনা যথার্থ হতে পারে) তবে যারা এতে অবাক হচ্ছেন বা সন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছেন তাদের সেকুলার ডিসকোর্স বোঝায় ঘাটতি রয়েছে বলতে হবে। আসলে সেকুলারদের প্রায় সবাই আস্তিক তথা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই।

সেকুলারিজম কুফর। তবে সেকুলারিজমের কুফরিটা মূলত আল্লাহতে বিশ্বাস, অবিশ্বাস নিয়ে নয়। এর কুফুরিটা হচ্ছে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর কর্তৃত্ব মানা- না মানা নিয়ে। এখানে দেখতে হবে কে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মেনে নিচ্ছে আর কে মেনে নিচ্ছে না। কে সমাজ, রাষ্ট্র, আদালত, রাজনীতি, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিচ্ছে আর কে মেনে নিচ্ছে না। যে মেনে নিচ্ছে সে মুসলিম, আর যে মেনে নিচ্ছে না সে সেকুলার। একজন ইমানের পতাকা তলে, অপরজন কুফরের পতাকা তলে যদিও সে নামাজ, রোজা, হজ সবই করে!
যদি আল্লাহতে বিশ্বাস করলেই মুসলমান হওয়া যেতো তাহলে মক্কার মুশরিকরাও কাফের না হয়ে মুসলমান বলে গণ্য হতো। আবু জেহেলকেও পাক্কা মুসলমান না হোক অন্তত দুর্বল মুসলমান হলেও বলা লাগতো। কেননা সেও আল্লাহতে বিশ্বাস করতো। তারা আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাসের স্বীকৃতি ও রিজিকদাতা মনে করার তথ্য তো পাক কোরাআনেই আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন,
“তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করো, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? তবে তারা অবশ্যই জবাব দেবে – সেই সর্বশক্তিমান ; মহাজ্ঞানী (আল্লাহ্)। ” সূরা যুখরুফ ৪৩:৯।
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন – “তুমি যদি তাদের প্রশ্ন করো আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন এবং কে সূর্য ও চন্দ্রকে তাদের (কর্তব্য কাজে) নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণ করছেন, তবে তারা নিশ্চয়ই জবাব দেবে আল্লাহ্। “লোকমান – ৩১:২৫।
সূরা আনকাবুতের ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলেন – “হে নবী তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করো, আসমান থেকে কে পানি বর্ষন করেছেন, অতপর কে জমিন একবার মরে যাওয়ার পর সে (পানি) দ্বারা তাতে জীবন সঞ্চার করেছেন? অবশ্যই এরা বলবে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই “
সূরা মুমিনুনে ৮৪, ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাদের জিজ্ঞাসা করেন – “এই পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে তারা কার? যদি তোমরা জানো তবে বলো। তারা বলবে, সবই আল্লাহর। “
উপরের উল্লিখিত এইসব আয়াতে প্রশ্ন করা এবং তাদের থেকে উত্তর নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের যে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন তাহলো – তৎকালীন সমগ্র মক্কার আবু জাহেলের অনুসারী মুশরিকরা ছিলো আল্লাহ্ বিশ্বাসী। তারা মনে প্রাণে আল্লাহ্কে বিশ্বাস করতো যেমন আমরা করি। তারা অনেক ক্ষেত্রে রব হিসাবে আল্লাহ্ কে স্বীকার করতো। অর্থাৎ আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, আল্লাহ্ রিজিক দাতা, মৃত্যুদাতা ইত্যাদি।
শুধু তাই নয় কোনো কাজ শুরুর আগে তারা আল্লাহর নামে অর্থাৎ “বিসমিকা আল্লাহুম্মা “তথা শুরু করছি আল্লাহর নামে। তারা তাদের সন্তানদের নাম রাখতো আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর দাস। তারা বিপদে আপদে দোয়া চাইতো আল্লাহর কাছে – “যখন (সমুদ্রের) তরঙ্গমালা চাঁদোয়ার মতো হয়ে তাদের আচ্ছাদিত করে ফেলে, তখন তারা আল্লাহ্ তাআলাকে ডাকে ” সূরা লোকমান- ৩১:৩২। একই ভাবে ১৭ নম্বর সূরার ৬৭ নং আয়াতে, ২৯ নম্বর সূরার ৬৫ নং আয়াতেও তারা যে আল্লাহ্ কে ডাকতো তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
কিন্তু তারা আল্লাহ সর্বশেষ আসমানী প্রত্যাদেশকে মেনে নেয়নি, আল্লাহ তায়ালাকে একমাত্র ইবাদাতের যোগ্য, বিধানদাতা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আল্লাহর সাথে শরীক করেছে। এজন্য তারা মুশরিক, কাফের। অন্যদিকে আজকের মুসলিম নামধারী সেকুলাররা আল্লাহকে কিছু ক্ষেত্রে রব হিসেবে স্বীকার ও কিছু দাসত্ব করলেও আল্লাহকে বিধানদাতা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের ভাষ্য হলো ধর্ম থাকবে মসজিদে, মন্দিরে ও অন্দরে-অন্তরে। কিন্তু আল্লাহর কর্তৃত্ব রাজনীতি, আইন, বিচার, অর্থনীতি, শিক্ষা ইত্যাদিতে মানা যাবে না। এটাই সফট সেকুলারদের ধর্মের ব্যাপারে অবস্থান, যা সুস্পষ্ট কুফর।
তাই আমাদের মুসলিমদের দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে সেকুলার মানস সামনে রেখে দাওয়াহ দিতে হবে। তাদেরকে পূর্ণ কোরআন মেনে নেবার আহ্বান করতে হবে। আমাদের দেশে সেকুলারিজম ঢুকেছে উপনিবেশিক শক্তির হাত ধরে। আর এর ব্যাপকতা এতটাই বেশি যে বাংলার প্রায় প্রতিটি ঘর এর দ্বারা আক্রান্ত। তবুও এই বিষয়ে দাওয়াহ আমাদের মাঝে তুলনামূলক কম। সেকলার ব্রেনওয়াস প্রজন্মের সামনে ইসলামের পূর্ণাঙ্গচিত্র তুলে ধরার বিকল্প নেই। তাই এ বিষয়টি আমাদের দাওয়াতে প্রাধান্য দেয়া সময়ের দাবি।
- Monir Ahmed Monir
Next Post Previous Post