লতা মুঙ্গেশকরের মৃত্যু ও বাংলাদেশের জাতীয় বিপর্যয়

 একজন ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী মারা গিয়েছেন। বাংলাদেশের বেশ কিছু জাতীয় দৈনিক এটা নিয়ে প্রথম পাতায় বিশাল সব রিপোর্ট করেছে প্রধান সংবাদ হিসেবে। একাধিক রিপোর্টে বেশ কিছু দৈনিকের প্রথম পাতার অনেকখানি জায়গা ব্যয় হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের কোনো 'জাতীয় বিপর্যয়' ঘটে গেছে। এটা নতুন কিছু না। আমরা প্রায়ই দেখি ভারতের বিখ্যাত লেখক, শিল্পী এদের কেউ মারা গেলে বা এদের অন্য সংবাদ নিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতার অনেকটা জায়গা চলে যায়। একই কথা টিভি চ্যানেলগুলোর জন্যও সত্য। টিভি চ্যানেলগুলোও ভারতীয় লেখক, শিল্পী তথা সেলিব্রেটিদের নিয়ে এমন মাতামাতি করে যা দেখে অনেক সময় মনে হতে পারে এরা বুঝি এই দেশেরই তারকা। বাংলাদেশের সাহিত্য বা বিনোদন অঙ্গনের কিংবদন্তী পর্যায়ের কারো মৃত্যুতে কি পাশের দেশের বাংলাভাষী অঞ্চলের মিডিয়ায় এমন মাতামাতি হয়? পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা বা সংবাদের ব্রেকিং নিউজ কি দখল হয়ে যায়? আমি নিশ্চিত না। কিন্তু আমার মনে হয় না পাশের দেশের মিডিয়া বাংলাদেশি মিডিয়ার মতো মানসিকতা ধারণ করে।

.
আমরা যদি গান-বাদ্য বা প্রচলিত বিনোদনের মাধ্যমগুলো হালাল কী হারাম - এসব চিন্তা বাদও দেই, নিখাঁদ জাতীয়তাবাদী বা দেশাত্মবোধের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখি, বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর এহেন আচরণ অস্বাভাবিক লাগতে বাধ্য। এই পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলগুলো অনেক সময় আমাদেরকে দেশাত্মবোধ, চেতনা ইত্যাদির সবক দেয়। যেমন ধরুন, ফেব্রুয়ারি মাস এলেই এরা বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করে কিভাবে পার্শ্ববর্তী দেশের গান কিংবা টিভি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। দেশিয় ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার দিকে গুরুত্বারোপ করে বহু আয়োজন এরা করে ফেব্রুয়ারি মাস এলেই। ওদিকে এরাই বিনোদনের পৃষ্ঠায় প্রতিদিন বিদেশি সিনেমা, গান কিংবা তারকাদের খবরে ভরে রাখে। একদিকে সর্বস্তরে বাংলা চর্চার আহ্বান, স্কুলের বাচ্চারা হিন্দি চ্যানেল দেখে কিভাবে বাংলা ভুলে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রতিবেদন, অন্য দিকে বিদেশি বিনোদন জগত নিয়ে নিয়মিত আপডেট, আদিখ্যেতা। স্ববিরোধিতাটা ধরতে পেরেছেন? এদের আসলে কোনো নীতি নেই। মিডিয়াগুলোর কাজ হচ্ছে সময়-সুযোগ বুঝে ব্যাবসা করা। শুধু ব্যাবসাই না, অনেক সময় এদের বিভিন্ন এজেন্ডাও থাকে। এরা হচ্ছে তারা, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জুব্বা-রুমাল পরলে সেটা নিয়ে হইচই ফেলে দেয়, এগুলোকে "বিদেশি সংস্কৃতি", "আরব সংস্কৃতি" ইত্যাদি বলে চেঁচামেচি করে, তখন এদের কাছে বাংলাদেশের সীমানা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু বিদেশি বিনোদন জগতের ক্ষেত্রে তারাই আবার দেশ-কাল-ভাষার সীমা ভুলে যায়। এরাই হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ও বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন বা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেবে, আবার এরাই কিছুদিন পরে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব জেনা দিবস নিয়ে ক্যাম্পেইন করবে। তিক্ত সত্য হচ্ছে, নিরুপায় হয়ে এই মিডিয়াগুলোর উপরেই আমরা সংবাদের জন্য নির্ভরশীল। হাতে বিকল্প নেই।
.
এহেন মানসিকতায় মগজধোলাই হওয়া মানুষেরা এই পোস্টের কথাগুলোকে আবার 'সংকীর্ণ চিন্তা', 'সাম্প্রদায়িকতা' ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে ফেলে দিতে পারেন। তাদের অবগতির জন্য জানাতে চাই - তাওহিদে বিশ্বাসী মুসলিমরা জাতিভেদ করে না। ইসলামী বিশ্বাস হচ্ছে সব মানুষ আদম সন্তান, একই জাতি থেকে উদ্ভুত। মুসলিমদের কাছে ভালো ও খারাপের নিক্তি হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহ। মুসলিমরা কারো জাতীয়তার জন্য ঘৃণা করে না। মুসলিমরা অন্যদেরকে তাদের কর্মের আলোকে বিচার করে। ভারতের কিংবা অন্য যে কোনো দেশের আলেম-উলামা ও দাঈরা আমাদের গর্ব।
.
.
গানের বিধান : ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে https://islamhouse.com/bn/articles/328589/
.
গান-বাজনার ব্যাপারে ইসলামের বিধান https://islamhouse.com/bn/articles/278874/
.
আসুন গান-বাজনা থেকে তাওবা করি https://islamhouse.com/bn/articles/364808/
.
মানসিক সুস্থতা ও বিনোদন - ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র.) https://youtu.be/TMD1zfOKq14
- Muhammad Mushfiqur Rahman Minar


কাফেরদের মৃত্যু তে ওপারে ভালো থাকবেন বলা যাবে কি?

যখনই কোন কা:ফির সেলেব্রিটি কেউ মারা যায়, কিছু মুসলিম ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবার মত ফিতনায় পড়ে যায় । একটা কা:ফিরের মৃত্যুতে এরা যে পরিমান আহা উহু করতে থাকে । অথচ দুনিয়ায় যত সৃষ্টি আছে তন্মধ্যে কাফির মুশরিকদেরকে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা সবচেয়ে নিকৃষ্ট, সবচেয়ে অধম বলেছেন । they r the worst of all creatures …
“ আহলে-কিতাবদের মধ্যে যারা কাফের তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির #অধম।”
[ সুরা আল-বাইয়্যিনা, ৬ ]
“ সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে #নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি।”
[ সুরা আনফাল, ৫৫ ]
এমনকি পশু পাখিদের থেকেও কা:ফির মুশরিকরা অধম । কারণ পশু পাখিরা কম বোধবুদ্ধি সম্পন্ন হয়েও সারাক্ষণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'লার তাসবীহ করে । অথচ মানুষ জেনে শুনেও আল্লাহকে অস্বীকার করে, তাঁর সাথে শরীক করে বসে । এরুপ লোকদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা শুধু সৃষ্টির অধমই বলেননি বরং সেই সাথে তাদেরকে লানত পর্যন্ত করেছেন ।
“ নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত।”
[ সুরা বাকারা, ১৬১ ]
আল্লাহর যমীনে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ হলো শির্ক । সবচেয়ে নিকৃষ্ট … এরচেয়ে জঘন্য কোন অপরাধ আর হতে পারেনা । একটা মানুষ প্রকাশ্যে প্রতি নিয়ত আল্লাহকে অপবাদ দিচ্ছে, শির্কের মত জঘন্য কাজ করছে অথচ তার মৃত্যুর পর কি করে আমরা দুঃখ পাই ? আমরা কি করে ব্যথিত হই, দুআ করি ?
কি করে ?
ধরুন আমার মা-বাবাকে এক ব্যক্তি প্রতি নিয়ত গালি দেয়, নোংরা অপবাদ দেয় । প্রকাশ্যে দেয় … আমি তা দেখি, তা জানি … অথচ এ লোকটি মারা যাবার পর আমি তার জন্য ব্যথিত হই, তার স্মৃতি চারণ করি, তার মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ভালো থাকার জন্য দুআ করি !!!
এরকমটা কি আমরা আদৌ কেউ করবো ? কখনোই না । তাহলে মা-বাবার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান যদি এমন হয় তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার প্রতি অপবাদকারীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কতটা কঠোর হওয়া উচিত । অথচ কা:ফির মুশরিকরা মারা গেলে আমরা কেমন করে পারি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে ? এটি কি একজন মুমিনের সিফাত হতে পারে ?
আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাদের …
আমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছি ? কেন আমাদের কোন ঈমানি গাইরত নাই । গতকাল এক মুশরিকা গায়িকা মারা গেলো । দ্বীনদার ভাই-বোনেরাও দেখি তাকে নিয়ে পোস্ট দিচ্ছে । তার গানের লাইন নিজ পোস্টে শেয়ার করছে, তার গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছে সেটা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে !! এরাই আবার দেখি ক্যামেরার সামনে এসে আমাদের দ্বীন শেখায়, কোরআন-হাদীস শেখায় ।
কোথায় আমাদের ঈমানি গাইরত ? কোথায় আমাদের আল-ওয়ালা আল-বারা ?
নিজেদের ঈমান নিয়ে আমরা কতটা নিশ্চিন্তে থাকি যে গুনাহ কে এখন আর গুনাহ মনে হয়না । আর এভাবেই একদিন হয়তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তাঁর নিকট বারবার ফিরে আসার অসামান্য মদদ বা সাহায্য আমাদের উপর থেকে প্রত্যাহার করে নিবেন । অতঃপর উদভ্রান্তের মত ছেড়ে দিবেন গোমরাহীর দিকে ।
“ যারা একবার মুসলমান হয়ে পরে পুনরায় কাফের হয়ে গেছে, আবার মুসলমান হয়েছে এবং আবারো কাফের হয়েছে এবং কুফরীতেই #উন্নতি লাভ করেছে, আল্লাহ তাদেরকে না কখনও ক্ষমা করবেন, না পথ দেখাবেন।
সেসব মুনাফেককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।”
[ সুরা আন-নিসা, ১৩৭ -১৩৮ ]
আমরা একটু চিন্তা করি, কি করছি … কেনইবা করছি ।
একটু চিন্তা করি, একটু ….
- Nusrat Zahan
Next Post Previous Post