মুসলিম ইতিহাসে ৪০ জন নারীর জীবনের গল্প নিয়ে 'পুণ্যবতী' বই। বাংলা নতুন ইসলামিক বই ২০২৪
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, ‘মেয়েরা পৃথিবীর অর্ধেক, বাকী অর্ধেকের জন্মও তারাই দেয়। ফলত, তারাই যেন পুরো পৃথিবী।’ কাজেই একজন নারী আসমানী শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে পুণ্যবতী হওয়া মানে পুরো পরিবারে পুণ্যের জোয়ার ওঠা। আর পাপের পথে হাঁটলে সমাজটা কেমন অপরিচ্ছন্ন আর বিদঘুটে হয়ে ওঠে, বর্তমান সময় এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
.
বলা হয়ে থাকে, মায়েরা হলো শিশুদের প্রথম শিক্ষক ও প্রথম বিদ্যালয়। একজন মা যদি আলোকিত না হন, সচেতন না হন, সন্তান বখে যেতে বাধ্য। একজন আলোকিত মা-ই পারেন শিশুর জন্ম থেকেই কুরআন-সুন্নাহর আলোয় আলোকিত করে একটা ভালো জাতি উপহার দিতে। এজন্য আমাদের নারীদের বেশি বেশি মহীয়সী নারীদের জীবনী জানা আবশ্যক।
.
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করেছি ৪০জন মহীয়সী নারীকে নিয়ে। তারা সকলেই ইতিহাসের স্বর্ণ শিখরে জায়গা করে নিতে পেরেছেন; তাদের আল্লাহর উপর ভরসা, কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছেশক্তি দিয়ে। তারা শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করেই বসে থাকেননি, তাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য সব রকম প্রচেষ্টাই করেছেন। তাইতো আমরা দেখতে পাই তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন বীরযোদ্ধা, কেউ ছিলেন নার্স, কেউ ছিলেন ফকীহা-ইসলামী আইন বিশারদ, কেউ ছিলেন কবি। নিজেদের জীবন বিভিন্ন অঙ্গনে এগিয়ে গেলেও দ্বীনদারির প্রশ্নে সকলেই ছিলেন আপসহীন। সকলেই ছিলেন পুণ্যবতী, আল্লাহর জন্য নিবেদিতা। সকলেই ছিলেন এমন যে, সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন তবুও সংকল্প থেকে দূরে সরে যাননি।
মুসলিম ইতিহাসে ৪০ জন নারীর জীবনের গল্প নিয়ে 'পুণ্যবতী' বই PDF Download
এই বইয়ে যেমন আলোচিত হয়েছে তিন স্বর্ণযুগ স্পর্শ করা নারীদের চিত্র, তেমনি আলোচিত হয়েছে এই উপমহাদেশের মহীয়সী নারীদেরও গল্প। আশা করছি তাদের সংক্ষিপ্ত কিন্তু ঈমানদীপ্ত গল্পগুলো পড়ে আমাদের নারীরা পাথেয় সংগ্রহ করে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করতে পারবেন।
-
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন নারীকে দুই সময়ে দুইবার বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমবার সেই নারীর বাবা রাজি হোননি, দ্বিতীয়বার সেই নারী অজুহাত দেখান। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচাতো বোন উম্মে হানী (রাদিয়াল্লাহু আনহা)।
তাঁর আরেক নাম ছিলো- ফাখতা। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আবু তালিবের মেয়ে, আলীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বোন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনো নবুওয়াত পাননি। একদিন তিনি চাচা আবু তালিবের কাছে চাচাতো বোনের বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। একই সময়ে উম্মে হানীর (রা:) জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠান হুবায়রা ইবনে আমর। আবু তালিব রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে হুবায়রার সাথে বিয়ে দেন। [আ’লাম আন-নিসা: ৪/১৪, মুহাম্মদ আব্দুল মাবুদ, আসহাবে রাসূলের জীবনকথা: ৬/৯৮]
এই ঘটনার কয়েক যুগ পরের ঘটনা। উম্মে হানীর (রা:) স্বামী ইন্তেকাল করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয়বারের মতো উম্মে হানীকে (রা:) বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাসূলুল্লাহর প্রস্তাব শুনে উম্মে হানী (রা:) ব্যক্তিগত অজুহাত দেখান। তিনি বলেন:
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কান ও চোখ থেকেও আপনি আমার কাছে অধিক প্রিয়। স্বামীর অধিকার অনেক বড়ো জিনিস। স্বামীর দিকে মনোযোগী হলে আমার নিজের এবং আমার সন্তানদের (আগের স্বামীর) অনেককিছু ত্যাগ করতে হবে। অন্যদিকে, সন্তানদের দিকে মনোযোগ দিলে স্বামীর অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তাছাড়া আমি বৃদ্ধা হয়ে পড়েছি।”
উম্মে হানীর (রা:) এমন অজুহাতকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মান দিলেন। তিনি বললেন:
“উটে আরোহণকারী নারীদের মধ্যে কুরাইশের নারীরা সর্বোত্তম। তারা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহশীল হয়ে থাকে, আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়।” [সহীহ বুখারী: ৩৪৩৪, সহীহ মুসলিম: ৬৩৫৩, ইমাম আয-যাহাবী, সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা ২/৩১৪, মুহাম্মদ আব্দুল মাবুদ, আসহাবে রাসূলের জীবনকথা: ৬/১০২]
উম্মে হানী (রা:) তাঁর ইয়াতিম সন্তান প্রতিপালনের প্রতি এতো মনোযোগী ছিলেন যে, সন্তানের অধিকার আদায়ে গাফিলতি হয় কিনা এই ভয়ে তিনি সম্মানের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, 'উম্মুল মুমিনীন' হবার বিরল সৌভাগ্য অর্জন থেকে বঞ্চিত হোন।
৪০ জন মহীয়সীর জীবনের গল্প নিয়ে লেখা 'পুণ্যবতী' বই থেকে।